মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—কে যত মুজিযা দিয়েছেন সেগুলির অন্যতম এক মুজিযা হলো ইসরা ও মি‘রাজ। “ইসরা” অর্থ “নৈশ—ভ্রমন” বা “রাত্রিকালে ভ্রমণ করানো।” আর ‘মি‘রাজ’ অর্থ “ঊর্ধ্বারোহণ” বা “উর্ধক্ষারোহণের যন্ত্র”। মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—কে এক রাত্রিতে মক্কা মুআজ্জামা থেকে ফিলিস্তিনের ‘আল—মাসজিদুল আকসা’ পর্যন্ত নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে ঊর্ধ্বে ৭ আসমান ভেদ করে তাঁর নৈকট্যে নিয়ে যান। মক্কা শরীফ থেকে আল—মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণকে “ইসরা” এবং সেখান থেকে ঊর্ধ্বে গমনকে মি‘রাজ বলা হয়।

মিরাজের ঘটনা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর জীবনের অত্যতম ঘটনা। কুরআন কারীমে একাধিক স্থানে এ ঘটনার উল্লে­খ রয়েছে। সূরা বনী ইসরাঈলের শুরতে ইসরার ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন:
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آَيَاتِنَا
“পবিত্র তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমন করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্য।”1সূরা [১৭] ইসরা (বনী ইসরাঈল): ১ আয়াত।

এরপর আল্লাহ

মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম—কে কিতাব প্রদান, ইহূদীদের দায়িত্ব এবং ইহূদীদের পাপাচারের কারণে দুবার আল—মাসজিদুল আকসা ধ্বংসের কথা উল্লে­খ করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, খৃস্টপূর্ব ১০০০ সালের দিকে সূলাইমান আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর মাসজিদুল আকসা নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। সুলাইমান আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর পরে ইহূদীরা মুর্তিপূজা, যুদ্ধবিগ্রহ ও পাপচারে লিপ্ত হয়। প্রায় ৪০০ বছর পরে খৃস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে ব্যবিলনের সম্রাট নেবুকাদনেজার মসজিদে আকসা সমূলে ধ্বংস করে ইহূদীদের বন্দী করে ব্যবিলন নিয়ে যান। প্রায় ৭০ বছর পরে তারা মুক্ত হয়ে পুনরায় মসজিদ নির্মাণ করে। এরপর তাদের অবাধ্যতা ও পাপাচারের ধারা অব্যাহত থাকে। সর্বশেষ ৭০ খৃস্টাব্দে রোমান সম্রাট ভ্যসপাসিয়ানের সময়ে তার পুত্র পরবর্তী সম্রাট টিটো এ মসজিদ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেন।

বস্তুত মহান আল্লাহ

হযরত ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর মাধ্যমে এ পৃথিবীতে তাওহীদের বাণী পুনরুজ্জীবিত করেন এবং তাকে মানব জাতির ইমামত বা নেতৃত্ব প্রদান করেন। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে, খৃস্টজন্মের প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরাক, সিরিয়া, আরব, মিসর বা তৎকালীন সভ্য জগতে তাওহীদের প্রচার করেন। ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর বড় ছেলে ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ছোট ছেলে ইসহাক আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম—কে প্রদত্ত এ নেতৃত্বের দায়িত্ব সাময়িকভাবে ইসহাকের ছেলে ইয়াকূব বা ইসরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর বংশধরদেরকে প্রদান করেন, যারা বনী ইসরাঈল বা ইহূদী জাতি বলে প্রসিদ্ধ। মহান আল্লাহ এ জাতিকে অনেক বরকত ও করুণা দান করেন। যেরুশালেম বা বাইতুল মাকদিসকে তাওহীদের বরকতময় কেন্দ্র বানিয়ে দেন। হাজার হাজার নবী তথায় আগমন করেন। কিন্তু এ জাতি সর্বদা অবাধ্যতা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে। ফলে বারংবার আল্লাহ তাদের উপর গযব নাযিল করেন। সর্বশেষ আল্লাহ তাদের হাত থেকে মানবতার নেতৃত্ব কেড়ে নিয়ে ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর বড় ছেলে ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর বংশধরকে প্রদান করেন।
যেরুশালেমকে মক্কার নেতৃত্বে দিয়ে দেওয়া হয়। আর এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি‘রাজের মুবারক সফরের শুরুতে প্রথমে বাইতুল মাকদিস গমন করে সকল নবীর ইমাম হয়ে সালাত আদায় করেন। তাঁর উম্মাতের পক্ষ থেকে বিশ্ব মানবতার নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর তিন মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে গমন করেন।
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।