কুরআন বাদ দিয়ে সিয়াম পালন করার কারণেই আমরা প্রকৃত তাকওয়া অর্জন করতে পারছি না। রামাদানে যতটুকু আমরা কুরআন চর্চা করছি, ততটুকুও যদি বুঝে করতাম তাহলে অনেক বেশি তাকওয়া অর্জন করতে পারতাম। আমরা দিবসে তিলাওয়াতে এবং তারাবীহে, ইশা, ফজরে বা মাগরিবে ইমামের মুখে কুরআনের ভাষায় পিতামাতা, এতিম, প্রতিবেশী, দরিদ্র ও অন্যদের অধিকারের কথা, হক্ক কথা ও ইনসাফের নির্দেশ, জুলুম, মিথ্যা, ওজনে কম দেওয়া, ফাঁকি দেওয়া, গীবত করা, উপহাস করা, অহঙ্কার করা ও অন্যান্য পাপের ভয়াবহতা ইত্যাদি সবই শুনছি, কিন্তু কিছুই বুঝছি না। ফলে নামায থেকে বেরিয়ে আমরা সকল পাপ কাজই করছি। ফজর বা যোহরের পরে নিজে কুরআনে পাঠ করলাম, ওযনে কম দিলে, ফাঁকি দিলে বা প্রতারণা করলে ওয়াইল জাহান্নাম। এরপর প্রগাঢ ভক্তিতে কুরআনে চুমু দিয়ে কর্মস্থলে যেয়ে এ সকল পাপে লিপ্ত হলাম! ইন্না লিল্লা­হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!!

আসুন, আমরা সকলেই রামাদান উপলক্ষ্যে কুরআনের তালেবে ইলম হয়ে যাই। কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিক্ষা করি এবং কুরআনের অর্থ বুঝার চেষ্টা করি। তাহলে আমরা কুরআন তিলাওয়াতের পরিপূর্ণ সাওয়াব ও বরকত ছাড়াও প্রকৃত ঈমানদার হতে পারব। আল্লাহ বলেছেন:

وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آَيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

“যখন তাঁদের নিকট আল্লাহর আয়াতগুলি তিলাওয়াত করা হয়, তখন তাঁদের ঈমান বৃদ্ধি পায়।”1সূরা আনফাল : আয়াত ২। 

আমরা যদি অর্থই না বুঝি তাহলে কিভাবে আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পাবে? আর যদি কুরআন তিলাওয়াত শুনে ঈমান বৃদ্ধি না পায় তাহলে তো প্রকৃত মুমিন হওয়া গেল না। আল্লাহ আরো বলেছেন :

اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ

“আল্লাহ সর্বোত্তম বাণীকে সুসমঞ্জস এবং বারংবার আবৃত্তিকৃত গ্রন্থ হিসাবে অবতীর্ণ করেছেন। যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে এই গ্রন্থ থেকে (এই গ্রন্থ পাঠ করলে বা শ্রবণ করলে) তাদের শরীর রোমাঞ্চিত ও শিহরিত হয়। অতঃপর তাদের দেহ ও মন প্রশান্ত হয়ে আল্লাহর যিক্রের প্রতি ঝুকে পড়ে।”2সূরা যুমার : আয়াত ২৩।

কুরআনের অর্থ হৃদয়ে

প্রবেশ করে হৃদয়কে নাড়া না দিলে শরীর কিভাবে শিহরিত হবে? মন কিভাবে প্রশান্ত হবে? রামাদানে আমরা তারাবীহে অন্তত এক খতম কুরআন শুনি। এ সময়ে যদি কিছুটা হলেও অর্থ বুঝতে পারি তাহলে আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা সত্যিকার আল্লাহ-ভীরু মুত্তাকীদের গুণাবলি অর্জন করতের পারব। আল্লাহর কাছে তো এক সময় যেতেই হবে। আর কুরআন নিয়েই তার কাছে সবচেয়ে ভালভাবে যাওয়া যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

إِنَّكُمْ لاَ تَرْجِعُوْنَ إِلَى اللهِ بِشَيْءٍ أَفْضَلَ مِمَّا خَرَجَ مِنْهُ يَعْنِيْ الْقُرْآنَ

“আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট থেকে যা এসেছে তার চেয়ে, অর্থাৎ কুরআনের চেয়ে উত্তম আর কিছুই নেই।”3হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৭৪১, মুনযীরী, আত-তারগীব২/৩২৭, নং ২১১৯। হাকিম ও যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। 

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, যারা কুরআনের মানুষ- অর্থাৎ কুরআন পাঠ, হৃদয়ঙ্গম, প্রচার ও পালনে রত- তারাই পৃথিবীতে আল্লাহর পরিজন। আল্লাহ আমদেরকে তাঁর পরিজন হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

—— সমাপ্ত —–

 

বই : রামাদানের সওগাত

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।