সিয়াম, রামাদান ও কুরআন (পর্ব – ০৪)

______________________

মুমিনের অন্যতম ইবাদত কুরআন তিলাওয়াত করা। আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির কুরআন তিলাওয়াত। কুরআন কারীমের একটি আয়াত শিক্ষা করা ১০০ রাক‘আত নফল সালাতের চেয়েও উত্তম বলে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। সারা বৎসরই তিলাওয়াত করতে হবে। বিশেষত রামাদানে বেশি তিলাওয়াত করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ সুন্নাত, যাতে অতিরিক্ত সাওয়াব ও বরকত রয়েছে।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের মধ্যে উপস্থিত অনেক মুসল্লীই কুরআন পড়তে পারেন না। যদি দুনিয়ার কোনো মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি আপনাকে একটি চিঠি পাঠান তা পড়তে ও বুঝতে আপনি কত ব্যস্ত হন। আর রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তাঁর হাবীব মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাধ্যমে আপনাকে এ কিতাবটি পাঠালেন, আর আপনি একটু পড়ে দেখলেন না। আল্লাহর কাছে যেয়ে কি জবাব দিবেন। যে কিতাব পাঠ করে এখনো হাজার হাজার কাফির মুসলিম হচ্ছে, আপনি মুসলিম হয়ে সে কিতাবটা পড়লেন না।

অনেক নও-মুসলিম আছেন

যারা মুসলিম হওয়ার পরে ৩/৪ বৎসরের ভিতরে কুরআন তিলাওয়াত ও অর্থ বুঝার যোগ্যতা অর্জন করেন। আর আমরা জন্ম থেকে মুসলমান আমরা অনেকেই কুবআন পড়তে পারি না। আমরা সংবাদ শুনে, পড়ে, সংবাদ পর্যালোচনা করে, অকারণ গীবত করে, বাজে গালগল্প করে কত সময় নষ্ট করি। অথচ আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত শেখার সময় হয় না। কুরআন তিলাওয়াত শিখতে বেশি সময় লাগে না। নূরানী পদ্ধতি, নাদিয়া পদ্ধতি বিভিন্ন আধুনকি পদ্ধতিতে মাত্র ৩/৪ মাস পড়লেই বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত শেখা যায়। আসুন আমরা কুরআনের মাস রামাদান উপলক্ষ্যে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ

“তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে ও শিক্ষা দান করে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।”1সহীহ বুখারী ৪/১৯১৯।

مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا

“যে ব্যক্তি কুরআনের একটি বর্ণ পাঠ করবে সে একটি পুণ্য বা নেকী অর্জন করবে। পুণ্য বা নেকীকে দশগুণ বৃদ্ধি করে প্রদান করা হবে।2তিরমিযী ৫/১৭৫, নং ২৯১০। হাদীসটি সহীহ। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ لَهُ أَجْرَانِ

“যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে সুপারদর্শী সে সম্মানিত ফিরিশতাগণের সঙ্গে। আর কুরআন তিলাওয়াত করতে যার জিহ্বা জড়িয়ে যায়, উচ্চারণে কষ্ট হয়, কিন্তু কষ্ট করে অপারগতা সত্ত্বেও সে তিলাওয়াত করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার।”3সহীহ বুখারী ৬/২৭৪৩, সহীহ মুসলিম ১/৫৪৯।

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِهِ

“তোমরা কুরআন পাঠ করবে; কারণ কুরআন কিয়ামতের দিন তার সঙ্গীদের (কুরআন পাঠকারীগণের) জন্য শাফা’আত করবে।”4সহীহ মুসলিম ১/৫৫৩।

চলবে…

বই : রামাদানের সওগাত

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।