As-Sunnah Trust

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নোত্তর 6607
আস- সালামু আলাইকুম। শায়েখ!  আশা করছি ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।  তবে বেশি ভালো নেই। শায়েখ আমার একটা প্রশ্নটা হলো– গায়েবানা জানাজা পড়া কি ইসলামে জায়েজ আছে? হাসিদের আলোকে হাদিসের মুল আরবী  ইবারতটি দলিল সহকারে জানালে খুবই উপকৃত হবো, ইনশাআল্লাহ আশা করছি যথাযথ  উত্তর প্রদান করবেন।  অপেক্ষায় থাকবো।

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 6607

প্রশ্ন

আস- সালামু আলাইকুম। শায়েখ!  আশা করছি ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।  তবে বেশি ভালো নেই। শায়েখ আমার একটা প্রশ্নটা হলো– গায়েবানা জানাজা পড়া কি ইসলামে জায়েজ আছে? হাসিদের আলোকে হাদিসের মুল আরবী  ইবারতটি দলিল সহকারে জানালে খুবই উপকৃত হবো, ইনশাআল্লাহ আশা করছি যথাযথ  উত্তর প্রদান করবেন।  অপেক্ষায় থাকবো।

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। গায়েবানা জানাযার (মৃত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে জানাযা) বিষয়ে আলেম ও ফকীহদের মাঝে ইখতিলাফ বা মতবিরোধ আছে। এই বিষয়ে মোট ৪টি মতামত পাওয়া যায়। ১। নিঃশর্ত জায়েজ। এটা শাফেয়ী ও হাম্বলী মাজহাবের মতামত। ২। গায়েবানা জানাযা কোনভাবেই জায়েজ নেই। হানাফী ও মালেকী মাজহাবের মতামত এটাই। হাম্বলী মাজহাবের ইমাম আল্লামা ইবনে কুদামা রহি. বলেন, وتجوز الصلاة على الغائب في بلد آخر بالنية فيستقبل القبلة ويصلي عليه كصلاته على حاضر وسواء كان الميت في جهة القبلة أو لم يكن وسواء كان بين البلدين مسافة القصر أو لم يكن وبهذا قال الشافعي وقال مالك و أبو حنيفة : لا يجوز অন্য শহরে কিবলার দিকে ‍মুখ করে গায়েবানা জানাযা জায়েজ, অনুপস্থিত মৃত ব্যক্তির জন্য নামায পড়তে হবে উপস্থিত মৃত ব্যক্তির মত। চাই মৃত ব্যক্তি কিবলার দিকে থাকুক বা না থাকুক। দুই জায়গার মাঝে কসরের দূরত্ব হোক বা না হোক। ইমাম শাফেয়ী রহি. এমনই বলেছেন। ইমাম মালেক ও আবু হানীফা রহি. বলেনছেন, জায়েজ নেই। আলমুগনী, ২/৩৮৬। শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ইমাম নববী রহি. বলেন, مذهبنا جواز الصلاة على الغائب عن البلد ، ومنعها أبو حنيفة . আমাদের মতামত হলো অন্য শহরে গায়েবানা জানাযা জায়েজ। আবু হানীফা রহি. এটাকে না জায়েজ বলেছেন। আলমাজমু ৫/২১১। ৩। যদি মৃতের জানাযা না হয়ে দাফন হযে থাকে তাহলে গায়েবানা জানাযা জায়েজ। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কয়্যুম ও শায়খ উসায়মিন রহি. এই মত পোষণ করেন। ইবনুল কয়্যুম রহি. বলেন, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহি. বলেন, الصواب: أنّ الغائب إِن مات ببلدٍ لم يُصَلَّ عليه فيه، صُلّي عليه صلاةَ الغائب، كما صلّى النّبيّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – على النجاشي؛ যদি এমন কোন জায়গায় মারা যায় যেখানে তার জানাযা হয় নি সেখানে তার জন্য গায়েবানা জানাযা করতে হবে। যেমন নবী সা. নাজাশীর জন্য গায়েবানা জানাযা পড়েছেন। যাদুল মায়াদ, ১/৫২০। শায়খ উসায়মিন রহি.বলেন, ” إذا تأكدت أنه لم يصل عليهم فصل عليهم ، لأن الصلاة فرض كفاية . لكن ربما أهله صلوا عليه ، لأن الصلاة على الميت تكون بواحد ، على كل حال إذا تأكدت أن شخصا ما لم يصل عليه فعليك أن تصلي عليه لأنها فرض كفاية ولابد منها ” انتهى من “مجموع فتاوى الشيخ ابن عثيمين” (17/ 149). যখন মৃত ব্যক্তির উপর জানাযা পড়া না হওয়ার বিষয়ে আপনি নিশ্চিত হবেন,  তখন তার  উপর জানাযা পড়বেন। কেননা জানাযা ফরযে কেফায়া।… মোট কথা  যদি আপনি  নিশ্চিত হন  যে কোন মৃত ব্যক্তির উপর জানাযা পড়া হয় নি, তখন তার উপর জানাযা পড়বেন। কেননা জানাযা পড়া ফরজে কেফায়া, আবশ্যক। মাজমু’ ফাতাওয়া ইবনে উসায়মিন, ১৭/১৪৯। ৪।  ইসলাম ধর্ম প্রচার-প্রসারে অবদান আছে এমন ব্যক্তি বা আলেমদের ক্ষেত্রে গায়েবানা জানাযা জায়েজ। সৌদি আরবের জগত বিখ্যাত ফতোয়া বোর্ড “লাজনা দায়েমা”র আলেমগণ এবং শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহি. এমন মতামত ব্যক্ত করেছেন। “লাজনা দায়েমা”র ভাষ্য: تجوز صلاة الجنازة على الميت الغائب لفعل النبي صلى الله عليه وسلم ، وليس ذلك خاصاً به ، فإن أصحابه رضي الله عنهم صلوا معه على النجاشي ، ولأن الأصل عدم الخصوصية ، لكن ينبغي أن يكون ذلك خاصاً بمن له شأن في الإسلام ، لا في حق كل أحد রাসূলুল্লাহ সা. এর কর্মের মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়ার কারণে গায়েবানা জানাযা জায়েয। এটা শুধু রাসূল সা. এর বিশেষ বৈশিষ্ট নয়। কেননা সাহাবীরা তাঁর সাথে নাজাশরি গায়েবানা জানাযা পড়েছেন। এখানে মূল বিষয় হলো, গায়েবানা জানাযা পড়া নাজাশীর ক্ষেত্রে সাথে সীমাবদ্ধ নয়। তবে গায়েবানা জানাযা  সীমাবদ্ধ বা বিশেষ বৈশিষ্ট  ঐ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যাদের ইসলামে বিশেষ অবদান আছে, প্রত্যেকের ক্ষেত্রে নয়। ৮/৪১৮। দলীল: যারা বলেছেন, নি:শর্ত জায়েজ, তাদের দলীল হলো নীচের হাদীস عن أبي هريرة رضي الله عنه : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم نعى النجاشي في اليوم الذي مات فيه وخرج بهم إلى المصلى فصف بهم وكبر عليه أربع تكبيرات হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যেদিন বাদশাহ নাজাশী মারা যান সেদিন রাসূলুল্লাহ সা. তার প্রশংসা করলেন এবং সাহাবীদের নিয়ে “জানাযার মাঠে” গেলেন এবং তাদেরকে নিয়ে কাতারবদ্ধ হলেন এবং তার উপর চার তাকবীর দিলেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৮। যারা বলেছেন, না জায়েজ, তাদের কথা হলো রাসূলুল্লাহ সা. বা সাহাবীরা নাজাশী ছাড়া অন্য কারো গায়েবানা জানাযা পড়েন নি। অথচ সে সময় বহু মানুষ মারা গিযেছে। নাজাশীর জানাযাটা একান্ত নাজাশীর জন্য রাসূল সা. এর বিশেষ বৈশিষ্ট। যারা বলেন, জানাযা করা না হলে, গায়েবানা জানাযা জায়েয তাদের দলীলও উক্ত হাদীস। কেনন নাজাশীর জানাযা হয় নি, তাই রাসূলুল্লাহ সা. এবং সাহাবীরা গায়েবানা জানাযা পড়েছেন। যারা বলেন, ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে যাদের অবদান আছে তাদের ক্ষেত্রে জায়েজ, তাদের দলীলও এই একই হাদীস। কেননা ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে নাজাশীর বিশেষ অবদান ছিল। মতেবিরোধপূর্ণ  এই মাসআলায়  মানুষের করণীয় সম্পর্কে শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহি. বলেছেন, الأمر في هذا واسع إن شاء الله، والقول: بأنه خاص بـالنجاشي قول قوي؛ لأن الرسول ﷺ لم يحفظ عنه أنه صلى على غير النجاشي، ولو كانت الصلاة على الغائب سنة لصلى على كثير من الناس؛ لأنه مات في زمانه جم غفير في مكة وغيرها، ولم يحفظ أنه صلى على أحد. فالأحوط تركها على الغائب، إلا إذا كان إنسانًا له قدم في الإسلام كما كان للنجاشي فلا مانع إن شاء الله من الصلاة عليه “এই মাসআলাতে যে কোন একটি মতামত মেনে আমল করার সুযোগ আছে ইনশাআল্লাহ। তবে বিষয়টি নাজাশীর বিশেষ বৈশিষ্ট হওয়ার মতটি  শক্তিশালী। কেননা নাজাশী ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে রাসূল সা. গায়েবানা জানাযা পড়েছেন, এমন পাওয়া যায় না। যদি এটা সুন্নাত হতো তাহলে অনেক মানুষের গায়েবানা জানাযা তিনি করতেন। কেননা সে সময় বহু মানুষ মক্কা এবং অন্যান্য শহরে মারা গিয়েছেন। তিনি কারো গায়েবান জানাযা পড়েন নি। অধিক সাবধানতা হলো গায়েবানা জানাযা না পড়া। তবে যখন এমন মানুষ মারা যাবে ইসলামের ক্ষেত্রে যার বিশেষ অবদান আছে, যেমনটি নাজাশীর ছিল, তাহলে তার গায়েবানা জানায পড়তে বাধা নেই ইনশাআল্লাহ।” ইন্টারনেট থেকে নেওয়া। নীচে লিংক দেয়া হয়েছে। শেষ কথা: উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, এটা একটি ইখতালাফি বা মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা। আলেমেদের একাংশের নিকট গায়েবানা জানাযা আদৌ জায়েজ নেই। অন্য আরেকটি বড় অংশের নিকট জায়েজ, বিশেষত যাদের জানাযা হয় নি এবং যারা ইসলামের প্রচার-প্রসারে অবদান রেখেছেন, সে সব মানুষেদের ক্ষেত্রে। সুতরাং প্রান্তিকতার শিকার হয়ে ভিন্নমতের মানুষের উদ্দেশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হওয়া আবশ্যক। এগুলো নিন্দনীয় এবং বর্জনীয়। ইসলামপন্থীদের নিজেদের মধ্যে এই ধরণের কাদা ছোড়ছুড়ি কেবল ইসলাম বিরোধীদের হাতেকেই শক্তিশালী করে। বিস্তারিত জানতে দেখুন আরো বিস্তারিত জানতে আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন