আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 5374

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক

প্রকাশকাল: 16 অক্টো. 2020

প্রশ্ন

আস-সালামুয়ালাইকুম। কিছু পারিবারিক সমস্যার সমধানের জন্যে আপনাদের কাছে প্রার্থনা রাখছি। আমার বিয়ে হয়েছে ২০১৫ সালে। আল্লাহর মেহেরবানিতে আমার একটা কন্যা সন্তান আছে। আমার কন্যার বয়েস ৫ বছর। আমার হাজবেন্ড একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। আমার শশুর কিছুদিন আগে মারা গেছেন। আমার শাশুরী আছেন। আমার নিজের পরিবারে আমার দুইজন ভাই আছেন। বাবা-মা আছেন। দুই ভাই বিবাহীত। আমার বিয়ের সময় আমার হাজবেন্ড বেকার ছিলেন। আমরা এখন যে বাসায় থাকি আমাদেরকে বলা হইছিলো এইটা আমার শশুরের বাড়ি কিন্তু বিয়ের পর জানতে পারি এইটা আমার ননাষের হাজবেন্ড বানাইছেন। হয়তো এখানে আমার শুশুরের কিছু পার্টিসিপেশন আছে। হয়তো বলছি এই জন্যে যে এই ব্যপারে আমি এখনো কিছুই কনফার্ম না এবং আমাকে কখনো কিছু জানানো হয়নি। আমিও কখনো কিছুই জানতে চাইনি। কিন্তু এওটা সিওর যে এই ব্যাপারে বিয়ের আগে আমাদেরকে পুরোপুরি সত্য কথা বলা হয়নি। বিয়ের কিছুদিন পরে আমার হাজবেন্ড একটি চাকুরীতে জয়েন করে যেখানে তার খুব একটা হ্যান্ডসাম ইনকাম ছিলো না। কিন্তু এই ব্যপারে আমার কখনই কোনো কমপ্লেইন ছিলো না। আমি এই কম ইঙ্কামের মধ্যে ম্যনেজ করে চলতাম। কাপড় চোপড় অথবা এক্সট্রা কোনো চাহিদা ছিলো না। আমি আমার হাজবেন্ডের সাথে আমার ননাসের বাসায় থাকতাম। আমার শশুর-শাশুরিও ওখানেই থাকতেন। অনেক মানুষের মাঝে আমার কাজের প্রেসার থাকতো অনেক। এতোগুলো মানুষের মাধ্যে ওনারা কোনো কাজের মানুষ রাখতেন না তাই প্রচুর কাজের মথ্যে থাকতে হোতো। আমি এর মধ্যে মানিয়েই চলতেছিলাম। কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু আমার হাজবেন্ডের ইঙ্কাম কম, আমার শশুর-শাশুরির কথা চিন্তা করে মানিয়ে নিচ্ছিলাম। ওই সময় আমার হাজবেন্ডও আমাকে সাপর্ট দিচ্ছিলো। এভাবেই চলছিলো। আমার বিয়ের বয়েস তিন বছরের বেশি হবার পর খেয়াল করলাম আমার হাজবেন্ডের অফিসের একজন মহিলা কর্মীর সাথে অনেক বেশি মেলামেশা করে। প্রথম দিকে খুব একটা পাত্তা দেইনি। কিন্তু দিন দিন এই মেলামেশা বারতেই থাকলো এবং প্রথম প্রথম এই ইস্যুটা অনেক গোপন থাকলও আসতে আসতে খোলামেলা হচ্ছিলো।আমি একদিন আমার হাজবেন্ডের সাথে ব্যপারটা আলাপ করলাম উনি খুব একটা ইম্পর্টেন্স দিতে বারন করলো। কিন্তু আমি দেখলাম অদের যোগাযোগ দিন দিন কলিগের পর্যায় থেকে অন্য কিছুতে যাচ্ছিলো। কিন্তু এই ব্যপারে কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেই আমার হাজবেন্ড বাজে ব্যাবহার করতো তাই ভয়ে কিছু বলতাম না। আবার মাঝে মাজে মেজাজ ধরে রাখতে না পেরে চিল্লাচিল্লি করতাম। পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে লাগলো। ওর বাসার সবাই ব্যাপারটা জানতে পারলো কিন্তু তারা ওকে ওইভাবে কোনো শাসন করে নাই। একটু আধুটু বলে কিন্তু আমার হাজবেন্ড ওইগুলা পাত্তা দিতো না। সে তার কাজ করতেই থাকলো। এখন পর্যন্ত এমনি চলতেছে। ওদের সম্পর্ক এখন কোন পর্যন্ত আছে আমি জানি না। ওই মেয়ের সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ কমে যায় আবার মাঝে অনেক বেরে যায়। এভাবেই চলছি। আমার এই ইস্যুতে কি করা উচিৎ? এর মাঝে আরো একটি ঘটনা ঘটছে। গতো একবছর যাবত আমি এবং আমার হাজবেন্ড আমার ননাশের পরিবার থেকে আলাদা থাকি। আমার ননাশের মেয়ের বিয়ে হইছে এবং ননাশের মেয়ের জামাই মাঝে মাঝেই এই বাসায় বেরাতে আসে তাই সবার সম্মতিক্রমেই আমরা আলাদা হয়ে যাই। ওই বিল্ডিং্যেরি দুই তলা উপরে সম্পুর্ন ভাড়া দিয়ে থাকা শুরু করছি।আমার বাবার বাসা থেকে আমাকে যা গয়না দিয়ে দিছিলো আমি সেগুলো আমার ননাশের কাছে রাখছিলাম। ওখানেই ছিলো সেগুলো। এই বেশ কিছুদিন আগে আমার ননাশ আমাকে জানায় আমার গয়না গুলো নাকি মিসিং। পাচ্ছে না। হারিয়ে যাওয়া গয়নার পরিমান প্রায় সাত ভড়ি। ওইখানে ওনাদের অনেক গয়না ছিলো। শুধু আমারটাই মিসিং। আমার হাজবেন্ডকে জানালাম। তিনিও নির্লিপ্ত। কারো মাঝেই এইটা নিয়ে কোনো টেনশন অথবা কিছু চোখে পরে নাই। এর কিছুদিন পর ওনারা মাকে জানালো ওনারা নাকি কোনো এক হুজুরের সাথে আলাপ করছে এবং ওই হুজুর বলছে এই গয়না নাকি জিনে নিয়ে গেছে। এর পর ওনারা আমাকে কনফার্ম হবার ওই হুজুরের কাছে পাঠালেন। আমি হাজবেন্ডসহ ওই হুজুরের কাছে গেলাম। ওই হুজুর আমাকে জানাইলো এই গয়না জীনে নিছে এবং এটা আর কখনো আর পাওয়া যাবে না। আমি আমার কিছু ইসলামিক পন্ডিতের সাথে আলাপ করছি। ওনারা আমাকে বলছে কোনো জিন এভাবে কারো কোনো সম্পত্তি নেয় না। হ্যা, ওরা নেয়, কেউ যদি ওদের দিয়ে ক্ষতি করায় তখন ওরা ক্ষতি করার জন্য এই রকম সম্পত্তি ধংস করে। এই ইসূতে ইসলাম কি বলে দয়া করে জানাবেন। আর একটা পরামর্শ চাছি। আমার অনেক কথাই বল্লাম। এর মাঝেও অনেক অনেক ব্যপার আছে যা আলোচলা খুব বেশি জরুরি মনে হচ্ছে না। অথবা এতোকিছু আলাপ করাটা ঠিক সম্ভব না। এইসব কিছু বিবেচনা করে আমার কি করা উচিৎ? নিজের একজন দীনী বোন মনে করে ইস্লামের আলোয় আমাকে কিছু দিকনির্দেশনা দিবেন। পুরো লেখায় অনেক ভাষাগত ভুল, বানান ভুল এবং আরো কিছু ভুল ছিলো। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। জ্বীনেরা কারো সম্পদ এভাবে নিয়ে যায় না। এখানে জ্বীনের কোন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয় না। আল্লাহ ভাল জানেন। আপনি আপনার পরিবারের নিকটে আপনার স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি জানান এবং তার অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করতে বলুন। প্রয়োজনে ঐ মেয়ের অভিভাবকদের সাথেও আপনার পরিবারের লোকজন যেন যোগাযোগ করে। যদি আপনার স্বামী অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে তাহলে আপনারা সবাই মিলে তাকে চাপ দিয়ে এর থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে ঐ অফিসের চাকুরী বাদ দিয়ে অন্য অফিসে চাকুরী করবে বা অন্য কাজ করবে, এমন ব্যবস্থা করার চেষ্টা করুন।আর আপনার স্বামী যাদেরকে গুরুজন হিসেবে মানে তাদের কাউকে দিয়ে এই অবৈধ সম্পর্কের ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝানোর চেষ্টা করুন। তারা দুজন এক জায়গাতে থাকলে এই সমস্যার সমাধন হবে না। সুতরাং আলাদা যেভাবেই হোক হতে হবে। সর্বোপরি আপনি আল্লাহর কাছে সর্বদা দুআ করবেন। আর স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার আরো বাড়িয়ে দিন। এবংসম্ভব হলে অবৈধ সম্পর্কের কুফল তাকে বুঝানোর চেষ্টা করুন।