আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 5086

ঈমান

প্রকাশকাল: 2 জানু. 2020

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম, আমি হানাফি মাজহাবের। আমি শুনেছি যে, ইমান কাকে বলে? এই বিষয় নিয়ে অন্যান্য মাজহাবের সাথে হানাফি মাজহাবের কিছুটা পার্থক্য আছে। আমি এখনো আরবি শিখি নাই। তাই বলবেন, হানাফি মাজহাব অনুযায়ী অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার ও তদানুসারে আমল করাকে কি ইমান বলে? নাকি শুধু অন্তরে বিশ্বাস করাকে ইমান বলে?

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। নীচের হাদীস দুটি লক্ষ্য করুন: حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ عُمَارَةَ، – وَهُوَ ابْنُ الْقَعْقَاعِ – عَنْ أَبِي زُرْعَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ ‏ سَلُونِي ‏ ‏ فَهَابُوهُ أَنْ يَسْأَلُوهُ ‏.‏ فَجَاءَ رَجُلٌ فَجَلَسَ عِنْدَ رُكْبَتَيْهِ ‏.‏ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الإِسْلاَمُ قَالَ ‏ ‏ لاَ تُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ وَتَصُومُ رَمَضَانَ ‏ ‏ ‏.‏ قَالَ صَدَقْتَ ‏.‏ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الإِيمَانُ قَالَ ‏ ‏ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكِتَابِهِ وَلِقَائِهِ وَرُسُلِهِ وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ كُلِّهِ ‏ ‏ ‏.‏ قَالَ صَدَقْتَ ‏.‏ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الإِحْسَانُ قَالَ ‏ ‏ أَنْ تَخْشَى اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنَّكَ إِنْ لاَ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ‏ ‏ ‏.‏ قَالَ صَدَقْتَ ‏.‏ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى تَقُومُ السَّاعَةُ قَالَ ‏ ‏ مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ وَسَأُحَدِّثُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا إِذَا رَأَيْتَ الْمَرْأَةَ تَلِدُ رَبَّهَا فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا وَإِذَا رَأَيْتَ الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الصُّمَّ الْبُكْمَ مُلُوكَ الأَرْضِ فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا وَإِذَا رَأَيْتَ رِعَاءَ الْبَهْمِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا فِي خَمْسٍ مِنَ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلاَّ اللَّهُ ‏ ‏ ‏.‏ ثُمَّ قَرَأَ ‏(‏ إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَىِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ‏)‏ قَالَ ثُمَّ قَامَ الرَّجُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ ‏ رُدُّوهُ عَلَىَّ ‏ ‏ فَالْتُمِسَ فَلَمْ يَجِدُوهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ ‏ هَذَا جِبْرِيلُ أَرَادَ أَنْ تَعَلَّمُوا إِذْ لَمْ تَسْأَلُوا যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কী? রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ইসলাম হল, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কী? রাসুল বললেনঃ আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি, উত্থানের বিষয়ে এবং পুরোপুরি তাকদীরে ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহসান কী? রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করবে, যেন তাঁকে দেখছো, যদি তাকে না-ও দেখ; তাহলে (ধারণা করবে যে) তিনি তো তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আপনি যথার্থ বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত কখন ঘটবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সে ব্যাক্তি প্রশ্লকারীর চাইতে অধিক অবহিত নয়। তবে আমি কিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণনা করছি। যখন দেখবে, দাসী তার মুনিবকে জন্ম দেবে, এটা কিয়ামতের একটি আলামত। আর যখন দেখবে নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, বধির ও মূকেরা দেশের শাসক হয়েছে, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। আর যখন দেখবে, মেষপালক বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। পাঁচটি অদৃশ্য বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত কেউ কিছু জানেনা। তারপর (তিনি কুরআনুল -এর আয়াত) তিলাওয়াত করলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর কাছে রয়েছে কিয়ামতের মতের জ্ঞান। তিনি নাযিল করেন বৃষ্টি এবং তিনি জানেন, যা রয়েছে মাতৃগর্ভে। জাননা কেউ, কি উপার্জন করবে সে আগামীকাল। আর জাননা কেউ, কোন মাটিতে (দেশে) সে মারা যাবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব জানেন, সব খবর রাখেন। (সূরা লুকমানঃ ৩৪) তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেনঃ তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হল, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনি জিবরীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দ্বীন সমন্ধে জ্ঞান লাভ কর। সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০৮, বুখারী, হাদীস নং ৪৪৯৯ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي جَمْرَةَ، قَالَ كُنْتُ أُتَرْجِمُ بَيْنَ ابْنِ عَبَّاسٍ وَبَيْنَ النَّاسِ فَقَالَ إِنَّ وَفْدَ عَبْدِ الْقَيْسِ أَتَوُا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏ ‏ مَنِ الْوَفْدُ ـ أَوْ مَنِ الْقَوْمُ ‏ ‏‏.‏ قَالُوا رَبِيعَةُ‏.‏ فَقَالَ ‏ ‏ مَرْحَبًا بِالْقَوْمِ ـ أَوْ بِالْوَفْدِ ـ غَيْرَ خَزَايَا وَلاَ نَدَامَى ‏ ‏‏.‏ قَالُوا إِنَّا نَأْتِيكَ مِنْ شُقَّةٍ بَعِيدَةٍ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ هَذَا الْحَىُّ مِنْ كُفَّارِ مُضَرَ، وَلاَ نَسْتَطِيعُ أَنْ نَأْتِيَكَ إِلاَّ فِي شَهْرٍ حَرَامٍ فَمُرْنَا بِأَمْرٍ نُخْبِرْ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، نَدْخُلُ بِهِ الْجَنَّةَ‏.‏ فَأَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ، وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ أَمَرَهُمْ بِالإِيمَانِ بِاللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَحْدَهُ‏.‏ قَالَ ‏ ‏ هَلْ تَدْرُونَ مَا الإِيمَانُ بِاللَّهِ وَحْدَهُ ‏ ‏‏.‏ قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ‏.‏ قَالَ ‏ ‏ شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامُ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ، وَصَوْمُ رَمَضَانَ، وَتُعْطُوا الْخُمُسَ مِنَ الْمَغْنَمِ ‏ ‏‏.‏ وَنَهَاهُمْ عَنِ الدُّبَّاءِ وَالْحَنْتَمِ وَالْمُزَفَّتِ‏.‏ قَالَ شُعْبَةُ رُبَّمَا قَالَ النَّقِيرِ، وَرُبَّمَا قَالَ الْمُقَيَّرِ‏.‏ قَالَ ‏ ‏ احْفَظُوهُ وَأَخْبِرُوهُ مَنْ وَرَاءَكُمْ ‏ ‏‏.‏ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) … আবূ জামরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও লোকদের মধ্যে দোভাষীর কাজ করতাম। একদিন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলে, তিনি বললেনঃ তোমরা কোন্ প্রতিনিধি দল? অথবা বললেনঃ তোমরা কোন্ গোত্রের? তারা বলল, রাবীআ গোত্রের। তিনি বললেনঃ মারহাবা। এ গোত্রের প্রতি অথবা এ প্রতিনিধি দলের প্রতি, এরা কোনরূপ অপদস্থ না হয়েই এসেছে। তারা বলল, আমরা বহু দূর থেকে আপনার কাছে এসেছি। আর আমাদের ও আপনার মাঝে রয়েছে কাফিরদের এই মুযার গোত্রের বাস। আমরা হারাম মাস ছাড়া আপনার কাছে আসতে সক্ষম নই। সুতরাং আমাদের এমন কিছু নির্দেশ দিন, যা আমাদের পশ্চাতে যারা রয়েছে তাদের কাছে পৌঁছাতে এবং তার ওসীলায় আমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারি। তখন তিনি তাদের চারটি কাজের নির্দেশ দিলেন এবং চারটি কাজ থেকে নিষেধ করলেন। তাদের এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেনঃ এক আল্লাহর উপর ঈমান আনা কিরূপে হয় জানো? তারা বললঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ তা হল এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত দেওয়া এবং রমযান এর সিয়াম পালন করা আর তোমাদের গনীমাতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ দান করবে। আর তাদের নিষেধ করলেন শুকনো লাউয়ের খোল, সবুজ কলস এবং আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র ব্যবহার করতে। শুবা বলেন, কখনও (আবূ জামরা) খেজুর গাছ থেকে তৈরী পাত্রের কথাও বলেছেন আবার তিনি কখনও (النقير) এর স্থলে (المقير) বলেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এগুলো মনোযোগ সহকারে স্মরণ রাখ এবং তোমাদের পশ্চাতে যারা রয়েছে তাদের পৌঁছে দাও। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৭। প্রথম শুধু অন্তরের বিশ্বাসকেই ইমান বলা হয়েছে আর আমলগুলোকে ইসলাম বলা হয়েছে।দ্বিতীয় হাদীসে আমলগুলোকেও ইমানের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এই দুটি হাদীসে থেকে বুঝা যায় শুধু অন্তরের বিশ্বাস দ্বারা ঈমান পরিপূর্ণ হয় না, ঈমান পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য আমল আবশ্যক। তবে ঈমান মূলত অন্তরের বিষয়ই। হানাফী মাজহাব এমনই বলে।