আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

সাম্প্রতিক সংবাদ

তাকদীর বা আল্লাহর নির্ধারণে বিশ্বাস (পর্ব-৩)

ইসলামি তাকদীরে বিশ্বাস ও অনৈসলামিক ভাগ্যে বিশ্বাসকে অনেকে এক করে ফেলেন। অনেকে মনে করেন ভাগ্য অনুসারেই যখন সবকিছু হবে তখন কর্মের কী দরকার! এটি পুরোপুরি ইসলাম বিরোধী বিশ্বাস। কুরআন কারীমের বর্ণনায় আমরা দেখতে পাই যে, মক্কার কাফিরগণ এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করত।1দেখুন: সূরা: (৬) আনআম, আয়াত: ১৪৮—১৪৯; সূরা: (৭) আ’রাফ, আয়াত: ২৮।

যে অবিশ্বাসী তাকদীর

নিয়ে বিবাদ করে, তাকদীরের দোহাই দিয়ে কর্ম ছেড়ে দেয় সে মূলত নিজেকে আল্লাহর কর্মের পরিদর্শক ও বিচারক নিয়োগ করেছে। সে বলতে চায়, কর্ম করা আমার দায়িত্ব নয়। আমার কাজ হল, আল্লাহর জ্ঞানের ও কর্মের বিচার করা! আল্লাহ কেন তা জানলেন বা করলেন তা হিসাব করে বের করা!!

অপরদিকে মুমিন সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করেন যে, স্রষ্টার কর্মের বিচার করা মানুষের কর্ম বা দায়িত্ব নয়। তিনি কী জানেন, কী লেখেছেন, কীভাবে লেখেছেন, কী মুছেন আর কী রেখে দেন— কিছুই মানুষকে জানান নি। কারণ এসব জানা মানুষের কোনো কল্যাণে লাগবে না। এ সবকিছুই তাঁর মহান প্রতিপালন বা রুবুবিয়্যাতের অংশ। মানুষের কাজ হল, আল্লাহর দয়া, ভালোবাসা ও ন্যায় বিচারের উপর অবিচল আস্থা রেখে তাঁর নির্দেশ মতো কর্ম করা ও ফলাফলের জন্য কোনো প্রকারের উৎকন্ঠা বা উদ্বেগ মনে স্থান না দেওয়া।

ইসলামের তাকদীরে

বিশ্বাস মুসলিমকে কর্মময় করে তোলে, কখনোই কর্মবিমুখ করে না। তাকদীরে বিশ্বাসের ফলে মানুষ সকল হতাশা, অবসাদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পায়। তাকদীরে বিশ্বাসী মুসলিম জানে যে, তার দায়িত্ব হল কর্ম করা, ফলাফলের জন্য দুশ্চিন্তা বা উৎকণ্ঠা তার জীবনে অর্থহীন। কারণ ফলাফলের দায়িত্ব এমন এক সত্তার হাতে যিনি তাকে তার নিজের চেয়েও ভালোবাসেন, ভালো জানেন, যিনি দয়াময়, যিনি কাউকে যুলুম করেন না। যিনি তাঁর বান্দাকে কর্মের চেয়ে বেশি পুরস্কার দান করেন। এজন্য প্রকৃত মুমিনের অন্তর সর্বদা দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা মুক্ত।

তাকদীরে বিশ্বাস

মানুষকে সকল অহঙ্কার, অতি উল্লাস ও হতাশা থেকে রক্ষা করে। সফলতা বা নিআমতে সে অহঙ্কারী হয় না। কারণ সে জানে যে, আল্লাহর ইচ্ছা ও রহমতেই তার সফলতা এসেছে। তার হৃদয় কানায় কানায় ভরে উঠে কৃতজ্ঞতায়। কৃতজ্ঞ হৃদয় আর অহঙ্কারী হৃদয়ের পার্থক্য হল, মানবিক ও পাশবিক হৃদয়ের পার্থক্য।

অপরদিকে মুমিন ব্যর্থতা ও পরাজয়ে হতাশ হয় না। সে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর ইচ্ছা ও জ্ঞান অনুযায়ী সে ফল পেয়েছে। প্রেমময় করুণাময় প্রভু চাইলে এই ফল পরিবর্তন করতে পারবেন। নিশ্চয় এর মধ্যে কোনো কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এছাড়া বিশ্বাসীর জীবনে মূলত ব্যর্থতা বা পরাজয় বলে কোনো শব্দই নেই। কারণ সে জানে যে, কোনো কর্মের জাগতিক ফলাফলের হিসাবে সে ব্যর্থ হলেও আল্লাহর কাছে তার প্রচেষ্টা, কর্ম ও ধৈর্যের অফুরন্ত পুরস্কার সংরক্ষিত রয়েছে। জাগতিক বরকত ও আখিরাতের সাওয়াব হিসাবে সে তা লাভ করবে।

চলবে…

__________

বই : মুসলমানী নেসাব

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
আপনার ইমেইল
Print

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.