১. ৩. বেলায়াত ও আত্মশুদ্ধি

মহান আল্লাহ বলেন: “আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি আল্লাহর আয়াত তাদের কাছে আবৃত্তি করেন, তাদেরকে ‘তাযকিয়া’ (পরিশোধন) করেন এবং কিতাব ও প্রজ্ঞা (সুন্নাত) শিক্ষা দেন।” অনুরূপভাবে বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে আল্লাহর আয়াত পাঠ করা, কিতাব ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেওয়া ও ‘তাযকিয়া’ বা পরিশোধন করাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মূল মিশন। 

অন্যত্র আল্লাহ বলেন: “সেই সফলকাম হবে, যে নিজেকে ‘তাযকিয়া’ (পবিত্র) করবে এবং সেই ব্যর্থ হবে, যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে।” আরো বলা হয়েছে: “নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে যে ‘যাকাত’ (পবিত্রতা) অর্জন করে। এবং তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে অতঃপর সালাত আদায় করে।” এ থেকে জানা যায় যে, তাযকিয়া বা তাযকিয়া নফস বা আত্মশুদ্ধিই সফলতার মূল।

‘তাযকিয়া’-র ব্যাখ্যায় ইমাম তাবারী বলেন, তাযকিয়া শব্দটি ‘যাকাত’ থেকে গৃহীত। যাকাত অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। এ সকল আয়াতে ‘তাযকিয়া’ অর্থও পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিনগণকে শিরক ও গাইরুল্লাহর ইবাদত থেকে পবিত্র করেন এবং আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। সাহাবী-তাবিয়ীগণও এভাবেই আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা করেছেন। ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর আনুগত্য, ইখলাস ও নির্ভেজাল তাওহীদের মাধ্যমে তাদের তাযকিয়া করেন। তাবিয়ী ইবনু যুরাইজ বলেন, তিনি তাদেরকে শিরক থেকে পবিত্র করেন।

এভাবে আমরা দেখছি যে, দীনের সকল কর্মই ‘তাযকিয়া’-র অন্তভুর্ক্ত; কারণ সকল কর্মই মুমিনকে কোনো না কোনভাবে পবিত্র করে এবং তার সাওয়াব, মর্যাদা ও পবিত্রতা বৃদ্ধি করে। তবে এক্ষেত্রে হার্দিক বা মানসিক বিষয়গুলোর প্রতি কুরআন-হাদীসে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কুরআনকে সকল মনোরোগের চিকিৎসা বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে: “হে মানব জাতি, তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে এসেছে উপদেশ এবং তোমাদের অন্তরে যা আছে তার চিকিৎসা।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “জেনে রাখ! দেহের মধ্যে একটি মাংসপিণ্ড রয়েছে, যদি তা সংশোধিত হয় তবে পুরো দেহই সংশোধিত হয় আর যদি তা নষ্ট হয় তবে পুরো দেহই নষ্ট হয়। জেনে রাখ তা অন্তকরণ।”

এথেকে আমরা দেখি যে, বেলায়াতের পথের ৮টি পর্যায়ই তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধির পর্যায় ও কর্ম। আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রেও ফরয ও নফল এবং করণীয় ও বর্জনীয় কর্ম রয়েছে। শিরক, কুফর, আত্মপ্রেম, কুরআন-সুন্নাহের বিপরীতে নিজের পছন্দকে গুরুত্ব প্রদান, হিংসা, অহংকার, লোভ, রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা, ক্রোধ, নিষ্ঠুরতা ইত্যাদি থেকে হৃদয়কে মুক্ত ও পবিত্র করতে হবে। এগুলো বর্জনীয় মানসিক কর্ম। মনকে ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, আল্লাহ-ভীতি, আল্লাহর রহমতের আশা, আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্টি, নির্লোভতা, সকলের প্রতি ভালবাসা, কল্যাণকামনা ইত্যাদি বিষয় দিয়ে পরিপূর্ণ করতে হবে। এগুলো করণীয় মানসিক কর্ম। এগুলোর ফরয ও নফল পর্যায় আছে। আমরা বুঝতে পারিছ যে, শির্ক, আত্মপ্রেম ইত্যাদিতে মন ভরে রেখে পাশাপাশি সবর, শোকর, ক্রন্দন ইত্যাদি গুণ অর্জনের চেষ্টা করা বিভ্রান্তি ও ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়।

 

বই: রাহে বেলায়াত

লেখক: ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ

প্রকাশ: জুন ২০২২, পৃ. ৪৯-৫০