প্রশ্ন-০৪: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে জগতবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছিলেন কি না? নবীজির কাছ থেকে জগতবাসী কী রহমত পেয়েছে, কুরআন থেকে বলতে হবে।

উত্তর: কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রহমতস্বরূপ। আর ইঞ্জিলে ঈসা মসীহ বলছেন, আমি গযব। সেই ইঞ্জিলওয়ালারা এসে দাবি করছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রহমত নয়। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে রহমতের কী আমরা পাইনি? খুব ভালো করে বোঝেন, অসভ্যতা, বর্বরতা থেকে মানবতা মুক্তি পেয়েছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে। আপনারা ভালো করে মানবতার ইতিহাস পড়েন। যিশুখ্রিস্ট নামে যে কেউ ছিল, ইতিহাসে নেই। পুরো মানব জাতি, বিশ্বজগত তার থেকে কিচ্ছু পায়নি। শুধু বিশ্বাস করতে হবে, তিনি আমাদের রক্ত নিয়ে মরে গেছেন। তাহলে বেঁচে যাবে। কোনো আদর্শ, চরিত্র, কর্ম, সততা- কিছুই পায়নি। বরং বাইবেলে যুলুম, অন্যায়, পাপের সমর্থন করা হয়েছে। একটা নবী কেন আসেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আসলেন, সারা বিশ্বে মানুষের ভেতরে যে যুলুম অনাচার ছিল, সেগুলো তাঁর মাধ্যমে দূর হয়েছে। শান্তির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাঁর মাধ্যমে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি প্রতিটি মানুষকে রহমত দিয়েছেন। রহমতের মালিক তো আল্লাহ। কিন্তু পাইতে গেলে একটা পথ লাগবে। সেই পথটা হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কীভাবে?

একজন যুবকের জন্য মডেল আছে। তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। একজন যুবক কেমন হবে, তার মডেল আছে। একজন স্বামী কেমন হবে, তার মডেল আছে। একজন শাসক কেমন হবে, তার মডেল আছে। একজন কর্মচারী কেমন (হবে), তার মডেল আছে। একজন সংসারী কেমন হবে, তার মডেল আছে। এই মডেল বা আদর্শগুলোই হল রহমত। এর মাধ্যমে রহমত পাবে। জগতবাসী প্রথম রহমত পেয়েছে, বিশ্ব থেকে যুলুম উঠে গেছে।

মানবতার ইতিহাস পড়েন। রোমান সাম্রাজ্য, মিসরে, পারস্যে- সারাবিশ্বে কী যুলুম ছিল, আর সেই যুলুম থেকে বাঁচার জন্য স্পেন থেকে চীন পর্যন্ত মানুষেরা কীভাবে মুসলিমদের জন্য বসে ছিল, পড়লে পাবেন। বিশ্বাস করেন, আমার দেশে, আমার দেশে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা যে শান্তিতে আছে, ভারতে তা নেই। ভারতে কোনো শূদ্রহিন্দু যদি কোনো উচ্চ হিন্দুকে স্পর্শ করে, তাহলে ওই উচ্চ হিন্দু নাপাক হয়ে যায়। কোনো মন্দির স্পর্শ করে, মন্দির নাপাক হয়ে যায়। এই জন্য দূরে সরে থাকতে হয়। এই রকম ঘটনা ভারতে অনেক ঘটে। একজন শূদ্রের শিশু মন্দিরে ঢুকেছে, মন্দির নাপাক করার অপরাধে ওই শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছে। সরকারি আইনে কোনো পার্থক্য নেই, বৈষম্য নেই। কিন্তু সমাজে আছে। স্কুলে শূদ্রের ছেলেও পড়ে ব্রাহ্মণের ছেলেও পড়ে। কিন্তু পানি খাওয়ার ব্যবস্থা হল, শূদ্রের ছেলে পানির কলস বা গ্লাসে হাত দিতে পারবে না। স্যারের কাছে চাইবে, স্যার মগ ভরে দেবে, মগ স্পর্শ ছাড়া ও হা করে খাবে। এখন এক শূদ্রের ছেলে কাউকে পায়নি, পিপাসা লেগেছে, মগে হাত দিয়েছে। মগ নাপাক করার কারণে তাকে খুন করা হয়েছে।

আপনি মানবতার রহমত পেতে চান! আপনি আমার কিতাবুল মোকাদ্দস বইটা পড়েন। ধর্মের নামে বিগত দুইহাজার বছরে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা- পাগল হয়ে যাবেন- অন্তত কয়েক কোটি মানুষকে জীবন্ত হত্যা করেছে। আপনি ইন্টারনেটে যাবেন, দেখবেন, কলম্বাস যখন আমেরিকায় গেল- ছবিও আছে, চাইলে ছবিও দেখতে পারবেন- কলম্বাস যখন আমেরিকায় গেল, তখন কলম্বাস ও তার সাথীরা বাইবেল নিয়ে গেল। ওই দেশে যারা রেড ইন্ডিয়ান, তাদেরকে বলল, খ্রিস্টান হতে হবে। ওরা তো বোঝে না। যারা খ্রিস্টান হল না, ওদেরকে ধরে ধরে ফাঁসি দেয়া হত। তবে ফাঁসির দড়িটা এমনভাবে বাঁধা হত, পা’টা মাটির কাছাকাছি রাখা হত। যেন মরে, আবার মরে না। মরে আবার মরে না। ঝুলে আছে, মরে যাচ্ছে, পা মাটিতে লাগছে, ওরা পা সরিয়ে দিচ্ছে। এটা আমার কথা নয়, খ্রিস্টানদের লেখা ব্লগে আছে। আমার কাছে গেলে আমি দেখাব। আধমরা মানুষগুলোকে পেট চিরে চিরে, পা কেটে কেটে, জিভ কেটে কেটে, জীবন্ত মানুষকে আযাব দিয়ে দিয়ে তারা হত্যা করেছে। অপরাধ- তুমি কেন খ্রিস্টান হলে না! True faith 

 বা সত্যধর্ম গ্রহণ করলে না কেন! ইনকুইজিশন (Inquisition) পড়েন, ক্রিশ্চিয়ানাইজেশন (Christianization) পড়েন, উইকিপিডিয়াতেই পাবেন। আমি মুসলিমদের লেখা বই পড়তে বলছি না। এই হিংস্রতা, পাশবিকতা বন্ধ করেছেন একমাত্র মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুযায়ী হিটলারও যে জান্নাতে যাবে, মাদার তেরেসাও কিন্তু সেই জান্নাতে যাবে। কারণ তাদের মতে জান্নাতে যেতে তো কোনো আমল লাগে না। শুধু ‘বিশ্বাস’ থাকলেই হয়। তবে হিটলার কিন্তু বড় ভালো কাজ করেছে। সে সত্তরলক্ষ নিরপরাধ ইয়াহুদিকে গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে লাশ পর্যন্ত পুড়িয়ে ফেলেছে। এবং খ্রিস্টান পাদ্রীরা এটাকে সমর্থন করেছে- ইয়াহুদিদেরকে মারতে হবে। ইয়াহুদিরা আমাদের যিশুখ্রিস্টকে মেরেছিল। কথা বোঝেননি? কালকে আসবেন, আমি আপনাকে দেখাব ইন্টারনেটে। এই যে বর্বরতা, পাশবিকতা, এর কোনো নমুনা পাবেন না মুসলিমদের দেশে। খারাপ মুসলিমদের দেশেও, যাদেরকে সবাই খারাপ বলে, সেখানেও ধর্মের জন্য কোনো অমুসলিমকে মারা হয়নি। অন্য ধর্মের মানুষদেরকে মুসলিম না হওয়ার কারণে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়নি। এমন কোনো নমুনা নেই। খুব ভালো করে বোঝেন। বর্তমান যুগে সবচে’ খারাপ বলা হত তালেবানদেরকে। তাই না? বর্বর, জঙ্গি কতকিছু বলেছে। সেই তালেবানদের জেলখানায় থেকে গেছে যেসব খ্রিস্টান, তারা দেশে গিয়ে মুসলিম হয়েছে। জেলখানায় থেকেছে, কিন্তু তালেবানরা অন্তত শরীআহবিরোধী কোনো আচরণ তাদের সাথে করেনি।

তো এই জন্য ভাইয়েরা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী রহমত দিয়েছেন মানবতার জন্য, আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন:

﴾وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ﴿

“আমি আপনাকে মহাজগতের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি।” এই রহমত এখনো আছে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ, তাঁর চরিত্র, তাঁর আখলাক, তাঁর দীন-বিশ্বাস মানুষের ভেতরে যত বেশি আসবে, তাঁর রহমত তত প্রস্ফুটিত হবে। যে ব্যক্তি যতবেশি নেবে, সে তত রহমত পাবে। তাঁর মডেল, তাঁর আদর্শ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত আছে। তিনি ছাড়া আর কারো মাধ্যমে মানব জাতি এই রহমত পায়নি। আপনি চাইলে অন্য নবী বলেন, যে কোনো ধর্ম বলেন, ইতিহাস বলেন, আপনি আসবেন, ইনশাআল্লাহ, বিস্তারিত আমি দেখাব।