প্রশ্ন-০৩: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিচারের দিনে সুপারিশ করতে পারবেন কি না? কুরআন থেকে জবাব দেবেন।

উত্তর: কুরআন থেকেই দিতে হবে? ইঞ্জিল থেকে দিলে সমস্যা কী? এটাও খ্রিস্টানরা প্রচার করে। খ্রিস্টানরা প্রচার করে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাপী। ‘নাউযুবিল্লাহ’ একজনও বললেন না! কাজেই উনি পাপীদের সুপারিশ করতে পারবেন না। আর ঈসা মসীহ নিষ্পাপ। উনি সুপারিশ করবেন। অথচ আমি চ্যালেঞ্জ করব, তোমরা যে কেউ কুরআন থেকে প্রমাণ করো যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা গোনাহ করেছেন, মিছে কথা বলেছেন, জিনা করেছেন, মদ খেয়েছেন, পরের হক নষ্ট করেছেন, পরের গরু চুরি করেছেন, পরের গাছ পুড়িয়ে দিয়েছেন- একটা পাপ প্রমাণ করো, আমি তোমাকে হাজার কোটি টাকা দেব। আর আমি তোমার এই ইঞ্জিল শরীফ দিয়ে প্রমাণ করব, তোমাদের যিশুখ্রিস্ট, আমাদের ঈসা মসীহ নয়, তোমরা তাঁর নামে যে জাল কিতাব বানিয়েছ, সেই ইঞ্জিল শরীফ দিয়ে প্রমাণ করব যে, যিশুখ্রিস্ট মিথ্যা কথা বলেছে, যিশুখ্রিস্ট বেশ্যা মেয়েদেরকে জড়াজড়ি করতে দিয়েছে, যিশুখ্রিস্ট পরের দ্রব্য নষ্ট করেছে, দুইহাজার প্রাণি একবারে মেরে ফেলেছ, পরের গাছ পুড়িয়ে মেরেছে, গালাগালি দিয়েছে, মদ খেয়ে মাতাল হয়ে কাপড় খুলেছে। নাউযুবিল্লাহ। এটা ইঞ্জিলে আছে।

দুটো উদাহরণ দিই। মনে করেন, এই যে আম গাছগুলো দেখছেন, আম ধরে কখন? কার্তিক মাসে কি আমগাছে আম থাকে? থাকে না। বাংলাদেশের কোনো শিক্ষিত—অশিক্ষিত—মূর্খ লোক কার্তিক মাসে আম পাড়তে গাছে উঠবে? উঠবে না। তো এখন, ইঞ্জিল শরীফে বলা হচ্ছে, ঈসা মসীহ জেরুসালেমে যাচ্ছেন, খুব খিদে লেগেছে। দেখলেন যে ডুমুর গাছ। মনে করেন আমগাছ। ইঞ্জিলেই লেখা হচ্ছে তখন আমের সময় নয়। অসময়। তবুও আম পাওয়া যায় নাকি দেখতে গেলেন। যেয়ে দেখেন যে আমগাছে আম নেই। ডুমুর গাছে ডুমুর নেই। তখন বদদু‘আ দিয়ে গাছটা পুড়িয়ে মেরে ফেললেন। এটা ভালো কাজ হল, না খারাপ কাজ হল? যদি কোনো খ্রিস্টান বলেন যে ভালো কাজ, তাহলে আমরা পেট্রোল ঢেলে উনার গাছটা পুড়িয়ে দেব। প্রথম কথা হল, কার্তিক মাসে আম না থাকায় আমের কোনো দোষ আছে? আমগাছে আম না থাকায় আমগাছের কোনো দোষ আছে কি না? নির্দোষ একটা জিনিসকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা কোনো ভালো কাজ না। গাছটার যদি কোনো মালিক থাকে, তাহলে মালিকের ক্ষতি করল। মালিকের না হয়ে যদি জঙ্গলের গাছ হয়, তারপরেও গাছটা বেঁচে গেলে পশুপাখি ফল পেত। ঠিক না? মানুষ ফল পেত। আল্লাহর কত সৃষ্টি উপকার পেত। তো বিনা অপরাধে একটা গাছ পুড়িয়ে ফেলা অনেক সাওয়াবের কাজ, ঠিক না বলেন?! যদি কোনো খ্রিস্টান বলেন সাওয়াবের কাজ, তাহলে আমরা তার বাড়ির সব গাছ পোড়ায়ে দিতে রাজি। সাওয়াব বেশি হবে।

ইঞ্জিলের আরেকটা বর্ণনা: যিশুখ্রিস্ট যাচ্ছেন পথ দিয়ে, একজন জিনে ধরা পাগলের সাথে দেখা। উনি জিন তাড়ানোর জন্য ফুঁ দিলেন। তার ঘাড়ে নাকি অনেকগুলো জিন ছিল। জিনগুলো বলল, হুযুর, আপনি পারমিশন দেন, ওই যে ওখানে দুইহাজার শুয়োর চরছে- শুয়োর কিন্তু খ্রিস্টানদের কাছে হারাম নয়- আমরা ওই শুয়োরগুলোর কাছে যাব। তিনি বললেন, যাও। তখন ওই পাগলের মাথা থেকে ভূতগুলো বেরিয়ে শুয়োরের ভেতরে চলে গেল। সঙ্গেসঙ্গে দুইহাজার শুয়োর লাফাতে লাফাতে সাগরে গিয়ে লাফ দিলে মরে গেল। আর যারা মালিক ছিল, ভয়ে পালিয়ে গেল। তো একজন মানুষের দুইহাজার শুয়োর মেরে ফেলা সাওয়াবের কাজ না গোনাহের কাজ? যদি সাওয়াবের কাজ হয়, তাহলে আমরা খ্রিস্টান ভাইদের বাড়িতে যেয়ে গরু-ছাগল মেরে আসব। যদি তারা রাজি হয় তাহলে আমরা আরেকটু ভালো কাজ করতে পারি। মেরে খেয়ে নেব। মেরে ফেলে দেয়ার চেয়ে তো খাওয়া ভালো কাজ, আপনারা কী বলেন? ভূত যদি ছাড়াতে হয়, তাহলে ভূতটা তাড়িয়ে দেয়া যেত না? দুইহাজার প্রাণ হত্যা করার কী দরকার ছিল? এমন আরো অগণিত বিষয় আছে। ঘটনা হল, জাল জিনিস বানালে মিছে কথা হয়-ই। তারা যখন লিখেছে, ভেবেছে এটা খুব ভালো কারামতির ব্যাপার। কিন্তু আসলে যে এগুলো যিশুখ্রিস্টকে বেইজ্জত করছে, তখন বুঝতে পারেনি।

কুরআন কারীমে খুব স্পষ্টভাবে আছে, সূরা নিসার ভেতরে:
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا

“মানুষেরা যদি গোনাহ করে, অন্যায় করে রাসূলের কাছে মাফ চায়, রাসূলও তাদের জন্য মাফ চায়, আল্লাহ তাদেরকে মাফ করবেন।” তো রাসূলের সুপারিশ আল্লাহ কবুল করবেন, না করবেন না? আল্লাহ কী বলেছেন, শুধু দুনিয়াতে করবেন, আখিরাতে করবেন না? বলেননি। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ তাঁকে (রাসূলকে) দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতে শ্রেষ্ঠ মাকাম দেবেন। মাকামে মাহমুদ।

তৃতীয় বিষয় হল, খ্রিস্টানরা বলে, কুরআনে আছে, মুনাফিকরা মারা গেলে, আল্লাহ বলেছেন, ওদের জন্য দু‘আ কোরো না। ওদের ঈমান নেই। কাজেই ওদের জন্য সত্তর বার দু‘আ করলেও আমি গ্রহণ করব না। খ্রিস্টানরা এটা দেখিয়ে বলবে, এই দেখো, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্তরবার দু‘আ করলেও আল্লাহ নেবেন না সেটা। সে তো মুনাফিক, ওর ঈমান নেই, তাই আল্লাহ নেবেন না। আর ইঞ্জিলে আছে, ঈসা মসীহ বলছে, কিয়ামতের দিন অনেকে আমার কাছে আসবে, যারা আমাকে দুনিয়াতে রাব্বি রাব্বি বলেছে, হুযুর হুযুর বলেছে, তারা আসবে। তারা এসে বলবে, হুযুর আমাদের তরায়ে নেন। আমি বলব, আমি তোমাদের চিনি না। আমি পারব না। তারা বলবে, হুযুর, আমরা আপনার নামে অনেক কারামতি দেখিয়েছি। জীবনভর আপনার ধর্ম প্রচার করেছি। তিনি বলবেন, না, পারব না। আমার মালিক আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে গেলে কারোর কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই।