জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সষ্টির সেবা, মানব-সেবা, ও সমাজের অসহায়, দুর্বল বা বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্যতম সুন্নাত ও শিক্ষা। এ মহান সুন্নাত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে: ‍

(১) সাধারণ সেবা প্রকল্প

দুস্থ ও বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্যতম সুন্নাত। তিনি বলেন: “যে মানুষ অন্য মানুষদের জন্য অধিক উপকারী সেই আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। আল্লাহর নিকট প্রিয়তম কর্ম যে, তুমি কোনো মুসলিমের জীবনে আনন্দ প্রবেশ করাবে, তার কোনো বিপদ-কষ্ট দূর করবে, তার কোনো ঋণ দূর করবে অথবা তার ক্ষুধা দূর করবে। আমার কোনো ভাইয়ের প্রয়োজনে তার সাথে পথচলা আমার কাছে মসজিদে নববীতে একমাস ইতিকাফ করা থেকে প্রিয়তর।” (তাবারানী, সহীহুল জামি, হাদীসটি হাসান)

এ সুন্নাতকে জীবন্ত করতে “আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট” দরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারকে সাধ্যমত আর্থিক সাহায্য, পোশাক বা শীত বস্ত্র প্রদান, নলকূপ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-বৃত্তি প্রদান, প্রয়োজনীয় সমাজিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সাহায্যপ্রার্থী ও দুযোর্গে আক্রান্তদের সহায়তা ছাড়াও সমাজের যে সকল দুস্থ ব্যক্তি সামাজিক মর্যাদা বা অন্য কারণে সাহায্য চাইতে পারেন না, তাদেরদকে চিহ্নিত করে গোপন ও সম্মানজনক সহায়তায় ট্রাস্ট সচেষ্ট।

(২) দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প

ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচনে রত থাকা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্যতম সুন্নাত। আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস সুন্নাহ ট্রাস্ট সুন্নাতে নববীর আলোকে কায়িক শ্রম ও কর্মের ফযীলত বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি কর্মক্ষম নারী ও পুরুষদেরকে আর্থিক সহায়তা, কর্ম বা ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ, সামাজিক সমর্থন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

(৩) আদর্শ দারিদ্র্যমুক্ত “যাকাত-গ্রাম” প্রকল্প

দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের মূল ব্যবস্থা “যাকাত”। কৃষি প্রধান দেশে “উশর” বা ফসলের যাকাত এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারে। আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস সুন্নাহ ট্রাস্ট-এর সেবা ও উন্নয়ন মূলক অধিকাংশ প্রকল্পই যাকাত ও উশর নির্ভর। এগুলির পাশাপাশি যাকাত ও উশর ভিত্তিক “আদর্শ দারিদ্র-মুক্ত গ্রাম” প্রতিষ্ঠা ট্রাস্টের অন্যতম প্রকল্প। বাছাইকৃত গ্রামের দরিদ্র, বেকার, ইয়াতিম, বিধবা ও দুস্থদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে সাময়িক সাহায্য, শিক্ষা বৃত্তি, কর্মসংস্থান, কর্ম-উপকরণ প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে গ্রামটিকে দারিদ্র মুক্ত ও স্বনির্ভর করে তোলা এ প্রকল্পের লক্ষ্য।

(৪) কর্জে হাসানা বা সূদমুক্ত ঋণদান প্রকল্প

দারিদ্র বিমোচন ও সহমর্মী সমাজ গঠনে যাকাতের পাশাপাশি কর্জে হাসানা বা সূদমুক্ত সহজ ঋণের গুরুত্ব অপরিসীম। ঋণের প্রকৃতি ও উপকার হিসেবে হাদীস শরীফে একে দানের অর্ধেক, সমান বা বেশি সাওয়াবের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, দুবার ঋণ প্রদান একবার দান করার মতই। (সহীহুত তারগীব, হাদীসটি সহীহ)। অন্য হাদীসে তিনি বলেন: “প্রত্যেক ঋণই দান” (সহীহুত তারগীব, হাদীসটি হাসান)। অন্য হাদীসে তিনি বলেন: “জান্নাতের দরজায় লেখা রয়েছে যে, দানের সাওয়াব দশগুণ আর ঋণের সাওয়াব আঠারো গুণ।” (তাবারানী, সহীহুত তারগীব, হাদীসটি হাসান)। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে দান করার চেয়ে ঋণ দেওয়াকে উত্তম বলা হয়েছে। (সহীহুত তারগীব)

সাময়িক বিপদগ্রস্ত অনেক মুসলিম যাকাত গ্রহণ করতে পারেন না। তাদেরকে সহজ ঋণের মাধ্যমে সহায়তা করার পাশাপাশি যাকাত ও ঋণের সমন্বয় ট্রাস্টের অন্যতম লক্ষ্য। সঠিক তত্ত্বাবধান না থাকলে অধিকাংশ যাকাত-গ্রহীতা যাকাতের রিকশা, গাভী ইত্যাদি কিছুদিনের মধ্যে বিক্রয় করেন। যাকাত ও ঋণের সমন্বয় করলে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব। যেমন একজন দরিদ্রকে ১০ হাজার টাকার রিকশা প্রদান করে বলা হবে যে, এর ৮ হাজার টাকা যাকাত ও ২ হাজার টাকা ঋণ। তুমি প্রতিদিন ২০/৩০ টাকা জমা দিয়ে ঋণ শোধ করার পর তোমাকে রিকশার মালিকানা দেওয়া হবে। তাহলে সে কষ্টে অভ্যস্ত হবে এবং রিকশাটির পিছনের নিজের শ্রম ও অর্থ থাকার কারণে সহজে তা বিক্রয় করবে না। পাশাপাশি ঋণদাতা ব্যক্তি তার একই অর্থ বারবার ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দানের চেয়েও অনেক বেশি সাওয়াব লাভ করবেন।

(৫) চিকিৎসা সহায়তা প্রকল্প

অসুস্থ ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান সুন্নাতে নববীর অন্যতম দিক। মুসলিমের উপর মুসলিমের অধিকারের অন্যতম অসুস্থ ব্যক্তি পাশে থাকা। (বুখারী ও মুসলিম)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থের কাছে গমন করে সে জান্নাতের বাগানে বিচরণ করে।” (মুসলিম) কোনো অসুস্থ মানুষের পাশে গমন করলে ৭০ হাজার ফিরিশতা দুআ করতে থাকেন (তিরমিযী, সহীহ)
এ সুন্নাত পালনের জন্য ট্রাস্ট “ইয়াদাতুল মারীদ” প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ, ঔষধ, চিকিৎসাধীনদের আর্থিক সহায়তা, রক্তসংগ্রহ, চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

(৬) ইয়াতিম প্রতিপালন ও সহায়তা প্রকল্প

কুরআন-সুন্নাহে ইয়াতিমদের সহায়াতার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস সুন্নাহ ট্রাস্ট নিজস্ব ইয়াতিমখানায় ইয়াতিমদের প্রতিপালন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

(৭) বিধবা ও দুস্থ নারী সহায়তা প্রকল্প

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বিধবা ও দরিদ্রদের জন্য সচেষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী অথবা রাতভর তাহাজ্জুদ আদায়কারী ও দিনভর সিয়াম পালনকারীর মতই (সাওয়াবের অধিকারী)।” (সহীহ বুখারী)

বিধবা ও দুস্থ নারীদের বাজার করা-সহ তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও সহায়তা সাহাবায়ে কিরামের সুপরিচিত সুন্নাত। বর্তমানে আমাদের সমাজে ইয়াতিম বিষয়ক সচেতনতা বিদ্যমান, তবে বিধবা বিষয়ক সচেতনতা অনুপস্থিত। বিধবা ও দুস্থ মহিলাদের সেবার সুন্নাত জীবন্ত করার লক্ষ্যে “আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট” “বিধবা ও দুস্থ নারী প্রকল্প” গ্রহণ করেছে। বিধবা নারী সাধারণত স্বামীর সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। এ ছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক বঞ্চনার শিকার হন। সর্বোপরি তিনি আর্থিক অসহায়ত্বে নিপতিত হন। আস-সুন্নাট ট্রাস্ট বিধবাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, তাদের অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপার্জন ব্যবস্থা বা কর্ম-সংস্থান ছাড়াও তাদের অধিকার রক্ষার সামাজিক ও আইনগত সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছে।

(৮) বিবাহ ও পরিবার গঠন সহায়তা প্রকল্প

ইসলামে বিবাহ ও পরিবার গঠনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এজন্য যাকাত ব্যবহারের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে বিবাহকে নিরুৎসাহিত বা বিলম্বিত করা হচ্ছে এবং প্রকারান্তে অশ্লীলতাকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট এ গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতটি জীবন্ত করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে। পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে সহায়তা, যৌতুক বিহীন বিবাহ, বিবাহেচ্ছুকদের কর্মসংস্থান, বিশেষ সাহায্য, পারিবারিক সদ্ভাব সংরক্ষণে পরামর্শ ও সহায়তা ইত্যাদি এ প্রকল্পের লক্ষ্য।

(৯) আইনী সহায়তা প্রকল্প

মাযলূমের পাশে দাঁড়ানো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্যতম সুন্নাত। তাঁর পবিত্র জীবনে সর্বদা এ বিষয়কে তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন: “মুমিনের প্রতি মুমিনের অধিকারের মধ্যে রয়েছে মাযলূম বা অসহায়কে সাহায্য করা।” (নাসাঈ, সহীহ) তিনি বলেন: “আল্লাহর নিকট প্রিয়তম কর্ম হলো যে, তুমি কোনো মুসলিমের জীবনে আনন্দ প্রবেশ করাবে, অথবা তার কোনো বিপদ-কষ্ট দূর করবে…। যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে তার সাথে গমন করে তার প্রয়োজন সমাধা করে দেবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার পদযুগলকে পিছলে পড়া থেকে রক্ষা করবেন, যেদিন অন্যদের পা পিছলে যাবে। (তাবারানী, সহীহুল জামি, হাসান)

মাযলূমের পাশে দাঁড়ানো ও প্রয়োজন মেটানোর সুন্নাত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট “আইনী সহায়তা প্রকল্প” গ্রহণ করেছে। সমাজিক সালিস, থানা ও কোর্টে দুর্বল ও অসহায়দেরকে সর্ব প্রকারের আইনী সহায়তা, পরামর্শ, পাশে থেকে মনোবল বাড়ানো ও আর্থিক সাহায্য প্রদান এ প্রকল্পের লক্ষ্য।