কিয়ামতের আলামাত: মুমিনের করণীয়। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট 

আকীদার অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় কিয়ামতের আলামত বিষয়ে মুমিনের দায়িত্ব কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যগুলো সরল অর্থে বিশ্বাস করা। এগুলোর ব্যাখ্যা ও প্রকৃতি জানা আমাদের দায়িত্ব নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ বিষয়ক ব্যাখ্যা ভিত্তিহীন ও অন্তহীন বিতর্ক সৃষ্টি করে। যেমন: হাদীসে যে ভূমিধ্বসের কথা বলা হয়েছে তা কি তুরস্কের ভূমিকম্প? ইরানের ভূমিকম্প? জাপানের সুনামি? না তা ভবিষ্যতে ঘটবে? কবে ঘটবে? অথবা: ইয়াজূজ-মাজূজ কারা, তারা কি তাতার? চেঙ্গিশ খানের বাহিনী? চীন জাতি? অন্য কোনো জাতি? কোথায় তারা থাকে? তারা বের হয়েছে না বের হবে? অথবা: দাজ্জাল কে? ইজরায়েল রাষ্ট্র? আমেরিকা? দাজ্জাল কি বের হয়েছে? না ভবিষ্যতে হবে? কখন তার আবির্ভাব ঘটবে? কিয়ামতের আলামত বিষয়ক এ জাতীয় প্রশ্ন বা গবেষণার নামে সময় ধ্বংস করে দুনিয়া ও আখিরাতে মুমিনের কোনোই লাভ হয় না, তবে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়। ইবাদত, দাওয়াত, উপার্জন, আল্লাহর হক্ক, বান্দার হক্ক ইত্যাদি জরুরী কর্ম ফাঁকি দিতে মুমিনকে এরূপ অকারণ বিতর্কে লিপ্ত করে শয়তান।

মুমিনের দায়িত্ব সাধারণভাবে বিশ্বাস করা যে, কিয়ামতের আগে এ সকল আলামত দেখা যাবে। এ সকল বিষয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসে যা বলা হয়েছে সবই সত্য। যখন তা ঘটবে তখন মুমিনগণ জানবেন যে কিয়ামত ক্রমান্বয়ে এগিয়ে আসছে। এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা আল্লাহই জানেন। এর ব্যাখ্যা জানার দায়িত্ব মুমিনকে দেওয়া হয় নি। মুমিনের দায়িত্ব দুনিয়া ও আখিরাতে কাজে লাগার মত জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা করা। কুরআন-হাদীস অনুসন্ধান করে মানুষের প্রায়োগিক জীবনের সমাধান দেওয়ার জন্য গবেষণা করতে নির্দেশ দেয় ইসলাম। চিকিৎসা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি সকল মানব-কল্যাণ বিষয়ক গবেষণার নির্দেশ দেয় ইসলাম। এ সকল বিষয়ে গবেষণা-অনুসন্ধান মানুষকে একটি নিশ্চিত ফলাফল লাভের পথে নিয়ে যায়। কিন্তু গাইবী বিষয় নিয়ে গবেষণার নামে অকারণ বিতর্ক কোনো ফলাফল দেয় না। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) ইয়াজূজ-মাজূজ বা দাজ্জাল বলতে কী বুঝিয়েছেন সে বিষয়ে হাজার বছর এভাবে গবেষণা নামের প্রলাপ-বিলাপ ও বিতর্ক করেও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। ((মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃষ্ঠা ১৯২।))

ইমাম মাহদী

হাদীস, ফিকহ ও আকীদার পরিভাষায় ‘ইমাম’ শব্দটি ‘খলীফা’ বা ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ শব্দের সমার্থক। মাহদী অর্থ ‘হেদায়াত-প্রাপ্ত’। এজন্য পারিভাষিকভাবে ‘ইমাম মাহদী’ অর্থ ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত-প্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান’।

রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরের খলীফাগণকে ‘খুলাফা রাশিদীন মাহদিয়্যীন’ বা ‘মাহদী রাশিদ খলীফা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ থেকে আমরা জানি যে, খুলাফায়ে রাশিদীন সকলেই ‘মাহদী’ বা ‘হেদায়াতপ্রাপ্ত’ ছিলেন। তবে শেষ যুগে আরো একজন ‘মাহদী রাষ্ট্রপ্রধান’ ক্ষমতাগ্রহণ করবেন বলে বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। মাহদীর কথা উল্লেখ করে কোনো হাদীস সহীহ বুখারী বা সহীহ মুসলিমে নেই। অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে এ বিষয়ক হাদীসগুলো সংকলিত। এ বিষয়ে কিছু সহীহ হাদীসের পাশাপাশি অনেক যয়ীফ হাদীস বিদ্যমান এবং অগণিত জাল হাদীস এ বিষয়ে প্রচারিত হয়েছে। এখানে এ বিষয়ক কয়েকটি গ্রহণযোগ্য হাদীস উল্লেখ করছি।

প্রথম হাদীস: আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
لَوْ لَمْ يَبْقَ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ يَوْمٌ لَطَوَّلَ اللَّهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ حَتَّى يَبْعَثَ فِيهِ رَجُلاً مِنِّى أو مِنْ أَهْلِ بَيْتِى (يَمْلِكَ الْعَرَبَ/ يلي رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِى) يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِى وَاسْمُ أَبِيهِ اسْمَ أَبِى يَمْلأُ الأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلاً كَمَا مُلِئَتْ ظُلْمًا وَجَوْرًا.
“দুনিয়ার যদি একটি দিনও বাকি থাকে তবে আল্লাহ সে দিনটিকে দীর্ঘায়িত করে আমার বংশধর থেকে এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যার নাম ও পিতার নাম আমার নাম ও আমার পিতার নামের মতই হবে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করবেন, আরবদের উপর রাজত্ব গ্রহণ করবেন জুলুম পূর্ণ পৃথিবীকে ইনসাফে পূর্ণ করবেন।” ((হাদীসটি সহীহ। তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৫০৫, নং ২২৩০, ২২৩১।))

দ্বিতীয় হাদীস: আবূ সায়ীদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
الْمَهْدِىُّ مِنِّى أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الأَنْفِ يَمْلأُ الأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلاً كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ
“মাহদী আমার (বংশধর) থেকে, তার কপাল চুলমুক্ত (মাথার সম্মুখভাগে চুল থাকবে না) এবং নাক চিকন। সে অত্যাচারে পরিপূর্ণ দুনিয়াকে ন্যায়পরায়ণতায় পূর্ণ করবে। সে সাত (অন্য বর্ণনায়: নয়) বছর রাজত্ব করবে।” ((হাদীসটি সহীহ। আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/১৭৪ (নং ৪২৮৭)। ইবনুল কাইয়িম, সুয়ূতী ও আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বা হাসান বলেছেন।))

তৃতীয় হাদীস: উম্মু সালামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
يَكُونُ اخْتِلاَفٌ عِنْدَ مَوْتِ خَلِيفَةٍ فَيَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ هَارِبًا إِلَى مَكَّةَ فَيَأْتِيهِ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ فَيُخْرِجُونَهُ وَهُوَ كَارِهٌ فَيُبَايِعُونَهُ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ وَيُبْعَثُ إِلَيْهِ بَعْثٌ مِنَ الشَّامِ فَيُخْسَفُ بِهِمْ بِالْبَيْدَاءِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَإِذَا رَأَى النَّاسُ ذَلِكَ أَتَاهُ أَبْدَالُ الشَّامِ وَعَصَائِبُ أَهْلِ الْعِرَاقِ فَيُبَايِعُونَهُ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ ثُمَّ يَنْشَأُ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ أَخْوَالُهُ كَلْبٌ فَيَبْعَثُ إِلَيْهِمْ بَعْثًا فَيَظْهَرُونَ عَلَيْهِمْ وَذَلِكَ بَعْثُ كَلْبٍ وَالْخَيْبَةُ لِمَنْ لَمْ يَشْهَدْ غَنِيمَةَ كَلْبٍ فَيَقْسِمُ الْمَالَ وَيَعْمَلُ فِى النَّاسِ بِسُنَّةِ نَبِيِّهِمْ -صلى الله عليه وسلم- وَيُلْقِى الإِسْلاَمُ بِجِرَانِهِ إِلَى الأَرْضِ فَيَلْبَثُ سَبْعَ سِنِينَ/ تِسْعَ سِنِينَ، ثُمَّ يُتَوَفَّى وَيُصَلِّى عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ
“একজন খলীফার মৃত্যুর সময় মতভেদ হবে। তখন মদীনার একজন মানুষ পালিয়ে মক্কায় চলে আসবে। তখন মক্কার কিছু মানুষ তার কাছে এসে তাকে বের করে আনবে। তার অনিচ্ছা ও অপছন্দ সত্তে¡ও তারা হাজার আসওয়াদ ও মাকাম ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে তার বাইয়াত করবে। সিরিয়া থেকে একটি বাহিনী তার বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হবে। মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী বাইদা নামক স্থানে এ বাহিনী ভূমিধ্বসে ধ্বংস হবে। যখন মানুষেরা তা দেখবে তখন সিরিয়া থেকে আবদালগণ এবং ইরাক থেকে দলেদলে মানুষ এসে হাজার আসওয়াদ ও মাকাম ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। এরপর কুরাইশ বংশ থেকে একব্যক্তি তার (মাহদীর) বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, যার মাতুল হবে কালব বংশের। এ ব্যক্তি একটি বাহিনী তার (মাহদীর) বিরুদ্ধে প্রেরণ করবে। কিন্তু মাহদীর বাহিনী কালব গোত্রের বাহিনীকে পরাজিত করবে। কালব গোত্রের গনীমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) বণ্টনে যে উপস্থিত থাকবে না সে দুর্ভাগা। তখন সে (মাহদী) সম্পদ বণ্টন করবে এবং মানুষদের মধ্যে তাদের নবীর (সা.) সুন্নাত অনুসারে কর্ম করবে। আর পৃথিবীর বুকে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। সে সাত (অন্য বর্ণনায়: নয়) বৎসর এভাবে থাকবে। এরপর সে মৃত্যুবরণ করবে এবং মুসলিমগণ তার সালাতুল জানাযা আদায় করবে।”

হাদীসটির বিশুদ্ধতার বিষয়ে মুহাদ্দিসগণ মতভেদ করেছেন। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটিকে হাসান এবং সহীহ পর্যায়ের বলে উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে শাইখ আলবানী হাদীসটিকে যয়ীফ বলে উল্লেখ করেছেন। ((ইবনুল কাইয়িম, আল-মানারুল মুনীফ, পৃষ্ঠা ১৪১-১৪৮; আলবানী, যায়ীফাহ ৪/৪৩৫-৪৩৭, নং ১৯৬৫এ))

চতুর্থ হাদীস: আবূ সায়ীদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
يَكُونُ فِي أُمَّتِي الْمَهْدِيُّ إِنْ قُصِرَ فَسَبْعٌ وَإِلَّا فَتِسْعٌ فَتَنْعَمُ فِيهِ أُمَّتِي نِعْمَةً لَمْ يَنْعَمُوا مِثْلَهَا قَطُّ تُؤْتَى أُكُلَهَا وَلَا تَدَّخِرُ مِنْهُمْ شَيْئًا وَالْمَالُ يَوْمَئِذٍ كُدُوسٌ فَيَقُومُ الرَّجُلُ فَيَقُولُ يَا مَهْدِيُّ أَعْطِنِي فَيَقُولُ خُذْ
“আমার উম্মাতের মধ্যে মাহদী আসবে। কম হলে সাত (বছর), না হলে নয় (বছর)। তখন আমার উম্মাতের মধ্যে নিয়ামত সর্বজনীন হবে। তারা এমনভবে প্রাচুর্য ও নিয়ামত ভোগ করবে যা তারা ইতোপূর্বে কখনোই ভোগ করে নি। উম্মাতকে সকল প্রাচুর্য দেওয়া হবে এবং মাহদী তাদেরকে না দিয়ে কিছুই সঞ্চিত করে রাখবে না। তখন সম্পদ হবে অফুরন্ত। কোনো ব্যক্তি যদি বলে, হে মাহদী, আমাকে প্রদান করুন তবে মাহদী বলবে: তুমি নিয়ে যাও।” ((হাদীসটি হাসান। হাদীসটি হাসান। ইবন মাজাহ, আস-সুনান ২/১৩৬৬। আলবানী, সহীহ ইবন মাজাহ ২/৩৮৯, নং ৩২৯৯।))

পঞ্চম হাদীস: উম্মু সালামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
الْمَهْدِيُّ مِنْ عِتْرَتِي مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ
“মাহদী আমার বংশের, ফাতিমার বংশধর থেকে।” ((হাদীসটি সহীহ। আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/১৭৪, নং ৪২৮৬। সুয়ূতী, আলবানী প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।))

ষষ্ঠ হাদীস: সাওবান (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
يَقْتَتِلُ عِنْدَ كَنْزِكُمْ ثَلَاثَةٌ كُلُّهُمْ ابْنُ خَلِيفَةٍ ثُمَّ لَا يَصِيرُ إِلَى وَاحِدٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَطْلُعُ الرَّايَاتُ السُّودُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ فَيَقْتُلُونَكُمْ قَتْلًا لَمْ يُقْتَلْهُ قَوْمٌ ثُمَّ ذَكَرَ شَيْئًا لَا أَحْفَظُهُ فَقَالَ فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَبَايِعُوهُ وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الثَّلْجِ فَإِنَّهُ خَلِيفَةُ اللَّهِ الْمَهْدِيُّ
“তোমাদের সংরক্ষিত সম্পদ নিয়ে তিন ব্যক্তি লড়াই করবে, তিনজনই খলীফার সন্তান। তাদের তিনজনের একজনও তা অধিকার করতে পারবে না। এরপর পূর্ব দিক থেকে কাল পতাকাসমূহের উদয় হবে, তখন তারা তোমাদেরকে এমনভাবে হত্যা করবে যেভাবে ইতোপূর্বে কেউ করে নি। এরপর তিনি কিছু বললেন, যা আমি মনে রাখতে পারি নি। এরপর বলেন: যখন তোমরা তা দেখবে তখন তার বাইয়াত করবে। বরফের উপরে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও বাইয়াত করবে; কারণ সেই আল্লাহর খলীফা মাহদী।” ইমাম বাযযার, হাকিম নাইসাপূরী, যাহাবী, বূসীরী, সুয়ূতী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আলবানী হাদীসটি শেষ বাক্যটিকে যয়ীফ বলেছেন। ((বায্যার, আল-বাহরুয যাখখার ১০/৩২; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৪/৫১০; বূসীরী, মিসবাহুয যুজাজাহ ৪/২০৪; আব্দুল মুহাসিন আব্বাদ, শারহ সুনান আবী দাঊদ ২৫/৩৫; আলবানী, যায়ীফ ইবন মাজাহ, পৃষ্ঠা ৩৩৪, নং ৮৮৭; যায়ীফাহ ১/১৯৫, নং ৮৫।))

বুখারী ও মুসলিম সংকলিত কয়েকটি হাদীস ইমাম মাহদী প্রাসঙ্গিক বলে গণ্য করেছেন আলিমগণ। আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ
“তোমরা কি জান তোমাদের কী অবস্থা হবে যখন মরিয়মের পুত্র ঈসা যখন তোমাদের মধ্যে অবতরণ করবেন আর তখন তোমাদের ‘ইমাম’ হবেন তোমাদেরই মধ্যকার একজন।” ((বুখারী, আস-সহীহ ৩/১২৭২; মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৩৬ (কিতাবুল ঈমান,বাব নুযূলি ঈসা..নং ১৫৫))

অন্য হাদীসে জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ – قَالَ – فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ -صلى الله عليه وسلم- فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا. فَيَقُولُ لاَ. إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ. تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الأُمَّةَ.
“আমার উম্মাতের কিছু মানুষ হক্কের উপরে বিজয়ী থেকে লড়াই করে চলবে কিয়ামত পর্যন্ত। তিনি বলেন: অতঃপর মরিয়মের পুত্র ঈসা (আ) অবতরণ করবেন তখন তাদের আমীর বলবে: আসুন আমাদের জন্য ইমাম হয়ে সালাত আদায় করুন। তিনি বলবেন: না, আপনারা একে অপরের উপর আমীর, এটি এ উম্মাতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মাননা।” ((মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৩৭ (কিতাবুল ঈমান, বাব (৭১) নুযূলি ঈসা, নং ১৫৬))

এ সকল হাদীসের আলোকে আলিমগণ বলেন যে, ইমাম মাহদীর সময়েই ঈসা (আ) অবতরণ করবেন এবং তাঁরই ইমামতিতে তিনি সালাত আদায় করবেন।
উপরের হাদীসগুলো থেকে আমরা নিম্নের বিষয়গুলো জানতে পারি:
(ক) ‘ইমাম মাহদী’ বলতে একজন হেদায়াতপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান বুঝানো হয়েছে। যিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে বিশ্বে প্রাচুর্য, শান্তি, ইনসাফ ও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে।
(খ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধর এবং ৭ বা ৯ বৎসর রাজত্ব করবেন।
(গ) তার রাজত্বকালেই ঈসা (আ) অবতরণ করবেন।
(ঘ) তার ইমামত, খিলাফত বা শাসন আরবদেশ কেন্দ্রিক হবে।
(ঙ) তার ক্ষমতাগ্রহণের পূর্বে ক্ষমতা নিয়ে যুদ্ধবিগ্রহ হবে। বাইতুল্লাহর পাশে তার বাইয়াত হবে। সিরিয়া, ইরাক ও পূর্বদিক থেকে তার পক্ষে যোদ্ধারা আসবে।
(চ) এ রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতাগ্রহণ, বাইয়াত ইত্যাদি বিষয়ে মুমিনের কোনো দায়িত্ব নেই। এগুলো ঘটবে বলে রাসূলুল্লাহ (সা.) জানিয়েছেন। তবে যখন তার বিরোধী সৈন্যবাহিনী ভূমিধ্বসে ধ্বংস হবে, সিরিয়া, ইরাক ও পূর্ব দিকের সেনাবাহিনী তাঁর বাহিনীতে যোগ দিবে এবং সামগ্রিকভাবে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে বা মুসলিম উম্মাহ তাঁকে স্বীকার করে নিবে, তখন মুমিনের দায়িত্ব রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তাঁর বাইয়াত করা। এ

জন্য ইমাম মাহদী প্রসঙ্গে ইমাম সুফিয়ান সাওরী বলেন:
لو مر ببابك فلا تبايعه حتى يجتمع الناس عليه
যদি তিনি তোমার দরজা দিয়ে গমন করেন তবুও তুমি তাঁর বাইয়াত করবে না; যতক্ষণ না সকল মানুষ তাঁর বিষয়ে একমত হয়। ((ইরশীফ মুলতাকা আহলিল হাদীস (শামিলা ৩.৫) ১/৮০৫৬।))

পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা ইমাম মাহদী দাবিদারদের সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

পিডিএফ ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন