মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাতের মাস হিসাবে রবিউল আউয়াল মাস মুসলিম মানসে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। এ মাসের ফযীলত, ও আমল বিষয়ক হাদীস আলোচনা করার আগে আমরা রাসূলুল্লাহ সা.-এর জন্ম ও ইন্তিকাল সম্পর্কে হাদীস ও ইতিহাসের আলোকে আলোচনা করব। মহান আল্লাহর তাওফীক চাই।

(ক) রাসূলুল্লাহ সা.-এর জন্ম দিবস

রাসূলুল্লাহ সা.-এর জন্ম বার, জন্ম দিন, জন্ম মাস ও জন্ম তারিখ বিষয়ক হাদীস ও ঐতিহাসিক তথ্যাদি বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‘এহইয়াউস সুনান’ গ্রন্থে। এখানে সংক্ষেপে কিছু বিষয় আলোচনা করছি।

সহীহ হাদীস থেকে সুস্পষ্টরূপে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সা. সোমবার জন্মগ্রহণ করেছেন।1মুসলিম, আস-সহহি ২/৮১৯; আহমাদ, আল-মুসনাদ ৪/১৭২-১৭৩, নং ২৫০৬। হাদীসে নাবাবী থেকে তাঁর জন্মমাস ও জন্মতারিখ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। সাহাবীগণের মাঝেও এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট মত প্রচলিত ছিল না।

পরবর্তী যুগের আলিম ও ঐতিহাসিকগণ তাঁর জন্মতারিখ সম্পর্কে অনেক মতভেদ করেছেন। এ বিষয়ে ১২টিরও বেশি মত রয়েছে। ইবন হিশাম, ইবন সা‘দ, ইবন কাসীর, কাসতালানী ও অন্যান্য ঐতিহাসিক এ বিষয়ে নিুলিখিত মতামত উল্লেখ করেছেন:

(১) কারো মতে তাঁর জন্মতারিখ অজ্ঞাত, তা জানা যায় নি এবং জানা সম্ভব নয়। তিনি সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছেন এটুকুই শুধু জানা যায়, জন্ম মাস বা তারিখ জানা যায় না। এ বিষয়ে আলোচনা তারা অবান্তর মনে করেন।

(২) কারো কারো মতে তিনি মুহাররাম মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।

(৩) অন্য মতে তিনি সফর মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।

(৪) কারো মতে তিনি রবিউল আউআল মাসের ২ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় হিজরী শতকের অন্যতম ঐতিহাসিক মুহাদ্দিস আবু মা’শার নাজীহ বিন আব্দুর রাহমান আস-সিনদী [১৭০ হি.] এ মতটি গ্রহণ করেছেন।

(৫) অন্য মতে তাঁর জন্মতারিখ রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ। আল্লামা কাসতালানী ও যারকানীর বর্ণনায় এ মতটিই অধিকাংশ মুহাদ্দিস গ্রহণ করেছেন। এ মতটি দু’জন সাহাবী ইবনু আব্বাস ও জুবাইর বিন মুতয়িম রা. থেকে বর্ণিত। অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও সীরাত বিশেষজ্ঞ এ মতটি গ্রহণ করেছেন বলে তারা উল্লেøখ করেছেন।

প্রখ্যাত তাবিয়ী ইমাম মুহাম্মাদ ইবন মুসলিম ইবন শিহাব আয-যুহরী [১২৫ হি.] তাঁর উস্তাদ প্রথম শতাব্দীর প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও নসববিদ ঐতিহাসিক তাবিয়ী মুহাম্মাদ ইবন জুবাইর ইবন মুতয়িম [১০০ হি.] থেকে এই মতটি বর্ণনা করেছেন। কাসতালানী বলেন: “মুহাম্মাদ ইবন জুবাইর আরবদের বংশ পরিচিতি ও আরবদের ইতিহাস সম্পর্কে অভিজ্ঞ ছিলেন।

রাসূলুল্লাহ সা.-এর জন্মতারিখ সম্পর্কিত এ মতটি তিনি তাঁর পিতা সাহাবী জুবাইর বিন মুতয়িম থেকে গ্রহণ করেছেন। স্পেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ আলী ইবন আহমাদ ইবন হাযম [৪৫৬ হি.] ও মুহাম্মাদ ইবন ফাতুহ আল-হুমাইদী [৪৮৮ হি.] এ মতটিকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন। স্পেনের মুহাদ্দিস আল্লামা ইউসূফ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল বার [৪৬৩ হি.] উল্লেখ করেছেন যে, ঐতিহাসিকগণ এ মতটিই সঠিক বলে মনে করেন।

মীলাদের উপর প্রথম গ্রন্থ রচনাকারী আল্লামা আবুল খাত্তাব ইবন দেহিয়া [৬৩৩ হি.] ঈদে মীলাদুন্নবীর উপর লিখিত সর্বপ্রথম গ্রন্থ “আত-তানবীর ফী মাওলিদিল বাশির আন নাযীর” -এ এ মতটিকেই গ্রহণ করেছেন।

(৬) অন্য মতে তাঁর জন্মতারিখ ১০ রবিউল আউয়াল। এ মতটি ইমাম হুসাইনের পৌত্র মুহাম্মাদ ইবন আলী আল বাকির [১১৪ হি.] থেকে বর্ণিত। ১ম-২য় শতাব্দীর প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আমির ইবন শারাহিল শাবী [১০৪ হি.] থেকেও মতটি বর্ণিত।

ঐতিহাসিক মুহাম্মাদ ইবন উমর আল-ওয়াকিদী [২০৭ হি.] এ মত গ্রহণ করেছেন। ইবন সা‘দ তার বিখ্যাত “আত-তাবাকাতুল কুবরা”-য় শুধু দু’টি মত উল্লেখ করেছেন, ২ তারিখ ও ১০ তারিখ।2ইবন সা‘দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা ১/৮০-৮১।

(৭) কারো মতে রাসূলুল্লাহ সা.-এর জন্মতারিখ ১২ রবিউল আউয়াল। এ মতটি দ্বিতীয় হিজরী শতাব্দীর প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক [১৫১ হি.] গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সা. হাতির বছরে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন।”3ইবন হিশাম, আস-সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ ১/১৮৩।

এখানে লক্ষণীয় যে, ইবন ইসহাক সীরাতুন্নবীর সকল তথ্য সাধারণত সনদসহ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এ তথ্যটির জন্য কোনো সনদ উল্লেখ করেন নি। কোথা থেকে তিনি এ তথ্যটি গ্রহণ করেছেন তাও জানান নি বা সনদসহ প্রথম শতাব্দীর কোনো সাহাবী বা তাবিয়ী থেকে মতটি বর্ণনা করেন নি। এ জন্য অনেক গবেষক এ মতটিকে দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন।4মাহদী রেজকুল্লাহ আহমাদ, আস-সীরাতুন নাবাবিয়াহ, ১০৯ পৃ।

তা সত্ত্বেও পরবর্তী যুগে এ মতটিই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ইবন কাসীর উল্লেখ করেছেন যে ২ জন সাহাবী জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রা. ও আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. থেকে এ মতটি বর্ণিত।

(৮) অন্য মতে রাসূলুল্লাহর সা. জন্ম তারিখ ১৭-ই রবিউল আউয়াল।
(৯) অন্য মতে তাঁর জন্ম তারিখ ২২-শে রবিউল আউয়াল।
(১০) অন্য মতে তিনি রবিউস সানী মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
(১১) অন্য মতে তিনি রজব মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। ।
(১২) অন্য মতে তিনি রমযান মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। ৩য় হিজরী শতকের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক যুবাইর ইবন বাক্কার [২৫৬ হি.] থেকে এ মতটি বর্ণিত।

তাঁর মতের পক্ষে যুক্তি হলো যে, রাসূলুল্লাহ সা. সর্বসম্মতভাবে রমযান মাসে নুবুওয়াত পেয়েছেন। তিনি ৪০ বছর পূর্তিতে নবুয়্যত পেয়েছেন। তাহলে তাঁর জন্ম অবশ্যই রমযানে হবে। এছাড়া কোনো কোনো হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. হজ্জের পবিত্র দিনগুলোতে মাতৃগর্ভে আসেন।

সেক্ষেত্রেও তাঁর জন্ম রমযানেই হওয়া উচিত। এ মতের সমর্থনে আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. থেকে একটি বর্ণনা আছে বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন।5ইবন সা‘দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা ১/১০০-১০১, ইবন কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২১৫, আল-কাসতালানী, আহমাদ বিন মুহাম্মাদ, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা ১/৭৪-৭৫, আল-যারকানী, শরহুল মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়্যা ১/২৪৫-২৪৮, ইবন রাজাব, লাতায়িফুল মায়ারিফ ১/১৫০।

(খ) রাসূলুল্লাহ সা.-এর ওফাত দিবস

বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সা. সোমবার ইন্তিকাল করেন।6বুখারী, আস-সহীহ ১/২৬২, ৪/১৬১৬; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩১৫; আবূ নুআইম ইসপাহানী, আল-মুসনাদ আল-মুসতাখরাজ আলা সহীহ মুসলিম ২/৪৩-৪৪। কিন্তু এ সোমবারটি কোন্ মাসের কোন্ তারিখ ছিল তা কোনো হাদীসে বলা হয় নি।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ সা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রামাদান মাসের ১১ তারিখে ইন্তিকাল করেন।7ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৮/১২৯। এ একক বর্ণনাটি ছাড়া মুসলিম উম্মাহর সকল ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিস একমত যে, রাসূলুল্লাহ সা. রবিউল আউয়াল মাসে ইন্তিকাল করেন। কিন্তু কোন্ তারিখে তিনি ইন্তিকাল করেছেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

বুখারী-মুসলিম সংকলিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা.-এর বিদায় হজ্জে ৯ই যুলহাজ্জ ছিল শুক্রবার।8বুখারী, সহীহ ১/২৫, ৪/১৬০০, ১৬৮৩, ৬/২৬৫৩; মুসলিম, সহীহ ৪/২৩১২-২৩১৩। এ থেকে আমরা জানতে পারি যে, সে বছর যুলহাজ্জ মাসের ১ তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার।

আমরা জানি যে, বিদায় হজ্জ থেকে ফিরে তিনি যুলহাজ্জ মাসের বাকি দিনগুলি এবং মুর্হারাম ও সফর মাস মদীনায় অবস্থান করেন এবং রবিউল আউয়াল মাসে তিনি ইন্তিকাল করেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বিদায় হজ্জের এ দিনের পরে ৮০ বা ৮১ দিন জীবিত ছিলেন। এরপর রবিউল আউয়াল মাসের শুরুতে তিনি ইন্তিকাল করেন।9ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৮/১৩০।

ওফাতের তারিখ সম্পর্কে দ্বিতীয় হিজরীর তাবিয়ী ঐতিহাসিকগণ এবং পরবর্তী ঐতিহাসিকগণের ৪টি মত রয়েছে: ১ রবিউল আউয়াল, ২ রবিউল আউয়াল, ১২ রবিউল আউয়াল ও ১৩ রাবিউল আউয়াল।10প্রাগুক্ত ৮/১২৯।

সাধারণভাবে পরবর্তী কালে ১২ তারিখের মতটিই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। কিন্তু এখানে একটি কঠিন সমস্যা রয়েছে। আমরা জানি যে, আরবী মাস ৩০ বা ২৯ দিন হয় এবং সাধারণত কখনোই পরপর তিনটি মাস ৩০ বা ২৯ দিনের হয় না।

উপরের হাদীস থেকে আমরা জেনেছি যে, যুলহাজ্জ মাস শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার। আর বৃহস্পতিবার ১ যুলহাজ্জ হলে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ কোনোভাবেই সোমবার হতে পারে না।

যুলহাজ্জ, মুর্হারাম ও সফর তিনটি মাসই ৩০ দিনে ধরলে ১ রবিউল আউয়াল হয় বুধবার। দু’টি ৩০ ও একটি ২৯ ধরলে ১ রবিউল আউয়াল হয় মঙ্গলবার। দু’টি ২৯ ও একটি ৩০ ধরলে হয় ১ রবিউল আউয়াল হয় সোমবার। আর তিনটি মাসই ২৯ দিন ধরলে ১ রবিউল আউয়াল হয় রবিবার। আর কোনো হিসাবেই ১২ তারিখ সোমবার হয় না।

এ সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য কেউ কেউ ১৩ তারিখের কথা বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে, তিনটি মাসই ৩০ দিনের ছিল এবং মদীনায় একদিন পরে চাঁদ দেখা গিয়েছিল। দুটি ব্যখ্যাই দূরবর্তী।11ইবনু হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী ৮/১২৯-১৩০।

দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রখ্যাত তাবিয়ী মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক আল্লামা সুলাইমান ইবনু তারখান আত-তাইমী [৪৬-১৪৩ হি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর অসুস্থতার শুরু হয় ২২ সফর শনিবার। ১০ দিন অসুস্থতার পর ২ রবিউল আউয়াল সোমবার তিনি ইন্তিকাল করেন।”12প্রাগুক্ত ৮/১২৯।

তাঁর এ মতঅনুসারে সে বছরে যুলহাজ্জ, মুর্হারাম ও সফর তিনটি মাসই ২৯ দিন ছিল, যা সাধারণত খুবই কম ঘটে। এ জন্য কোনো কোনো মুহাদ্দিস, ঐতিহাসিক ও গবেষক ১লা রবিউল আউয়ালের মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে আল্লামা সুহাইলী, ইবনু হাজার প্রমুখ গবেষক মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক ২ তারিখের মতটিকেই গ্রহণ করেছেন।

তিনটি কারণে তাঁরা এ মতটি গ্রহণ করেছেন। প্রথম, তাবিয়ীগণের যুগ থেকে সহীহ সনদে কথাটি পাওয়া যাচ্ছে। দ্বিতীয়, এ মতটি বিদায় হজ্জের পরে তাঁর ৮০ বা ৮১ দিন জীবিত থাকার বর্ণনাটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তৃতীয়, যারা ১২ বলেছেন তাদের কথার একটি দূরবর্তী ব্যাখ্যা দেওয়া যায় যে, আরবীতে (ثاني شهر) কে (ثاني عشر) বা ‘মাসের দুই’-কে ‘দশের দুই’ (১২) পড়ার একটি সম্ভাবনা থাকে। কেউ হয়ত ২-কে ১২ পড়েছিলেন ও লিখেছিলেন এবং অন্যরা তার অনুসরণ করেছেন।13প্রাগুক্ত ৮/১২৯-১৩০।

(গ) রবিউল আউয়াল বিষয়ক ভিত্তিহীন কথাবার্তা

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারছি যে, রাসূলুল্লাহ সা.- এর জন্ম বা ওফাতের মাস হিসাবে রবিউল আউয়াল মাসের কোনো উল্লেখ হাদীস শরীফে নেই। এ মাসের কোনো বিশেষ ফযীলত বা বিশেষ আমল কোনো কিছুই হাদীসে বর্ণিত হয় নি।

এ বিষয়ক মিথ্যা গল্প কাহিনীর মধ্যে রয়েছে: “এ মাসের ১২ তারিখে বুযুর্গ তাবিয়ী’গণ হযরত রাসূলে কারীম (সা.) এর রূহের মাগফিরাতের জন্য ২০ রাকয়া’ত নফল সালাত পড়িতেন। এ সালাত দুই দুই রাকয়া’তের নিয়তে আদায় করিতেন এবং প্রত্যেক রাকয়া’তে সূরা ফাতিহার পরে ১১ বার করিয়া সূরা ইখলাছ পড়িতেন। সালাত শেষে আল্লাহর হাবীবের প্রতি সাওয়াব রেছানী করিতেন।

তাহারা ইহার বরকতে খাবের মাধ্যমে হযরত রাসূলুল্লাহ সা.-কে দর্শন লাভ করিতেন এবং দোজাহানের খায়ের ও বরকত লাভ করিতেন। অন্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, কোন মু’মিন ব্যক্তি নিম্নের দরূদ শরীফ এ মাসের যে কোন তারিখে এশার নামাযের পরে ১১২৫ বার পাঠ করিলে আল্লাহর রহমতে সে ব্যক্তি হযরত নবী করীম (সা.) কে স্বপ্নে দর্শন লাভ করিবে।…”14মুফতী হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফযীলত, পৃ. ১৬-১৭।

এরূপ আরো অনেক ভিত্তিহীন বানোয়াট কথা প্রচলিত বিভিন্ন পুস্তকে দেখা যায়।((অধ্যাপিকা কামরুন নেসা দুলাল, পৃ. ৩০১-৩০২।)) এগুলো সবই বানোয়াট কথা। রাসূলুল্লাহ সা. এর ইন্তিকালেরপরবর্তী তিন যুগ, সাহাবী, তাবিয়ী ও তাবি-তাবিয়ীগণের মধ্যে এ মাসটির কোনো পরিচিতিই ছিল না। এ মাসটি যে রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্ম মাস সে কথাটিই তখনো প্রসিদ্ধি লাভ করে নি।

৪০০ হিজরীর দিকে সর্বপ্রথম মিসরের ফাতেমীয় শিয়া শাসকগণ এ মাসে ‘মীলাদ’ বা রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্ম দিবস পালনের প্রচলন করে। ৬০০ হিজরীতে ইরাকের ইরবিল শহরে ৮ ও ১২ রবিউল আউয়াল ‘মীলাদ’ বা ‘ঈদ মীলাদুন্নবী’ নামে রাসূলুল্লাহ সা.-এর জন্ম উদযাপন শুরু হয়।

অপরদিকে ভারত ও অন্যান্য দেশে ১২ রবিউল আউয়ালে রাসূলুল্লাহ সা.-এর ওফাত উপলক্ষ্যে ‘ফাতেহা’ বা ‘ফাতেহায়ে দু‘আজদহম’ উদযাপন শুরু হয়। এ বিষয়ক সকল তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ‘এহ্ইয়াউস সুনান’ গ্রন্থে।

আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, রাহিমাহুল্লাহ, বই: হাদীসের নামে জালিয়াতি পৃ. ৫৫৫-৫৫৯।

রাসূলুল্লাহ সা.-এর সর্বশেষ অুসুস্থতা, হাদীসের সনদ: মৌখিক বর্ণনা বনাম পাণ্ডলিপি নির্ভরতা, হাদীসের সনদ, সফর মাসের অশুভত্ব ও এ মাসের বালা-মুসিবত, শত সহস্র ইমাম মাহদী