আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 78

ঈমান

প্রকাশকাল: 17 এপ্রিল 2006

প্রশ্ন

আস্সালামু আলাইকু ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার প্রশ্ন হল আমি ঘুমের গড়ে অনেক ভাল এবং খারাপ সপ্ন দেখে থাকি এই সপ্ন সম্পকে আমাদের কি বিশ্বাস থাকা উচিৎ

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবীদের স্বপ্ন ওহী হিসাবে গণ্য। অন্যান্য মানুষের স্বপ্নের ব্যাপারে হাদীসের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। নিচে দলীলসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হল: নবী রাসূলদের স্বপ্ন ওহী। তাঁরা স্বপে যা দেখেন তা সত্য। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, رؤيا الأنبياء وحي অর্থ: নবীদের স্বপ্ন ওহী। আলমুসতাদরিক লিল-হাকীম, হাদীস নং ৩৬১৩। হাকীম রহ. বলেন, হাদীসটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। কিন্তু তারা বর্ণনা করেনি। ইমাম যাহাবী তালখীস এর মধ্যে বলেছেন, হাদীসটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী। হযরত আয়েশা রা. বলেন, أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ فِي النَّوْمِ فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلاَّ جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ যার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে প্রথম ওহী আসা শুরু হয় তা হল সত্য স্বপ্ন। তিনি যা দেখতেন ভোরের আলোর মত তা সত্য হত। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৩। ইমাম বখারী রহ. তার সহীহ গ্রন্থে বলেছেন, قَالَ عَمْرٌو سَمِعْتُ عُبَيْدَ بْنَ عُمَيْرٍ يَقُولُ : إِنَّ رُؤْيَا الأَنْبِيَاءِ وَحْيٌ ثمَّ قَرَأَ :{إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ} আমর বলেছেন, আমি উবায়েদ ইবনে উমায়েরকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় নবীদের স্বপ্ন ওহী। এরপর তিনি কুরআনের উপরুক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন। (উবায়েদ ইবনে উমায়ের ইবনে আব্বাসের ছাত্র) । সহীহ বুখারী হাদীস নং ৮৫৯। উপরুক্ত দলীলসমূহ দ্বারা স্পষ্ট যে, নবীদের স্বপ্ন ওহী ও সত্য। উম্মতের সকলে এ ব্যাপারে একমত। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখি। এই সব স্বপ্নের ব্যাপারে আমাদের কি বিশ্বাস রাখতে সে বিষয়ে আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, إِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ رُؤْيَا يُحِبُّهَا فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ اللهِ فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ عَلَيْهَا وَلْيُحَدِّثْ بِهَا ، وَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذَلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ الشَّيْطَانِ فَلْيَسْتَعِذْ مِنْ شَرِّهَا ، وَلاَ يَذْكُرْهَا لأَحَدٍ فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ তোমাদরে কউে যদি এমন স্বপ্ন দখেে যা সে পছন্দ কর,ে তাহলে জানবে যে তা আল্লাহর পক্ষ থকেে দখোনো হয়ছে। তখন সে যনে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে ও অন্যদরে কাছে র্বণনা কর। আর যদি স্বপ্ন অপছন্দরে হয়, তাহলে বুঝে নবেে এটা শয়তানরে পক্ষ থকেে হয়ছে। তখন সে শয়তানরে ক্ষতি থকেে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় র্প্রাথনা করবে আর এ স্বপ্নরে কথা কারো কাছে বলবে না। কারণ খারাপ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৫ আবু কাতাদাহ রা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ مِنَ اللَّهِ فَإِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ مَا يُحِبُّ فَلاَ يُحَدِّثُ بِهَا إِلاَّ مَنْ يُحِبُّ وَإِنْ رَأَى مَا يَكْرَهُ فَلْيَتْفِلْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلاَثًا وَلْيَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشَرِّهَا وَلاَ يُحَدِّثْ بِهَا أَحَدًا فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ সত্য স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে । যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে ভালবাসে তাহলে তাহলে তা এমন লোকদের কাছেই শুধু বলবে যে তাকে ভালবাসে। আর যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপছন্দ করে তাহলে বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলে এবং আল্লাহর কাছে শয়তানের অনিষ্ঠতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আর এই স্বপ্নের কথা কারো কাছে বলবে না। কেননা তা তার কোন ক্ষতিকরতে পারবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬১। হযরত জাবির রা. বলেন, جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْتُ فِى الْمَنَامِ كَأَنَّ رَأْسِى قُطِعَ. قَالَ فَضَحِكَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- وَقَالَ ্র إِذَا لَعِبَ الشَّيْطَانُ بِأَحَدِكُمْ فِى مَنَامِهِ فَلاَ يُحَدِّثْ بِهِ النَّاسَ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরে কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি স্বপ্নে দখেছে, আমার মাথা কটেে ফলো হয়ছে। এ কথা শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হসেে ফলেলনে। আর বললনে : ঘুমরে মধ্যে শয়তান তোমাদরে কারো সাথে যদি দুষ্টুমি কর, তবে তা মানুষরে কাছে বলবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬৮। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, إن الرؤيا تقع على ما تعبر و مثل ذلك رجل رفع رجله فهو ينتظر فهو متى يضعها فإذا رأى أحدكم رؤيا فلا يحدث بها إلا ناصحا أو عالما অর্থ: স্বপ্ন ব্যখ্যা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়। তাই যখন তোমাদের কেউ স্বপ্ন দেখে সে যেন কল্যানকামী ব্যক্তি ও আলেম ব্যাতিত অন্য কারো নিকট তা বর্ণনা না করে। মুসতাদরিকে হাকেম, হাদীস নং ৮১১৭। হাকেম রহ. বলেছেন হাদীসটর সনদ সহীহ। আল্লামা জাহাবী রহ. তালখীস এর মধ্যে হাদীরটিকে সহীহ বলেছেন। শায়খ আলবানীও বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। (সহীহ ও জয়ীফ জামিউস সগীর, হাদীস নং ২৪৯২) উপরের হাদীসগুলোতে থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ভাল স্বপ্ন আল্লাহ তায়ালার দান। ভাল স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর প্রসংসা করতে হবে এবং প্রিয় মানুষদেরকে বলা যবে । খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। এমন স্বপ্ন দেখলে বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলতে হবে এবং শয়তানের অকল্যান থেকে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। আর খারাপ স্বপ্ন কারো কাছে বলা যাবে না। তবে মনে রাখতে খারাপ স্বপ্ন দেখলে মানুষের কোন ক্ষতি হয় না বা তা মানুষকে কোন ক্ষতি করতে পারে না। এই অর্থের আরো হাদীস বিভিন্ন সাহাবী থেকে সহীহসূত্রে বর্ণিত আছে। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الرُّؤْيَا الْحَسَنَةُ مِنَ الرَّجُلِ الصَّالِحِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সৎ লোকদের থেকে ভাল স্বপ্ন নবুওয়াতের ৪৬ ভাগের এক ভাগ। (অর্থাৎ সত্য স্পষ্ট)। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৩। কোন হাদীসে ৪৫ ভাগের একভাগ আবার কোন হাদীসে ৭০ ভাগের এক ভাগের কথাও বর্ণিত আছে। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, আল্লামা খাত্তবী রহ. বলেছেন وانما كانت جزءا من أجزاء النبوة في حق الأنبياء دون غيرهم وكان الأنبياء صلوات الله وسلامه عليهم يوحي اليهم في منامهم كما يوحي اليهم في اليقظة অর্থ: এটা নবীদের ক্ষেত্রে প্রযোয্য, অন্যান্যদের ক্ষেত্রে নয়। কেননা নবীদের নিকট জাগ্রত অবস্থায় যেমন ওহী আসত তেমনি ঘুমের ভিতরেও আসত। শরহে নববী আলা মুসলিম, হাদীস নং ২২৬৪। এই হাদীসের অবশ্য অন্যান্য ব্যাখ্যাও আছে। অনেকে এই হাদীসের অপব্যাখ্যা করে ওলী, দরবেশ কিংব আল্লাহর প্রিয় মানুষদের স্বপ্নকে দলীল হিসাবে সাব্যস্ত করতে চায়। কিন্তু এটা ঠিক না। নবী-রাসূণগণ বাদে অন্যদের স্বপ্ন দলীল হতে পারে না, সুন্নত হতে পারে না। স্বপ্নের মাধ্যমে কোন ইবাদত সাব্যস্ত হয় না, তদ্রুপ স্বপ্নের মাধ্যমে কোন হাদীসের সত্যতাও যাচাই করা যায় না। স্বপ্ন একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ অনুভুতির ব্যাপার। কাশফ, ইলহামের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোয্য। এই বিষয়ে আরো জানতে পড়ুন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত এহ্ইয়াইস সুনান বইয়ের ২০৮ থেকে ২১৪ পৃষ্ঠা । আল্লহ তায়ালা আমাদের সঠিক বিষয় বুঝার তাওফীক দিন, আমীন।