As-Sunnah Trust

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 35

রোজা

প্রকাশকাল: 5 মার্চ 2006

প্রশ্ন

ফেতরার বন্টন ঈদের সালাতের আগে না পরে?

উত্তর

প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন। প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে নিচে সামান্য আলোচনা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব। ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন, উলামায়ে কেরামের নিকট মুস্তাহাব হল, ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়ে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বপর্যন্ত সময়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবে। কেননা রাসূল সাঃ ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে তা আদায় করতেন। পাশাপাশি দরিদ্রশ্রেণীর মানুষেরা মানুষের দ্বারে দ্বারে বেড়ানো থেকে মুক্ত হয়ে নামাজে শরীক হতে পারে। ইবনে উমার রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে এসেছে أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَمَرَ بِإِخْرَاجِ زَكَاةِ الْفِطْرِ أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ. (অর্থঃ)রাসূল সাঃ ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিম, আস-সহীহ, কিতাব,আয-যাকাত, বাব, আল আমর বিইখরাজি যাকাতিল ফিতর ক্ববলাস সালাত, হাদীস নং ২৩৩৬। তবে যদি কেউ এক-দুইদিন পূর্বে তা দিয়ে দেয় তা যায়েয আছে এবং তার ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। আল-মুগনি, বাব, সাদাকাতুল ফিতর,মাসআলাতু তাকদীমুল ফিতর ক্ববলাল ঈদ বিইয়াওমাইনি খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৯৪। বুখারীতে এসেছে عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : فَرَضَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صَدَقَةَ الْفِطْرِ …..وَكَانُوا يُعْطُونَ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمٍ ، أَوْ يَوْمَيْنِ. (অর্থঃ) ইবনে উমার রাঃ থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসূল সাঃ সাদাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন। …আর সাহাবায়ে কেরাম ফিতরের পূর্বে(রমজানের রোজা একটি বা দুইটা বাকী থাকতে) তা আদায় করতেন। বুখারী, হাদীস নং ১৫১১। সহীহ ইবনে হিব্বানে এসেছে: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أمر بإخراج زكاة الفطر أن تؤدى قبل خروج الناس، وأن عبد الله كان يؤديها قبل ذلك بيوم أو يومين (অর্থঃ) রাসূল সাঃ ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। আর আব্দুল্লাহ (ইবনে উমার) রাঃ ঈদের একদিন বা দুইদিন আগে ফিতরা আদায় করতেন। সহীহ ইবনে হিব্বান, তাহকীক, শুয়াইব আরনাউত, খন্ড-৮,পৃষ্ঠা-৯৩। শায়েখ শুয়াইব আরনাউত বলেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, সহীহ মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী। আর নামাজের পরে দেয়ার বিষয়ে উলামায়ে কেরামের মতামত দেখলে বুঝা যায় যে, তাদের মতে এবিষয়টি মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। ইবনে হাযাম রহঃ হারাম বলেছেন। ফাতহুল ক্বাদীরের লেখক আল্লামা ইবনে হুমাম রহঃ বলেন: যদি ঈদুল ফিতরের দিন ফিতরা কেউ না তাহলে তা তাদের থেকে রহিত হবে না, বরং পরবর্তিতে তা আদায় করা আবশ্যক। ফাতহুল ক্বাদীর খন্ড ৪ পৃষ্ঠা ২৬২। (শামিলা)। তাছাড়া পরবর্তিতে আদায় করলে ঈদের নামাজের পূর্বে দেয়ার যে ফযিলত ছিল তা পাওয়া যাবে না বরং তা সাধারন সদকা হিসাবে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে: مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِىَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِىَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ. (অর্থঃ) নামাজের পূর্বে যেটা আদায় করা হল সেটা মাকবুল যাকাত আর যেটা নামাজের পরে আদায় করা হল দান। সুনানে আবু দাউদ,বাব, যাকাতুল ফিতর, খন্ড ২,পৃষ্ঠা ২৫,তাহকীক, শায়েখ আলবানী। উক্ত হাদীসের ব্যাক্ষায় ড. ঝুহাইলী বলেন: সাদকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল অন্যান্য সময়ের ন্যায় সাধারন দান। আল ফিকহুল ইসলামীয়্যু ওয়া আদিল্লাতুহু,খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬২, মাকতাবাতু থানবী, দেওবন্দ। ফাতহুল ক্বাদীরের লেখক আল্লামা ইবনে হুমাম রহঃ বলেন: যদি ঈদুল ফিতরের দিন ফিতরা কেউ না তাহলে তা তাদের থেকে রহিত হবে না, বরং পরবর্তিতে তা আদায় করা আবশ্যক। ফাতহুল ক্বাদীর খন্ড ৪পৃষ্ঠা ২৬২। (শামিলা)। মোটকথা, ঈদের দিন ফযরের পর থেকে ঈদের নামাজের আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব। তবে যদি কেউ এক-দুইদিন আগে তা দিয়ে দেয় তবে তা আদায় হয়ে যাবে। ঈদের নামাজের পর পর্যন্ত বিলম্ব করা সকল ইমামদের মতে মাকরুহ। তবে তা যততাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে দিতে হবে এবং সেটা সাধারন দান হিসাবে গণ্য হবে। অতএব আমাদের উচিৎ ঈদের নামাজের পর্বেই তা আদায় করার মাধ্যমে রাসূল সা. এর সুন্নাতের অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় রাসূল সা. এর সুন্নাতের এত্তেবা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।