আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 24

ঈমান

প্রকাশকাল: 22 ফেব্রু. 2006

প্রশ্ন

কোরআনে আছে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে গেলে কাফের হয়ে যায় । তাহলে কি আমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে গেলে কাফের হয়ে যাব?

উত্তর

প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিচে আপনর প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচানা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আাপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। মানব প্রকৃতির একটি বিশেষ দিক আনন্দের সময়ে আল্লাহকে ভুলে থাকা কিন্তু বিপদে পড়লে বেশি বেশি দুআ করা। নিঃসন্দেহে এ আচরণ মহান প্রতিপালকের প্রকৃত দাসত্বের অনুভূতির সাথে সাংঘর্ষিক। কুরআনে বিভিন্ন স্থানে এ স্বভাবের নিন্দা করা হয়েছে। এক স্থানে আল্লাহ বলেন: وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الإِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُو دُعَاءٍ عَرِيضٍ যখন আমি মানুষকে নিয়ামত প্রদান করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায়। আর যখন কোনো অমঙ্গল বা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে তখন সে লম্বা চওড়া দুআ করে। মুমিনের উচিত নিয়ামতের মধ্যে থাকলে তার স্থায়িত্ব প্রার্থনা করা ও সকল অকল্যাণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। কোনো অসুবিধা থাকলে তার কাছে আশ্রয় ও মুক্তি চাওয়া। আর এরূপ অন্তরের দুআই আল্লাহ কবুল করেন। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيبَ اللَّهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ وَالْكَرْبِ فَلْيُكْثِرْ الدُّعَاءَ فِي الرَّخَاءِ যে ব্যক্তি চায় যে কঠিন বিপদ ও যন্ত্রণা-দুর্দশার সময় আল্লাহ তার প্রার্থনায় সাড়া দিবেন, সে যেন সুখশান্তির ও সচ্ছলতার সময় বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দুআ করে। হাদীসটি সহীহ। আবার যখন দুআ করি তখন তৎক্ষণাৎ ফল আশা করি। বিশেষত বিপদে, সমস্যায় বা দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হলে। দুচার দিন দুআ করে ফল না পেলে আমরা হতাশ হয়ে দুআ করা ছেড়ে দি। এ হতাশা ও ব্যস্ততা ক্ষতি ও গোনাহের কারণ। কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। কোরআনে এসেছে : لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيم অর্থঃ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল,অতি দয়ালু। সূরা ঝুমার, আয়াত, ৫৩। অপর একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন: وَلَا تَيْأَسُوا مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ অর্থঃ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না । কেবল মাত্র কাফের সম্প্রদায়ই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়। সূরা ইউসুফ,আয়াত-৮৭। আমাদের বুঝতে হবে যে, দুআ করা একটি ইবাদত ও অপরিমেয় সাওয়াবের কাজ। আমি যত দুআ করব ততই লাভবান হব। আমার সাওয়াব বৃদ্ধি পাবে, আল্লাহর সাথে আমার একান্ত রহমতের সম্পর্ক তৈরি হবে। সর্বোপরি আল্লাহ আমার দুআ কবুল করবেনই। তবে তিনিই ভাল জানেন কিভাবে ফল দিলে আমার বেশি লাভ হবে। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : لاَ يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ বান্দা যতক্ষণ পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতিকারক কোনো কিছু প্রার্থনা না করে ততক্ষণ তার দুআ কবুল করা হয়, যদি না সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বলা হলো : ইয়া রাসূলাল্লাহ, ব্যস্ততা কিরূপ? তিনি বলেন : প্রার্থনাকারী বলতে থাকে দুআ তো করলাম, দুআ তো করলাম ; মনে হয় আমার দুআ কবুল হলো না। এভাবে সে হতাশ হয়ে পড়ে এবং তখন দুআ করা ছেড়ে দেয়। আনাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : لا يَزَالُ الْعَبْدُ بِخَيْرٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ قَالُوا وَكَيْفَ يَسْتَعْجِلُ قَالَ يَقُولُ قَدْ دَعَوْتُ رَبِّي فَلَمْ يَسْتَجِبْ لِي বান্দা যতক্ষণ না ব্যস্ত ও অস্থির হয়ে পড়ে ততক্ষণ সে কল্যাণের মধ্যে থাকে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন: ব্যস্ত হওয়া কিরূপ? তিনি বলেন: সে বলে আমি তো দুআ করলাম কিন্তু দুআ কবুল হলো না। হাদীসটি হাসান। প্রত্যেক মুমিনের উপর দায়িত্ব, আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও ভালবাসার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় রাখা। আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন, তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন এবং তিনি আমাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। এ দৃঢ় প্রত্যয় মুমিনের অন্যতম সম্বল ও মহোত্তম সম্পদ। অন্তরের গভীর থেকে মনের আকুতি ও সমর্পণ মিশিয়ে নিজের সবকিছু আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। সাথে সাথে সুদৃঢ় প্রত্যয় রাখতে হবে, আল্লাহ অবশ্যই আমার প্রার্থনা শুনবেন। ইবনু উমার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: إِذَا سَأَلْتُمْ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَيُّهَا النَّاسُ فَاسْأَلُوهُ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ فَإِنَّ اللَّهَ لا يَسْتَجِيبُ لِعَبْدٍ دَعَاهُ عَنْ ظَهْرِ قَلْبٍ غَافِلٍ হে মানুষেরা, তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে চাইবে; কারণ কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দুআ করলে আল্লাহ তার দুআ কবুল করেন না। হাদীসটি হাসান। অন্য হাদীসে আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لاهٍ তোমরা আল্লাহর কাছে দুআ করার সময় দৃঢ়ভাবে (একীন) বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ নিশ্চয় কবুল করবেন। আর জেনে রাখ, আল্লাহ কোনো অমনোযোগী বা অন্য বাজে চিন্তায় রত মনের প্রার্থনা কবুল করেন না। ব্যাক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক যে কোন প্রকৃত সম্ভাব্য সমস্যাকে নিয়েই আমাদের চিন্তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খারাপ দিকটা নিয়েই আবর্তিত হয়। অথচ সমস্যা থেকে উত্তরণের বাস্তব চেষ্টার পাশাপাশি সকল অবস্থায় ভাল চিন্তা করা এবং আল্লাহর রহমতে সকল বিপদ কেটে যাবেই এরুপ সুদৃঢ় আশা রাখা মুমিনের ঈমানের দাবী এবং সাওয়াবের কাজ। যে বান্দা আল্লাহর রহমতের আশা করতে পারেনা সে তো আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষণ করতে পারল না। হাদীসে এসেছে حسن الظن ( بالله) من حسن العبادة অর্থঃ আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষণ করা উত্তম ইবাদত। আবু দাউদ,( কিতাবুল আদব,বাব, হুসনিয যন) ৪/৩০০ হাদীস নং ৪৯৯৩। হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত অপর একটি হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ বলেন: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا دَعَانِي আমার বান্দা আমার বিষয়ে যেরূপ ধারণা করে আমি সেখানেই থাকি। আমার বান্দা যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার সাথে থাকি। মোটকথা, বান্দার অন্তরে আল্লাহর রহমতের আশা তার ঈমানের পরিমান অনুপাতে থেকে থাকে। অর্থাৎ যার যতটুকু ঈমান আছে সে ততোটুকু আল্লাহর রহমতের আশা করে থাকে। কাফেরদের সামান্য পরিমানও ঈমান নেই তাই তারা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ । অনুরুপভাবে কোন মুসলামন যখন পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায় তখন তার একাজটি কাফেরদের অবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে যায় এবং এটাকে কুফুরী হিসাবে গণ্য করা হয়। অতএব আমাদের উচিত সবসময় সবধরনের হতাশা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। সঠিক বিষয় আল্লাহই ভাল জানেন। আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পাঠককে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত রাহে বেলায়াত বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।