আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 2078

হাদীস

প্রকাশকাল: 8 অক্টো. 2011

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম, আমি একজন আপনার সাধারণ ভক্ত। আমি ইদানিং অবসর সময়ে আমার ফোনে লুডু খেলে থাকি। কিন্তু অনেকেই বলে লুডু এবং দাবা এই দুটি খেলাই নাকি ইসলাম এ নিশিদ্ধ। আমি সত্য টা জানতে চাই। যেহেতু আমি কোন মাদ্রাসার ছাত্র না এবং আমার আসে পাশের তেমন কোন ভাল আলেমও আমার পরিচিত না। তাই আমি আপনার কাছেই যান্তে চাইছি। @ লুডু খেলা কি ইসলাম এর বিধান অনুশারে নিশিদ্ধ..?
@ সুলাইমান ইবনে বুরাইদাহ তার পিতা বুরাইদাহ (রাঃ) হইতে বর্ণনা করেছেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
যে ব্যাক্তি পাশা/দাবা খেলল সে যেন শূকরের গোশত ও রক্তে হাত রাঙাল। (মুসলিমঃ২২৬০)
আবু মুসা আল আশারি (রাঃ) হতে বর্ণিত
রাসুল (সাঃ) বলেন,
যে পাশা/দাবা খেলল সে যেন আল্লাহ্ এবং আমাকে অমান্য করল
(আবু-দাউদঃ৪১২৯)
( সংগ্রহীত)
উপউক্ত ২টি হাদিস কি সঠিক.? অনেকের মতে এই ২টি হাদীস এর ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। আমি সঠিক উত্তরটি পেলে উপক্রিত হব।

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালম।খেলাধুলার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি নিম্নরূপ: খেলাধুলা প্রধানত দুই ধরনের। ১। জিহাদের জন্য সহায়ক এমন খেলাধুলা। যেমন সাতার, তীর চালনা, ঘোড়া চালনা ইত্যাদি। এগুলো জায়েজ। ২। জিহাদের জন্য সহায়ক নয় এমন খেলাধুলা। এগুলো আবার দুই প্রকার। ১। হাদীসে নিষেধাজ্ঞা আছে এমন খেলা। যেমন পাশা খেলা। সহীহ মুসলিমের হাদীসে (হাদীস নং ২২৬০) রাসূলুল্লাহ সা. এই খেলা থেকে নিষেধ করেছেন। সুতরাং এই ধরনের খেলা হারাম। ২। হাদীসে নিষেধাজ্ঞা নেই এমন খেলা। এগুলো আবার দুই ভাগে বিভক্ত। ১। এমন খেলা যাতে হারাম জিনিসের উপস্থিতি থাকে বা প্রয়োজন হয়। যেমন বিভিন্ন ধরনের প্রতিমূর্তি এবং প্রাণীর ছবি। এই খেলাগুলো হারাম। ২। কোন হারাম জিনিস থাকে না। যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, টেবিল টেনিস ইত্যাদি। এই ধরনের খেলা কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে জায়েজ। ১। জুয়া থেকে মুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ বাজি ধরে খেলতে পারবে না। ২। আল্লাহ তায়ালার যিকির থেকে বিরত রাখবে না। যেমন, নামায থেকে রিবত রাখবে না। এবং অন্যান্য ওয়াজিব আনুগত্য থেকেও বিরত রাখবে না। যেমন পিতামাতার দেখাশোনা, সন্তানদের খোঁজখবর নেয়া ইত্যাদি। ৩। খেলোয়াড় তার অধিকাংশ সময় খেলাধুলার পিছনে লাগাবে না। মানুষের মাঝে খেলোয়াড় হিসাবে প্রসিদ্ধ হবে না। খেলাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করবে না। খেলাকে পেশা হিসাবে গ্রহন করার বিষয়ে কুরআনে সতর্ক করে বলা হয়েছে الَّذِينَ اتَّخَذُواْ دِينَهُمْ لَهْوًا وَلَعِبًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فَالْيَوْمَ نَنسَاهُمْ كَمَا نَسُواْ لِقَاء يَوْمِهِمْ هَذَا যারা তাদের ধর্মকে খেলাধুলারূপে গ্রহণ করবে এবং দুনিয়ার জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলবে আজ আমি তাদেরকে ভুলে যাবে যেমনভাবে তারা আজকের সাক্ষাতকে (কিয়ামতকে) ভুলে গিয়েছিল। সূরা আরাফ, আয়াত নং ৫১। ৪। খেলার কোন নির্দিষ্ট সময় থাকবে না। যেমন ৬০ মিনিটি, তিন ঘন্টা ইত্যাদি। এই হলো সংক্ষেপে খেলাধুলার মূলনীতি। তথ্যসূত্র, আল-ইসলাম সুয়াল ও জওয়াব, প্রশ্ন নং ২২৩০৫। (ইন্টাননেট, আরবী)। সুতরাং কেরাম খেলা যদি আল্লাহর যিকির ও বান্দার প্রতি কর্তব্য থেকে উদাসীন না করে তাহলে উপরের চারটি শর্তসাপেক্ষে বৈধ। আর দাবা খেলায় যেহেতু বিভিন্ন প্রতিমূর্তি ব্যবহার হয় তাই হারাম হবে। দাবা খেলার বিষয়ে শায়খ উসায়মিন রহ. বলেছেন, الشطرنج متى شغل عما يجب باطنا أو ظاهرا حرم باتفاق العلماء كما لو شغل عن واجب كالصلاة ، أو ما يجب من مصلحة النفس أو الأهل ، أو الأمر بالمعروف أو النهي عن المنكر أو صلة الرحم أو بر الوالدين ، أو ما يجب فعله من نظرٍ في ولاية أو إمامة أو غير ذلك من الواجبات ، فإنه حرام بإجماع المسلمين . وكذلك إذا اشتمل على محرم كالكذب أو اليمين الكاذبة أو الخيانة أو الظلم أو الإعانة عليه أو غير ذلك من المحرمات فإنه حرام بإجماع المسلمين) أما إذا لم يشغل عن واجب ولم يتضمن محرماً ، فقد اختلف العلماء في حكمه ، فذهب جمهور العلماء (أبو حنيفة ومالك وأحمد وبعض أصحاب الشافعي) إلى تحريمه أيضاً সংক্ষিপ্ত তরজামা হলো, দাবা যদি মানুষকে তার ওয়াজিব কাজগুলো থেকে বিরত রাখে তাহলে সকল আলেমের মতে হারাম। ওয়াজিব কাজ আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে হতে পারে আবার বান্দার হকের ক্ষেত্রেও হত পারে। আর যদি ওয়াজিব কাজগুলো থেকে বিরত না রাখে তবুও অধিকাংশ আলেমের মতে হারাম। যেসব আলেম হারাম বলেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে ইমাম আবু হানীফা, মালেক, আহমাদ রহ. এবং শাফেয়ী মাজাহাবের অনেক আলেম। মাজমউল ফাতাওয়া ৩২/২১৮-২৪০। তথ্যসূত্র, আল-ইসলাম সুয়াল ও জওয়াব, প্রশ্ন নং ১৪০৯৫। (ইন্টাননেট, আরবী)। সাহবীদের থেকেও দাবা খেলা হারাম হওয়াব ব্যাপারে বক্তব্য আছে। সুতরাং দাবা খেলা বৈধ নয়। আর লুডু যদি কোন মানুষ বা প্রাণীর ছবি ছাড়া খেলা হয় তাহলে উপরুক্ত শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ হতে পারে। তবে এসব খেলা বর্জন করা উত্তম বলে মনে হয়। মোট কথা কিছু খেলা শর্তসাপেক্ষে জায়েজ । কিন্তু বর্তমানে এই সব খেলা মানুষদেরকে আল্লাহর জিকির থেকে বিরত রাখছে, বিভেদের কারণ হচ্ছে, ইচ্ছা অনিচ্ছায় অনেক হারামের ভিতর লিপ্ত করছে। সুতরাং খেলাধুলা থেকে বিরত থাকার মধ্যেই কল্যান ও বরকত। আপনার উল্লেখিত হাদীসদুটি সহীহ। তবে দ্বিতীয় হাদীসটির নাম্বার হলো ৪৯৪০। আশা করি আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছে। বিস্তারিত জানতে উক্ত তথ্যসূত্রগুলো দেখতে পারেন। সেখানে আরো বিস্তরিত দলীলসহ আছে।