যিলহজ্জ মাস এবং প্রথম তেরদিনের আমল সমূহ:

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
لإن شكرتم لأزيدنكم وإن كفرتم إن عذابي لشديد
অর্থঃ “যদি তোমরা আমার নিয়া’মতের শুকরিয়া আদায় কর তাহলে আমি তোমাদের নিয়া’মত বৃদ্ধি করে দিব । আর যদি তোমরা নাশুকরিয়া কর তাহলে (জেনে রেখ ) আমার আযাব বড় কঠিন।”

আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মাঝে অতি মুল্যবান একটি নিয়ামত হল জিবন,যা আল্লাহর বেধে দেয়া কিছু সময়ের সমষ্টি। মানুষের জিবনের প্রতিটি মুহূর্তই অতি মুল্যবান ,অতি গুরুত্বপুণ।
সময়ের গুরুত্ব বর্ননা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন:
والعصر. إن الإنسان لفي خسر
“সময়ের শফত। নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।” ((সূরা আসর,আয়াত ১-২।))

প্রথমতঃ কুরআনে আল্লাহ যা কিছু বলেছেন সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ।কিন্তু তিনি যা শফত করে বলেছেন তা আরো এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আল্লাহ শফতের সাথে সময়কে উল্লেখ করার কারণে তাই সময়ের গুরুত্ব ও আধিক্যে পৌছেছে।

দ্বিতীয়তঃ সময়ের শফত করার পরেই তিনি যা বলেছেন তা হল মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। আমরা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারি যে, মানুষের, বিশেষ করে মুসলমানদের সবচেয়ে বড়ক্ষতি তথা আখেরাত ধ্বংসের মূল কারণ হল সময়ের অবমূল্যায়ন। সময় নষ্ট করার ক্ষতি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ বলেন:

لَمْ يَتَحَسَّـرْ أَهْلُ الْجَنَّةِ إِلاَّ عَلَى سَاعَةٍ مَرَّتْ بِهِمْ لَمْ يَذْكُـرُوْا اللهَ تَعَالَى فِيْهَا
“জান্নাতের অধিবাসীগণ দুনিয়ার কোনো কিছুর জন্য আফসোস করবেন না, শুধুমাত্র যে মুহূর্তগুলি আল্লাহর যিক্র ছাড়া অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে সেগুলির জন্য তাঁরা আফসোস করবেন।” (((হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদদ ১০/৭৩ হাদীসটির সনদ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য)।))

পৃথিবীর যে দেশের, যে জাতির, যে ধর্মের, যে বর্ণের যে’ই সময়ের মুল্যায়ন করবে তার জিবনই হয়ে উঠবে ধন্য,সাফল্যমন্ডিত। পৃথিবীর সব সফল ব্যক্তিদের জিবনীতে চোখ বুলালে সফলতার পেছনে মূল কারণ হিসেবে সময়ের গুরুত্ব এবং এর সঠিক ব্যবহারের বিষয়টিই পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়।

তবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বি ভাই-বোনদের ক্ষেত্রে এসুসংবাদ কেবল দুনিয়ার জীবনেই বরাদ্দ। আখেরাতে তাদের কোন হিস্সা নেই। পক্ষান্তরে মুসলমানদের জন্য এসুসংবাদ কেবল দুনিয়ার জন্য নয় বরং আখেরাতেও তারা হবেন ধন্য যদি সময়ের মুল্যায়ন করে সময় নামক নিয়া’মতের যথাযথ শুকরিয়া আদায় করেন। উপরন্ত আল্লাহ অনুগ্রহ করে বান্দার জন্য কিছু সময়কে নির্ধারণ করে বিশেষ মর্যাদা এবং মহিমাময় করেছেন । জিলহজ্জের প্রথম তেরদিন ঠিক এমনই মহিমান্বিত, মহিমাময় । অতএব আমাদের উচিৎ কুরআন হাদীসের আলোকে যিলহজ্জ মাসের আমল সমূহ জেনে নিয়ে বেশি বেশি নেক আমলের প্রতি মনোযোগি হওয়া।

প্রথম দশদিনের আমলঃ এ মাসের দশ তারিখে আমরা ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ আদায় করি। এদিনে সামর্থবান মুসলমানদের উপর কোরবানী বা নির্ধারিত পশু জবেহ করা ওয়াজীব। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
فصل لربك وانحر
অর্থঃ “তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং কোরবানী কর।” ((সূরা আল- কাউসার,আয়াত,২।))

হযরত আয়েশা রাঃ বলেন :রাসূল সাঃ এরশাদ করেন,কোরবানীর দিন আদমের বেটা যত আমলই করে তার মধ্যে কোরবানীর আমলই হল আল্লাহর কাছে সবচে প্রিয় আমল । (তিরমিযী)
এছাড়াও এ মাসের প্রথম দশটি দিন মুমিনের জন্য অত্যন্ত ফযীলতের। সহী বুখারীতে এসেছে রাসূল সাঃ বলেন:“যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করা আল্লাহর নিকট যত প্রিয় আর কোন দিনের আমল তাঁর নিকট তত প্রিয় নয়। সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্ল্হার রাসূল (সাঃ) আল্লাহর পথে জিহাদও কি এ দশদিনের নেক আমলের চেয়ে প্রিয় নয়? তিনি বললেন, না , আল্লাহর পথে জিহাদও প্রিয় নয়। তবে ঐ ব্যক্তি ছাড়া,যে ব্যক্তি নিজের প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে জিহাদে গেল এবং কোন কিছুই আর ফিরে এলো না।” ((বুখারী,আস-সহীহ,১/৩২৯) অন্য হাদীসে তিনি বলেন,“দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ফযিলতের দিন হল যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশদিন।”(হাদীসটি সহীহ,হাইসামী,মাজমাউয যাওয়ায়েদ,৩/২৫৩))

তাই আল্লাহর নযে়ামত ও বশিষে অনুগ্রহ মনে করে এই দশকে সাধ্যমতো নকে আমলরে পাবন্দী করা একান্ত প্রয়োজন।। সকল প্রকার ইবাদতই নেক আমল। ফরয ইবাদত তো সঠিক সময়ে সঠিকভাবে করতেই হবে। পাশাপাশি অন্যান্য নফল ইবাদতের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন, যিকর, দুআ, ইসতিগফার, নফল নামজ, নফল রোযা, কুরআন তেলাওয়াত, দান ইত্যাদি। হাদীস শরীফে বিশেষ করে তিন প্রকার ইবাদত এ দিনগুলিতে পালনের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে: কিয়ামুল্লাইল বা রাতের নামায, সিয়াম ও যিকর। বিশেষত যুলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখে যেদিন হাজীগন আরাফার মাঠে অবস্থান করেন, সে দিন যারা হজ্জে যান না তাদেরকে সিয়াম পালন করতে বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) বলেন: “আমি আশা করি আরাফার দিবসের সিয়াম বিগত বছর ও আগামী বছরের কাফ্ফারা হবে।” ((মুসলিম আস-সহীহ ২/৮১৯।))

অপর একটি হাদীসে তিনি বলেন:“যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাময় কোনদিন নেই এবং নেক আমল করার জন্য এগুলির চেযে বেশি প্রিয় দিন আর নেই। অতএব তোমরা এদিনগুলিতে বেশি বেশি তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার) আদায় করবে।” অন্য বর্ণনায়: বেশি বেশি তাহলীল, তাকবীল ও আল্লাহর যিকর করবে।” ((হাদীসটি সহীহ। হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৯))

বিভিন্ন হাদীসে এই দশকে বিশেষ কিছু আমলের কথাও বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

১. চুল, নখ, মোচ ইত্যাদি না কাটা

যিলহজ্বলের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানীর আগ র্পযন্ত নিজের নখ, চুল, মোচ, নাভীর নিচের পশম ইত্যাদি না কাটা। এটা মুস্তাহাব আমল।
হযরত উম্মে সালামা (রা.) হতে বর্নিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-

إذا رأيتم هلال ذي الحجة وأراد أحدكم أن يضحي فليمسك عن شعره وأظفاره.
তোমরা যদি যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন স্বীয় চুল ও নখ কাটা থকেে বিরত থাকে। ((সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১৯৭৭; জামে তরিমযিী, হাদীস : ১৫২৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৭৯১; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৪৩৬২; সহীহ ইবনে হিববান হাদীস : ৫৮৯৭))

যে ব্যক্তি কুরবানী করতে সক্ষম নয় সেও এ আমল পালন করব। র্অথাৎ নিজের চুল, নখ, গোঁফ ইত্যাদি কাটবে না; বরং তা কুরবানীর দিন কাটবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-

أمرت بيوم الأضحى جعله الله عيدا لهذه الأمة. قال له رجل :يا رسول الله! أرأيت إن لم أجد إلا منيحة أنثى أفأضحي بها؟ قال : لا، ولكن خذ من شعرك وأظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك، فذلك تمام أضحيتك.
আমি কুরবানীর দিন সর্ম্পকে আদিষ্ট হয়ছেি (র্অথাৎ এ দিবসে কুরবানী করার আদেশ করা হয়ছে। আল্লাহ তাআলা তা এ উম্মতরে জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করছেন। এক ব্যক্তি আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানীহা থাকে র্অথাৎ যা শুধু দুধপানরে জন্য দওেয়া হয়ছে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললনে, না; বরং সদেনি তুমি তোমার চুল কাটবে (মুন্ডাবে বা ছোট করব), নখ কাটবে, মোচ এবং নাভীর নিচের পশম পরষ্কিার করবে। এটাই আল্লাহর কাছে তোমার র্পূণ কুরবানী বলে গণ্য হব। ((মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৭৫; হাদীসটি সহীহ (আহমদ শাকের) সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস : ৭৭৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৪৩৬৫))

র্অথাৎ যারা কুরবানী করতে সক্ষম নয় তারাও যনে মুসলমানদের সাথে ঈদরে আনন্দ ও খুশি উদযাপনে অংশীদার হয়। তারা এগুলো কর্তন করেও পরিপূর্ণ সওয়াবের অধকিারী হবে। অনুরূপভাবে হাজীদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী হবে।

২. ঈদরে দিন ছাড়া বাকি নয় দিন রোযা রাখা

আশারায়ে যিলহজ্জের আরকেটি বিশেষ আমল হল, ঈদুল আযহার দিন ছাড়া প্রথম নয় দিন রোযা রাখা। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নয়টি দিবসে (যিলহ্জ মাসের প্রথম নয় দিন) রোযা রাখতেন।((সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২২২৩৪; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৪১৬))

অন্য হাদীসে হযরত হাফসা রা. র্বণনা করনে-
أربع لم يكن يدعهن النبي صلى الله عليه وسلم : صيام عاشوراء والعشر وثلاثة أيام من كل شهر وركعتين قبل الغداة.
চারটি আমল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়তেন না। আশুরার রোযা, যিলহজ্জের প্রথম দশকরে রোযা, প্রত্যকে মাসের তিনদিনের রোযা, ফজরের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামায।((সুনানে নাসায়ী, হাদীস :২৪১৫; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৬৪২২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৭০৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২৬৩৩৯))

৩. বিশেষভাবে নয় তারিখে রোযা রাখা

যিলহজ্জের নয় দিনের মধ্যে নবম তারিখের রোযা র্সবাধকি ফযীলতর্পূণ। সহীহ হাদীসে এই দিবসের রোযার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي بعده والسنة التي قبله.
আরাফার দিনের (নয় তারিখের) রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী বছররে গুনাহ মিটিয়ে দিবেন।((সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১১৬২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪২৫; জামে তরিমযিী, হাদীস : ৭৪৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৭৩০))

আরেকটি হাদীসে এসছে-
من صام يوم عرفة غفر له سنتين متتابعتين.
যে ব্যক্তি আরাফার দিন রোযা রাখবে তার লাগাতার দুই বছররে (গুনাহ ক্ষমা করা হব।((মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৭৫৪৮; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫১৪১))
এভাবে আমরা দেখেছি, যুলহাজ্জ মাসের এদশদিন মুমিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক মুমিনের চেষ্টা করা দরকার এদিনগুলিতে বেশি বেশি নেক আমল করার । যারা যিলহজ্জের নয় রোযা রাখতে সক্ষম হবে না তারা যনে অন্তত এই দনিরে রোযা রাখা থকেে বঞ্চতি না হয়। আল্লাহ তাআলা আশারায়ে যিলহজ্জের মতো অন্যান্য বশিষে বশৈষ্ট্যিমন্ডতি দনিগুলোতে ইবাদত-বন্দগেী করার তাওফীক দনি। আমীন

পরবর্তী তিন দিনের আমলঃ ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে আল্লাহর যিকরের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন:
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى
“তোমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনগুলিতে আল্লাহর যিকর করবে। যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দুদিনে চলে আসে তবে তার কোনো পাপ নেই, আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোনো পাপ নেই, এ তার জন্য যে তাকওয়া অবলম্বন করে । ((সূরা বাকারা: ২০৩ আয়াত।))

এভাবে আমরা দেখছি যে, যুলহাজ্জ মাসে প্রথম ১৩ দিন বিশেষভাবে আল্লাহর যিকরের জন্য নির্ধারিত।আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে উক্ত দিন সমূহে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফীক দিন । আমীন।

Dr. Abdullah Jahangir:  https://www.facebook.com/Dr.KhandakerAbdullahJahangir

ASSUNNAH TRUST:  https://www.facebook.com/Assunnahtrust

ASSUNNAH PUB: https://www.facebook.com/AssunnahPublications

Dr. Abdullah Jahangir: https://www.youtube.com/user/SunnahTrust

ASSUNNAH TRUST MEDIA: https://www.youtube.com/c/AssunnahTrustMedia/videos

TWEETER: https://twitter.com/assunnahtrust3

ASSUNNAH SHOP: https://beta.assunnahtrust.org/shop/