ওয়া আলাইকুমুস সালাম। শায়খ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. বেঁচে থাকা কালীন এই প্রশ্নের বিষয়ে তাঁর সাথে আলোচনা করেছিলাম। তিনি আমাকে যা বলেছিলেন তার সারকথা নিম্নরুপ:
আমরা সবাই জানি মুহাম্মাদ সা. এর উম্মতদের মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে সাহাবীদের স্থান সর্বাগ্রে। পৃথিবীর কোন ওলী, কোন দরবেশ বা আলেম মর্যদার দিকে দিয়ে সাহাবীদের সমান নয়। কুরআন ও হাদীসে সাহাবীদের মর্যাদার বিষয়টি বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। এবার নিচের হাদীস তিনটি ভালভাবে লক্ষ্য করুন,
১। عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ، قَالَ : اسْتَأْذَنَ أَبُو مُوسَى عَلَى عُمَرَ فَقَالَ : السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ ؟ قَالَ عُمَرُ : وَاحِدَةٌ ، ثُمَّ سَكَتَ سَاعَةً ، ثُمَّ قَالَ : السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ ؟ قَالَ عُمَرُ : ثِنْتَانِ ، ثُمَّ سَكَتَ سَاعَةً فَقَالَ : السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ ؟ فَقَالَ عُمَرُ : ثَلاَثٌ ، ثُمَّ رَجَعَ ، فَقَالَ عُمَرُ لِلْبَوَّابِ : مَا صَنَعَ ؟ قَالَ : رَجَعَ ، قَالَ : عَلَيَّ بِهِ ، فَلَمَّا جَاءَهُ ، قَالَ : مَا هَذَا الَّذِي صَنَعْتَ ؟ قَالَ : السُّنَّةُ ، قَالَ : آلسُّنَّةُ ؟ وَاللَّهِ لَتَأْتِيَنِّي عَلَى هَذَا بِبُرْهَانٍ أَوْ بِبَيِّنَةٍ أَوْ لأَفْعَلَنَّ بِكَ ، قَالَ : فَأَتَانَا وَنَحْنُ رُفْقَةٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ : يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ أَلَسْتُمْ أَعْلَمَ النَّاسِ بِحَدِيثِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ أَلَمْ يَقُلْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الاِسْتِئْذَانُ ثَلاَثٌ ، فَإِنْ أُذِنَ لَكَ ، وَإِلاَّ فَارْجِعْ فَجَعَلَ القَوْمُ يُمَازِحُونَهُ ، قَالَ أَبُو سَعِيدٍ : ثُمَّ رَفَعْتُ رَأْسِي إِلَيْهِ فَقُلْتُ : فَمَا أَصَابَكَ فِي هَذَا مِنَ العُقُوبَةِ فَأَنَا شَرِيكُكَ. قَالَ : فَأَتَى عُمَرَ فَأَخْبَرَهُ بِذَلِكَ ، فَقَالَ عُمَرُ : مَا كُنْتُ عَلِمْتُ بِهَذَا
আবূ সাঈদ (রা.) হতে র্বণতি, তনিি বলনে, আবূ মূসা (রা.) উমর (রা.)-এর নকিট অনুমতি চযে়ে বলনে, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি আসতে পার? উমর (রা.) বলনে, এক। আবূ মূসা (রা.) কছিুক্ষণ চুপ থাকলনে। তনিি আবারও সালাম দিয়ে বলনে, আমি কি ভতিরে আসতে পার? উমর (রা.) বলনে, দুই। তারপর আবূ মূসা (রা.) অল্প সময় নীরবতা অবলম্বন করলনে। তনিি আবার বললনে, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি আসতে পার? উমর (রা.) বললনে, তিনি এবার চলে যতেে লাগলনে। উমার (রা.) প্রহরীকে জজ্ঞিসে করলনে, তিনি কি করছনে? প্রহরী বলল, তিনি চলে গছেনে। তিনি বললনে, তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে নিয়ে এসো। তারপর তিনি উমারের সামনে এলে তিনি প্রশ্ন করলনে, আপনি এরকম করলনে কনে? তিনি বললনে, আমি সুন্নাত পালন করছে। উমর (রা.) বললনে, সুন্নাত পালন করছেনে? আল্লাহর কসম! এর সপক্ষে আপনাকে দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করতে হব, তা না হলে আমি আপনার ব্যবস্থা করছি (র্অথাৎ- শাস্তি দবি)। র্বণনাকারী বলনে, তারপর তনিি (আবূ মূসা) আমাদরে নকিট আসলনে। আমরা কয়জন আনসার বন্ধু একসাথে বসে ছলিাম। তনিি বললনে, হে আনসার সম্প্রদায়! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস সর্ম্পকে কি তোমরা সবার চাইতে বশেি জ্ঞাত নও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলনেনি যে, তিনবার অনুমতি চাইতে হব? তারপর তোমাকে অনুমতি দলিে তো দলি, নতুবা ফরিে যাব। উপস্থতি লোকজন তার সাথে কৌতুক করতে লাগল। আবূ সাঈদ (রা.) বলনে, এবার আমি মাথা তুলে তার দকিে তাকালাম এবং বললাম, আপনার উপর এ ব্যাপারে কোন শাস্তি হলে আমি আপনার অংশীদার হব। রাবী বলনে, তারপর তিনি উমাররে নিকট এসে এ ঘটনা বললনে। উমার (রা.) বললনে, আমি এ সর্ম্পকে জানতাম না। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৯০।হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযীসহ মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ২। عَنْ قَبِيصَةَ بْنِ ذُؤَيْبٍ أَنَّهُ قَالَ جَاءَتِ الْجَدَّةُ إِلَى أَبِى بَكْرٍ الصِّدِّيقِ تَسْأَلُهُ مِيرَاثَهَا فَقَالَ مَا لَكِ فِى كِتَابِ اللَّهِ تَعَالَى شَىْءٌ وَمَا عَلِمْتُ لَكِ فِى سُنَّةِ نَبِىِّ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- شَيْئًا فَارْجِعِى حَتَّى أَسْأَلَ النَّاسَ. فَسَأَلَ النَّاسَ فَقَالَ الْمُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ حَضَرْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَعْطَاهَا السُّدُسَ. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ هَلْ مَعَكَ غَيْرُكَ فَقَامَ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ فَقَالَ مِثْلَ مَا قَالَ الْمُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَৃ
অর্থ: ক্ববিসা ইবনে যুয়াইব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একজন দাদী আবু বকর সিদ্দিক রা. এর কাছে এসে তার মিরাস চাইলেন। তখন তিনি বলেন, কুরআনে তোমার (মিরাস পাওয়ার) বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই, হাদীসেও তোমার বিষয়ে কিছু আছে বলে আমি জানি না। তুমি ফিরে যাও, আমি লোকদের কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি। তিনি লোকদের কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তখন মুগিরা ইবনে শুবা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, তিনি দাদীকে এক ষষ্ঠমাংস দিয়েছেন। আবু বকর রা. বলেন, তুমি ছাড়া আর কেউ কি বিষয়টি জানে? তখন মুহাম্মাদ ইবনে সালামা দাঁড়ালেন এবং মুগিরা যেমন বলেছেন তেমন বললেন। … সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ২১০১; সুনানু আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮৯৬।হাদীসটির সকল বর্ণনাকারীকেই মুহাদ্দিসগণ ছিকাহ বলেছেন। হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী হাসান সহীহ বলেছেন। তবে ক্ববিসা আবু বকর রা. পেয়েছেন কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। হাদীসটির উপর আমল সহীহ হওয়ার বিষয়ে সকল আলেম একমত। ৩। عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَرْسَلَتْ إِلَى أَبِى بَكْرٍ الصِّدِّيقِ تَسْأَلُهُ مِيرَاثَهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْهِ بِالْمَدِينَةِ وَفَدَكٍ وَمَا بَقِىَ مِنْ خُمْسِ خَيْبَرَ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ لاَ نُورَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ إِنَّمَا يَأْكُلُ آلُ مُحَمَّدٍ – -صلى الله عليه وسلم- – فِى هَذَا الْمَالِ وَإِنِّى وَاللَّهِ لاَ أُغَيِّرُ شَيْئًا مِنْ صَدَقَةِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنْ حَالِهَا الَّتِى كَانَتْ عَلَيْهَا فِى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَلأَعْمَلَنَّ فِيهَا بِمَا عَمِلَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَأَبَى أَبُو بَكْرٍ أَنْ يَدْفَعَ إِلَى فَاطِمَةَ شَيْئًا فَوَجَدَتْ فَاطِمَةُ عَلَى أَبِى بَكْرٍ فِى ذَلِكَ – قَالَ – فَهَجَرَتْهُ فَلَمْ تُكَلِّمْهُ حَتَّى تُوُفِّيَتْ
উরবা ইবনে যুবায়রে র্বণনা করছেনেৃ আয়শা হতে র্বণতি ফাতমিা রাসুলুল্লাহ-এর সম্পদ হতে তার প্রাপ্য মীরাছ এর দাবী করে আবু বকর এর নকিট পাঠালনে, যা আল্লাহ তালা রাসুলুল্লাহ কে মদীনা ও ফদিাক এর ফাই এবং খায়বাররে অবশষ্টি এক-পঞ্চমাংশ হতে প্রদান করছেলিনে। তখন আবু বকর বললনে, রাসুলুল্লাহ বলে গয়িছেনে, আমাদরে নবীদরে পরত্যিক্ত সম্পদে কোন মীরাছ বন্টন করা হবে না। কনেনা আমাদরে রাখয়িা যাওয়া সকল কছিু ছদকা হয়ে যাব। মোহাম্মদ এর পরবিারর্বগ তা হতে ভরণ পোষণ গ্রহণ করব। আমি আল্লাহর শপথ করে বলতছে, মুহাম্মদ এর আমলে ছদকাহর যে ব্যবস্থা জারী ছলি, তা আমি পরর্বিতন করব না। এই ব্যপারে আমি সইে কাজই করব যা রাসুলুল্লাহ করে গয়িছেনে। অতএব আবু বকর ফাতমিা কে তা হতে মীরাছ প্রদান করতে অস্বীকার করলনে। যার ফলে ফাতমো রাগান্বতি হয়ে আবু বকর এর সাথে সংস্রব ত্যাগ করলনে। তনিি মৃত্যূ র্পযন্ত তার সাথে আর কোন কথাই বলনে নাই। … সহীহ মুসলমি, হাদীস নং ৪৬৭৯। আমরা প্রথম হাদীসে দেখছি, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন তিনবার অনুমতি চাওয়ার পর অনুমতি না দিলে ফিরে যাও এটা উমার রা. জানতেন না। আবু মুসা রা. যখন বললেন তখন তিনি তাঁকে এর স্বপক্ষে সাক্ষী হাজির করতে বললেন। তিনি বলেন নি দাঁড়াও আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছ থেকে বিষয়টি জেনে নিই। যদি মৃত্যুর পর রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছ থেকে কোন কিছু জেনে নেয়া সম্ভব হতো তাহলে উমার রা. তাই করতেন। একজন প্রথম সারীর সাহাবীর পক্ষে যখন এটা সম্ভব নয় তখন কোন ওলীর পক্ষে কি এটা সম্ভব?
দ্বিতীয় হাদীসে আমরা দেখছি, দাদীর মিরাছ পাওয়া বিষয়ে আবু বকর রা. জানা ছিল না। যখন একজন দাদী মিরাস দাবী করল তখন তিনি বললেন, আমি লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা করে দেখি। যদি মৃত্যুর পর রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে কথা বলার সুযোগ থাকতো তাহলে তো তিনি বলতেন, দাঁড়াও, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে শুনে দেখি। আবু বকরের মত সাহাবী, ইসলামের প্রথম খলীফার পক্ষে মৃত্যুর পরে রাসূলের সাথে কথা বলা যেখানে অসম্ভব সেখানে কোথায় ওলী আর কোথায় মুরশিদ?
এভাবে তৃতীয় হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি, ফাতিমা রা.কে মিরাস দিতে অস্বীকার করায় তিন আবু বকর রা. এর সাথে কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ করে দেন। তার অর্থ হলো ফাতেমা রা. মনে করতেন তিনি মিরাসের হকদার। কিন্তু তিনি কখনো তো রাসূলুল্লাহ সা. এর কবরের কাছে গিয়ে জানতে গেলেন না মিরাস পাবেন কিনা? তিনি তো রাসূলুল্লাহ সা. এর সবচেয়ে আদরের মেয়ে ছিলেন। তাহলে কি রাসূলের কাছে ফাতেমার চেয়েও ঐসব কথিত পীর-মুরশিদ বেশী প্রিয়? উপরের আলোচনা থেকে আশা করি বুঝতে পেরেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর ওফাতের পরে কোন বিষয়ে তার সাথে আলোচনা করার দাবী করা সম্পূর্ণ ভন্ডামী, কুসংস্কার ও মিথ্যা কথা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই ধরনের পীর-মুরশিদ থেকে হেফাজত করুন।