As-Sunnah Trust

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 565

ঈমান

প্রকাশকাল: 17 Aug 2007

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ,
বিশ্বখ্যাত ইমাম ও প্রখ্যাত অলি হযরত আবদুল ওহাব শারানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেছেন-
كل من كان متعلقا بنبى او رسول اوولى فلابد ان يحضره وياخذه بيده فى الشدائد-
অর্থাৎ যে কেউ কোন নবী-রসূল বা ওলীর সাথে সম্পৃক্ত হবে অবশ্যই উক্ত নবী-রসূল ও ওলী তার (ভক্তের) কঠিন বিপদ-আপদে উপস্থিত হয়ে সমস্ত আপদ-বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। (এ ক্ষমতা আল্লাহ্ তাআলা তাঁদেরকে দান করেছেন। কাজী সানা উল্লাহ্ পানি পত্থি রহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন- আউলিয়ায়ে কেরাম তাদের ভক্তদের সাহায্য এবং শক্রদের শাস্তি প্রদান করেন। [তাফসীরে মাজহারী]
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন, ওলীকুলের সম্রাট হুজুর গাউসে পাক সৈয়্যদুনা আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইরশাদ করেন-
من استغاث بى فى كربة كشفت عنه ومن نادانى باسمى فى شدة فرجت عنه-
অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন দুঃখ ও মুসিবতে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে, তার দুঃখ-বেদনা দূর হয়ে যাবে, আর যে বিপদের মুহূর্তে আমার নাম নিয়ে আমাকে আহ্বান করবে সে বিপদ হতে রক্ষা পাবে। মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলায়হি এও বলেছেন, হুজুর গাউসে পাকের এই পবিত্র কালাম (বাণী) পরীক্ষা করা হয়েছে, অতঃপর তা বিশুদ্ধভাবে পরীক্ষত ও প্রমাণিত হয়েছে। [নুযহাতুল হাতিরিল ফাতির ফী মানাকিবে আশ্শায়খ আবদিল কাদির জিলানী রাদ্বি.]
আপনি কি দয়া করে শায়ককে জিজ্ঞাসা করবেন উপরের তথ্যগুলো সঠিক কিনা। ?

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। শায়খ রা. মারা যাওয়ার পূর্বে এই প্রশ্নের বিষয়ে আমি তাঁর সাথে আলোচনা করেছিলাম। তিনি যা বলেছেন তার সারকথা হলো: ইসলাম আমাদের দেশে দুই ধরনের।একটি কথিত ওলী-আউলিয়াদের বাণী নির্ভর ইসলাম আর একটি হলো কুরআন-সুন্নাহ নির্ভর ইসলাম। আপনি যদি প্রথম প্রকারের ইসলাম মানেন তাহলে এই প্রশ্নের বিষয়ে আপনার সাথে আমাদের কোন কথা নেই আর যদি দ্বিতীয় প্রকারের ইসলাম মানেন অর্থাৎ কুরঅঅন-সুন্নাহ নির্ভর ইসলাম মানেন তাহলে লক্ষ্য করুন: তিনি কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা বইয়ের ৪৩০ পৃষ্ঠা বলেছেন, আল্লাহ কাউকে কোনরূপ ক্ষমতা প্রদান করেন নি। মহান আল্লাহ সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি কখনোই কাউকে এরূপভাবে ক্ষমতা দেন নি। মহান আল্লাহ বলেন: وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ وَلِيٌّ مِنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا বল, প্রশংসা আল্লাহরই যিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেন নি, তাঁরা ক্ষমতায়-রাজত্বে কোনো শরীক নেই এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না যে- কারণে তাঁর অভিভাবকের বা সাহায্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং সসম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর। সূরা (১৭) বানী ইসরাঈল: ১১১ আয়াত। আরো দেখুন: সূরা (১৮) কাহাফ: ২৬ ও সূরা (১৩) রাদ: ৪১ আয়াত। এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন: قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلا فِي الأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ বল, তোমরা আহ্বান কর তাদেরকে যাদেরকে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে (ইলাহ) মনে করতে, তারা আকাশ-মণ্ডলী এবং পৃথিবীতে অণুপরিমাণ কিছুর মালিক নয় এবং এতদুভয়ে তাদের কোনো অংশও নেই এবং তাদের কেউ মহান আল্লাহর সহায়কও নয়। সূরা (৩৪) সাবা: ২২ আয়াত। এ বিষয়টি সকল মুশরিকের সকল উপাস্যের বিষয়েই প্রযোজ্য। মুর্তি, প্রতিমা, তারকা, ফিরিশতাগণ, নবীগণ, ওলীগণ, জিন্নগণ বা অন্য যাদেরই ইবাদত করত মুশরিকগণ সকলের ক্ষেত্রেই উত্তর একই। তাঁরা কেউই আসমানের বা যমিনের এক অনুপরিমাণ মালিকানা রাখেন না। আসমান-যমিনের কোথাও তাদের কোনো অংশীদারিত্ব নেই এবং মহান আল্লাহ তাদের কারো সহযোগিতার প্রত্যাশী নন, কেউ তাকে কোনোরূপে সাহায্য সহযোগিতা করেন না। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন: ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِنْ قِطْمِيرٍ তিনিই আল্লাহ তোমাদের প্রতিপালক। রাজত্ব-মালিকানা তাঁরই। এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা তো খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়। সূরা (৩৫) ফাতির: ১৩ আয়াত। খৃস্টানগণ ঈসা মাসীহ (আ)-কে মহান আল্লাহর যাত বা সত্তার অংশ ও অবতার (এড়ফ রহপধৎহধঃব) হিসেবে ইবাদত করে। এ ছাড়া তারা মরিয়ম (আ)-কে সান্তা বা মহান আল্লাহর বিশেষ করুণাপ্রাপ্ত ওলী হিসেবে ইবাদত করে। তার মুর্তিতে বা ফিলিস্তিনে বিদ্যমান তার কবরে সাজদা করে, মানত করে, তার আশীর্বাদ ও বর প্রার্থনা করে। মহান আল্লাহ তাদেরকে বিশ্ব পরিচালনায় কিছু ক্ষমতা দিয়েছেন বলে তারা বিশ্বাস করে। মহান আল্লাহ তাদের মানবত্ব ও অক্ষমতা বর্ণনা করে বলেন: مَا الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ إِلا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ وَأُمُّهُ صِدِّيقَةٌ كَانَا يَأْكُلانِ الطَّعَامَ انْظُرْ كَيْفَ نُبَيِّنُ لَهُمُ الآَيَاتِ ثُمَّ انْظُرْ أَنَّى يُؤْفَكُونَ قُلْ أَتَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لا يَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلا نَفْعًا وَاللَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ মরিয়ম-তনয় মাসীহ তো কেবল একজন রাসূল; তার পূর্বে বহু রাসূল গত হয়েছে এবং তার মাতা সত্যনিষ্ঠ ছিল। তারা উভয়ে খাদ্যাহার করত। দেখ, তাদের জন্য আয়াত কিরূপ বিশদভাবে বর্ণনা করি, আরো দেখ, তারা কিভাবে সত্য বিমুখ হয়! বল, তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন কিছুর ইবাদত কর যার কোনোই ক্ষমতা নেই তোমাদের ক্ষতি করার বা উপকার করার? আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। সূরা (৫) মায়িদা: ৭৫-৭৬ আয়াত। উক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি আল্লাহ তায়ালা কোন ওলী বা কোন ব্যক্তিকে এমন কোন ক্ষমতা প্রদান করেন নি যার মাধ্যমে সে মৃত থাকা অবস্থায় স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে কাউকে কোন ধরনের সাহায্য করতে পারে। বরং এই ধরনের সাহায্য আল্লাহ তায়ালার কাজ। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া সম্পর্কে তিনি উক্ত বইয়ের ৪০৩ ও ৪৯৮ পৃষ্ঠায় বলেন, প্রার্থনা করা বা ডাকার বিষয়বস্তু দুই প্রকারের হতে পারে। এক প্রকার লৌকিক বা জাগতিক সাহায্য-সহযোগিতা যা মানুষ স্বাভাবিকভাবে করতে পারে। এ সকল বিষয় প্রকৃতিগতভাবে একজন মানুষ আরেকজনের নিকট চেয়ে থাকে এবং মানুষ জাগতিকভাবে তা প্রদান করতে পারে। যেমন, কারো কাছে টাকাপয়সা চাওয়া, সাহায্য চাওয়া, পানিতে পড়ে গেলে উঠানোর জন্য সাহায্য চাওয়া, মাথার বোঝা পড়ে গেলে উঠাতে সাহায্য চাওয়া, ইত্যাদি, ইত্যাদি অগণিত। জাতি, ধর্ম, বিশ্বাস ও অবিশ্বাস নির্বিশেষে সকলেই এ ধরনের সাহায্য প্রার্থনা করে। দ্বিতীয় প্রকার প্রার্থনা বা ডাকা অলৌকিক বা অপার্থিব। জাগতিক মাধ্যম ও উপকরণ ছাড়া অলৌকিক সাহায্য, ত্রাণ ইত্যাদি প্রার্থনা করা। এ জাতীয় প্রার্থনা শুধুমাত্র কোনো ধর্মের অনুসারী বা বিশ্বাসী করেন। বিশ্বাসী কেবলমাত্র আল্লাহ ঈশ্বর বা সর্বশক্তিমান বলে যাকে বিশ্বাস করেন, অথবা যার সাথে ইশ্বরের বিশেষ সম্পর্ক ও যার মধ্যে ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে, তার কাছেই এরূপ প্রার্থনা করেন বা তাকেই এভাবে ডাকেন। দৃশ্যমান বা অদৃশ্য উপস্থিত কোনো মানুষ, জিন্ন বা ফিরিশতার কাছে লৌকিক ও জাগতিক সাহায্য ও ত্রাণ প্রার্থনা করা যায়। কিন্তু অলৌকিক ত্রাণ একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে চাওয়া যায় না। দূরে অবস্থিত বা অনুপস্থিত কারো কাছে লৌকিক বা অলৌকিক সাহায্য চাওয়া এবং উপস্থিত বা অনুপস্থিত কারো কাছে অলৌকিক সাহায্য চাওয়া শিরক। নুমান ইবনু বাশীর (রা) বলেন, নবীজী বলেন : الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ দুআ বা প্রার্থনাই ইবাদত। একথা বলে তিনি কুরআনের আয়াত পাঠ করলেন (সূরা গাফির (মুমিন) : ৬০): وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ তোমাদের প্রভু বলেন: তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব বা তোমাদের প্রার্থনা পূরণ করব। নিশ্চয় যারা আমার ইবাদত থেকে অহঙ্কার করে (আমার কাছে প্রার্থনা না করে) তারা শীঘ্রই লাঞ্ছিত অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তিরমিযী, আস-সুনান ৫/২১১; আবু দাউদ, আস-সুনান ২/৭৬; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ২/১২৫৮; ইবনু হিব্বান, আস-সুনান ৩/১৭২; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৬৬৭। হাদীসটি সহীহ। দুআ, কেন্দ্রিক শিরকের বিষয়ে শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী (রাহ) বলেন: মুশরিকগণ আল্লাহ ছাড়া অন্যদের নিকট হাজত বা প্রয়োজন মেটানোর জন্য সাহায্য প্রার্থনা করত। অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতা, দরিদ্র ব্যক্তির সচ্ছলতা ইত্যাদি প্রয়োজনে তারা তাদের নিকট প্রার্থনা করত। এ সকল উদ্দেশ্য পূরণ হওয়ার জন্য তারা তাদের নামে মানত করত। তারা আশা করত যে, এ সকল মানতের মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে এবং বিপদাপদ কেটে যাবে। তারা বরকত লাভের উদ্দেশ্যে এ সকল উপাস্যের নাম পাঠ করত। একারণে আল্লাহ তাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, তারা সালাতের মধ্যে বলবে: إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ আমরা শুধু তোমরই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। সূরা (১) ফাতিহা: ৪ আয়াত। মহান আল্লাহ বলেন: فَلا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডেক না। সূরা (৭২) জিন্ন: ১৮ আয়াত। একটি উদাহরণ থেকে আমরা লৌকিক ত্রাণ প্রার্থনা বা ডাকা এবং শিরকী ত্রাণ প্রার্থনা বা ডাকার মধ্যে পার্থক্য বুঝার চেষ্টা করি। মনে করুন আমার গরুটি পালিয়ে যাচ্ছে। আমি সামনে কোনো মানুষ দেখে বা কোনো মানুষ থাকতে পারে মনে করে চিৎকার করে বললাম, ভাই, আমার গরুটি একটু ধরে দেবেন! অথবা আমি পথ চিনতে পারছি না, তাই কোনো মানুষকে দেখে অথবা কোনো বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ভিতরে মানুষ আছে অনুমান করে চিৎকার করে বলছি, ভাই অমুক স্থানে কোন দিক দিয়ে যাব একটু বলবেন! এখানে আমি লৌকিক সাহায্য প্রার্থনা করছি। ঐ মানুষের মধ্যে কোনো অলৌকিকত্ব বা ঐশ্বরিক গুণ কল্পনা করছি না। ঐ ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিচয়ও আমার কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। আমি জানি যে, স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ একটি গরু ধরতে পারে বা উক্ত স্থানের একজন বাসিন্দা স্বাভাবিকভাবে পথটি চিনবে বলে আশা করা যায়। এজন্য আমি তার থেকে এই লৌকিক সাহায্য প্রার্থনা করছি। যদি কোথাও এই প্রকারের জাগতিক সমস্যা হয় এবং সেখানে কোনো মানুষজন না থাকে তাহলে উপস্থিত অদৃশ্য ফিরিশতাগণের নিকটও সাহায্য চাওয়া যেতে পারে বলে একটি দুর্বল সনদের হাদীস থেকে জানা যায়। মুমিন জানেন যে, আল্লাহর অগণিত ফিরিশতাগণ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছেন। এছাড়া অদৃশ্য সৃষ্টি জীনেরাও বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে। উপরের পরিস্থিতিতে যদি কোনো দৃশ্যমান মানুষকে না দেখে তিনি অদৃশ্য ফিরিশতা বা জ্বিনের কাছে লৌকিক সাহায্য চান তাহলে তা জায়েয হবে। কারণ তিনি কোনো নির্দিষ্ট সৃষ্টির মধ্যে ঈশ্বরত্ব বা অলৌকিকত্ব কল্পনা করছেন না। তথায় কোন্ ফিরিশতা আছেন বা কোন্ জ্বিন রয়েছেন তাও তিনি জানেন না বা জানা তার কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। তিনি জানেন যে, এখানে কোনো ফিরিশতা বা জ্বিন থাকতে পারেন। আল্লাহর অন্য কোনো বান্দাকে দেখছি না, কাজেই এখানে উপস্থিত আল্লাহর অদৃশ্য বান্দাদের কাছে একটু সাহায্য চেয়ে দেখি কী হয়। ইবনু মাসঊদ (রা) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন : إِنَّ لِلهِ عَزَّ وَجَلَّ مَلاَئِكَةً سِوَى الْحَفَظَةِ يَكْتُبُوْنَ مَا سَقَطَ مِنْ وَّرَقِ الشَّجَرِ فَإِذَا أَصَابَ أَحَدَكُمْ عَرْجَةٌ بِأَرْضِ فَلاَةٍ فَلْيُنَادِ أَعِيْنُوا عِبَادَ اللهِ يَرْحَمُكُمُ اللهُ تَعَالَى বান্দার সাথে তার সংরক্ষণে নিয়োজিত ফিরিশতাগণ ছাড়াও আল্লাহর অনেক ফিরিশতা আছেন যারা সারা বিশ্বে কোথায় কোন গাছের পাতা পড়ছে তাও লিখেন। যদি তোমাদের কেউ কোনো নির্জন প্রান্তরে আটকে পড়ে বা অচল হয়ে পড়ে তাহলে সে ডেকে বলবে: হে আল্লাহর বান্দাগণ তোমরা সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদের রহমত করুন। ইবনু আবী শাইবা, আল-মুসান্নাফ ৬/৯১, আবু ইয়ালা, আল-মুসনাদ ৯/১৭৭, তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর ১০/২১৭, ১৭/১১৭, বাইহাকী, শুআবুল ঈমান ১/১৩৮, ৬/১২৮, হাইসামী, মাজমাউয় যাওয়াইদ ১০/১৩২, মুনাবী, ফাইযুল কাদীর ১/৩০৭, শওকানী, তুহফাতুয যাকিরীন, পৃ. ১৫৫, আলবানী, যায়ীফাহ ২/১০৮-১১০, নং ৬৫৫, যায়ীফুল জামিয়, পৃ. ৫৫, ৫৮, নং ৩৮৩, ৪০৪। হাদীসটির সনদ যয়ীফ। এ প্রকার লৌকিক বা জাগতিক সাহায্য প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে যদি কেউ অনুপস্থিত কাউকে ডাকেন বা অনুপস্থিত কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন তাহলে তা শিরক হবে। যেমন, কারো রিকশা উল্টে গেছে বা গাড়িটি খাঁদে পড়েছে, তখন স্বাভাবিক লৌকিক কর্ম যে, সে কাউকে দেখতে পাক বা না পাক, সে চিৎকার করে সাহায্য চাইবে: কে আছ একটু সাহায্য কর। এখানে সে লৌকিক সাহায্য চাচ্ছে। কিন্তু যদি সে এ সময়ে সেখানে অনুপস্থিত কোনো জীবিত বা মৃত মানুষকে ডাকতে থাকে তাহলে সে শিরকে লিপ্ত হবে। কারণ সে মনে করছে, অনুপস্থিত অমুক ব্যক্তি সদা সর্বদা সবত্র বিরাজমান বা সদা সর্বদা সকল স্থানের সবকিছু তার গোচরিভূত। কাজেই, তিনি দূরবর্তী স্থান থেকে আমাকে দেখতে পাচ্ছেন বা আমার ডাক শুনতে পাচ্ছেন এবং দূর থেকে অলৌকিকভাবে আমার বিপদ কাটিয়ে দেওয়ার মতো অলৌকিক ক্ষমতা তার আছে। এভাবে সে একটি নির্দিষ্ট সৃষ্টির মধ্যে অলৌকেকত্ব, ঐশ্বরিক শক্তি বা মহান আল্লাহর গুণাবলী আরোপ করে শিরকে নিপতিত হয়েছে। এছাড়াও সে মহান আল্লাহর ক্ষমতাকে ছোট বলে মনে করেছে। এ প্রার্থনাকারী বা আহ্বানকারী ঐ বিশেষ ব্যক্তির মধ্যে যে ক্ষমতা কল্পনা করেছে তা একান্তভাবেই মহান আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। এ প্রাথনাকারী এই গুণাবলীকে শুধুমাত্র আল্লাহর বলে মনে করে না। সে বিশ্বাস করে যে, এই ক্ষমতার মধ্যে আল্লাহর শরীক আছে। এই ক্ষমতাটি যেমন আল্লাহর আছে, তেমনি অমুক ব্যক্তিরও আছে। তবে সে সম্ভবত তার কল্পনার মানুষটির ক্ষমতাকে এ ক্ষেত্রে আল্লাহর ক্ষমতার চেয়ে বেশি বা দ্রুত বলে বিশ্বাস করে। এজন্যই সে আল্লাহকে না ডেকে তাকে ডেকেছে। এক্ষেত্রে মুশরিকদের দাবি যে, এ সকল খাজা বাবা, সাঁই বাবা, মা, সান্তা, সেন্ট, ফিরিশতা বা জ্বিনদেরকে আল্লাহই ক্ষমতা প্রদান করেছেন। ক্ষমতা মূলত আল্লাহরই, তিনি এদেরকে কিছু বা সকল ক্ষমতা প্রদান করেছেন। শিরকের হাকীকাত বিষয়ে শাহ ওয়ালি উল্লাহ (রাহ)-এর বক্তব্যে আমরা তা দেখেছি। উক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, মৃত কোন ওলীর কাছে কোন ধরনের সাহায্য চাওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট শিরক। উক্ত বক্তব্য তাঁরা দিয়েছেন কি না তা স্পষ্ট নয়। তবে যদি তাঁরা দিয়ে থাকেনও তাহলে আমরা বলবো মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। আমরা তাদের শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি। আল্লাহ তাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাত তাদের বাসস্থান বানান। আমীন।