As-Sunnah Trust

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 304

শিরক-বিদআত

প্রকাশকাল: 29 Nov 2006

প্রশ্ন

আসসালামু আইলাকুম হুজুর কারো মৃত্যুর কিছু দিন পর দুয়া করা মানুষ কে দাওাত করে খাওয়ানো কি বিদাত? এর কুরআন এবং সুন্নাহ এর দলিল কি?

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। কোন কাজ সুন্নাত হওয়ার জন্য শরয়ী দলীল প্রয়োজন। এই ধরনের খাওয়ানোর কথা কোন হাদীসে উল্লেখ নেই। রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাবে তাবেয়ীদের যুগে মানুষ মারা গেলে আমাদের দেশের মত খাওয়া-দাওয়ার কোন আয়োজন করা হতো না। এমনকি কারো ইন্তেকালের পর তাঁরা তার জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যেও কোথাও একত্র হননি। সুতরাং খানার আয়োজন করা, খান খাওয়া সুন্নাত নয়। কুরআনে কারীমে মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। হাদীস শরীফে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, দোয়া ও দান-সদকা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।তাঁদের উদ্দেশ্যে জীবিত ব্যক্তির এ সকল কর্মের সাওয়াব তারাঁ লাভ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মৃত ব্যক্তির দায়িত্বে হজ্জ পালন বাকী থাকলে তা তাঁর পক্ষ থেকে পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, وَالَّذِينَ جَاؤُو مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالإِيمَانِ وَلا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلاًّ لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ অর্থ: (মূমিনদের থেকে যারা মারা যায় )তাদের পরে যারা দুনিয়াতে আসবে তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের এবং যারা ঈমাণের সাথে আমাদের অগ্রগামী হয়েছে তাদের ক্ষমা করে দাও আর আমাদের হৃদয়ে মূমিনদের ব্যাপারে কোন বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না। নিশ্চয় আপনি সহনশীল দয়াময়। সূরা হাশর, আয়াত ১০। হাদীস শরীফে আছে, বুরদাতা রা. বলেন, كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى الْمَقَابِرِ ، كَانَ قَائِلُهُمْ يَقُولُ : السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ রাসূলুল্লাহ সা. মানুষদেরকে শিক্ষা দিতেন, যখন তারা কবরের কাছে যাবে তখন বলবে, হে মূমিন, মুসলিম ঘরবাসী তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৫৪৭। শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আবু হুরয়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله إلا من ثلاثة إلا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমল তার বন্ধ হয়ে যায় তবে তিনটি ( আমল চলতে থাকে), সাদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম (জ্ঞান), সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৩১। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.বলেন, ، أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أُمِّي افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا وَأُرَاهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ أَفَأَتَصَدَّقُ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ تَصَدَّقْ عَنْهَا একজন লোক নবী সা. কে বললেন, আমার আম্মা মারা গেছেন। আমি ধারণা করছি যদি তিনি কথা বলতে পারতেন তাহলে দান সাদকা করতেন। আমি কি তার জন্য দান করবো? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, হ্যাঁ, তাঁর জন্য দান করো। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৬০। অন্য আরেকটি হাদীসে আছে, أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُم ، أَخَا بَنِي سَاعِدَةَ تُوُفِّيَتْ أُمُّهُ وَهْوَ غَائِبٌ فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ وَأَنَا غَائِبٌ عَنْهَا فَهَلْ يَنْفَعُهَا شَيْءٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَإِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِي الْمِخْرَافَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا সাদ ইবনে উবাদা রা. এর অনুপস্থিতিতে তাঁর আম্মা মারা গেলেন। তিনি নবী সা. এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার অনুপস্থিতিতে আমার আম্মা মারা গিয়েছেন, যদি আমি তার জন্য কোন কিছু সাদকা করি তাহলে কি তা তাঁর কোন উপকারে আসবে? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমি আপনাকে সাক্ষী করে বলছি, মিখরাফের আমার বড় খেজুর বাগানটি তার জন্য দান করে দিলাম। সহীহ বুখারী,হাদীস নং ১৭৬২। জামে তিরমিযী, হাদীস নং৩৬৫০। তিরমিযীতে হাদীসটি একটু বিস্তারিত বর্ণিত আছে। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, মানুষ মারা গেলে বাড়িতে আনুষ্ঠানিক কোন খাওয়া দাওয়ার আয়োজন সুন্নাহ সম্মত নয়। আর সুন্নাতের বাইরের কোন কাজের দ্বারা সওয়াবের আশা করা যায় না।আর যদি সওয়াব হয়ও তবুও ঐ এক বেলা খাওয়ানোর সওয়াব অথচ হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সা. আমাদেরকে সদকায়ে জারিয়ামূলক দান সাদকার কথা বলেছেন। আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলছি, এই ধরনের সুন্নাহ বিরোধী কাজে অংশ গ্রহনের অর্থ হলো এই কাজকে উৎসাহিত করা সুতরাং এমন অনুষ্ঠান বর্জন করাই আপনার জন্য উত্তম। প্রচলিত সুন্নাহ বিরোধী যে কোন মিলাদ মাহফিল যাওয়া ও খাওয়া থেকে বিরত থাকা একজন মূমিনের জন্য আবশ্যক। শিয়ারা প্রথম মিলাদ শুরু করে বলে ইতিহাসে জানা যায়। বিস্তারিত জানতে পড়ুন, প্রফেসার ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত এহইয়াউস সুনান বইটির ৩৮৮ থেকে ৩৯৬ পৃষ্ঠা এবং খুতবাতুল ইসলাম বইটির ১৯নং খুতবা।