As-Sunnah Trust

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 1810

বাতিল ফিরকা

প্রকাশকাল: 13 Jan 2011

প্রশ্ন

কাদিয়ানীরা দাবি করে যে,ঈসা (আ) মৃত্যু বরণ করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি লেখার লিঙ্ক উল্লেখ করছি। আশা করি তাদের দাবি খণ্ডন করবেন। http://www.ahmadiyyabangla.org/Ofate%20Isa%20(as).htm

উত্তর

ভাই, আমি উক্ত প্রবন্ধটিতে চোখ বুলালাম।বুঝা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ এটি পড়লে কিছুটা সংশয়ে পড়বে। আপনিও হয়তো পড়েছেন। আপনার এবং যারা সংশয়ে পড়েছেন তাদের সংশয় দূরা করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। বিস্তারিত আলোচনার করবো না। প্রথমে আমাদের মনে রাখতে হবে মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে একমত যে, কাদীয়ানীরা মুসলিম নয়। কিন্তু তারা এই আলোচনাটি এমন পদ্ধতিতে উপস্থাপন করেছে যাতে মনে হচ্ছে তারা মুসলিমদের একটি উপদল বা গ্রুপ। শুরতে ইহুদী এরপর খৃষ্টান তারপর মুসলিমদের দুই ভাগ করে গয়রে কাদীয়ানী আর কাদীয়ানীতে বিভক্ত করেছে। এটা তাদের ধোঁকা। আবার কুরআন, হাদীসের দলীল দিচ্ছে। তারা যদি কুরআন হাদীস মানে তাহলে মুসলিম উম্মাহ কাছে তারা অমুসলিম হবে পরিচিত হবে কেন? মাঝে মাঝে রাসূলুল্লাহ সা. কে খাতামান্নাবীঈন বলা হয়েছে, যার অর্থ হলো শেষ নবী।এটাও তাদের ধোঁকা। তাদের সাথে মুসলিমদের মূল পার্থক্য তো এটাই যে, তারা মুহাম্মাদ সা. কে শেষ নবী মানে না। গোলাম আহমাদ কাদীয়ানীকে নবী মনে করে। দ্বিতীয়ত তারা উদ্দেশ্যমূলক কুরআনের আয়াতের ভুল অর্থ করে মানুষকে সংশয়ে ফেলার চুড়ান্ত চেষ্টা করেছে। আবার এক সহ টাকা পুরস্কার ঘোষনা করে নিজেদের মিথ্যাকে লুকানোর একটা ব্যর্থ চেষ্টা করা করেছে। কুরআনের যে আয়াতটির তারা ভুল অর্থ ও ভুল ব্যাখ্যা করে ইসা আ.কে মৃত বানিয়ে সহ টাকা পুরস্কার ঘোষনা করা হয়েছে সেটা হলো: إِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُواْ وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُواْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ ৫৫ স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা, নিশ্চয় আমি তোমাকে ওফাত দেব তোমাকে আমার দিকে উঠিয়ে নেব এবং কাফিরদের থেকে তোমাকে পবিত্র করব। আর যারা তোমার আনুগত্য করেছে তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের উপর প্রধান্য দেব। অত:পর আমার নিকটই তোমাদের প্রত্যবর্তন হবে। তখন আমি তোমাদের মধ্যে মিমাংসা করে দেব, যে ব্যাপারে তোমরা মতবিরোধ কর। সূরা আল-ইমরান, আয়াত ৫৫। উক্ত আয়াতে আল্লাহ বলেছেন ঈসা আ.কে ওফাত দিবেন। কাদীয়ানীরা দাবী করছে যে, ওফাত শব্দটির একমাত্র অর্থ মৃত্যু।কেউ যদি অন্য অর্থ দেখাতে পারে তাহলে সহ টাকা পুরস্কার। এখন আমরা দেখবো যে, ওফাত শব্দটির অন্য কোন অর্থ কুরআন-হাদীস তথা অরবী ভাষায় আছে কি না। কুরআন ও হাদীসে ও আরবী অভিধান থেকে আমরা দেখতে পাই যে, ওফাত শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহার হয়। ১.মৃত্যু। ২. অবশিষ্ট না থাকা। ৩. পৌছানো। ৪. গণনা করা ৫. ঘুম ইত্যাদি। ঘুম অর্থে ওফাত শব্দটির ব্যবহার আমরা কুরআন শরীফে দেখতে পাই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, { وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ [وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ] তিনি ঐ সত্তা যিনি তোমাদেরকে রাতে ওফাত (ঘুম) দেন এবং তোমরা দিনের বেলায় যে সব কাজ করো তিনি তা জানেন। সূরা আনয়াম, আয়াত ৬০। সূরা যুমারের ৪২নং আয়াতেও আল্লাহ তায়ালা ওফাতকে ঘুম অর্থে ব্যবহার করেছেন।সেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, { اللَّهُ يَتَوَفَّى الأنْفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا আল্লাহ মানুষকে ওফাত দেন যখন তারা মৃত্যুবরণ করে আর যারা মৃত্যুবরণ করে না তাদের ওফাত দেন ঘুমের মধ্যে। উক্ত আয়াতে ওফাতকে এক জায়গায় মৃত্যু অর্থে আর আরেক জায়গায় ঘুম অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা দেখছি আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, তিনি রাতে মানুষের ওফাত দেন। কোন পাগল কি বলবেন যে, রাতে আল্লাহ মানুষের মৃত্যু দেন? সবাই বলেবে ঘুম দেন। আর ঘুমকে এখানে ওফাত শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। সূরা যুমারের ৪২নং আয়াতেও আল্লাহ তায়ালা ওফাতকে ঘুম অর্থে ব্যবহার করেছেন। সেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, اللَّهُ يَتَوَفَّى الأنْفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا অর্থ: আল্লাহ মানুষকে ওফাত দেন যখন তারা মৃত্যুবরণ করে আর যারা মৃত্যুবরণ করে না তাদের ওফাত দেন ঘুমের মধ্যে। সূরা যুমার, আয়াত নং ৪২। উক্ত আয়াতে ওফাতকে এক জায়গায় মৃত্যু অর্থে আর আরেক জায়গায় ঘুম অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তাহলে আমার কুরআন থেকে দেখলাম যে, ওফাত শব্দটির অন্য একটি অর্থ স্বয়ং কুরআন শরীফে আছে। এবার আমরা দেখবো হাদীসে মৃত্যু শব্দটিকে ঘুম অর্থে ব্যবহারের উদাহরণ। ঘুম থেকে উঠে রাসূলুল্লাহ সা. যে দুআটি পড়তে বলেছেন তা হলো الْحَمْدُ لله الَّذِي أحْيَانَا بَعْدَمَا أمَاتَنَا وإلَيْهِ النُّشُورُ অর্থ: সমস্ত প্রসংসা সে সত্তার যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবন দান করেছেন। সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৭১১। আচ্ছা বলুন মানুষ যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন কী মৃত্যু থেকে জীবন লাভে করে? না, মোটেই না। বরং ঘুমের অচেতনতা থেকে জাগ্রত হয়। এটাকে আল্লাহর রাসূল মৃত্যু বলেছেন। তাহলে বুঝা গের ওফাত বা মৃত্যুকে ঘুম অর্থে ব্যবহার করা কুরআন ও হাদীস থেকে প্রমাণিত। এখন আমরা দেখাবে যে আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে ( সূরা আল-ইমরান, আয়াত নং ৫৫) তারা মানুষকে বোকা বানাচ্ছে সেই আয়াতের ওফাত শব্দের অর্থের ব্যাপারে মুফাচ্ছিরগণ কী বলেছেন? উক্ত আয়াতের তাফসীরে হাফেজ ইবনে কাসীর রহ. বলেন, قال الأكثرون: المراد بالوفاة هاهنا: النوم، অধিকাংশ মুফাচ্ছিরের মতে এখানে ওফাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঘুম। তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আল-ইমরান, আয়াত ৫৫। সুতরাং আয়াতের মূল অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালা ঈসা আ.কে উঠিয়ে নেওয়ার পূর্বে কিছু সময় ঘুম দিয়েছিলেন। দুয়েকজন তাফসীর কারক এটাকে কিছু সময়ের মৃত্যু বলে অভিহিত করেছেন। এটা নয় যে, তাকে আল্লাহ তাঁেক স্বাভাবিক মৃত্যু দান করেছেন। উঠিয়ে নেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। ঈসা আ. দুনিয়াতে কত বছর ছিলেন এটা একটি ভিন্ন বিষয়। যত দিনই থাকুন না কেন তাঁর মৃত্যু হয় নি। সহস্র টাকা পুরস্কার এখন আপনি তাদের কাছে চাইতে পারেন। কিন্তু তাদেরকে পাওয়া যাবে না। এটাই মহা সত্য।