এ বিষয়ে একটি হাদীসের অর্থ নির্ণয়ে মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ মতভেদ করেছেন। হাদীসটি নিম্নরুপ:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ : اجْتَمَعَ عِيدَانِ فِي يَوْمِكُمْ هَذَا ، فَمَنْ شَاءَ أَجْزَأَهُ مِنَ الْجُمُعَةِ ، وَإِنَّا مُجَمِّعُونَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সা. বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আজ তোমাদের দুইটা ঈদ একত্র হয়েছে। যে চায় তার জন্য (ঈদের নমাায) জুমুআ হিসাবে যথেষ্ট। তবে আমরা উভয় নামাযই আদায় করব। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৩১১। হাদীসটি সহীহ। অন্য একজন সাহাবী থেকেও সহীহ সনদে এমনটি বর্ণিত আছে। এ হাদীসের ভিত্তিতে কোনো কোনো মুহাদ্দিস ও ফকীহ বলেছেন যে, জুমুআর দিনে ঈদ হলে জুমুআর সালাত ঐচ্ছিক হয়ে যায়। তবে অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ফকীহ এ মতটির বিরোধিতা করেছেন। তারা বলেন, মরুবাসী বেদুঈনদের জন্য জুমুআর সালাত ফরয নয়। এরূপ অনেক মরুবাসী বেদুঈন ঈদের দিনে ঈদ পালনের জন্য মদীনায় আগমন করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) মূলত তাদের জন্য এ কথা বলেছিলেন। অর্থাৎ তোমরা মরুবাসীরা যারা চাও তারা চলে যেতে পার। তবে আমরা- মদীনাবাসীগণ জুমুআর সালাত আদায় করব। তোমরা ইচ্ছা করলে সে পর্যন্ত থাকতেও পার। নিম্নের বর্ণনাটি এ ব্যাখ্যা প্রমাণ করে:
الشَّافِعِىُّ أَخْبَرَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَبِى عُبَيْدٍ مَوْلَى ابْنِ أَزْهَرَ قَالَ : شَهِدْتُ الْعِيدَ مَعَ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فَجَاءَ فَصَلَّى ثُمَّ انْصَرَفَ فَخَطَبَ فَقَالَ : إِنَّهُ قَدِ اجْتَمَعَ لَكُمْ فِى يَوْمِكُمْ هَذَا عِيدَانِ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْ أَهْلِ الْعَالِيَةِ أَنْ يَنْتَظِرَ الْجُمُعَةَ فَلْيَنْتَظِرْهَا ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَرْجِعَ فَلْيَرْجِعْ فَقَدْ أَذِنْتُ لَهُ
অর্থ: ইমাম শাফেয়ী রহ.,ইমাম মালেক রহ. থেকে তিনি ইবনে শিহাব যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু উবাইদ বলেন, আমি ঈদের দিন উসমান রা. এর সাথে ছিলাম। তিনি আসলেন, নামায পড়ালেন অতঃপর খুৎবা দিতে গিয়ে বললেন, তোমাদের জন্য আজ দুটি ঈদ একত্র হয়েছে। গ্রাম থেকে যারা এসেছে তারা যদি চাই জুমুআর নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে পারে আর যদি চাই ফিরে যেতে পারে। আমি তাদের অনুমতি দিলাম। আসসুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্কী, হাদীস নং ৬৫১৬। ইমাম বাইহাক্কী রহ, বলেন, সনদ সহীহ। উক্ত হাদীসে আমরা দেখছি যে, উসমান রা. শুধু মরুবাসী বেদুঈনদের মানুষদের অনুমতি দিয়েছেন, শহরবাসীকে নয়। এর বিষয়টি এমন যে রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বিষয়টি না জানলে তার পক্ষে ইবাদতের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। অন্য একটি হাদীসে আছে,
عَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ قَالَ : اجْتَمَعَ عِيدَانِ عَلَى عَهْدِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ :্র مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَجْلِسَ مِنْ أَهْلِ الْعَالِيَةِ فَلْيَجْلِسْ فِى غَيْرِ حَرَجٍ অর্থ: উমার ইবনে আব্দুল আযীয রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর সময় দুটি ঈদ একত্র হলো (ঈদ ও জুমুআ)। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সা.) বললেন, গ্রামের লোকদের মধ্যে যে বসতে চাই তার বসতে কোন সমস্যা নেই। আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৬৫১৫। হাদীসটি মুরসাল। আরো একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. থেকে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়। তবে হাদীসটিকে ইমাম বায়হাক্কী যয়ীফ বলেছেন। দেখুন, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীস নং ৬৫১৪। উপরুক্ত দলীল সমূহের ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, শহরবাসীর জন্য ঈদ ও জুমুআ উভয় নামাযই আদায় করতে হবে। আর মরুবাসী বেদুঈন লোকেরা চাইল শহরে এসে জুমুআ আদায় করতে পারে, না করলেও সমস্যা নেই। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক সহ অধিকাংশ আলিম ও ফকীহের অভিমত এটাই। শরহে আবু দাউদ লিল আইনি, ৪/৩৯৭; আল-ইসতিযকার,২/৩০৭; সুবুলস সালাম, ২/৫২; কিতাবুল উম্ম. ২/২৩৯। শেষ কথা: উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে,অধিকাংশ আলেমের নিকট যাদের উপর জুমুআর ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের দিনেও জুমুআ পড়তে হবে। আর যদি ধরেও নেই যে, ইচ্ছাধিকার সবার জন্য তবুও জুমুআর নামায আদায় করা সুন্নাত ও উত্তম। কেননা হাদীসে আমার দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমরা জুমুআ আদায় করব। আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন।