সিয়াম, রামাদান ও কুরআন (পর্ব – ০৩)
______________________
সিয়াম ফরয করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর সিয়াম লিপিবদ্ধ (ফরয) করা হয়েছে, যেরূপভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।”1সূরা বাকারা: ১৮৩ আয়াত।
আমরা দেখেছি, আল্লাহ বলেছেন যে, সিয়ামের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন হবে। তাকওয়া অর্থ হলো হৃদয়ের মধ্যে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে আত্মরক্ষার সার্বক্ষণিক অনুভূতি। যে কোনো কথা, কর্ম বা চিন্তার আগেই মনে হবে, এতে আল্লাহ খুশি না বেজার হবেন। যদি আল্লাহর অসন্তুষ্টির বিষয় হয় তবে কোনো অবস্থাতেই হৃদয় সে কাজ করতে দেবে না।
আমরা একথা স্বীকার করতে বাধ্য হব যে,
পরিপূর্ণ তাকওয়া আমরা সিয়ামের মাধ্যমে অর্জন করতে পারছি না। একজন রোযাদার প্রচণ্ড ক্ষুধা বা পিপাসায় কাতর হয়েও কোনো অবস্থাতে পানাহার করতে রাজি হন না। নিজের ঘরের মধ্যে, একাকী, নির্জনে সকল মানুষের অজান্তে পিপাসা মেটানোর সুযোগ থাকলেও তিনি তা করেন না। কারণ তিনি জানেন তা করলে দুনিয়ার কেউ না জানলেও আল্লাহ জানবেন ও তিনি অসন্তুষ্ট হবেন। এ হলো তাকওয়ার প্রকাশ। কিন্তু এ ব্যক্তিই রোযা অবস্থায় বা অন্য সময়ে এর চেয়ে অনেক কম পিপাসায় বা প্রলোভনে সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, গীবত, ভেজাল, ওযনে ফাঁকি, কর্মে ফাঁকি, অন্যের পাওনা না দেওয়া ও অন্যান্য কঠিনতম পাপের মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছেন।
কেন এরূপ হচ্ছে? এর অন্যতম কারণ হলো আমরা প্রেসক্রিপশন পাল্টে ফেলেছি। কোনো রোগে যদি ডাক্তার দুটি বা তিনটি ঔষধ দেন, আর রোগী একটি ঔষধ খেয়ে সুস্থ হতে চান তাহলে তিনি প্রকৃত সুস্থতা লাভ করতে পারবেন না। মহান আল্লাহ তাকওয়া অর্জনের জন্য আমাদেরকে দুটি বিষয় একত্রে দিয়েছেন: সিয়াম ও কুরআন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা সিয়াম নিয়েছি এবং কুরআন বাদ দিয়েছি। এজন্য প্রকৃত ও পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জন করতে পারছি না। আল্লাহ বলেছেন:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
“রামাদান মাস। এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে।”2সূরা বাকারা: ১৮৫ আয়াত।
এভাবে আমরা দেখছি যে, মহান আল্লাহ কুরআনের সাথে রামাদানের সিয়ামকে জড়িত করেছেন। হাদীস থেকে জানা যায় যে, দুভাবে এ সংশ্লিষ্টতা। প্রথমত রামাদানে রাতদিন কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়ত রাতে কিয়ামুল্লাইল বা তারাবীহের সালাতে কুরআন পড়া বা শুনা।
চলবে…
বই : রামাদানের সওগাত
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ