সিয়াম, রামাদান ও কুরআন (পর্ব – ০৬)
______________________
আল্লাহর কিতাব পাঠ করাকে কুরআন কারীমে ‘তিলাওয়াত’ বলা হয়েছে, কারণ তিলাওয়াত অর্থ পিছে চলা বা অনুসরণ করা। শুধুমাত্র না বুঝে পাঠ করলে তিলাওয়াত হয় না। তিলাওয়াত মানে পাঠের সময় মন পঠিত বিষয়ের পিছে চলবে, এরপর জীবনটাও তার পিছে চলবে। আল্লাহ বলেন:
الَّذِينَ آَتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلاوَتِهِ أُولَئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ
“যাদেরকে আমি কিতাব প্রদান করেছি তাঁরা তা হক্কভাবে তেলাওয়াত করে, তাঁরাই এই কিতাবের উপর ঈমান এনেছে।”1সূরা বাকার : ১২১।
হাদীস শরীফে বারবার বলা হয়েছে যে,
বুঝে পাঠের নামই হক্ক তিলাওয়াত। আর যারা এরূপ তিলাওয়াত করেন তারাই প্রকৃত ঈমানদার। বিভিন্ন হাদীসে কুরআন তিলাওয়াতের সাথে সাথে অর্থ চিন্তা করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এমনি কোনো কোনো হাদীসে বলা হয়েছে যে, যারা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত পাঠ করবে কিন্তু তার অর্থ নিয়ে চিন্তা করবে না তাদের জন্য শাস্তি রয়েছে।2তাফসীরে কুরতুবী ২/২০১, তাফসীরে ইবনু কাসীর ১/৪৪২।
আমরা অনেক সময় মনে করি, কুরআন বুঝা কঠিন কাজ, তা শুধু আলিমদের দায়িত্ব। আলিমদের দায়িত্ব কুরআনের গভীরে যেয়ে হাদীস ঘেটে ফিকহের বিধিবিধান বের করা। সাধারণ ঈমানী ও আমলী প্রেরণা নেওয়া প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। আল্লাহ কুরআনে চার স্থানে বলেছেন:
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآَنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ
“নিশ্চয় আমি কুরআনকে বুঝার ও উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি, কে আছে উপদেশ গ্রহণ করার?’’3সূরা কামার : ১৭, ২২, ৩২, ৪০।
এরপরও আমরা যদি বলি যে,
কুরআন বুঝা কঠিন তাহলে কি কুরআনকে অবজ্ঞা করা হবে না? বস্তুত কুরআন একটি অলৌকিক গ্রন্থ। এর অলৌকিকতার একটি দিক আমরা সকলে দেখতে পাই। একজন ৭/৮ বছরের অনারব শিশুও তা আগাগোড়া মুখস্থ করতে পারে। এর আরেকটি অলৌকিকত্ব হলো এর বুঝার সহজত্ব। আপনি যদি আরবী একটি শব্দ বা বাক্যও না বুঝেন, কিন্তু কুরআনের একটি অর্থানুবাদ নিয়ে আরবী আয়াত ও বাংলা অর্থ পাশাপাশি পড়ে যান, তবে আপনি দেখবেন যে, অলৌকিকভাবে অর্থটি হৃদয়ে গেঁথে যাচ্ছে। এভাবে দু/এক খতম পড়ার পরে আপনি যখন সালাতে দাঁড়াবেন এবং ইমামের তিলাওয়াত শুনবেন, তখন দেখবেন যে, আরবী শব্দের অর্থ না জানলেও আয়াতের অর্থটি আপনার হৃদয়ে জাগরুক হচ্ছে।
চলবে…
বই : রামাদানের সওগাত
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।