সিয়াম, রামাদান ও কুরআন (পর্ব – ০৫)
_____________________
কুরআন সাধারণভাবে দিবারাত্র সকল সময়ে পাঠ করা যায়। আর মুমিনের কুরআন পাঠের বিশেষ সময় হলো রাত্রে কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত করা। কুরআন কারীমে এরূপ তিলাওয়াতকে মুমিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রামাদানের রাত্রিতে সালাতুল্লাইল আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। কিয়ামুল্লাইল বা তারাবীহে এক বা একাধিকবার পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত বা শ্রবণ করাও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এরূপ রাতের তিলাওয়াতের কথাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
اَلصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَقُوْلُ الصِّيَامُ رَبِّ إِنِّيْ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّرَابَ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِيْ فِيْهِ وَيَقُوْلُ الْقُرْآنُ رَبِّ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِيْ فِيْهِ فَيُشَفَّعَانِ.
“রোযা ও কুরআন বান্দার জন্য শাফা’আত করবে। রোযা বলবে: হে রব্ব, আমি একে দিনের বেলায় খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত রেখেছি, কাজেই তার পক্ষে আমার শাফা’আত কবুল করুন। কুরআন বলবে: হে রব্ব, আমি রাতের বেলায় তাকে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, কাজেই তার পক্ষে আমার শাফা’আত কবুল করুন। তখন তাদের উভয়ের শাফা’আত কবুল করা হবে।”1মুসতাদরাক হাকিম ১/৭৪০, মুসনাদ আহমদ ২/১৭৪, আত-তারগীব ২/১০, ৩২৫, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/৩৮১। হাদীসটি সহীহ।
কুরআন কারীম
তিলাওয়াতের ন্যায় তা শোনাও একইরূপ সাওয়াব। এজন্য তারাবীহের সালাতে পরিপূর্ণ আদবের সাথে মনোযোগ দিয়ে কুরআন শুনতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবহেলা খুবই বেশি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত হলো ধীরে ধীরে ও টেনে টেনে তিলাওয়াত করা এবং প্রত্যেক আয়াতের শেষে থামা। এভাবে তিলাওয়াত করলেই তিলাওয়াতের সাওয়াব পাওয়া যাবে এবং এরূপ তিলাওয়াত শুনলেও তিলাওয়াতের মতই সাওয়াব পাওয়া যাবে। তাড়াহুড়ো করে কুরআন পড়তে হাদীসে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
কিন্তু আমরা
তারাবীহের সালাতে হাফেযদেরকে দ্রুত পড়তে বাধ্য করি। ফলে কুরআনের সাথে বেয়াদবী হয়। এছাড়া এরূপ পাঠে কুরআনের অনেক শব্দই ইমামের মুখের মধ্যে থেকে যায়, ফলে মুক্তাদিরা পুরো কুরআন শুনতে পান না। এতে কোনোভাবেই খতমের সাওয়াব পাওয়া যায় না। সুন্নাত পদ্ধতিতে তিলাওয়াত করলে হয়ত এক ঘণ্টা লাগে। আর এরূপ বেয়াদবীর সাথে পড়লে হয়ত ৪০/৪৫ মিনিট লাগে। মাত্র ১৫/২০ মিনিটের জন্য আমরা অগণিত সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হই, উপরন্তু বেয়াদবির গোনাহের সমূহ সম্ভাবনা থাকে। আমাদের উদ্দেশ্য রাকাত গণনা বা খতম করেছি দাবি করা নয়, আমাদের উদ্দেশ্য সাওয়াব অর্জন। আর সাওয়াব পেতে হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ মতই তারাবীহের কুরআন তিলাওয়াত ও শ্রবণ করতে হবে।
তিলাওয়াত ও শ্রবন
উভয় ক্ষেত্রেই কুরআনের অর্থ বুঝলেই শুধু পরিপূর্ণ সাওয়াবের আশা করা যায়। অধিকাংশ মুসলিমই না বুঝে পড়াকেই চূড়ান্ত ও পরিপূর্ণ ইবাদত বলে মনে করেন। না বুঝে তিলাওয়াত করলে হয়ত আল্লাহর কালাম মুখে আউড়ানোর কিছু সাওয়াব আমরা পেতে পারি। তবে না বুঝে পড়ার জন্য তো আল্লাহ কুরআন দেননি। আল্লাহ বারবার বলেছেন যে, কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য হলো যেন মানুষেরা তা বুঝে, চিন্তা করে এবং উপদেশ গ্রহণ করে। এক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন:
كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آَيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الأَلْبَابِ
“এক বরকতময় কল্যাণময় গ্রন্থ আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন তারা এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে।’’2সূরা সাদ: ২৯ আয়াত।
চলবে…
বই : রামাদানের সওগাত
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।