কোনো স্থান, সময়, বস্তু বা কর্মকে অশুভ, অযাত্রা বা অমঙ্গলময় বলে মনে করা ইসলামী বিশ্বাসের ঘোর পরিপন্থী একটি কুসংস্কার। এ বিষয়ে আমরা পরবর্তীকালে আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ। এখানে লক্ষণীয় যে, আরবের মানুষেরা জাহেলী যুগ থেকে ‘সফর’ মাসকে অশুভ ও বিপদাপদের মাস বলে বিশ্বাস করত। রাসূলুল্লাহ সা. তাদের এ কুসংস্কারের প্রতিবাদ করে বলেন:
لاَ طِيَرَةَ ، وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ
“…কোনো অশুভ-অযাত্রা নেই, কোনো ভুত-প্রেত বা অতৃপ্ত আত্মা নেই এবং সফর মাসের অশুভত্বের কোনো অস্তিত্ব নেই।…”1বুখারী, আস—সহীহ ৫/২১৫৮, ২১৬১, ২১৭১, ২১৭৭; মুসলিম,আস—সহীহ ৪/১৭৪২—১৭৪৫।
অথচ এর পরেও মুসলিম সমাজে অনেকের মধ্যে পূর্ববর্তী যুগের এ সকল কুসংস্কার থেকে যায়। এ সকল কুসংস্কারকে উস্কে দেয়ার জন্য অনেক বানোয়াট কথা হাদীসের নামে বানিয়ে সমাজে প্রচার করেছে জালিয়াতগণ। এ সকল জাল কথার মধ্যে রয়েছে: এ মাস বালা মুসিবতরে মাস। এ মাসে এত লক্ষ এত হাজার… বালা নাযিল হয়।.. এ মাসেই আদম ফল খেয়েছিলেন। এমাসেই হাবীল নিহত হন। এ মাসেই নূহের কাওম ধ্বংস হয়। এ মাসেই ইবরাহীমকে (আ.) আগুনে ফেলা হয়।… এ মাসের আগমনে রাসূলুল্লাহ সা. ব্যথিত হতেন। এ মাস চলে গেলে খুশি হতেন…। তিনি বলতেন:
مَنْ بَشَّرَنِيْ بِخُرُوْجِ صَفَرٍ بَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ (بِدُخُوْلِ الْجَنَّةِ)
“যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করার সুসংবাদ প্রদান করব।”… ইত্যাদি অনেক কথা তারা বানিয়েছে। আর অনেক সরলপ্রাণ বুযুর্গও তাদের এ সকল জালিয়াতি বিশ্বাস করে ফেলেছেন। মুহাদ্দিসগণ একমত যে, সফর মাসের অশুভত্ব ও বালা-মুসিবত বিষয়ক সকল কথাই ভিত্তিহীন মিথ্যা।2সাগানী, আল—মাউদূ‘আত, পৃ. ৬১; মোল্লা কারী, আল—আসরার, পৃ. ২২৫; তাহির পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ১১৬; আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৩০৯; শাওকানী, আল—ফাওয়াইদ ২/৫৩৯; নিযামুদ্দীন আউলিয়া, রাহাতুল মুহিব্বীন, পৃ. ১০১; রাহাতুল কুলুব, পৃ. ১৩৮।
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ, বই হাদীসের নামে জালিয়াতি পৃ. ৫৪৯।