সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, কেন আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অমান্য করব? শালীন পোষাকে শরীর আবৃত করার কারণে কোন মুসলিম মহিলার জাগতিক কোন স্বার্থের ক্ষতি হয় না। তার কোন কর্ম বা প্রয়োজন ব্যাহত হয় না বা তার সামাজিক বা পারিবারিক কোন মর্যাদার ক্ষতি হয় না। বরং তিনি অতিরিক্ত সম্মান ভোগ করার সাথে সাথে আল্লাহর অফুরন্ত দয়া, কল্যাণ ও বরকত লাভে সক্ষম হন।
সূরা আহযাবের ৫৯ আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا.“হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন। তারা যেন তাদের জিলবাবের (চাদরের) কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।”
এ আয়াতে আল্লাহ পর্দার নির্দেশনার সাথে সাথে পর্দার কারণও উল্লেখ করছেন। পর্দানশীন মেয়েকে ভদ্র ও শালীন বলে চেনা যায় এবং সাধারণভাবে বখাটে বা অসৎ ছেলেরা এদের উত্তক্ত্য করে না। আমাদের সমাজে এবং যে কোনো সমাজে অগণিত ধর্ষণ, অত্যাচার ও এসিডের ঘটনার দিকে তাকালেও আমরা দেখতে পাই। যে সকল মেয়ে পর্দার মধ্যে বেড়ে উঠেন সাধারণত: তাঁরা মাস্তাানদের বাজে কথা, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ ইত্যাদি অত্যাচার থেকে বেঁচে থাকেন।
সাধারণত সবচেয়ে কঠিন হৃদয় বখাটেও কোন পর্দানিশীন মেয়েকে উত্তক্ত্য করতে দ্বিধা করে। তার কঠিন হৃদয়ের এক নিভৃতকোনে পর্দানিশীন মেয়েদের প্রতি একটুখানি সম্ভ্রমবোধ থাকে। পুরুষদের সুন্নাতী পোশাক সম্পর্কে আমরা অনেকেই সচেতন। তবে মেয়েদের সুন্নাতী পোশাক সম্পর্কে আমরা খুবই বেখেয়াল। শাড়ী মূলত ভারতীয় পোশাক।
বাংলার বাইরে ভারতের মুসলিম মহিলারাও শাড়ি পরেন না এবং শাড়িকে হিন্দু পোশাক বলে গণ্য করেন। সর্বাবস্থায় শাড়ী পরিধান করে মুসলিম মহিলা কোনোভাবে নিজের ফরয পর্দা রক্ষা করতে পারেন না। মহিলা সাহাবীগণ ও উম্মুল মুমিনীনগণ সর্বদা ঘরের মধ্যেও তিনটি পোশাক পরিধান করতেন: (১) ফুল হাতা পায়ের পাতা আবৃত করা ম্যাক্সি বা কামিস (২) ইযার বা সায়া এবং (৩) বড় চাদরের মত ওড়না।
বাইরে বেরোলে এগুলির উপরে বড় চাদর বা জিলবাব পরতেন। এগুলিই মুসলিম মহিলার সুন্নাতী পোশাক। এরূপ পোশাক পরিধান করলে মুসলিম মহিলারা সহজেই পোশাকের ফরয আদায় করতে পারেন।ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি। পাশ্চাত্য দেশে হাজার হাজার অমুসলিম যুবতী ইসলাম গ্রহণ করে বোরকা বা স্কার্ফ পরিধান করে পুরো দেহ আবৃত করে চলা ফেরা করেন।
তারা সকলেই বলছেন, ইসলামী পোশাকই নারী প্রকৃতির সাথে সুসমঞ্জস। বেহায়াপনার মধ্যে রয়েছে মানসিক অস্থিরতা ও অশান্তি। ইসলামী পর্দার মধ্যে নারী যে মানসিক তৃপ্তি, প্রশান্তি ও আনন্দ তারা লাভ করেছেন তা অতুলনীয়। ইসলামী হিজাব বা পর্দা অর্থ অবরোধ নয়।
মুসলিম মহিলার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ থেকেই ইসলামী পোশাক ও শালীনতা সহ ধর্মীয়, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন। ইসলামী পর্দা একটি ব্যাপক ব্যবস্থা। পবিত্র সামাজিক পরিবেশে সুন্দর আন্তরিক স্নেহ-মমতা-ভালবাসাপূর্ণ পরিবার গঠনে ইসলামের বিভিন্ন বিধানাবলী সমষ্টিকেই মূলত এককথায় হিজাব বা “পর্দা-ব্যবস্থা“ বলা হয়।
এর বিভিন্ন দিক রয়েছে, যেমন:
১. সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটতে পারে এরূপ সকল কথা বা কর্ম থেকে বিরত থাকা,
২. অশ্লীলতার প্রচার বা প্রসার মূলক কাজে লিপ্তদেরকে শাস্তি প্রদান,
৩. সন্তানদেরকে পবিত্রতা ও সততার উপর প্রতিপালন করা এবং অশ্লীলতার প্ররোচক বা অহেতুক সুড়সুড়ি মূলক সকল কর্ম, কথা বা দৃশ্য থেকে তাদেরকে দূরে রাখা,
৪. কারো আবাসগৃহে বা বাড়ীতে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি গ্রহণের ব্যবস্থা এবং বিনা অনুমতিতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা,
৫. নারী ও পুরষের শালীনতাপূর্ণ পোষাক পরিধান করা,
৬. নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করা,
৭. সঠিক সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদেরকে বিবাহ দেওয়া,
৮. দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বস্ততা ও আন্তরিকতা বজায় রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ সকল বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এবং হাদীস শরীফে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। বিশেষ করে কুরআন কারীমের সূরা নূর-এ পর্দার বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে। আমি উপস্থিত মুসল্লীদেরকে অনুরোধ করর কুরআন কারীমের এক বা একাধিক তাফসীরের আলোকে সূরা নূর অধ্যয়ন করার জন্য। আজকের খুতবার স্বল্প পরিসরে আমরা পোশাকের অন্যান্য কিছু আহকাম আলোচনা করেই শেষ করব।
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।