সালাতের গুরুত্ব
প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর উপর দৈনিক পাঁচ বার নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট কয়েক রাক‘আত (মোট ১৭ রাক‘আত) সালাত আদায় করা ফরয। ঈমানের পরে মুসলিমের সবচেয়ে বড় করণীয় নিয়মিত সালাত আদায় করা। কুরআনে প্রায় শত স্থানে এবং অসংখ্য হাদীসে সালাতের গুরুত্ব বোঝান হয়েছে।
কুরআনের আলোকে সালাতই সফলতার চাবিকাঠি। আল্লাহ বলেন: “মুমিনগণ সফলকাম হয়েছেন, যারা অত্যন্ত বিনয় ও মনোযোগিতার সাথে সালাত আদায় করেন।”1সুরা মুমেনূন: ১। অন্যত্র তিনি বলেন: “সেই ব্যক্তিই সাফল্য অর্জন করে, যে নিজেকে পবিত্র করে এবং নিজ প্রভুর নাম স্মরণ করে সালাত আদায় করে।”2সুরা আল-আ’লা: ১৪-১৫।
কুরআন বলেছে, সালাত পরিত্যাগের পরিণতি জাহান্নামের মহাশাস্তি। আল্লাহ বলেন: “তাদের পরে আসল অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা সালাত নষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। কাজেই তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি পাবে।”3সূরা মারইয়াম: ৫৯ আয়াত।
জাহান্নামীদের বিষয়ে আল্লাহ বলেন: “(তাদের প্রশ্ন করা হবে) তোমাদেরকে জাহান্নামে ঢুকালো কিসে? তারা বলবে: আমরা সালাত আদায় করতাম না…।”4সূরা মুদ্দাস্সির: ৪২-৪৩। যে মুমিন সালাত আদায় করেন; কিন্তু সালাত আদায়ে অনিয়মিত-অমনোযোগী তার পরিণতি বিষয়ে আল্লাহ বলেন: “মহাশাস্তি-মহাদুর্ভোগ সে সকল সালাত আদায়কারীর, যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন।”5সূরা মাঊন: ৪-৫ আয়াত।
সালাত বা নামায মুমিন ও কাফিরের মধ্যে মাপকাঠি। নামায ত্যাগ করলে মানুষ কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “একজন মানুষ ও কুফরী-শিরকের মধ্যে রয়েছে নামায ত্যাগ করা।”6মুসলিম (১- কিতাবুল ঈমান, ৩৫-ইতলাক ইসমিল কুফর..) ১/৮৮, নং ৮২ (ভারতীয় ১/৬১)। তিনি আরো বলেন: “যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল সে কুফরী করল।”7সহীহ ইবনু হিব্বান ৪/৩২৩, নং ১৪৬৩। হাদীসটি সহীহ।
কুরআন ও হাদীসের শিক্ষার আলোকে একথা নিশ্চিত যে, নামায মুসলিমের মূল পরিচয়। নামায ছাড়া মুসলিমের অস্তিত্ব কল্পনাতীত। নামায পরিত্যাগকারী কখনোই মুসলিম বলে গণ্য হতে পারেনা। যে ব্যক্তি মনে করে যে, নামায না পড়লেও চলে বা কোনো নামাযীর চেয়ে কোনো বেনামাযী ভাল হতে পারে- সে ব্যক্তি সন্দেহাতীতভাবে কাফির। প্রসিদ্ধ চার ইমামসহ মুসলিম উম্মাহর সকল ইমাম ও ফকীহ এ বিষয়ে একমত।
পক্ষান্তরে যে মুসলিম সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, নামায কাযা করা কঠিনতম পাপ, দিনরাত শুকরের গোশত ভক্ষণ করা, মদপান করা, রক্তপান করা ইত্যাদি সকল ভয়ঙ্কর গুনাহের চেয়েও ভয়ঙ্করতর পাপ ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত সালাত কাযা করা, সে ব্যক্তি যদি ইচ্ছে করে কোনো নামায ত্যাগ করেন তাহলে তাকে মুসলমান বলে গণ্য করা হবে কিনা সে বিষয়ে ফকীহগণের মতভেদ আছে। সাহাবী-তাবেয়ীগণের যুগে এ প্রকারের মানুষকেও কাফির গণ্য করা হত।
তাবিয়ী আব্দুল্লাহ ইবনুু শাকীক বলেন
كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ لا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنْ الأَعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلاةِ
“মুহাম্মাদ (সা.) এর সাহাবীগণ সালাত ছাড়া অন্য কোনো কর্ম ত্যাগ করাকে কুফ্রী মনে করতেন না।” হাদীসটি সহীহ।8তিরমিযী, ৫/১৪ (ভারতীয় ২/৯০ ); আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/১৩৭।
বিশেষত সাহাবীগের মধ্যে উমার (রা), আব্দুল্লাহ ইবনুু মাসঊদ (রা), তাবিয়ীগণের মধ্যে ইবরাহীম নাখয়ী, ফকীহগণের মধ্যে ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম ইসহাক ইবনুু রাহাওয়াইহি ও অন্যান্য অনেকে এ মত পোষণ করতেন। তাঁদের মতে মুসলিম কোনো পাপকে পাপ জেনে পাপে লিপ্ত হলে কাফির বলে গণ্য হবে না। একমাত্র ব্যতিক্রম নামায। যদি কেউ নামায ত্যাগ করা পাপ জেনেও এক ওয়াক্ত নামায ইচ্ছাপূর্বক ত্যাগ করেন তাহলে তিনি কাফির বলে গণ্য হবেন।
পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফিয়ী, ইমাম মালিক ও অধিকাংশ ফকীহ বলেন, এ দ্বিতীয় ব্যক্তিকে সরাসরি কাফির বলা হবে না। তবে তাকে সালাতের আদেশ দিতে হবে এবং সালাত পরিত্যাগের শাস্তি হিসেবে জেল, বেত্রাঘাত ইত্যাদি শাস্তি প্রদান করতে হবে। ইমাম শাফিয়ী বলেন: সালাত আদায়ের আদেশ দিলেও যদি সে তা পালন না করে তবে তাকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে।9বাগাবী, হুসাইন ইবন মাসঊদ, শারহুস সুন্নাহ (বৈরুত, আল-মাকতাবুল ইসলামী, ২য় মুদ্রণ, ১৪০৩/১৯৮৩) ২/১৭৯-১৮০; আবূ বাকর ইসমাঈলী, ই’তিকাদ আয়িম্মাতিল হাদীস (শামিলা), পৃষ্ঠা ১৭; আব্দুল হাই লাখনবী, আর-রাফউ ওয়াত তাকমীল, পৃ ৩৭৭; ড. ওয়াহবাহ যুহাইলী, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু (শামিলা) ১/৫৭৭-৫৭৯; আল-মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাতুল কুআইতিয়্যাহ ২৭/৫৩-৫৪। বিস্তারিত জানতে শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী রচিত ‘হুকমু তারিকিস সালাত’ বইটি পড়ুন।
আল্লাহর যিক্রের জন্য সালাত
আমরা এ পুস্তকের ক্ষুদ্র পরিসরে সালাত বা নামাযের মূল নিয়ম পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব। তবে প্রথমে কয়েকটি মূল বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে:
প্রথম বিষয়: মহান প্রতিপালক মালিক আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে হৃদয়কে পবিত্র, পরিশুদ্ধ, আবিলতামুক্ত ও ভারমুক্ত করার জন্য সালাত বা নামায। সালাতের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ইত্যাদি অনেক বিধান রয়েছে। সবই সাধ্য অনুসারে। এজন্য সাধ্যের বাইরে হলে এগুলো রহিত ও মাফ হয়ে যায়, কিন্তু নামায মাফ হয় না।
আল্লাহ বলেন: “যদি তোমরা বিপদের আশংকা কর তবে হাঁটতে হাঁটতে অথবা আরোহী অবস্থায় সালাত আদায় করবে।”10সূরা (২) বাকারা: ২৩৯ আয়াত।
সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
فَإِنْ كَانَ مَعَكَ قُرْآنٌ فَاقْرَأْ وَإِلاَّ فَاحْمَدِ اللَّهَ وَكَبِّرْهُ وَهَلِّلْه
“তোমার কাছে যদি কুরআনের কিছু থাকে তবে তা পাঠ কর; আর তা না হলে তুমি আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং লা- ইলা-হা ইল্লা-হ বল।”11তিরমিযী (আবওয়াবুস সালাত, বাব ওয়াসফিস সালাত) ২/১০০, নং ৩০২ (ভা ১/৬৬)।
কুরআন ও হাদীসের এ সকল নির্দেশনার আলোকে সকল মাযহাব ও মতের ফকীহগণ মূলত একমত যে, ওযরে বা বাধ্য হলে মুমিন ওযূ ছাড়া, বসে, শুয়ে, অপবিত্র পোশাকে, উলঙ্গ অবস্থায়, যে কোন দিকে মুখ করে, হাঁটতে হাঁটতে, দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে, সূরা-কিরাত ছাড়া, শুধু সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি যিক্রের মাধ্যমে সালাত আদায় করবেন। কিন্তু কোন কারণেই তিনি স্বেচ্ছায় এক ওয়াক্ত সালাত কাযা করতে পারবেন না। যতক্ষণ হুঁশ আছে বা হৃদয়ে আল্লাহর স্মরণ করার ক্ষমতা আছে ততক্ষণ তার নামায রহিত বা মাফ হয় না। তাকে সময় হলে সাধ্যানুসারে রাসূলুল্লাহ সা. এর শেখানো পদ্ধতিতে তাঁর প্রভুর দরবারে হাযিরা দিয়ে তাঁকে স্মরণ করে হৃদয়কে প্রশান্ত করতেই হবে। নইলে তার হৃদয় ও আত্মা মৃত্যুবরণ করবে। ফিকহের গ্রন্থগুলির বিভিন্ন স্থানে বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে এবং এ বিষয়ে মৌলিক কোনো মতভেদ নেই।
মানুষকে স্বভাবত সমাজের মধ্যে বাস করতে হয়। সারাদিনের কর্মময় জীবনে বিভিন্নমুখি আবেগ, ভালবাসা, ঘৃণা, হিংসা, রাগ, বিরাগ, ভয়, লোভ ইত্যাদির মধ্যে পড়তে হয়। এগুলো তার হৃদয়কে ভারাক্রান্ত, অসুস্থ ও কলুষিত করে তোলে। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে আল্লাহর স্মরণ, তাঁর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে নিজের আবেগ, বেদনা ও আকুতি পেশ করার মাধ্যমেই মানুষ এ ভয়ানক ভার থেকে নিজের হৃদয়কে মুক্ত করতে পারে।
দ্বিতীয় বিষয়: এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মহান আল্লাহর যিক্র বা স্মরণই হলো সালাতের মূল বিষয়। যিক্র বা স্মরণ হৃদয় দিয়ে করতে হয় এবং মুখ তাকে পূর্ণতা দেয়। এজন্য নামাযের মধ্যে মনোযোগ দিয়ে আল্লাহর স্মরণ করা ও নামাযের মধ্যে যা কিছু পাঠ করা হয় তার অর্থের দিকে লক্ষ রাখা ও অর্থের সাথে হৃদয়কে আলোড়িত করা অতীব প্রয়োজন। মহান আল্লাহ বলেছেন: “এবং আমার যিক্র বা স্মরণের জন্য সালাত কায়েম কর।”12সূরা তাহা: ১৫। হৃদয়হীন স্মরণহীন নামায মুনাফিকের নামায। মহান আল্লাহ মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন: “আর যখন তারা সালাতের জন্য দণ্ডায়মান হয় তখন অলসতাভরে দাঁড়ায়, তারা মানুষকে দেখায় এবং খুব কমই আল্লাহর যিক্র (স্মরণ) করে।”13সূরা নিসা: ১৪২।
তৃতীয় বিষয়: নামাযের অন্যান্য নিয়মাবলি পালনের ক্ষেত্রে ওযর বা অসুবিধা থাকলেও যিক্র বা স্মরণের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা কখনোই থাকে না। আমরা যে অবস্থায় থাকি না কেন, যেভাবেই নামায আদায় করি না কেন, যে যিক্র বা কিরা‘আতই পাঠ করি না কেন, নামাযের মধ্যে পঠিত দু‘আ, যিক্র বা কিরাআতের অর্থের দিকে মন দিয়ে মনকে আল্লাহর দিকে রুজু করে অন্তরের আবেগ দিয়ে নামায আদায়ের চেষ্টা করতে পারি। মনোযোগ নষ্ট হলে আবারো মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমরা নামাযের অন্যান্য প্রয়োজনীয়, অল্পপ্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় অনেক বিষয়ে অতি সচেতন হলেও মনোযোগ, আবেগ ও ভক্তির বিষয়ে কোন আগ্রহ দেখাই না।
চতুর্থ বিষয়: আরো দুঃখজনক বিষয়, অনেক ধার্মিক মুসলিম দ্রুত নামায আদায়ের জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। ধীর ও শান্তভাবে পরিপূর্ণ আবেগ ও মনোযোগ সহকারে নামায আদায় করাই কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা। মাত্র কয়েক রাক‘আত নামায এভাবে মাসনূন পদ্ধতিতে আদায় করলে হয়ত ১০ মিনিট সময় লাগবে। আর তাড়াহুড়ো করে আদায় করলে হয়ত ৩/৪ মিনিট কম লাগবে। আমরা সারাদিন গল্প করতে পারি। মসজিদ থেকে বেরিয়ে গল্প করে সময় নষ্ট করতে পারি, কিন্তু নামাযের মধ্যে তাড়াহুড়ো করি ও অস্থির হয়ে পড়ি। এ তাড়াহুড়ো নামাযকে প্রাণহীন করে দেয়।
সালাতের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি
কুরআন-হাদীসের আলোকে আমরা জানি যে, আল্লাহকে খুশি করার জন্য কোন ইবাদত করা হলে তা কবুল হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। সেগুলোর অন্যতম হলো যে, উক্ত ইবাদত রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাত বা শিক্ষা ও পদ্ধতি অনুসারে পালন করতে হবে। তাঁর শিক্ষার বাইরে ইবাদত করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কাজেই আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শেখান পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতে হবে। তিনি বলেছেন: “আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবে তোমরা সালাত আদায় করবে।”14বুখারী (১৪-কিতাবুল আযান, ১৮-বাবুল আযান লিলমুসাফির..) ১/২২৬, নং ৬০৫ (ভারতীয় ১/৮৮)।
হাদীসের আলোকে মুসলিম উম্মাহর প্রাজ্ঞ ইমাম ও ফকীহগণ সালাত আদায়ের নিয়মাবলি বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করেছেন। সামান্য কয়েকটি বিষয়ে হাদীসের বর্ণনা বিভিন্ন প্রকারের হওয়ার কারণে ফকীহগণ মতভেদ করেছেন। এখানে সংক্ষেপে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আলোচনা করছি।
১. ওযূ, গোসল বা তায়াম্মুম করে পবিত্র হয়ে, পবিত্র কাপড় পরে সতর আবৃত করে, বিনম্র ও শান্ত মনে কিবলামুখী হয়ে নামাযে দাঁড়ান।
পুরুষদের জন্য সদাসর্বদা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীর অন্য মানুষের দৃষ্টি থেকে আবৃত করে রাখা ফরয। সালাতের মধ্যে এ অংশটুকু আবৃত করে রাখা ফরয। কেউ দেখুক বা না দেখুক শরীরের এ অংশের মধ্যে কোন স্থান অনাবৃত হলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তবে কাপড় একদম না থাকলে উলঙ্গ অবস্থাতেই সালাত আদায় করতে হবে। এছাড়া কাঁধ ও শরীরের উপরিভাগ আবৃত করা সুন্নাত। মুমিনের উচিত মহান প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পছন্দনীয়, পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি পোশাক পরিধান করা।
মহিলাদের জন্য সালাতের মধ্যে শুধু মুখমণ্ডল ও কব্জি পর্যন্ত দুই হাত বাদে মাথার চুলসহ মাথা ও পুরো শরীর আবৃত করা ফরয। সালাতের মধ্যে যদি কোন মহিলার কান, চুল, মাথা, গলা, কাঁধ, পেট, পায়ের নলা ইত্যাদি পূর্ণ বা আংশিক অনাবৃত হয়ে যায় তাহলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবে। সাধারণভাবে শাড়ি মুসলিম মহিলার জন্য অসুবিধাজনক পোশাক। ঢিলেঢালা পুরো হাতা সেলোয়ার-কামিজ বা ম্যাক্সি মুসলিম মহিলার জন্য উত্তম ও আদর্শ পোশাক। সর্বাবস্থায় সাধারণ পোশাকের উপর অতিরিক্ত বড় চাদর দিয়ে ভালভাবে নিজেকে আবৃত করে সালাত আদায় করতে হবে। মাথার চুল, কান, গলা ইত্যাদি ভালভাবে আবৃত রাখার দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
২. সামনে সুতরা বা আড়াল রাখুন। দেয়াল, খুঁটি, পিলার বা যে কোন কিছুকে সামনে আড়াল হিসেবে রাখুন। না হলে অন্তত একহাত বা আধাহাত লম্বা সরু কোন লাঠি, কাঠ ইত্যাদি সামনে রাখলেও সুতরার সুন্নাত আদায় হবে। যথাসম্ভব সুতরার কাছে দাঁড়াতে হবে, যেন সাজদা করলে সুতরার নিকটে হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুতরার তিন হাতের মধ্যে দাঁড়াতেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “যখন তোমরা সালাত আদায় করবে, তখন সামনে আড়াল রাখবে এবং আড়ালের কাছাকাছি দাঁড়াবে”, “আড়াল বা সুতরা ছাড়া সালাত আদায় করবে না, আর কাউকে তোমার সামনে দিয়ে (সুতরার ভিতর দিয়ে) যেতে দেবে না। যদি সে জোর করে তাহলে তার সাথে মারামারি করবে (শক্তভাবে বাধা দেবে), কারণ তার সাথে শয়তান রয়েছে,… ”15আবূ দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাবুদ্ দুনওয়ি মিনাস সুতরাতি) ১/১৮২-১৮৩, নং ৬৯৭-৬৯৮ (ভা ১/১০১); ইবনু মাজাহ (৫-কিতাব ইকামাতিস সালাত, ৩৯-বাব ইদরা মাসতাতা’তা) ১/৩০৬-৩০৭, নং ৯৫৪-৯৫৫ (ভা ১/৬৭); সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/৯, ১৭, ২৬-২৭; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬/১২৬।
ইসলামের প্রথম যুগে সুতরার এত গুরুত্ব প্রদান করা হতো যে, প্রয়োজনে মাথার টুপি খুলে সুতরা বানিয়ে নামায আদায় করা হতো। ইবনুু আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে বলা হয়েছে, “রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক সময় নামায আদায়ের জন্য মাথা থেকে টুপি খুলে টুপিটাকে নিজের সামনে সুতরা বা আড়াল হিসেবে ব্যবহার করতেন।”16সুয়ূতী, আল-জামি‘য়ুস সাগীর ২/৩৯৪, নং ৭১৬৮, মুনাবী, ফয়যুল কাদীর ১/৩৬৭, আলবানী, যয়ীফুল জামিয়িস সাগীর, পৃ: ৬৬৫, নং ৪৬১৯।
প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ী সুফিয়ান ইবনুু উয়াইনাহ (১৯৮হি:) বলেন, “আমি শারীক ইবনুু আব্দিল্লাহ ইবনুু আবী নামিরকে (১৪০হি:) দেখলাম, তিনি একটি জানাযায় উপস্থিত হয়ে আসরের সময় হলে আমাদেরকে নিয়ে জামাআতে আসরের নামায আদায় করেন। তখন তিনি তাঁর টুপিটি তার সামনে রেখে (টুপিটিকে সুতরা বানিয়ে) নামায আদায় করলেন।”17আবূ দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাবুল খাত্তি ইযা লাম ইয়াজিদ আসা) ১/১৮১, নং ৬৯১ (ভা. ১/১০০)।
৩. মনে মনে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের জন্য সালাত আদায়ের নিয়ত করুন। মুখে নাওয়াইতুআন.. ইত্যাদি বলা সুন্নাতের খেলাফ।
৪. তাকবীর (আল্লাহ আকবার) বলে দু হাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা কান পর্যন্ত উঠান। এ সময়ে হাতের আঙুলগুলো স্বাভাবিকভাবে সোজা থাকবে। একেবারে মিলিত থাকবে না, আবার বিচ্ছিন্নও থাকবে না। হাতের তালু কিবলার দিকে থাকবে।
৫. বাঁ হাতের পিঠ, কব্জি ও বাজুর উপর ডান হাত রাখুন, অথবা ডান হাত দিয়ে বাঁ হাত ধরুন। এ ভাবে হাত দুটি নাভী বা পেটের উপরে রাখুন।
৬. নামাযের মধ্যে সবিনয়ে সাজদার স্থানে দৃষ্টি রাখুন। এদিক-সেদিক দৃষ্টিপাত করবেন না, উপরের দিকে তাকাবেন না। হাদীসে বলা হয়েছে, “যারা নামায রত অবস্থায় উপর দিকে তাকায়, তাদের অবশ্যই তা থেকে বিরত হতে হবে, অন্যথায় তাদের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে।18বুখারী (১৬-কিতাবু সিফাতিস সালাত, ১০-বাব রাফয়িল বাসার) ১/২৬১, নং ৭১৭ (ভা.১/১০৩-১০৪)।
৭. তাকবীরে তাহরীমার পরে সানা বা শুরুর দু‘আ পাঠ করুন।
৮. এরপর অনুচ্চস্বরে (মনে মনে) বলুন :
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ/ أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ
(আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম) আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অথবা বলুন: “আ‘ঊযু বিল্লা-হিস সামী‘িয়ল ‘আলীমি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম, মিন হাম্যিহী, ওয়া নাফ্খিহী ওয়া নাফ্সিহী:‘আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে, তার প্রবঞ্চনা, জ্ঞান নষ্টকারী ও অহংকার সৃষ্টিকারী প্ররোচনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” আবূ সায়ীদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. সালাতের ‘সানা’ পাঠের পর বলতেন: “আ‘ঊযু …মিন হাম্যিহী, ওয়া নাফ্খিহী ওয়া নাফ্সিহী।” হাদীসটি সহীহ।19তিরমিযী (আবওয়াবুস সালাত, বাব মা ইয়াকূলু ইনদা ইফতিতাহ..) ২/১০, (ভা ১/৫৭)
৯. এরপর অনুচ্চস্বরে (মনে মনে) বলুন: “বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম।” অর্থাৎ (পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।)
১০. এরপর অর্থের দিকে লক্ষ রেখে প্রার্থনার আবেগে প্রতিটি আয়াতে থেমে থেমে সূরা ফাতিহা পাঠ করুন।
সূরা ফাতিহা পাঠ করা সালাতের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। তবে যদি কেউ সূরা ফাতিহা না জানেন, তাহলে তা শিখতে থাকবেন। যতদিন শেখা না হবে ততদিন সূরা পাঠের পরিবর্তে তাসবীহ তাহলীল করবেন। বলবেন : (সুব‘হা-নাল্লা-হ), (আল‘হামদু লিল্লা-হ), (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ), আল্লা-হু আকবার), ( লা- ‘হাওলা ওয়ালা- ক্বুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ)।20ইবন খুযাইমাহ ১/২৭৩, ৩৬৮, সুনানুন নাসাঈ (ইফতিতাহ, ৩২-মা ইউজযিউ..) ২/৪৮১ (ভা. ১/১০৭)
১১. সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ হলে “আমীন” বলবেন। “আমীন” শব্দের অর্থ “হে আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন।” এরপর কুরআনের অন্য কোন সুরা বা কিছু আয়াত পাঠ করুন। তিলাওয়াত শেষে সামান্য একটু থামুন। এরপর “আল্লাহ আকবার” বলে রুকু করুন। রুকু অবস্থায় দুহাত দুহাঁটুর উপর দৃঢ়ভাবে রাখুন, হাতের আঙুল ফাঁক করে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। দুবাহুকে ও দুহাতের কুনুইকে দেহ থেকে সরিয়ে রাখুন। এ অবস্থায় পিঠ লম্বা করে দিতে হবে, পিঠ কোমর ও মাথা এমন ভাবে সোজা ও সমান্তরাল থাকবে যে পিঠের উপর পানি ঢেলে দিলে তা গড়িয়ে পড়বে না। এ ভাবে রুকুতে পুরোপুরি শান্ত ও স্থির হয়ে যেতে হবে। রুকুর তাসবীহ পাঠ করুন।
১২. রুকু থেকে উঠে পরিপূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ান ও কয়েক মহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকুন। রুকু ও সাজদা থেকে উঠে কয়েক মুহূর্ত পরিপূর্ণ সোজা থাকা সালাতের অন্যতম ওয়াজিব। রুকু থেকে উঠে পুরোপুরি সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সাজদায় চলে গেলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবে। এ অবস্থায় মাসনূন যিক্রগুলো পালন করুন।
১৩. এরপর আল্লাহু আকবার বলতে বলতে শান্তভাবে সাজদা করবেন। সাজদা করার সময় প্রথম দুহাঁটু এরপর দুহাত অথবা প্রথম দুহাত এরপর দুহাঁটু মাটিতে রাখা- উভয় প্রকার হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সাজদা অবস্থায় দুপা, দুহাঁটু, দুহাত, কপাল ও নাক মাটিতে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকবে। দুহাতের আঙুল মিলিত অবস্থায় সোজা কিবলামুখি থাকবে। দুহাতের পাতা দুকানের নিচে অথবা দুকাঁধের নিচে থাকবে। দুহাতের বাজু ও কনুই মাটি থেকে উপরে থাকবে এবং কোমর থেকে দূরে সরে থাকবে। সাজদার সময়ে নাক মাটি থেকে উঠবে না। হাদীসে বলা হয়েছে: “যতক্ষণ কপাল মাটিতে থাকবে, ততক্ষণ নাকও মাটিতে থাকবে, অনথ্যায় সালাত শুদ্ধ হবে না।”21সুনানুদ দারাকুতনী ১/৩৪৮, তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর ২২/১০৫।
সাজদার সময় পায়ের আঙুল কিবলামুখি থাকবে। অনেক ফকীহ মত প্রকাশ করেছেন যে, দাঁড়ানো অবস্থায় যেমন দু পায়ের মাঝে ৪ আঙুল বা এক বিঘত ফাঁক থাকে সাজদার সময়েও একইভাবে পদদ্বয় পৃথক থাকবে। অন্যান্য ফকীহ বলেছেন, সাজদার সময় দুপায়ের গোড়ালি একত্রিত থাকবে।
প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ আল্লামা ইবনুু আবিদীন শামী রুকুর নিয়ম প্রসঙ্গে বলেন:
(ويسن أن يلصق كعبيه ) قال السيد أبو السعود وكذا في السجود أيضا ….
“সুন্নাত হলো মুসাল্লী তার পায়ের গোড়ালিদুটি একত্রিত করে রাখবে। সাইয়েদ আবুস সাঊদ বলেন:সাজদার মধ্যেও এভাবে পায়ের গোড়ালিদ্বয় একত্রিত রাখা সুন্নাত।”22ইবন আবিদীন শামী, হাশিয়াত ইবন আবিদীন (রাদ্দুল মুহতার) ১/৪৯৩, ১/৫০৪।
এ মতটি সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত। এক হাদীসে আয়েশা (রা) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ আদায় করছিলেন। আমি অন্ধকারে হাত বাড়ালাম,
فَوَجَدْتُهُ سَاجِدًا رَاصًّا عَقِبَيْهِ مُسْتَقْبِلاً بِأَطْرَافِ أَصَابِعِهِ الْقِبْلَةَ
“আমি স্পর্শ করে দেখলাম তিনি সাজদায় রত, তাঁর পায়ের গোড়ালিদ্বয় একত্রিত করে পায়ের আঙুলগুলির প্রান্ত কিবলামুখি করে রেখেছেন।23ইবন খুযাইমা, আস-সহীহ ১/৩২৮ (নং ৬৫৪); হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৩৫২। হাদীসটি সহীহ।
১৪. সাজদায় স্থির ও শান্ত হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “সাজদা করবে এবং সাজদায় এমন ভাবে শান্ত হবে যেন তোমার সকল অস্থি ও জোড় শান্ত ও শিথিল হয়ে যায়।”24আব দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাব.. লা ইউকীমু সুলবাহ) ১/২২৪-২২৫, নং ৮৫৭ (ভারতীয় ১/১২৪); মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৬৮। তিনি বলেন, “দৃঢ়ভাবে কপাল, নাক ও দুহাত মাটিতে রেখে সাজদায় স্থির থাকবে, যেন তোমার দেহের সকল অস্থি নিজ নিজ স্থানে থাকে।”25সহীহ ইবন খুযাইমা ১/৩২২। এ অবস্থায় সাজদার তাসবীহ পাঠ এবং দু‘আ করুন।
১৫.“আল্লাহ আকবার” বলতে বলতে সাজদা থেকে উঠে বসতে হবে এবং সম্পুর্ণ স্থির হতে হবে যেন শরীরের সকল অস্থি নিজ নিজ স্থানে স্থির হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সালাত শুদ্ধ হতে হলে দুসাজদার মাঝে অবশ্যই স্থির হয়ে বসতে হবে।26আবূ দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাব.. মান না ইউকীমু সুলবাহু) ১/২২৪-২২৭ (ভারতীয় ১/১২৪); মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৬৮, সহীহ ইবনু খুযাইমা ১/৩২২। রাসূলুল্লাহ সা. যতক্ষণ রুকু এবং সাজদায় থাকতেন রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ও দু সাজদার মাঝে বসে প্রায় তত সময় কাটাতেন।27বুখারী (১৬-কিতাব সিফাতিস সালাত, ৩৯-বাব হাদ্দি ইতমামির রুকু) ১/২৭৩ (ভারতীয় ১/১০৯); মুসলিম (৪-কিতাবুস সালাত, ৩৮-বাব ই’তিদাল আরকান..) ১/৩৪৩ (ভারতীয় ১/১৮৯)।
১৬.এ সময়ে বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর শান্ত হয়ে বসতে হবে। ডান পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলামুখী করে পা সোজা রাখতে হবে। দু হাত দু উরু ও হাঁটুর উপরে থাকবে। আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক সামান্য ফাঁক অবস্থায় কিবলামুখী থাকবে। এ সময়ে মাসনূন যিক্র পাঠ করুন।
১৭. এরপর “আল্লা-হু আকবার” বলে দ্বিতীয়বার সাজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সাজদাতে প্রথম সাজদার মত শান্ত ও স্থিরভাবে অবস্থান করতে হবে এবং উপরে বর্ণিত যিক্র ও দু‘আ পাঠ করতে হবে।
উল্লেখ্য যে রুকু, সাজদা, রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ও দুই সাজদার মাঝে বসে শান্ত হওয়া এবং তাড়াহুড়া না করা নামাযের জন্য অতীব গুরুত্বপুর্ণ এবং এতে অবহেলা করলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। কষ্ট করে নামায পড়েও তা যদি নবীজির (সা.) শিক্ষার বিরোধিতার কারণে আল্লাহ কবুল না করেন তাহলে তার চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে মুসল্লী পুরোপুরি শান্তভাবে রুকু সাজদা আদায় করে না, তার সালাতের দিকে আল্লাহ তাকান না।28মুসনাদ আহমদ ৪/২২,তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর ৮/৩৩৮।
তিনি একব্যক্তিকে তাড়াতাড়ি অপূর্ণভাবে রুকু সাজদা করতে দেখে বলেন : “যদি সে এ অবস্থায় মারা যায় তাহলে মুহাম্মাদের সা. ধর্মের উপর তার মৃত্যু হবে না। কাক যেমন রক্তে ঠোকর দেয় তেমনি এরা সালাতে ঠোকর দেয়। যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ ভাবে রুকু করে না এবং ঠুকরে ঠুকরে সাজদা করে তার অবস্থা হলো সেই ব্যক্তির মত যে অত্যধিক ক্ষুধার্ত অবস্থায় একটি বা দু’টি খেজুর খেল, যাতে তার কোন রকম ক্ষুধা মিটল না।29সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ১/৩৩২; মুসনাদু আবী ইয়ালা ১৩/১৪০, ৩৩৩; তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর ৪/১১৫, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১২১।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে খারাপ চোর যে নিজের সালাত চুরি করে।” সাহাবীরা প্রশ্ন করেন, “হে আল্লাহর রাসূল, নিজের সালাত কীভাবে চুরি করে?” তিনি বলেন, “সালাতের রুকু ও সাজদা পুরোপুরি আদায় করে না।”30মুসনাদ আহমদ ৩/৫৬, ৫/৩১০; সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ১/৩৩১; সহীহ ইবনু হিব্বান ৫/২০৯; মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৫৩; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১২০।
তিনি একদিন সালাত আদায় করতে করতে লক্ষ্য করেন যে একব্যক্তি রুকু ও সাজদা করার সময় স্থির হচ্ছে না। তিনি সালাত শেষে বলেন, “হে মুসলিমগণ, যে ব্যক্তি রুকুতে এবং সাজদায় পুরোপুরি স্থির ও শান্ত না হবে, তার সালাত আদায় হবে না।”31ইবন মাজাহ (৫-কিতাব ইকামাতিস সালাত, ১৬-বাবুর রুকু..) ১/২৮২ (ভারতীয় ১/৬২), তিরমিযী (আবওয়াবুস সালাত, বাব.. লা ইউকীমু সুলবাহু) ২/৫১-৫২, নং ২৬৫ (ভারতীয় ১/৬১)।
১৮. এরপর “আল্লা-হ আকবার” বলতে বলতে দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়াতে হবে। সাজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় পরিপূর্ণ আদব ও ভক্তির সাথে শান্তভাবে প্রথমে দুই হাত, তারপর দুই হাঁটু মাটি থেকে উপরে উঠাতে হবে। উপরের নিয়মে দ্বিতীয় রাক‘আত আদায় করতে হবে।
১৯. দ্বিতীয় রাক‘আত পূর্ণ হলে তাশাহ্হুদের জন্য বসতে হবে। দুই সাজদার মাঝে মাঝে যেভাবে বসতে হয়, সেভাবে বাম পা বিছিয়ে ডান পা খাড়া করে আঙুলগুলো কিবলামুখী করে বসতে হবে। বাম হাত স্বাভাবিকভাবে বাম উরু বা হাঁটুর উপর বিছানো থাকবে। ডান হাত ডান উরুর উপর থাকবে, ডান হাতের আঙ্গুলগুলো মুঠি করে শাহাদাত আঙ্গুলী বা তর্জনী দিয়ে তাশাহহুদ ও দু‘আর সময় কিবলার দিকে ইঙ্গিত করা সুন্নাত। চোখের দৃষ্টি ইঙ্গিতরত তর্জনীর দিকে থাকবে। দুরাক‘আত সালাত হলে তাশাহ্হুদের পর দরুদ ও দু‘আ পাঠ করতে হবে। তিন বা চার রাক‘আত সালাত হলে তাশাহ্হুদ পড়ে উঠে দাঁড়াতে হবে। শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ, দরুদ ও দু‘আ পাঠ করতে হবে।
২০. সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করতে হবে। ডান দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলতে হবে “আস্সালা-মু আ‘লাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’ এরপর বাম দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলতে হবে “আস্সালা-মু আ‘লাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ”।
২১. সালামের সাথে সাথে সালাত শেষ হয়ে যায়। সালামের পরে নামাযের আর কোন কর্ম- ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব কিছুই বাকী থাকে না। সালামের পরে মাসনূন যিক্র ও দু‘আ পৃথক ইবাদত, যা আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ।
3 Comments
নাঈমুর রহমান
খুব সুন্দর লাগলো
Md. Matiur Rahman
Jazakallahu khaira.
Shoun
What a great speech.