As-Sunnah Trust

সাম্প্রতিক সংবাদ

আল্লাহর পথের পথিকদের পাপ

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

আল্লাহর পথে চলতে সচেষ্ট ও ধর্ম-সচেতন অনেক মানুষ অনেক সময় এসব ইবাদত বিধ্বংসী পাপের মধ্যে লিপ্ত হয়ে যান। অনেক সচেতন মুসলিম ব্যভিচার, মিথ্যা, মদপান, সালাত বা সিয়াম পরিত্যাগ ইত্যাদি পাপে কখনোই লিপ্ত হন না। কখনো এরূপ কিছু করলে সকাতরে তাওবা-ইসতিগফার করতে থাকেন। কিন্তু জেনে অথবা না জেনে তাঁরা র্শিক, কুফ্র, বিদ‘আত, হিংসা, অহঙ্কার, লোভ, আত্মতুষ্টি, গীবত ইত্যাদি পাপের মধ্যে লিপ্ত হচ্ছেন।

এর কারণ, কোনো মানুষের ক্ষেত্রেই শয়তান কখনো নিরাশ হয় না। প্রত্যেক মানুষকেই কোনো না কোনোভাবে বিভ্রান্ত করতে সে সদা সচেষ্ট। সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য তার নিজস্ব পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী রয়েছে। সবাইকেই সে পরিপূর্ণ ধর্মহীন অবিশ্বাসী করতে চায়। যাদের ক্ষেত্রে সে তা করতে সক্ষম না হয় তাদেরকে সে ‘ধর্মের আবরণে’ পাপের মধ্যে লিপ্ত করে। অথবা বিভিন্ন প্রকার ‘অন্তরের পাপে’ লিপ্ত করে, যেগুলো নেককার মানুষের নেক-আমল নষ্ট করে দেয়, অথচ সেগুলোকে অনুধাবন করা অনেক সময় ধার্মিক মানুষের জন্যও কষ্টকর হয়ে যায়। এ জাতীয় কিছু পাপের কথা আমরা ‘সকল বিদ’আত কর্মই মূলত জায়েজ’ প্রবন্ধে আলোচনা করেছি। এখানে আরো কিছূ আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

শিরক, কুফর ও নিফাক

শিরক অর্থ অংশ। আল্লাহর কোনো কর্ম, গুণ, নাম বা ইবাদতে কোনো সৃষ্টিকে অংশীদার বানানো, তাঁর সমকক্ষ মনে করা, কোনো ফিরিশতা, জিন, নবী, ওলী, তাঁদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান, দ্রব্য বা অন্য কিছুর মধ্যে ‘ঈশ্বরত’ বা অলৌকক ক্ষমতা আছে বলে মনে করা শিরক। কুফর অর্থ অবিশ্বাস। তাওহীদ ও রিসালাত বিষয়ক ঈমানের কোনো বিষয় অবিশ্বাস করা কুফর। শিরক ও কুফর পরস্পর জড়িত ও অবিচ্ছেদ্য। মনের মধ্যে শিরক-কুফর গোপন রেখে জাগতিক প্রয়োজনে মুখে ঈমানের দাবী করা নিফাক বা মুনাফিকী।

শিরক ধার্মিকদের পাপ। ধার্মিক মানুষদের ধ্বংস করতে শয়তানের মূল অস্ত্র ৫টি: শিরক, কুফর, বিদআত, হিংসা-বিদ্বেষ ও বান্দার হক্ক নষ্ট করা। এর মধ্যে প্রথম চারটিকে শয়তান একেবারে ধর্মের লেবাস পরিয়ে পেশ করে। বিশ্বাসী মানুষ ধর্ম পালনের নামেই এ সকল পাপ করেন। কোনো নাস্তিক কখনো শিরকে লিপ্ত হয় না। বিশ্বাসী মানুষ আল্লাহর করুণা লাভের আবেগে আল্লাহর কোনো সৃষ্টিকে অতিভক্তি করে শিরকে লিপ্ত হন। কুরআনে বলা হয়েছে যে, কাফিরগণ শুধু আল্লাহর বেলায়াত অর্জনের জন্যই শিরক করত (সূরা ৩৯-যুমার: আয়াত ৩)।

নাস্তিকতা পর্যায়ের কুফর ধার্মিকদের মধ্যে থাকে না। তবে অনেক ধার্মিক মানুষ তাওহীদ ও রিসালাতের ঈমান বিষয়ক অনেক কিছু অস্বীকার বা অবিশ্বাস করে কুফরীতে লিপ্ত হন। এজন্য বেলায়াত অর্জনের পথে শিরক-কুফর সম্পর্কে সচেতনতা অতীব জরুরী।

এখানে শিরক-কুফর বিষয়ক কিছু তথ্য সংক্ষেপে উল্লেখ করছি,:
১. শিরক-কুফরের বৈশিষ্ট্যাবলি
কুরআন-হাদীসের অগণিত বর্ণনায় আমরা দেখি যে, শিরক-কুফর জীবনের ভয়ঙ্করতম পাপ। অন্যান্য পাপ থেকে এর বিশেষত্ব:
(ক) এর শাস্তি ভয়ঙ্কতম ও কঠিনতম।
(খ) সকল পাপ আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাওবা ছাড়া নিজ করুণায়, নেক আমলের বরকতে বা কারো শাফাআতে ক্ষমা করবেন কিন্তু শিরক-কুফরের পাপ পরিপূর্ণ তাওবা ও শিরক-কুফর বর্জন ছাড়া আল্লাহ ক্ষমা করেন না।
(গ) শিরক-কুফরের ফলে মানুষের অন্যান্য সকল নেক কর্ম বিনষ্ট হয়ে যায়। যেমন কেউ যদি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিক্র, দোয়া, সুন্নাত পালন, মানব সেবা ইত্যাদি অগণিত নেক আমল করেন, এরপর তিনি একটি শিরকমূলক কর্ম করেন, তাহলে তার সকল নেক কর্মের সাওয়াব বিনষ্ট ও ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে তার কিছুই থাকবে না। অন্য কোন পাপের ফলে এভাবে নেককর্ম নষ্ট হয় না।
(ঘ) শিরক-কুফরে লিপ্ত ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম। তাকে অনন্তকাল জাহান্নামেই থাকতে হবে।

২. সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক-কুফর
মুসলিম সমাজে অগণিত মানুষ বিভিন্ন প্রকার শিরক ও কুফরীর মধ্যে নিপতিত। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা, প্রচলিত কুসংস্কার, মাজারের খাদেম ও প্রচারকদের কথায় বিশ্বাস, ওলী ও বুজুর্গগণ সম্পর্কে অতিভক্তি, তাদের কারামতকে তাঁদের নিজস্ব ক্ষমতা বলে মনে করা ইত্যাদি কারণে তাঁরা বহুবিধ শিরক-কুফরে লিপ্ত। এখানে সুস্পষ্ট কিছু শিরক ও কুফরের উল্লেখ করছি:

১. তাওহীদ বা রিসালাতের কোনো বিষয় অবিশ্বাস করা। যেমন আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস না করা। মুহাম্মাদ (সা.)-কে তাঁর বান্দা, দাস ও মানুষ রূপে বিশ্বাস না করা। অথবা তাঁকে আল্লাহর অবতার, আল্লাহ তাঁর সাথে মিশে গিয়েছেন, ‘যে আল্লাহ সে-ই রাসূল’ ইত্যাদি মনে করা। অথবা তাঁকে আল্লাহর নবী ও রাসূল রূপে না মানা। তাকে কোনো বিশেষ যুগ, জাতি বা দেশের নবী মনে করা। তাঁর কোনো কথা বা শিক্ষাকে ভুল বা অচল মনে করা। আল্লাহর নৈকট্য, সন্তুষ্টি ও মুক্তি পাওয়ার জন্য তাঁর শিক্ষার অতিরিক্ত কোনো শিক্ষা, মত বা পথ আছে, থাকতে পারে বা প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করা।

২. আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এ বিশ্বের প্রতিপালন বা পরিচালনায় শরীক আছেন বলে বিশ্বাস করা। অন্য কোনো সৃষ্টি, প্রাণী, ফিরিশতা, জীবিত বা মৃত মানুষ, নবী, ওলী সৃষ্টি, পরিচালনা, অদৃশ্য জ্ঞান, অদৃশ্য সাহায্য, রিযিক দান, জীবন দান, সুস্থতা বা রোগব্যাধি দান, বৃষ্টি দান, বরকত দান, অনাবৃষ্টি প্রদান, অমঙ্গল প্রদান ইত্যাদি কোনো প্রকার কল্যাণ বা অকল্যাণের কোনো ক্ষমতা রাখেন বা আল্লাহ কাউকে অনুরূপ ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন বলে বিশ্বাস করা।

৩. আল্লাহ ছাড়া কোনো নবী, ওলী, জিন বা ফিরিশতা সকল প্রকার অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, গায়েব বা দূরের ডাক শুনতে পারেন, সাড়া দিতে পারেন, সদাসর্বদা সর্বত্র বিরাজমান বা হাজির নাযির বলে বিশ্বাস করা।

৪. রাসূলুল্লাহ (সা.), ঈসা (আ) বা অন্য কাউকে আল্লাহর যাত (সত্তা) বা সিফাত (বিশেষণ)-এর অংশ, আল্লাহর সত্তা, বিশেষণ বা নূর থেকে (ঝধসব ঝঁনংঃধহপব/ খরমযঃ ভৎড়স খরমযঃ) সৃষ্ট বা জন্মদেওয়া বলে বিশ্বাস করা।

৫. অশুভ বা অযাত্রা বিশ্বাস করা। কোনো বস্তু, প্রাণী, কর্ম, বার, তিথি, মাস ইত্যাদিকে অশুভ, অমঙ্গল বা অযাত্রা বলে মনে করা স্পষ্ট শিরক। আমাদের দেশে অনেক মুসলিমও ‘কী করলে কী হয়’ জাতীয় অনেক বিষয় লিখেন বা বিশ্বাস করেন। এগুলি সবই শিরক। জন্মদিনে নখ-চুল কাটা, ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখা, রাতে নখ কাটা, পিছন থেকে ডাকা, কাক ডাকা ইত্যাদি অগণিত বিষয়কে অমঙ্গল বা অশুভ মনে করা হয়, যা নিতান্তই কুসংস্কার, মিথ্যা ও শিরকী বিশ্বাস। পাপে অমঙ্গল ও পুণ্যে কল্যাণ। সৃষ্টির সেবায় সকল মঙ্গল নিহিত ও সৃষ্টির ক্ষতি করা বা অধিকার নষ্ট করার মধ্যে নিহিত সকল অমঙ্গল। এছাড়া অমঙ্গল বা অশুভ বলে কিছুই নেই।

৬. আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করা। আল্লাহ ছাড়া কোনো দৃশ্য বা অদৃশ্য, জীবিত বা মৃত প্রাণী বা বস্তুকে; যেমন মানুষ, জিন, ফিরিশতা, মাযার, কবর, পাথর, গাছ ইত্যাদিকে সাজদা করা, অলৌকিক সাহায্য, ত্রাণ, দীর্ঘায়ূ, রোগমুক্তি, বিপদমুক্তি, সন্তান ইত্যাদি প্রার্থনা করা। তাদের নামে মানত, কুরবানি বা উৎসর্গ (ংধপৎরভরপব) করা শিরক। আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য- জীবিত বা মৃত, বিমূর্ত, মূর্ত, প্রস্তরায়িত বা সমাধিত, নবী, ওলী, ফিরিশতা বা যে কোনো নামে বা প্রকারে কারো জন্য- এগুলি করা হলে তা শিরক। মূর্তিতে ভক্তিভরে ফুলদান, মূর্তির সামনে নীরবে বা ভক্তিভরে দাঁড়ানো ইত্যাদি এজাতীয় শিরকী বা শিরকতুল্য কর্ম।

৭. আল্লাহর জন্য কোনো ইবাদত করে সে ইবাদত দ্বারা আল্লাহর সাথে অন্য কারো সম্মান প্রদর্শন বা সন্তুষ্টি কামনাও শিরক। যেমন আল্লাহর জন্য সাজদা করা তবে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে সামনে রেখে সাজদা করা, যেন আল্লাহর সাজদার সাথে সাথে তাকেও সম্মান করা হয়ে যায়। অথবা আল্লাহর জন্য মানত করে কোনো জীবিত বা মৃত ওলী, ফিরিশতা, জিন, কবর, মাযার, পাথর, গাছ ইত্যাদিকে মানতের সাথে সংযুক্ত করা।

৮. আল্লাহ, তাঁর রাসূল বা তাঁর দ্বীনের মৌলিক কোনো বিষয় অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, অবজ্ঞা করা বা অপছন্দ করা কুফর। এ জাতীয় প্রচলিত কুফরীর মধ্যে অন্যতম আল্লাহর বিভিন্ন বিধান, যেমন – নামায, পর্দা, বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি, ইসলামী আইন ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ বা এগুলিকে বর্তমানে অচল বা মধ্যযুগীয় মনে করা।

৯. ইসলামকে শুধু ব্যক্তি জীবনে পালন করতে হবে এবং সমাজ, বিচার, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলাম চলবে না বলে মনে করা, ইসলামের কোনো বিধান বা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো সুন্নাতের প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণা প্রকাশ করা, ওয়াজ মাহফিল, যিক্র, তিলাওয়াত, নামায, মাদ্রাসা, মসজিদ, বোরকা, পর্দা ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণা অনুভব করা, রাসূলুল্লাহ সা. বা পূর্ববর্তী অন্য কোনো নবী-রাসূলের প্রতি সামান্যতম অবজ্ঞা প্রকাশ করা।

১০. মুহাম্মাদ সা.-এর সর্বশেষ নবী হওয়ার বিষয়ে সামান্যতম সন্দেহ পোষণ করা, তাঁর পরে কারো কাছে কোনো প্রকার নুবুওয়াত বা ওহী এসেছে বা আসা সম্ভব বলে বিশ্বাস করা।

১১. সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারকি, রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো নিয়ম, পদ্ধতি, রীতি, নীতি, আদর্শ, আইন ইত্যাদি ছাড়া অন্য কোনো নিয়ম, নীতি, মতবাদ বা আদর্শ বেশী কার্যকর, উপকারী বা উপযোগী বলে মনে করা। যুগের প্রয়োজনে তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করা।

১২. যে কোনো প্রকার কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী। উপরে বর্ণিত ক্নো কুফুর বা শিরকে লিপ্ত মানুষকে মুসলিম মনে করা বা তাঁদের আকীদার প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী। যেমন যারা রাসূলুল্লাহ সা. কে সর্বশেষ নবী বলে মানেন না বা তাঁর পরে কোনো নবী থাকতে পারে বা ওহী আসতে পারে বলে বিশ্বাস করেন তাদেরকে কাফির মনে না করা কুফরী। অনুরূপভাবে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মকে সঠিক বা পারলৌকিক মুক্তির মাধ্যম বলে মনে করা, সব ধর্মই ঠিক মনে করা কুফর। অন্যান্য ধর্মের শিরক বা কুফরমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, সেগুলির প্রতি মনের মধ্যে ঘৃণাবোধ না থাকা, অন্য ধর্মাবলম্বীগণকে আন্তরিক বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা, তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের অনুকরণ করা, ক্রিসমাস (বড়দিন), পূজা ইত্যাদিতে আনন্দ- উদ্যাপন করা ইত্যাদি বর্তমান যুগে অতি প্রচলিত কুফরী কর্ম ও বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামই সর্বপ্রথম সকল ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রত্যেকেই তাদের ধর্ম পালন করবেন। তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা নিষিদ্ধ। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মুক্তি একমাত্র ইসলামের মধ্যে বলে বিশ্বাস ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকল ধর্মই সঠিক বলার অর্থ সকল ধর্মকে মিথ্যা বলা এবং সকল ধর্মকে অবিশ্বাস করা; কারণ প্রত্যেক ধর্মেই অন্য ধর্মকে বেঠিক বলা হয়েছে।

১৩. আরেকটি প্রচলিত কুফরী গণক, জ্যোতিষী, হস্তরেখাবিদ, রাশিবিদ, জটা ফকির বা অন্য কানো ভাগ্যগণনা, ভবিষ্যৎ গণনা বা গোপন জ্ঞান দাবি করা অথবা এসকল মানুষের কথায় বিশ্বাস করা। এ ধরনের কোনো কোনো কর্ম ইসলামের নামেও করা হয়। যেমন, ‘এলেম দ্বারা চোর ধরা’। যে নামে বা যে পদ্ধতিতেই করা হোক গোপন তথ্য, গায়েব, অদৃশ্য, ভবিষ্যৎ বা ভাগ্য গণনা বা বলা জাতীয় সকল কর্মই (কাহানা)-র অন্তর্ভুক্ত ও কুফরী কর্ম। অনুরূপভাবে কোনো দ্রব্য, পাথর, ধাতু, অষ্টধাতু, গ্রহ বা এ জাতীয় কোনো কিছু মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে অথবা দৈহিক বা মানসিক ভালমন্দ করতে পারে বলে বিশ্বাস করা শিরক।

১৪. রাসূলুল্লাহ সা.-এর শেখানো কোনো কর্ম, পোষাক, আইন, বিধান, রীতি, সুন্নাত, কর্মপদ্ধতি বা ইবাদত পদ্ধতিকে অবজ্ঞা বা উপহাস করা।

১৫. কোন মানুষকে রাসুলুল্লাহ সা.-এর শরীয়তের উর্ধ্বে মনে করা বা কোনো কোনো মানুষের জন্য শরীয়তের বিধান পালন করা জরুরী নয় বলে বিশ্বাস করা কুফরী। যেমন, মারিফাত বা মহব্বত অর্জন হলে, বিশেষ মাকামে পৌঁছালে আর শরীয়ত পালন করা লাগবে না বলে মনে করা। অনুরূপভাবে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, হালাল উপার্জন, পর্দা ইত্যাদি শরীয়তের যে সকল বিধান প্রকাশ্যে পালন করা ফরয তা কারো জন্য গোপনে পালন করা চলে বলে বিশ্বাস করাও কুফরী। এ ধরণের মত পোষণ কারী মূলত নিজেকে বা নিজের ধারণার উক্ত বুজুর্গকে রাসূলুল্লাহ সা. ও তাঁর মহান সাহাবীগণের চেয়েও বড় বুজুর্গ মনে করে। এ ব্যক্তি কাফির বলে গণ্য হবেন, যদিও তিনি ইসলামের বিধান পালন করেন।

১৬. যাদু, টোনা, বান ইত্যাদি ব্যবহার করা বা শিক্ষা করা।

১৭. ইসলাম ধর্ম জানতে-বুঝতে আগ্রহ না থাকা। ইসলামকে জানা ও শিক্ষা করাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না করা বা এ বিষয়ে মনোযোগ না দেয়া।

১৮. আল্লাহ ও বান্দার মাঝখানে কোনো মধ্যস্থ আছে বা মধ্যস্থতা ছাড়া আল্লাহর নিকট ক্ষমালাভ, করুণালাভ বা মুক্তিলাভ সম্ভব নয় বলে বিশ্বাস করা শিরক।

বিস্তারিত আলোচনা, তথ্য ও তথ্যসূত্রের জন্য দেখুন আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স প্রকাশিত ও ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত ‘কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা’ বইটি ।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published.