রামাদান ও তারাবীহ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট
১. কিয়ামুল্লাইল ও তাহাজ্জুদ
তারাবীহ (التراويح) বহুবচন, একবচন তারবীহাহ (الترويحة)। এর অর্থ প্রশান্তি, আরাম, বিনোদন, শিথিলায়ন, শিথিল হয়ে বসা (refreshment, soothing, easing, relief, relaxation, recreation) ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় রামাদান মাসের রাত্রির কিয়ামুল্লাইল বা রাতের সালাতকে “তারাবীহ” বলা হয়।
কিয়ামুল্রাইল (قيام الليل) অর্থ রাতের কিয়াম বা রাত্রিকালীন দাঁড়ানো। সালাতুল ইশার পর থেকে ফজরের ওয়াক্তের উন্মেষ পর্যন্ত সময়ে যে কোনো নফল সালাত আদায় করলে তা ‘কিয়ামুল্লাইল’ বা ‘সালাতুল্লাইল’ অর্থাৎ রাতের দাঁড়ানো বা রাতের সালাত বলে গণ্য। ‘তাহাজ্জুদ’ অর্থ ঘুম থেকে উঠা। রাতে ঘুম থেকে উঠে “কিয়ামুল্লাইল” আদায় করাকে “তাহাজ্জুদ” বলা হয়। কেউ যদি ইশার সালাত আদায় করে রাত ৯টা বা ১০টায় ঘুমিয়ে পড়েন এবং ১১/১২টায় উঠে নফল সালাত আদায় করেন তবে তা ‘কিয়ামুল্লাইল’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ বলে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি ইশার পরে না ঘুমিয়ে রাত ২/৩ টার দিকে কিছু নফল সালাত আদায় করেন তবে তা ‘কিয়ামুল্লাইল’ বলে গণ্য হলেও ‘তাহাজ্জুদ’ বলে গণ্য নয়।
ইসলামের অন্যতম নফল ইবাদত কিয়ামুল্লাইল। প্রথম রাতে বা শেষ রাতে, ঘুমানোর আগে বা ঘুম থেকে উঠে অন্তত কিছু নফল সালাত আদায় করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। একটু ঘুমিয়ে উঠে ‘তাহাজ্জুদ’-রূপে কিয়ামুল্লাইল আদায় করলে তার সাওয়াব ও মর্যাদা বেশি। রাতের শেষভাগে তা আদায় করা সর্বোত্তম। কুরআন মাজীদে কোনো নফল সালাতের উলেখ করা হয় নি, এমনকি পাঁচ ওয়াক্ত সালাতেরও বিস্তারিত উলেখ করা হয় নি। কিন্তু কিয়ামুল্লাইল ও তাহাজ্জুদের সালাতের কথা বারংবার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ও মুমিন জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসাবে উলেখ করা হয়েছে।
কিয়ামুল্লাইল বা সালাতুল্লাইলের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এত বেশি নির্দেশনা দিয়েছেন যে, এ বিষয়ে বর্ণিত সহীহ হাদীসগুলি একত্রিত করলে একটি বৃহদাকৃতির পুস্তকে পরিণত হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) কিয়ামুলাইল ও তাহাজ্জুদকে যে গুরুত্ব দিয়েছেন, অন্য কোনো নফল বা সুন্নাত সালাতের সে গুরুত্ব দেন নি। তিনি কিয়ামুল্লাইল আদায় করতে তাকিদ দিতেন। কেউ আদায় না করলে আপত্তি করতেন। এ বিষয়গুলি বিবেচনা করলে সারা বৎসরই ‘কিয়ামুলাইল’ সুন্নাতে মুআক্কাদা বলে গণ্য হয়। তবে ফকীহগণ সাধারণভাবে ‘কিয়ামুল্লাইল’-কে নফল পর্যায়ের সুন্নাত বা ‘সুন্নাতে গাইর মুআক্কাদা’ বলে গণ্য করেছেন।
২. রামাদানের কিয়ামুল্লাইল
রামাদানে ‘কিয়ামুল্লাইল’ আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো অধিক তাকিদ প্রদান করেছেন। এজন্য রামাদানের কিয়ামুলাইলকে উম্মাতের আলিমগণ অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ‘সুন্নাত মুআক্কাদা’ বলে গণ্য করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে সাধারণত রামাদান ও অন্য সকল সময়ে প্রথম রাতে সালাতুল ইশা আদায় করে ঘুমিয়ে পড়তেন। এরপর মাঝরাতে উঠে ৩/৪ ঘণ্টা যাবৎ একাকী তাহাজ্জুদ-কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন। একবার তিনি ২৩, ২৫ ও ২৭ রামাদানের রাত্রিতে সাহাবীগণ, তাঁর পরিবারের সদস্যগণ ও স্ত্রীগণকে নিয়ে জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করেন। ২৩ তারিখে রাতে এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত (আনুমানিক রাত ৮ টা থেকে ১০/১১ টা পর্যন্ত ২/৩ ঘণ্টা), ২৫ তারিখে মধ্য রাত পর্যন্ত (আনুমানিক রাত ৮-১২= ৪ ঘণ্টা) এবং ২৭ তারিখের রত্রিতে সাহরীর সময় পর্যন্ত (আনুমানিক রাত ৮- ৪= ৮ ঘণ্টা) কিয়ামুল্লাইল আদায় করেন। তিরমিযী, আস-সুনান ৩/১৬৯ (কিতাবুস সাওম, বাব (৮১) মা জাআ ফী কিয়ামি শাহরি রামাদান)। তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ।
এ তিন রাত্রিতে তিনি কত রাকআত কিয়াম করেছিলেন তা সহীহ বর্ণনায় স্পষ্ট নয়। তবে সাধারণত তিনি রামাদান ও অন্যান্য সময়ে তিন রাকআত বিতর ছাড়া ৮ রাকআত কিয়াম আদায় করতেন। বুখারী, আস-সহীহ ১/৩৮৫ (কিতাবু সালাতিত তারাবীহ, বাবু ফাদলি মান কামা রামাদান); মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫০৯ (কিতাবু সালাতিল মুসাফিরীন, বাবু সালাতিল লাইল….)
এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে ২ রাকআত (আহমদ, আল-মুসনাদ ৫/৪০০)। ৪ রাকআত, (আবূ দাউদ, আস-সুনান ২/৪৬ কিতাবুত তাতাওউ, বাবুন ফী সালাতিল লাইল)। ৬ রাকআত (আবূ দাউদ, আস-সুনান ২/৪৬ কিতাবুত তাতাওউ, বাবুন ফী সালাতিল লাইল)। ১০ রাকআত (আবূ দাউদ, প্রাগুক্ত ; ইবনুল আসীর, জামিউল উসূল ৬/৪৭)। এবং ১২ রাকআত বুখারী, আস-সহীহ ১/৭৮, ৪০১, (কিতাবুল ওয়াদূ, বাবু কিরাআতিল কুরআন বা’দাল হাদাসি) ১/৪০১, ৪/১৬৬৬, ১৬৬৭; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫২৬, ৫৩১ (কিতাবু সালাতিল মুসাফিরীন, বাবুদ দুআ ফী সালাতিল লাইলি)
কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন বলে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাঁর রাকআত সংখ্যা কমবেশি হলেও, সময়ের পরিমাণ বিশেষ কমবেশি হতো না। সাধারণত তিনি প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা ধরে কিয়াম আদায় করতেন। রাকআতের সংখ্যা কমালে দৈর্ঘ্য বাড়াতেন।
সাহাবীগণ রামাদানে তাঁর পিছনে জামাআতে কিয়ামুল্লাইল পালন করতে অতীব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু ফরয হওয়ার আশঙ্কায় তিনি একাকী তা আদায় করতেন এবং সাহাবীদেরকে এভাবে আদায় করতে পরামর্শ দেন। বুখারী, আস-সহীহ ১/২৫৬ (কিতাবুল জামা‘আত, বাবু সালাতিল্লাইল), ৪/১৬৬৬, ১৬৬৭; মুসলিম, আস-সহীহ ২/১৮৮ (কিতাব সালাতিল মুসাফিরীন, বাবু ইসতিহবাবি সালাতিন নাফিলাতি ফী বাইতিহী)
উপরের হাদীসে আমরা দেখলাম যে, কয়েক রাত তিনি তা জামাতে আদায় করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি জামাআতে রামাদানের কিয়াম আদায়ের ফযীলতে বলেন:
مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ
“যে ব্যক্তি ইমামের কিয়ামুল্লাইল শেষ করা পর্যন্ত ইমামের সাথে কিয়ামুল্লাইল আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত কিয়াম পালনের সাওয়াব লেখা হবে।” তিরমিযী ৩/১৬৯ (কিতাবুস সাওম, বাব মা জাআ ফী কিয়ামি শাহরি রামাদান)। হাদীসটি সহীহ।
সাহাবীগণ ও পরবর্তী প্রজন্মের মুসলিমগণ রামাদানের কিয়ামুল্লাইল আদায়ের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। যেহেতু শেষ রাতে উঠে তা আদায় করা অনেকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়, এজন্য অনেকেই সালাতুল ইশার পরেই মসজিদে বা বাড়িতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করে ঘুমাতেন। যারা কুরআনের ভাল কারী বা হাফিয ছিলেন না তারা অনেক সময় কোনো ভাল কারী বা হাফিযের পিছনে মসজিদে বা বাড়িতে ছোট জামাত করে তা আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে ও তাঁর ওফাতের পরে প্রায় কয়েক বৎসর এভাবেই চলে।
উমার (রা)-এর সময়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরা কুরআনের হাফিয না হওয়াতে হাফিযদের পিছনে কিয়াম করতে চেষ্টা করতেন। এজন্য মসজিদে নববীতে সালাতুল ইশার পরে ছোট ছোট জামাত শুরু হতো
খলীফা উমার (রা) লক্ষ্য করেন যে, এভাবে মদীনার মসজিদে নববীতে ছোট ছোট জামাতে বা পৃথকভাবে একাকী অনেকেই সালাতুল ইশার পরে কিয়ামুল্লাইল আদায় করছেন। তখন তিনি সাহাবী উবাই ইবন কা’বকে বলেন, মানুষেরা দিবসে সিয়াম পালন করেন, কিন্তু অনেকেই ভাল হাফিয বা কারী নন; কাজেই আপনি তাদেরকে নিয়ে জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করেন। পাশাপাশি তিনি সুলাইমান ইবন আবী হাসমাহ (রা) নামক অন্য সাহাবীকে মহিলাদের নিয়ে মসজিদের শেষ প্রান্তে পৃথক জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করার নির্দেশ দেন। মহিলাদের জামাতের ইমামতি তামীম দারী (রা) নামক অন্য সাহাবীও করতেন। খলীফা উসমান ইবন আফ্ফনের (রা) সময়ে তিনি সুলাইমান ইবন আবী হাসমাহ (রা)-এর ইমামতিতে পুরুষ ও মহিলাদের এক জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায়ের ব্যবস্থা করেন। (মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, আল-মুআত্তা আব্দুল হাই লাখনবী, আত-তালীক আল-মুমাজ্জাদ-সহ) পৃ ১/৩৫৫; ইবনু আবী শাইবা; আল-মুসান্নাফ ২/২২২।)
এভাবে অধিকাংশ মানুষ জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করতে থাকেন। তবে অনেক সাহাবী, তাবিয়ী ও যারা ভাল হাফিয ও আবিদ ছিলেন তারা সালাতুল ইশার পরে অথবা মধ্য রাতে ও শেষ রাতে একাকী রামাদানের কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন।
৩. রামাদানের কিয়ামের ‘তারাবীহ’ নামকরণ
উমার (রা)-এর সময় থেকেই রামাদানের কিয়ামুল্লাইলের জামা‘আত দীর্ঘ সময় ধরে আদায় করা হতো। সাধারণত শেষ রাতে সাহরীর সময়ে শেষ হতো। বর্তমান সময়ের হিসেবে রাত ৮/৯ টা থেকে ৩/৪ পর্যন্ত প্রায় ৬/৭ ঘণ্টা যাবত কিয়ামুল্লাইল আদায় করা হতো। ইমামগণ তিন-চার দিনে বা এক সপ্তাহে কুরআন খতম করতেন। কেউ কেউ রামাদানের কিয়ামুল্লাইলে দু-তিন খতম কুরআন পাঠ করতেন। রুকু সাজদাও দীর্ঘ করা হতো। এজন্য প্রতি চার রাকআত পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার নিয়ম প্রচলিত হয়ে যায়। এ কারণে রামাদানের কিয়ামুল্লাইলকে “সালাতুত তারাবীহ”, অর্থাৎ বিশ্রামের বা শিথিলায়নের সালাত বলা হতে থাকে।
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, উমার (রা)-এর সময়ে ৮ রাকআত এবং ২০ রাকআত কিয়ামুল্লাইল আদায় করা হতো। ইমাম মালিক (র) মুহাম্মাদ ইবন ইউসূফ (র) থেকে, তিনি সাইব ইবন ইয়াযিদ (রা) থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে, উমার (রা) ১১ রাকআত (বিতর-সহ) কিয়ামুলাইলের ব্যবস্থা করেন। তাঁরা শতশত আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং ফজরের সামান্য পূর্বে শেষ করতেন। (মালিক, আল-মুআত্তা ১/১১৫ )।
পক্ষান্তরে ইমাম আব্দুর রায্যাক সানআনী দাউদ ইবন কাইস (র) ও অন্যান্যদের থেকে, তারা মুহাম্মাদ ইবন ইউসূফ (র) থেকে, তিনি সাইব ইবন ইয়াযিদ (রা) থেকে, তিনি বলেন: উমার (রা.) ২১ রাকআত (বিতর-সহ) কিয়ামুল্লাইলের ব্যবস্থা করেন। (আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ ৪/২৬০; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৪/২৫৩)।
ইমাম বাইহাকী (র) ইয়াযিদ ইবন খাসীফার (র) সূত্রে সাইব ইবন ইয়াযিদ (রা.) থেকে উদ্ধৃত করেন: উমারের (রা.) সময় তারা ২৩ রাকআত কিয়াম করতেন। (বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ২/৪৯৬)। এগুলি সবই সহীহ হাদীস। হাদীসগুলোর রাবীগণ সকলেই সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের রাবী। এছাড়াও অনেকগুলো সহীহ বা হাসান সনদে উমার (রা)-এর সময়ে ২০ রাকআত তারাবীহ আদায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে।
মুহাদ্দিসগণ বলেন, সম্ভবত প্রথমে দীর্ঘ সময় ধরে ৮ রাকআত আদায় করা হতো। পরে সময়ের দৈর্ঘ ঠিক রেখে রাকআত ও বিশ্রামের সংখ্যা বাড়ানো হয়। ৬/৭ ঘণ্টা ধরে ৮ রাকআতের চেয়ে ২০ রাকআত আদায় সহজতর। পরবর্তীকালে অধিকাংশ স্থানে ২০ রাকআত এবং কোথাও ৩৮ রাকআত পর্যন্ত তারাবীহ আদায় করা হতো। বিস্তারিত জানতে মুসান্নাফ আব্দুর রায্যাক, মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, মুখতাসার কিয়ামিল লাইল লি-মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল-মারওয়াযী ইত্যাদি গ্রন্থ পাঠ করতে পারেন।
৪. উপসংহার
কিয়ামুল্লাইলের মূল সুন্নাত হলো নামাযে দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা। বর্তমানে আমরা কুরআন তিলাওয়াত ও শ্রবণের চেয়ে সংখ্যা গণনা করা ও তাড়াতাড়ি শেষ করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। অনেকে আবার ৮/১০ রাকাত পড়েই চলে যান। অথচ আমরা দেখেছি, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যদি কেউ ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল্লাইল আদায় করে তবে সে সারারাত কিয়ামুল্লাইলের সাওয়াব লাভ করবে।”
পূর্বর্বতী যামানার মানুষেরা প্রায় একঘন্টা ধরে ৪ রাকআত তারাবীহ আদায় করে এরপর কিছু সময় বিশ্রাম করতেন । আমরা ৮/১০ মিনিটে ৪ রাকাত আদায় করেই বিশ্রাম করি। এ সময়ে নীরবে বিশ্রাম করা যায়, বা কুরআন পাঠ, যিকর, দরুদ পাঠ বা অন্য যে কোনো আমল করা যায়। এ বিশ্রামের সময়ে আমাদের সমাজে যে দুআ ও ম্নুাজাত প্রচলিত আছে তা কোনো হাদীসে বা পূর্ববর্তী ফিকহের গ্রন্থগুলিতে পাওয়া যায় না। পরবর্তী আলিমগণ দুআ ও মুনাজাতটি বানিয়েছেন। এর অর্থে কোনো দোষ নেই। তবে অনেকে মনে করেন যে, দুআ ও মুনাজাতটি বোধহয় তারাবীর অংশ বা তা না হলে তারাবীহের সাওয়াব কম হবে। এমনকি অনেকে দুআ-মুনাজাত না জানার কারণে তারাবীহ পড়েন না। এগুলি সবই ভিত্তিহীন ধারণা। এ সময়ে তাসবীহ, তাহলীল, মাসনূন দুআ-যিকর অথবা দরুদ পাঠ করাই উত্তম।
সাহাবী-তাবিয়ীগণ প্রতি তিন দিন বা দশ দিনে তারাবীহের জামাতে কুরআন খতম করেতন। আর আমরা পুরো রামাদানে এক খতম করতেও কষ্ট পাই। তাঁরা ৫/৬ ঘন্টা ধরে তারাবীহ পড়তেন। আমরা এক ঘন্টাও দাঁড়াতে চাই না। হাফেয সাহেব একটু সহীহ তারতীলের সাথে পড়লে আমরা রাগ করি। কুরআনের সাথে এর চেয়ে বেশি বেয়াদবি আর কি হতে পারে। কুরআন শ্রবণের আগ্রহ নিয়ে ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত তারাবীহ আদায় করুন। ইমামের সাথে সাথেই নিয়্যাত করুন এবং পুরো কুরআন মহব্বতের সাথে শুনুন। সময় তো চলেই যাবে ভাই। হয়ত এভাবে কুরআন শোনার সময় আর পাব না। আল্লাহ আমাদের সিয়াম ও কিয়াম কবুল করুন। আমীন। তারাবীহ সংশ্লিষ্ট আরো কিছু বিষয় পববর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে। ইনশাআল্লাহ।