As-Sunnah Trust

সাম্প্রতিক সংবাদ

বাইবেল, কুরআন ও ধর্ম (১ম অংশ)

বাইবেল, কুরআন ও ধর্ম ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রথম অধ্যায়: বাইবেল পরিচিতি

(১ম অংশ)

১. ১. বাইবেল: নামকরণ ও অর্থ

১. ১. ১. উৎপত্তি ও অর্থ

‘বাইবেল’ শব্দটি বাঙালীদের নিকট অতি পরিচিত। বাংলাদেশ ও ভারতের সকল বাংলাভাষী সাধারণভাবে খৃস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থকে ‘বাইবেল’ নামে চিনেন। ইংরেজিী ও সকল ইউরোপীয় ভাষায় ইহূদী ও খৃস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ ‘বাইবেল’ নামে পরিচিত। পলাশীর যুদ্ধে বিজয় লাভের পর বৃটিশ খৃস্টান মিশনারিগণ বাংলাদেশে খৃস্টান প্রচারক প্রেরণ করেন। তারা তাদের ধর্মগ্রন্থকে ‘পবিত্র বাইবেল’ নামে বাংলায় অনুবাদ করে প্রচার করেন।

বাইবেল শব্দটির অর্থ ‘পুস্তক’। ভূমধ্যসাগরের উপকুলে বর্তমান বৈরুতের নিকটবর্তী প্রাচীন ফনিশিয়া (Phoenicia) রাজ্যের একটি শহরের নাম ছিল ‘বিবলস’ (Byblos)। এ শহর থেকেই প্রাচীন ‘কাগজ’ প্যাপিরাস (papyrus) আমদানী করত গ্রীকগণ। এজন্য প্যাপিরাস বা কাগজকে এবং প্যাপিরাস বা-িল (papyrus scroll)- কে গ্রীক ভাষায় বিবলস (Byblos/biblos) বলা হতো। আর কাগজে লেখা ছোট পুস্তককে বলা হতো বিবলিয়ন (biblion=small book)। মাইক্রোসফট এনকার্টা বিশ্বকোষের ‘বাইবেল’ আর্টিকেলে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:

The term Bible is derived through Latin from the Greek biblia, or “books,” the diminutive form of byblos, the word for “papyrus” or “paper,” which was exported from the ancient Phoenician port city of Biblos. By the time of the Middle Ages the books of the Bible were considered a unified entity.

“বাইবেল শব্দটি ল্যাটিন ভাষার মাধ্যমে গ্রীক ‘বিবলিয়া’ বা ‘পস্তকসমূহ’ থেকে আগত। এটি মূলত ‘বিবলস’ শব্দ থেকে গৃহীত। বিবলস অর্থ ছিল প্যাপিরাস বা কাগজ, যা প্রাচীন ফনিসিয়ান বন্দর নগরী ‘বিবলস’ থেকে আমদানী করা হতো। মধ্য যুগ পর্যন্ত এসে বাইবেলের পুস্তকগুলোকে একীভূত অস্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হতো।”

১. ১. ২. বাইবেল বনাম পবিত্র বাইবেল

উপরের তথ্য থেকে আমরা দেখছি যে, ‘বাইবেল’ শব্দটির অর্থ ‘পুস্তক’ বা ‘পুস্তকমালা’। আমরা আরো দেখছি যে, প্রাচীন যুগে ‘বাইবেলকে’ ‘পবিত্র বাইবেল’ বলার প্রচলন ছিল না। মধ্য যুগে ল্যাটিন ভাষায় কখনো কখনো ‘বিবলিয়া’ শব্দটির সাথে ‘স্যাকরা’ (sacra) শব্দ ব্যবহার করা হতো, যার অর্থ পবিত্র (sacred)। এ ব্যবহারের ভিত্তিতে ইংরেজিতে (the holy Bible) বা ‘পবিত্র বাইবেল’ বলার প্রচলন ছিল। বর্তমানে ‘বাইবেল’ ও ‘পবিত্র বাইবেল’ উভয় পরিভাষাই দেখতে পাওয়া যায়।

১. ১. ৩. গ্রীক বনাম হিব্রু

আমরা দেখছি যে, ইহূদী ও খৃস্টধর্মের ধর্মগ্রন্থটির নাম মূলত গ্রীক ভাষা থেকে গৃহীত এবং ল্যাটিন ভাষায় পরিমার্জিত হয়ে ‘পবিত্র বাইবেল’ নামে পরিচিত। পরবর্তী আলোচনা থেকে আমরা দেখব যে, এ গ্রন্থটি মূলত হিব্রু ভাষায় রচিত ও প্রচারিত। অনেক শতাব্দী পরে গ্রন্থটি গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করা হয়। আমরা জানি, প্রতিটি গ্রন্থেরই তার নিজস্ব ভাষায় নাম থাকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হলে গ্রন্থটির মূল নাম (proper noun) অবিকৃত ও অভিন্নই থাকে। তাহলে ‘বাইবেল’ নামক এ বইটির হিব্রু ভাষায় নাম কি ছিল? বইটির সংকলক ও প্রচারকগণ কি হিব্রু ভাষায় বইটির কোনো নাম দেন নি? দিলে তা কী ছিল এবং কেনই বা তা পরিবর্তন করে গ্রীক ভাষায় নামকরণ করা হলো? প্রশ্নগুলোর উত্তর সুস্পষ্ট নয়। পরবর্তী আলোচনায় আমর দেখব যে, বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান গ্রন্থগুলোর প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন হিব্রু নাম রয়েছে। সংকলিত গ্রন্থমালারও হিব্রু নাম আছে। তবে গ্রীক ভাষার বাইবেল শব্দটিই নাম হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

১. ১. ৪. বাইবেল বনাম কিতাবুল মোকাদ্দস

‘বাইবেল’ শব্দটি মূল আভিধানিক অর্থে যে কোনো গ্রন্থের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও ব্যাবহারিকভাবে তা খৃস্টধর্মের ধর্মগ্রন্থের নাম যা ব্যাকরণের পরিভাষায় “proper noun” অর্থাৎ নিজস্ব নাম বা সংজ্ঞাবাচক নাম। যেমন ‘কুরআন’, ‘বেদ’, ‘গীতা’, ‘ত্রিপিটক’ ইত্যাদি প্রত্যেক শব্দের আভিধানিক অর্থ যাই হোক না কেন ব্যাবহারিকভাবে তা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের নিজস্ব নাম (proper noun)-এর পরিণত হয়েছে। এজন্য এ সকল গ্রন্থ যে ভাষাতেই অনুবাদ করা হোক না কেন, গ্রন্থের নাম অপরিবর্তিত থাকে; গ্রন্থের নামের অনুবাদ করা হয় না।

খৃস্টান ধর্মগুরু ও পণ্ডিতগণ সাধারণভাবে এ নীতি অনুসরণ করলেও আমরা দেখি যে, অনেক সময় তারা ব্যক্তি, স্থান বা গ্রন্থের নিজস্ব নামও অনুবাদ করেন। বাইবেলের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ঘটেছে। বাইবেল শব্দটি ‘proper noun’ হওয়ার কারণে বাইবেলের বিভিন্ন ভাষার অনুবাদে তারা নামটি বহাল রেখেছেন। বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রেও তারা ‘বাইবেল’ নামটি অপরিবর্তিত রেখেছিলেন।

১৯৭৮ খৃস্টাব্দে আমেরিকার কলরাডো (Colorado) রাষ্ট্রের কলরাডো ¯প্রীংস (Colorado springs) শহরে অনুষ্ঠিত (north American conference on muslim evangelization): ‘মুসলিমদের খৃস্টান বানানো বিষয়ে উত্তর আমেরিকান সম্মেলনে’ খৃস্টান প্রচারকগণ মুসলিমগণকে খৃস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এগুলোর মধ্যে ছিল ধর্মগ্রন্থগুলোকে মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত ও আকর্ষণীয় পরিভাষায় অনুবাদ করা। এ লক্ষ্য সামনে রেখে বর্তমানে বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি বাইবেলকে ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ নাম দিয়ে প্রকাশ করেছেন।

মধ্য যুগ থেকে বাইবেলের আরবী অনুবাদের ক্ষেত্রে ‘আল-কিতাবুল মুকাদ্দাস’ শব্দ ব্যবাহর করেন খৃস্টানগণ। আরবী ভাষায় কিতাব শব্দের অর্থ ‘গ্রন্থ’ ও ‘মুকাদ্দাস’ শব্দের অর্থ ‘পবিত্র’। ‘কিতাব’ শব্দটি ‘বাইবেল’ শব্দের আরবী অনুবাদ হলেও ‘মুকাদ্দাস’ শব্দটি অতিরিক্ত সংযোজিত। আমরা দেখেছি যে, ‘বাইবেল’ শব্দের মধ্যে ‘পবিত্রতার’ কোনো অর্থ নেই। তবে এখানে যে বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয় তা হলো গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ গ্রন্থের জন্য আরবী অনুবাদ নাম ব্যবহার। এখানে প্রথমত একটি নাম (proper noun)-এর অনুবাদ করা হয়েছে, যা অনুবাদের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয়ত অনুবাদের ভাষায় নামটির অনুবাদ না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ভাষার অবোধ্য বা দুর্বোধ্য নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তৃতীয়ত একটি অতিরিক্ত অবোধ্য বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে যার সাথে মূল নামের কোনো সম্পর্ক নেই। বাহ্যত উদ্দেশ্য মুসলিমদেরকে আকৃষ্ট করা।

১. ১. ৫. কি নাম ছিল এ গ্রন্থের যীশু খৃস্টের যুগে?

মূসা (আ)-এর যুগ থেকে ঈসা (আ)-এর যুগ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বৎসর যে ধর্মগ্রন্থটি প্রচলিত ছিল তার নিশ্চয় একটি নাম ছিল? কি নাম ছিল তার? বাইবেল প্রমাণ করে যে, ‘বাইবেল’, ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ ইত্যাদি সকল নামই পরবর্তী যুগের উদ্ভাবন। যীশু খৃস্ট ও তার শিষ্যগণ কখনোই এ নাম জনাতেন না। ‘বাইবেল’ নামক এ ধর্মগ্রন্থটি বুঝাতে তাঁরা নিম্নের পরিভাষা ব্যবহার করতেন:

(১) the scripture/ scriptures।((মথি ২১/৪২; ২২/২৯; ২৬/৫৪; ২৬/৫৬; মার্ক ১২/১০; ১২/২৪; ১৪/৪৯; ১৫/২৮; লূক ৪/২১; ২৪/২৭; ২৪/৩২; ২৪/৩৯; যোহন ২/২২; ৫/৩৯; ৭/৩৮; ৭/৪২; ১০/৩৫; ১৩/১৮; ১৭/১২; ১৯/২৪; ১৯/২৮; ১৯/৩৬; ১৯/৩৭; ২০/৯; প্রেরিত ১/১৬; ৮/৩২; ৮/৩৫; ১৭/২; ১৭/১১; ১৮/২৪; ১৮/২৮; রোমীয় ১/২, ৪/৩; ৯/১৭; ১০/১১; ১১/২; ১৫/৪; ১৬/২৬; গালাতীয় ৩/৮; ৩/২২; ৪/৪০; ১ কলসীয় ১৫/৩; ১৫/৪; ১ তীমথিয় ৫/১৮; ২ তীমথিয় ৩/১৫; ৩/১৬; যাকোব ২/৮; ২/২৩; ৪/৫; ১ পিতর ২/৬; ২ পিতর ২/২০; ৩/১৬।)) এ শব্দটি মূল অর্থ: লিখিত বিষয় (what is written) বা লিখিত পুস্তক। ব্যবাহিরক ভাবে এর অর্থ ধর্মগ্রন্থ, পবিত্র গ্রন্থ বা শাস্ত্র।
(২) The Law and the Prophets।((মথি ৫/১৭; ৭/১২; ১১/১৩; ২২/৪০; লূক ১৬/১৬; ২৪/৪৪; যোহন ১/৪৫; প্রেরিত ১৩/১৫; ২৪/১৪; ২৮/২৩; রোমীয় ৩/২১।)) অর্থাৎ তাওরাত ও নবীগণ বা ব্যবস্থা ও ভাববাদীগণ।
(৩)the law of Moses, and in the prophets, and in the psalms। মূসার তাওরাত এবং নবীগণ ও গীতসংহিতা অথবা দায়ূদের গীতসংহিতা।((লূক ২৪/৪৪। আরো দেখুন: লূক ২০/৪২; প্রেরিত ১/২০।))

পরবর্তীতে আমরা দেখব যে, ইহূদী বাইবেল তিন অংশে বিভক্ত: (১) তাওরাত (The Law), (২) নাবিয়্যীম: নবীগণের পুস্তক (the Prophets) এবং (৩) কিতুবীম: লিখনিসমূহ (the Writings)। গীতসংহিতা পুস্তকটি তৃতীয় অংশের মধ্যে বিদ্যমান। তাওরাতের ‘তা’, ‘নাবিয়ীমের’ ‘না’ ও ‘কিতুবিম’ ‘ক’ নিয়ে একত্রে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ইহূদী সংস্করণকে ইহূদীরা ‘তানাক’ বলেন।
এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রথম খৃস্টীয় শতকে ইহূদী ধর্মগ্রন্থটির কোনো একক নাম ছিল না। এ গ্রন্থসমষ্টিকে একত্রে ‘ধর্মগ্রন্থ’ বলা হতো। অথবা এ গ্রন্থের দুটি অংশকে পৃথকভাবে নাম উল্লেখ করে বলা হতো: ‘তাওরাত ও নবীগণ’। এথেকে আমরা আরো দেখছি যে, ইহূদী বাইবেলের তৃতীয় অংশ ‘কিতুবিম’-এর মধ্য থেকে গীতসংহিতা পুস্তকটি সে সময়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেছি। বাহ্যত এ অংশটি তখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় নি এবং ‘ধর্মগ্রন্থের’ অংশ হিসেবে গণ্য হয় নি।

সর্বোপরি, আমরা দেখছি যে, খৃস্টানগণ যদিও তাদের ধর্মগ্রন্থের নাম রেখেছেন ‘বাইবেল’ বা ‘কিতাবুল মোকদ্দস’ কিন্তু যীশু খৃস্ট নিজে এবং তার শিষ্যগণ এ নাম কখনোই ব্যবহার করেন নি। বাহ্যত তাঁরা এ নাম জানতেনই না।

১. ২. বাইবেলের পুরাতন নিয়ম

১. ২. ১. খৃস্টধর্মীয় বাইবেলের দুটি অংশ

খৃস্টানগণ তাঁদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলিকে দুভাগে ভাগ করেন: পুরাতন নিয়ম বা পুরাতন সন্ধি (Old Testament) ও নতুন নিয়ম, নতুন সন্ধি বা নবসন্ধি (New Testament)। প্রথমভাগের গ্রন্থাবলি সম্পর্কে তারা দাবি করেন যে, সেগুলো ইহূদী ধর্মের ধর্মগ্রন্থ। অর্থাৎ যীশু খৃস্টের আগমনের পূর্বে বনী ইসরাঈল বা ইহূদীদের মধ্যে যে সকল নবী আগমন করেছিলেন তাদের গ্রন্থগুলোকে ইহূদীগণ ধর্মগ্রন্থ হিসেবে সংকলন করেন। এটি ইহূদী বাইবেল (Jewish Bible) এবং হিব্রু বাইবেল (Hebrew Bible) নামে পরিচিত। এটিকেই খৃস্টানগণ তাদের বাইবেলের পুরাতন নিয়ম হিসেবে গণ্য করেন। দ্বিতীয় অংশ নতুন নিয়মের গ্রন্থগুলোর বিষয়ে তারা দাবি করেন যে, এগুলো ঈসা (আ)-এর ইনজীল ও তাঁর শিষ্যদের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ ও পত্র।

১. ২. ২. বিভিন্ন প্রকারের বাইবেল ও বিভিন্ন সংখ্যার পুস্তক

আমরা সকলেই জানি যে, প্রত্যেক ধর্মের অনেক দল-উপদল আছে। কিন্তু একই ধর্মের দল-উপদলের জন্য ভিন্নভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থাকে বলে হয়ত আমাদের কোনো পাঠকই জানেন না। হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে অনেক দল-উপদল বিদ্যমান। কিন্তু কুরআন, বেদ, ত্রিপিটক ইত্যাদির ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ বা ভিন্ন ভিন্ন বই আছে বলে আমরা জানি না। কিন্তু খৃস্টান ধর্মের বিষয়টি ভিন্ন। খৃস্টান ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় ম-লী বা চার্চের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ‘বাইবেল’ বিদ্যমান। এ সকল বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকের সংখ্যার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যে সকল পুস্তক সকল বাইবেলে বিদ্যমান সেগুলোর বিষয়বস্তু, অধ্যায়, অনুচ্ছেদ, শ্লোক ইত্যাদির মধ্যেও অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। বাইবেলের পার্থক্য জানার জন্য খৃস্টধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

প্রথম থেকে খৃস্টধর্মের মধ্যে অগণিত দল-উপদলের জন্ম নিয়েছে এবং ধর্মগ্রন্থ, গসপেল বা বাইবেল নিয়ে অনেক দল ভিন্নমত পোষণ করেছে। পরবর্তী আলোচনায় এ বিষয়ে কিছু আমরা জানতে পারব, ইনশা আল্লাহ। তবে বর্তমানে বিশ্বের খৃস্টানগণ মূলত তিনটি বৃহৎ দলে বিভক্ত: ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট ও অর্থোডক্স। এ তিনটি বৃহৎ সম্প্রদায়ের বিভক্তির মূল বিষয় পোপের আধিপত্য।

(১) ক্যাথলিক বা সর্বজনীন: খৃস্টধর্মের মূল ধারা ক্যাথলিক (Catholic) অর্থাৎ সর্বজনীন বা রোমান ক্যথলিক (Roman Catholic) হিসেবে পরিচিত। রোমের বা ভ্যাটিকানের চার্চ ও পোপের নিয়ন্ত্রাধীন খৃস্টধর্ম এ নামে পরিচিত।

শুরু থেকেই খৃস্টান প্রচারকগণ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রধান পুরোহিত ও ধর্মযাজককে ‘বিশপ’ (Bishop/greek: episkopos) অর্থাৎ সর্দার বা তত্ত্বাবধায়ক (overseer) অথবা প্রেসবিটার (presbyter) অর্থাৎ মুরব্বি (elder) বলে আখ্যায়িত করতেন। বিশপকে সাধারণত ‘বাবা’ বা পিতা বলে ডাকা হতো। এ শব্দটি গ্রীক ভাষায় পাপ্পাস (pappas), ল্যাটিন ভাষায় পাপা (papa) ও ইংরেজি ভাষায় পোপ (Pope)। ক্রমান্বয়ে রোমের বিশপ বা ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার চার্চের প্রধান পুরো খৃস্টধর্মের প্রধান বা প্রধান বিশপ বলে দাবি করতে থাকেন। একমাত্র তিনিই বাবা বা পোপ হিসেবে আখ্যায়িত হতে থাকেন। মূলত একাদশ খৃস্টীয় শতাব্দী পর্যন্ত খৃস্টধর্ম পুরোপুরিই ভ্যাটিকানের পোপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অর্থাৎ খৃস্টধর্মের প্রথম হাজার বৎসর খৃস্টধর্ম বলতে ক্যাথলিক ধর্মকেই বুঝানো হতো।((Microsoft Encarta, articles: catholic, bishop, pope, papacy, schism.))

(২) অর্থোডক্স বা গোঁড়া: ৩২৫ খৃস্টাব্দে রোমান স¤্রাট কন্সাটান্টাইন খৃস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন। রোমান সা¤্রাজ্য পশ্বিমে ইউরোপ থেকে পূর্বে এশিয়া মাইনর, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ক্রমান্বয়ে রোমান সা¤্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রীকভাষী পূর্ব রোমান সা¤্রাজ্যের বিশপগণ রোমের বিশপের একছত্র আধিপত্য মানতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তাদের বিশ্বাসে প্রত্যেক বিশপই স্বাধীন ‘পাপা’, বাবা বা পোপ এবং সকল বিশপ সম মর্যাদার অধিকারী। ক্রমান্বয়ে তাদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়েও মতানক্য দেখা দেয়।

বিশেষ করে যীশু খৃস্টের প্রকৃতি নিয়ে। খৃস্টধর্মের মূল কালিমা ‘নাইসীন ক্রীড’ বা নিসিয়ার আকীদার মধ্যে পশ্চিমের খৃস্টানগণ সংযোজন করেন যে, ‘পবিত্র আত্মা পিতা ও পুত্র উভয় থেকে আগত’। পূর্বের খৃস্টানগণ এ সংযোজন বিভ্রান্তি বলে গণ্য করেন। বিবাদের এক পর্যায়ে ১০৫৪ সালে পূর্বের খৃস্টানগণ পশ্চিমের বা ভ্যাটিকানের পোপের প্রভাবাধীন খৃস্টানদের থেকে বিভক্ত হয়ে যান। তারা অর্থোডক্স (Orthodox) অর্থাৎ গোঁড়া, মৌলবাদী বা মূলধারার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। খৃস্টধর্মের ইতিহাসে এ বিভক্তি বড় বিভক্তি (Great Schism) নামে পরিচিত।((Microsoft Encarta: Orthodox church, bishop, pope, papacy, schism.))

৩) প্রটেস্ট্যান্ট বা প্রতিবাদী: খৃস্টধর্মের মূল ধারা পোপের নিয়ন্ত্রণেই চলতে থাকে। ষষ্টদশ খৃস্টীয় শতকে পোপের নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে কোনো কোনো ধর্মগুরু বিদ্রোহ করেন। এদের অন্যতম ছিলেন প্রসিদ্ধ জার্মান ধর্মগুরু Martin Luther: মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬)। তিনি এবং সমসাময়িক কিছু ধর্মগুরু ধর্মের মধ্যে পোপের নেতৃত্ব ও অধিকার সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন ধর্মীয় ফিরকা বা ধারার সৃষ্টি হয় সেটি প্রটেস্ট্যান্ট (Protestant) বা প্রতিবাদী বলে পরিচিত।((Microsoft Encarta, articles: protestant, protestantism, Martin Luther))

(৪) মূল এ তিন সম্প্রদায়ের তিন প্রকার বাইবেল ছাড়াও আরো অনেক সম্প্রদায়ের পৃথক বাইবেল বিদ্যমান। বিশেষত খৃস্টধর্মের সুতিকাগার ও খৃস্টীয় প্রথম দুই শতাব্দীতে যে সকল অঞ্চলে খৃস্টধর্ম প্রসার লাভ করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিন ও বৃহত্তর সিরিয়া, আরমেনিয়া, মিসর ও ইথিওপিয়া। এ সকল এলাকার খৃস্টানগণ প্রাচীন যুগ থেকে নিজস্ব ‘বাইবেল’ অনুসরণ করেন। তাদের বাইবেলের সাথে প্রচলিত ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের অনেক পার্থক্য বিদ্যমান।

১. ২. ৩. খৃস্টীয় বাইবেলের পুরাতন নিয়ম বনাম ইহূদী বাইবেল

উপরের কয়েক প্রকার খৃস্টধর্মীয় বাইবেলের পুস্তকাদি আলোচনার জন্য প্রথমে ইহূদী বাইবেলের পুস্তকাদির আলোচনা প্রয়োজন। আমরা দেখেছি যে, ইহূদীদের ধর্মগ্রন্থ ইহূদী বাইবেল (Jewish Bible) এবং হিব্রু বাইবেল (Hebrew Bible) নামে পরিচিত। খৃস্টানগণের বিশ্বাস ও দাবি অনুসারে ইহূদী বাইবেলই খৃস্টীয় বাইবেলের পুরাতন নিয়ম। কিন্তু বাস্তবে ইহূদী বাইবেল ও খৃস্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের মধ্যে পুস্তকের সংখ্যা ও বিন্যাসে পার্থক্য রয়েছে।

খৃস্টীয় বাইবেলের পুরাতন নিয়মের মূল ভিত্তি ইহূদী বাইবেলের ‘গ্রীক অনুবাদ বা গ্রীক সংস্করণের উপর। ইহূদী বাইবেলের গ্রীক সংস্করণকে সেপ্টুআজিন্ট (ঝবঢ়ঃঁধমরহঃ) বা সত্তরের কর্ম বলা হয়।

ইহূদীগণের ধর্মীয় ও ব্যবহারিক ভাষা হিব্র“ ভাষা। পুরাতন নিয়মের গ্রন্থগুলো হিব্র“ ভাষায় লিখিত ছিল। খৃস্টপূর্ব ৩৩২ সালে আলেকজান্ডার প্যালেস্টাইন দখল করেন এবং তা গ্রীক সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ইহূদীগণ গ্রীক নাগরিকে পরিণত হয় এবং তাদের মধ্যে গ্রীক ভাষার কিছু প্রচলন ক্রমান্বয়ে শুরু হয়। প্রায় এক শতাব্দী পরে, খৃস্টপূর্ব ২৮৫-২৪৫ সালের দিকে বাইবেলের পুরাতন নিয়ম নামে পরিচিত ইহূদী ধর্মগ্রন্থগুলি গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করা হয়। কথিত আছে যে, মিসরের শাসক ২য় টলেমি: টলেমি ফিলাডেলফাস (Ptolemy Philadelphus)- এর রাজত্বকালে (খৃ. পূ. ২৮৫-২৪৬) তাঁর নিদের্শে নির্দেশে ৭০/৭২ জন পণ্ডিত তা ‘আলেকজেন্ড্রীয় গ্রীক ভাষায়’ অনুবাদ করেন। এই গ্রীক অনুবাদটিইthe Septuagint (LXX) বা ‘সত্তরের’ অনুবাদ বলে প্রসিদ্ধ। একে গ্রীক পুরাতন নিয়মও (Greek Old Testament) বলা হয়। যীশুখৃস্টের সময়ে এ অনুবাদটি প্রচলিত ছিল।

বাহ্যত প্রজাদের মধ্যে প্রচলিত প্রসিদ্ধ ধর্মগ্রন্থের বিষয়বস্তু জানার উদ্দেশ্যে শাসকগণ এ অনুবাদ তৈরি করেন। যেমন মুসলিম শাসকদের অনুরোধে সর্বপ্রথম রামায়নের বাংলায় অনুবাদ করা হয়। তবে ক্রমান্বয়ে এ গ্রীক সংস্করণের ব্যবহার ইহূদীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ইহূদীগণ, বিশেষত ফিলিস্তিনের বাইরে, আলেকজেন্দ্রিয়া ও অন্যান্য স্থানে বসবাসকারী ইহূদীগণ হিব্রু ভাষায় দুর্বল হয়ে পড়েন। তারা গ্রীক ভাষা ব্যবহারে অধিক অভ্যস্থ হয়ে পড়েন। তার এ গ্রীক বাইবেলের উপর নির্ভর করতে থাকেন। প্রথম প্রজন্মের খৃস্টানগণ এটির উপরেই নির্ভর করতেন। খৃস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খৃস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত প্রায় তিনশত বৎসর ইহূদীগণ এ গ্রীক বাইবেলের উপরেই নির্ভর করতেন। ইহূদী প-িতগণ ইহূদী বাইবেলের হিব্রু সংস্করণ ও গ্রীক সংস্করণকে একইরূপ গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করতেন। উইকিপিডিয়ার ভাষায়:

“Pre-Christian Jews, Philo and Josephus considered the Septuagint on equal standing with the Hebrew text.”অর্থাৎ “খ্রস্টপূর্ব ইহূদীগণ, যেমন ফিলো (মৃত্যু ৫০ খৃস্টাব্দ) এবং যোসেফাস (মৃত্যু ১০০ খৃস্টাব্দ) সেপ্টুআজিন্ট বা সত্তরের অনুবাদকে হিব্রু ভাষ্যের মত একইরূপ গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করতেন।”

পঞ্চম খৃস্টীয় শতকের শেষ দিক থেকে ইহূদীগণ গ্রীক পা-ুলিপি পরিত্যাগ করে হিব্রু পা-ুলিপির দিকে ঝুকে পড়েন। তবে প্রথম খৃস্টীয় শতাব্দী থেকে পরবর্তী প্রায় দেড় হাজার বৎসর সকল খৃস্টানই এ গ্রীক পুরাতন নিয়মের উপর নির্ভর করেন। প্রাচীন সকল খৃস্টীয় বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ভিত্তি এ ‘সত্তরের অনুবাদ’। উইকিপিডিয়ার ভাষায়: ÒThe Septuagint is the basis for the Old Latin, Slavonic, Syriac, Old Armenian, Old Georgian and Coptic versions of the Christian Old Testament.Ó অর্থাৎ “সেপ্টুআজিন্ট-ই প্রাচীন ল্যাটিন, স্লাভোনিক, সিরীয়, প্রাচীন আর্মেনিয়ান, প্রাচীন জর্জিয়ান ও কপ্টিক সকল খৃস্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ভিত্তি।”

সপ্তদশ শতকের প্রটেস্ট্যান্টগণ হিব্রু ভাষ্যের উপর নির্ভর করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ।((উইকিপিডিয়া, এনকার্টা, ব্রিটানিকা ইত্যাদি বিশ্বকোষে নিম্নের আর্টিকেলগুলো দেখুন: Septuagint, Old Testament, Development of the Hebrew Bible canon, Development of the Old Testament canon))
এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের ভিত্তি ইহূদী বাইবেলের হিব্রু সংস্করণের উপর। অবশিষ্ট সকল খৃস্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ভিত্তি সেপ্টুআজিন্ট বা ইহূদী বাইবেলের গ্রীক সংস্করণ।

তবে বাস্তবে আমরা দেখি যে, গ্রীক সেপ্টুআজিন্ট-এর সাথে ক্যাথলিক ও অন্যান্য বাইলেলের পুস্তকের অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমরা নিম্নে হিব্রু ইহূদী বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকগুলোর পাশাপাশি গ্রীক সেপ্টুআজিন্ট, ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট ও গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ স্বীকৃত ক্যানন বা বিধিসম্মত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকগুলোর তালিকা প্রদান করছি। উল্লেখ্য যে, মিসরীয়, কপ্টিক, ইথিওপিয়, আর্মেনীয় ইত্যাদি খৃস্টধর্মীয় চার্চের নিকট স্বীকৃত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকাদির ক্ষেত্রে আরো কিছু ব্যতিক্রম ও ভিন্নতা রয়েছে। পরিসরের স্বল্পতার কারণে আমরা সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা করতে পারছি না।((এনকার্টা: Bible/Books of the Bible. উইকিপিডিয়া: ooks of the Bible ও Septuagint প্রবন্ধ))

ইহুদী বাইবেল (২৪ পুস্তকে ৩৯)


প্রটেস্ট্যান্ট
৩৯ পুস্তক
ক্যাথলিক ৪৬ ‍পুস্তকঅর্থোডক্স ৫১ ‍পুস্তকসেপ্টুআজিন্ট ৫৩ পুস্তক
1Genesis Genesis Genesis Genesis Genesis
2Exodus Exodus Exodus Exodus Exodus
3Leviticus Leviticus Leviticus Leviticus Leviticus
4Numbers Numbers Numbers Numbers Numbers
5Deuteronomy Deuteronomy Deuteronomy Deuteronomy Deuteronomy
6Joshua Joshua Joshua Joshua Joshua
7Judges Judges Judges Judges Judges
81 SamuelRuthRuthRuthRuth
92 Samuel 2 Samuel 2 Samuel 2 Samuel II Samuel
101 Kings 1 Kings 1 Kings 1 Kings I Kings
112 Kings 2 Kings 2 Kings 2 Kings II Kings
12Isaiah 2 Kings 2 Kings 2 Kings II Kings
13Jeremiah1 Chronicles1 Chronicles1 ChroniclesI Chronicles
14Ezekiel2 Chronicles2 Chronicles2 ChroniclesII Chronicles
15HoseaEzraEzra1 Esdras1 Esdras
16JoelNehemiahNehemiahEzrEzra
17Amos
EstherTobitNehemiahNehemiah (2 books as one)
18ObadiahJobJudithTobit (Tobias)Tobit/ Tobias
19JonahPsalmsEstherJudithJudith
20MicahProverbs1 MaccabeesEstherEsther with additions
21NahumEcclesiastes2 Maccabees1 Maccabees1 Maccabees
22HabakkukSong of SolomonJob2 Maccabees2 Maccabees
23ZephaniahIsaiahPsalms3 Maccabees3 Maccabees
24Haggai
JeremiahProverbs4 MaccabeesPsalms
25Zechariah
LamentationsEcclesiastesJobPsalm 151
26Malachi
EzekielSong of SongsPsalmsPrayer of Manasseh
27PsalmsDanielWisdomPrayer of ManassehJob
28ProverbsHoseaSirachProverbsProverbs
29Job
JoelIsaiahEcclesiastesEcclesiastes
30Song of SongsAmosJeremiahSong of SongsSong of Songs
31Ruth
ObadiahLamentationsWisdomWisdom
32Lamentations
JonahBaruchSirachSirach/ Ecclesiasticus
33EcclesiastesMicahEzekielIsaiahPsalms of Solomon
34EstherNahumDanielJeremiahHosea
35DanielHabakkukHoseaLamentationsAmos
36Ezra
ZephaniahJoelBaruchMicah
37Nehemiah HaggaiAmosLetter of Jeremiah (as standalone book)Joel
381 Chronicles
ZechariahObadiahEzekielObadiah
392 Chronicles
MalachiJonahDanieJonah
40Micah
HoseaNahum
41Nahum
JoelHabakkuk
42Habakkuk
AmosZephaniah
43Zephaniah
ObadiahHaggai
44Haggai
JonahZachariah
45Zechariah
MicahMalachi
46Malachi
NahumIsaiah
47HabakkukJeremiah
48ZephaniahBaruch
49HaggaiLamentations
50ZechariahLetter of Jeremiah
51MalachiEzekiel
52Daniel with additions
534 Maccabees
54Ascension of Isaiah
55book of Enoch

সর্বশের পুস্তকদুটো ইথিওপীয় অর্থোডক্স চার্চ বাইবেল বা আবিসিনিয়ান ক্যানন (Abyssinian canon)-এর বিভিন্ন সংস্করণ বা পা-ুলিপির মধ্যে বিদ্যমান।((উইকিপিডিয়া: Ascension of Isaiah))
সুপ্রিয় পাঠক এখানে নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন:

প্রথমত: ইহূদী বাইবেল বা ‘তানাখ’ (Tanakh/ Tenak)-এর পুস্তকসংখ্যা মূলত ২৪, যেগুলোর মধ্যে উপরের ৩৯টি পুস্তক বিদ্যমান। তালিকাটি নিম্নরূপ:
(১-৭) ১ থেকে ৭ নং পুস্তক: ৭টি পৃথক পুস্তক।
(৮) ৮ ও ৯ নং পুস্তক: ১ সমূয়েল ও ২ সমূয়েল একটি পুস্তক।
(৯) ১০ ও ১১ নং পুস্তক: ১ রাজাবলি ও ২ রাজাবলি একটি পুস্তক।
(১০-১২) ১২ থেকে ১৪ নং তিনটি পৃথক পুস্তক (যিশাইয়, যিরমিয়, হেযিকেল)
(১৩) ১৫ থেকে ২৬ নং পর্যন্ত ১২টি পুস্তক একত্রে ‘দ্বাদশ’ (The Twelve/ Trei Asar) (বারজন গৌণ নবী) নামেএকটি পুস্তক।
(১৪-২২) ২৭ থেকে ৩৫ নং পর্যন্ত ৯টি পৃথক পুস্তক।
(২৩) ৩৬ ও ৩৭ নং পুস্তকদ্বয় (ইযরা ও নহিমিয়) একত্রে একটি পুস্তক।
(২৪) ৩৮ ও ৩৯ নং পুস্তকদ্বয় (১ বংশাবলি ও ২ বংশাবলি)

দ্বিতীয়ত: ইহূদীদের একটি সম্প্রদায় শমরীয় (Samaritans) ইহূদীগণ পুরাতন নিয়মের শুধু প্রথম ৫টি গ্রন্থ বিশুদ্ধ ও পালনীয় বলে স্বীকার করে, যা শমরীয় তাওরাত, শমরীয় পঞ্চপুস্তক বা শমরীয় বৈধ বাইবেল (The Samaritan Pentateuch/ the Samaritan Torah/ The Samaritan canon) নামে প্রসিদ্ধ। বাইবেলের অন্য সকল পুস্তকের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা তারা অস্বীকার করেন। তার মূল হিব্রু পা-ুলিপির অনুসরণ করে। এনকার্টায় শমরীয় তাওরাতকে তাওরাতের প্রাচীনতর ভাষ্য (an older text of the first five books of the Bible) বলা হয়েছে। আধুনিক ইহূদী তাওরাত এবং গ্রীক তাওরাতের সাথে শমরীয় তাওরাতের প্রায় ৬ হাজার পার্থক্য রয়েছে। আধুনিক যুগে আবিষ্কৃত মৃত সাগরের পান্ডলিপি (Dead Sea Scrolls) আবিষ্কারের পর ইহূদী-খৃস্টান গবেষকগণ নিশ্চিত করেছেন যে, ইহূদী বাইবেল ও খৃস্টান বাইবেলের চেয়ে শমরীয় বাইবেল প্রাচীন পা-ুলিপিগুলোর সাথে অধিক মিল-সম্পন্ন।((উইকিপিডিয়া: The Samaritan Pentateuch, ব্রিটানিকা: biblical literature/ The Samaritan canon, এনকার্টা:Samaria.))

তৃতীয়ত: ইহূদী বাইবেল ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের পুস্তকগুলোর সংখ্যা একই। তবে পুস্তকগুলোর ক্রমবিন্যাসে অনেক পার্থক্য। ধর্মগ্রন্থের সূরা বা পুস্তকগুলোর মধ্যে এরূপ অমিল মুসলিম পাঠকের কাছে খুবই অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্ব্যাস্য বিষয়। ধর্মগ্রন্থের সূরা, অধ্যায় বা পুস্তকগুলোকে এভাবে ইচ্ছামত আগে পরে করা যায় বলে আমরা ভাবতেও পারি না। এমনকি কোনো সাধারণ লেখকের সংকলিত ও সম্পাদিত একটি গ্রন্থমালার বইগুলো কেউ পরে আগে পিছে করলে তা সকল গবেষক ও সমালোচকের নিকট অগ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু খৃস্টান প-িতগণ বিষয়টিকে হাল্কা হিসেবেই দেখেন।

চতুর্থত: আমরা দেখলাম যে, পুরাতন নিয়মের মূল ভিত্তি গ্রীক সেপ্টুআজিন্ট (Septuagint)-এর মধ্যে ৫৩ টি পুস্তক, অর্থোডক্স পুরাতন নিয়মে ৫১টি পুস্তক, ক্যাথলিক বাইবেলে ৪৬টি পুস্তক এবং প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলে ৩৯টি পুস্তক। বিষয়টি অস্বাভাবিক। একই ধর্মের একই নামের একই ধর্মগ্রন্থের মধ্যে এত পার্থক্য পৃথিবীর আর কোনো প্রসিদ্ধ ধর্মের ধর্মগন্থের মধ্যে আছে বলে জানা যায় না।

ইন্টারনেটের বাইবেলের বিশুদ্ধ গ্রন্থাবলি: একটি গোঁড়া বাইবেল বিশ্বাসী প্রেক্ষাপট (The Canon of the Bible A conservative, bible believing perspective) নামক ওয়োবসাইট (http://www.bible.ca/canon.htm) এবং (http://www.bible.ca/b-canon-orthodox-catholic-christian-bible-books.htm) থেকে বিভিন্ন খৃস্টীয় বাইবেলের মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ করছি। উল্লেখ্য যে, এ ওয়েবসাইটে খৃস্টীয়ান বাইবেল বলতে প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেল বুঝানো হয়েছে।

ইংরেজি নাম                              বাংলা নামChristian’s BibleRoman Catholic BibleGreek Orthodox  BibleThe Septuagint (সেপ্টুআ-জিন্ট)
11 Esdras                                                                                                                                       ১ ইসদরাস নেইনেই আছে আছে
2Tobit                 তোবিত নেই আছে  আছে  আছে 
3Judithযুদিথ  নেই আছে  আছে  আছে 
4Additions to Esther (103 Vrs)ইস্টেরে (১০৩ শ্লোক) সংযোজননেই আছেআছেআছে
5Wisdom of Solomonসলোমনের প্রজ্ঞাপুস্তক নেই আছে আছে আছে
6Ecclesiasticus বিন সিরাহনেইআছেআছেআছে
7Baruch বারুকনেইআছেআছেআছে
8Epistle of Jeremiah যিরমিয়ের পত্রনেইআছেআছেআছে
9Song of the Three Children তিন শিশুর সঙ্গীতনেইআছেআছেআছে
10Story of Susanna সুসান্নার গল্পনেইআছেআছেআছে
11Bel and the Dragon বেল ও ড্রাগননেইআছেআছেআছে
12Prayer of Manasseh মনশির প্রাথনানেইআছেআছেআছে
131 Maccabees ১ মাকাবীয়নেইআছেআছেআছে
142 Maccabees ২ মাকাবীয়নেইআছেআছেআছে
153 Maccabees ৩ মাকাবীনেইনেইআছেআছে
164 Maccabees ৪ মাকাবীয়নেইনেইআছেআছে
17 Psalm 151 গীতসংহিতা ১৫১নেইনেইআছেআছে
18Psalms of Solomon সলোমনের গীতসংহিতানেইনেইনেইআছে

পঞ্চমত: আমরা দেখছি যে, ক্যাথলিক বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা ৪৬ এবং অর্থোডক্স পুরাতন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা ৫১। পক্ষান্তরে তারা সকলেই যে মূল গ্রীক সংস্করণ বা সেপ্টুআজিন্টের উপর নির্ভর করেছেন তার মধ্যে পুস্তকের সংখ্যা ৫৩। এভাবে আমরা দেখছি যে, মূল গ্রীক সেপ্টুআজিন্টের মধ্যে ১৪টি পুস্তক বিদ্যমান যেগুলো ইহূদী ও প্রটেস্ট্যান্ট খৃস্টানগণ বাতিল বলে গণ্য করেছেন। এগুলোর মধ্য থেকে ৭টি পুস্তক ক্যাথলিকগণ গ্রহণ করেছেন। অবশিষ্ট ৭টির মধ্যে ৫টি অর্থোডক্সগণ গ্রহণ করেছেন। অবশিষ্ট দুটি পুস্তক তিন সম্প্রদায়ই বাতিল করেছেন। আমরা আগেই বলেছি যে, ইথিওপিয়ান, মিসরিয়, সিরীয় ইত্যাদি প্রাচীন খৃস্টান সম্প্রদায়গুলোর বাইবেলের মধ্যে এ সকল পুস্তক বিদ্যমান।

ষষ্ঠত: প্রটেস্ট্যান্টগণ ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মের ৭টি পুস্তককে সন্দেহভাজন বা ‘জাল’ বলে গণ্য করেছেন। প্রায় ১৬০০ বৎসর ‘পবিত্র বাইবলের’ অন্তর্ভুক্ত আসমানী গ্রন্থ বা ঐশ্বরিক পুস্তক হিসেবে গণ্য হওয়ার পর প্রোটেস্ট্যান্টগণ ১৭শ শতাব্দীতে এগুলোকে বাদ দিয়ে তাদের বাইবেল মুদ্রণ করেন। তবে প্রটেস্ট্যান্টগ স্বীকৃত নতুন নিয়মের পুস্তকগুলোর মধ্যে এ সকল জাল বা বাতিলকৃত বইয়ের উদ্ধৃতি পাওয়া যায়।((বিস্তারিত দেখুন: The New Encyclopedia Britannica, 15th Edition, Vol-2, Biblical Literature, pp883, 932-935. উইকিপিডিয়া: Non-canonical books referenced in the Bible.))

১. ২. ৪. পুরতান নিয়মের আরো অনেক পুস্তক


সুপ্রিয় পাঠক, পুরাতন নিয়মের উপরের গ্রন্থগুলো ছাড়াও আরো অনেক পুস্তক রয়েছে, যেগুলো প্রাচীনকাল থেকে ইহূদী সমাজে এবং প্রথম শতাব্দীগুলোর খৃস্টান সমাজে আসমানী গ্রন্থ বা ধর্মগ্রন্থ হিসেবে প্রচলিত থাকলেও পরবর্তী যুগের ইহূদী-খৃস্টান প-িত ও ধর্মগুরুগণ সেগুলোকে ‘বিশুদ্ধ’ বা ‘আইনসিদ্ধ’ (canonical) বলে গ্রহণ করেন নি। এগুলোকে এপক্রিপা (apocrypha) অর্থাৎ সন্দেহজনক, অনির্ভযোগ্য, লুকানো বা জাল পুস্তক বলে গণ্য করেছেন তারা। তবে তাদের স্বীকৃত ও বিশুদ্ধ কোনো কোনো পুস্তকে এ সকল জাল পুস্তকের উদ্ধৃতি বিদ্যমান। এছাড়া স্বীকৃত বাইবেলের অনেক প্রাচীন পাণ্ডলিপির মধ্যেও এ সকল সন্দেহজনক বা জাল পুস্তক বিদ্যমান।((এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা: biblical literature; উইকিপিডিয়া: Jewish apocrypha, Biblical apocrypha, Pseudepigrapha, The Lost Books of the Bible and the Forgotten Books of Eden, Non-canonical books referenced in the Bible. আরো দেখুন: The Forgotten Books of Eden, by Rutherford H. Platt, Jr., [1926], full text etext at sacred-texts.com.))

ক্রমইংরেজি নামবাংলা নামা
1Assumption of Moses মূসার স্বর্গারোহন
2Book of Jubilees জয়ন্তী পুস্তক
3History of the Captivity in Babylonব্যবিলনে বন্দীদশার ইতিহাস
4III Baruchবারুখের ৩য় পুস্তক
5Paralipomena Jeremiae, or the Rest of the Words of Baruch: 4 Baruchবারুখের ৪র্থ পুস্তক
6Martyrdom and Ascension of Isaiah যিশাইয়র শহীদ হওয়া ও ঊর্ধ্বরারোহণ
7Pseudo-Philo’s Liber Antiquitatum Biblicarum (The Biblical Antiquities of Philo)ফিলো রচিত বাইবেলীয় প্রাচীনকালের নির্দশনাবলি
8The Apocalypse of Baruchবারুখের নিকট প্রকাশিত বাক্য
9Jannes and Jambres/ Iannesযান্নি ও যামব্্ির
10Joseph and Asenethযোষেফ ও আসেন্ধ
11Letter of Aristeasআরিস্টিসের পত্র
12Life of Adam and Eve আদম ও হাওয়ার জীবনী
13Lives of the Prophets নবীগণের জীবনী
14Ladder of Jacob যাকোবের মই
15History of the Rechabites রেকাবীয়দের ইতিহাস
16Eldad and Modad এলদাদ ও মদাদ
17History of Joseph যোষেফের ইতিহাস
18Odes of Solomon শলোমনের কবিতা-গাথা
19Prayer of Joseph  যোষেফের প্রার্থনা
20Prayer of Jacob যাকোবের প্রার্থনা
21The First Book of Adam and Eveআদম ও হাওয়ার প্রথম পুস্তক
22The Second Book of Adam and Eveআদম ও হাওয়ার দ্বিতীয় পুস্তক
23The Book of the Secrets of Enoch ইনোকের রহস্য পুস্তক
24The Story of Ahikar অহিকারের কাহিনী
25The Testaments of the Twelve Patriarchs দ্বাদশ কুলপতির নিয়ম পুস্তক
26Testament of Reuben রুবেনের নিয়ম পুস্তক
27Testament of Simeon শিমোনের নিয়ম পুস্তক
28Testament of Levi লেভীর নিয়ম পুস্তক
29The Testament of Judah যিহূদার নিয়ম পুস্তক
30The Testament of Issachar ইশাখরের নিয়ম পুস্তক
31The Testament of Zebulun সেবুলূনের নিয়মপুস্তক
32The Testament of Dan দানের নিয়ম পুস্তক
33The Testament of Naphtali নাপ্তালির নিয়ম পুস্তক
34The Testament Of Gad গাদের নিয়ম পুস্তক
35The Testament of Asher আশেরের নিয়ম পুস্তক
36The Testament of Joseph যোষেফের নিয়ম পুস্তক
37The Testament of Benjamin বিন্যামীনের নিয়ম পুস্তক
38The Book of Enoch ইনোকে পুস্তক
39The Testament of Job ইয়োবের নিয়ম পুস্তক
১. ২. ৫. মূল পুস্তকগুলোর বক্তব্যের পার্থক্য

সম্মানিত পাঠক, একটি ধর্মগ্রন্থের এত প্রকার দেখে আমরা হয়ত বিব্রত বোধ করছি। তবে পার্থক্য বা ভিন্নতা শুধু পুস্তকগুলোর ক্ষেত্রেই নয়। যে পুস্তকগুলো সকল বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান সেগুলোর বক্তব্যের মধ্যেও অনেক ভিন্নতা রয়েছে। উইকিপিডিয়ার সেপ্টুআজিন্ট (Septuagint) প্রবন্ধ থেকে ইহূদী ও খৃস্টানগণ সকলের নিকট স্বীকৃত ‘তাওরাত’ নামে প্রসিদ্ধ পঞ্চপুস্তক থেকে দুটি নমুনা পেশ করছি।((http://en.wikipedia.org/wiki/Septuagint))

প্রথম নমুনা: আদি পুস্তক চতুর্থ অধ্যায়ের ৭ শ্লোক (Genesis 4:7)
সেপ্টুআজিন্ট বা গ্রীক পুরাতন নিয়মে (ঘঊঞঝ) এ শ্লোকটি নিম্নরূপ:
“If you offer correctly but do not divide correctly, have you not sinned? Be still; his recourse is to you, and you will rule over him.”
অর্থাৎ “যদি তুমি সঠিকভাবে নিবেদন/ উৎসর্গ কর কিন্তু সঠিকভাবে বণ্টন না কর, তবে তুমি কি পাপ করলে না? স্থির/ শান্ত হও; তার আশ্রয়/ অবলম্বন তোমার প্রতি, এবং তুমি তার উপর রাজত্ব/ শাসন করবে।”

ইহূদী বাইবেলে (Masoretic/ MT: Judaica Press) শ্লোকটি নিম্নরূপ:
“Is it not so that if you improve, it will be forgiven you? If you do not improve, however, at the entrance, sin is lying, and to you is its longing, but you can rule over it.”

“এটিই কি বিষয় নয় যে, যদি তুমি উন্নতি কর, তবে তোমাকে ক্ষমা করা হবে? যাই হোক, যদি তুমি উন্নতি না কর, প্রবেশের সময়েই/ শুরুতেই পাপ অবস্থান করবে, এবং তোমার প্রতিই তা আকাঙ্খী, কিন্তু তুমি তার উপর রাজত্ব করতে পার।”
ল্যাটিন ভলগেট (Latin Vulgate/ Douay-Rheims)-এ শ্লোকটির বক্তব্য নি¤œরূপ:

“If thou do well, shalt thou not receive? but if ill, shall not sin forthwith be present at the door? but the lust thereof shall be under thee, and thou shalt have dominion over it.”

“তুমি যদি ভাল কর, তুমি কি পাবে না? কিন্তু যদি মন্দ হয় তবে পাপ কি তৎক্ষণাৎ দরজায় উপস্থিত হবে না? কিন্তু তার লালসা/ কামনা তোমার নিচে থাকবে এবং তুমি তার উপর রাজত্ব করবে।”

উল্লেখ্য যে, বাংলা বাইবেলগুলো উপরের বৈপরীত্য তত সস্পষ্ট নয়। বাংলা অনুবাদগুলো হিব্রু ও ল্যাটিন পাঠের নিকটবর্তী। কেরির অনুবাদ: “যদি সদাচরণ কর, কবে কি গ্রাহ্য হইবে না? আর যদি সদাচরণ না কর, তবে পাপ দ্বারে গুঁড়ি মারিয়া রহিয়াছে। তোমার প্রতি তাহার বাসনা রহিয়াছে, এবং তুমি তাহার উপর কর্তৃত করিবে।”

জুুিবলী বাইবেলের অনুবাদ: “সদ্ব্যবহার করলে তুমি কি মুখ উচ্চ করে রাখবে না? কিন্তু সদ্ব্যবহার না করলে পাপই তোমার দ্বারে ওত পেতে বসে রয়েছে। তোমার জন্য সেই পাপ লোলুপ বটে, কিন্তু তা দমন করা তোমার উপরই নির্ভর করবে।”

দ্বিতীয় নমুনা দ্বিতীয় বিবরণের ৩২/৪৩ মূসার গীত the Song of Moses)
ইহূদী বাইবেলের (Masoretic) ভাষ্য নিম্নরূপ

1 Shout for joy, O nations, with his people. 2 For he will avenge the blood of his servants. 3 And will render vengeance to his adversaries. 4 And will purge his land, his people

“১ চিৎকার কর আনন্দের জন্য, হে জাতিগণ, তার প্রজাদের সাথে। ২ কারণ তিনি তার দাসদের রক্তের প্রতিশোধ নিবেন। ৩ এবং প্রদান করবেন প্রতিশোধ তার বিরোধীদের প্রতি। ৪ এবং বিশোধিত করবেন তার দেশ ও তার প্রজাদেরকে।”
কুমরান পা-ুলিপিতে বক্তব্যটি নি¤œরূপ:

1 Shout for joy, O heavens, with him. 2 And worship him, all you divine ones. 3 For he will avenge the blood of his sons. 4 And he will render vengeance to his adversaries. 5 And he will recompense the ones hating him. 6 And he purges the land of his people.

১ চিৎকার কর আনন্দের জন্য, হে আকাশম-লী, তার সাথে। ২ এবং ইবাদত করা তার, তোমরা দেবগণ সকলে। ৩ কারণ তিনি তার সন্তানদের রক্তের প্রতিশোধ নিবেন। ৪ এবং তিনি প্রদান করবেন প্রতিশোধ তার বিরোধীদের প্রতি। ৪ এবং তিনি প্রতিফল দিবেন তাদেরকে যারা তাকে ঘৃণা করে। ৫ এবং বিশোধিত করবেন তার দেশ ও তার প্রজাদেরকে।”
সেপ্টুআজিন্ট বা মূল গ্রীক পুরাতন নিয়মের ভাষ্য নি¤œরূপ:

1 Shout for joy, O heavens, with him. 2 And let all the sons of God worship him. 3 Shout for joy, O nations, with his people. 4 And let all the angels of God be strong in him. 5 Because he avenges the blood of his sons. 6 And he will avenge and recompense justice to his enemies. 7 And he will recompense the ones hating. 8 And the Lord will cleanse the land of his people.

“১ চিৎকার কর আনন্দের জন্য, হে আকাশম-লী, তার সাথে। ২ আল্লাহর সকল পুত্র তার ইবাদত করুক। ৩ চিৎকার কর আনন্দের জন্য, হে জাতিগণ, তার প্রজাদের সাথে। ৪ এবং আল্লাহর সকল ফিরিশতা তার মধ্যে সুদৃঢ়/ স্থির হোক। ৫ কারণ তিনি তার সন্তানদের রক্তের প্রতিশোধ নিবেন। ৬ এবং তিনি প্রতিশোধ নিবেন এবং ন্যায় প্রতিফল দিবেন তার শত্রুদেরকে। ৭ এবং তিনি প্রতিফল দিবেন তাদেরকে যারা ঘৃণাকারী। ৮ এবং প্রভু পরিস্কার করবেন দেশ এবং তার প্রজাদেরকে।”

ইংরেজি কিং জেমস ভার্শন, রিভাইযড স্টান্ডার্ড ভার্শন ও অন্যান্য ভার্শনে ইহূদী পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ইংলিশ স্টান্ডার্ড ভার্শন, নিউ লিভিং ট্রান্সলেশন ইত্যাদি সংস্করণে সেপ্টুআজিন্ট-এর পাঠ অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু এ সকল অনুবাদে ঈশ্বরের সকল পুত্র (all the sons of God)-এর পরিবর্তে ঈশ্বরের সকল ফিরিশতা (all the angels of God) লেখা হয়েছে। সম্মানিত পাঠক ইন্টারনেটে বাইবেলস্টাডিটুলস (biblestudytools.com)((http://www.biblestudytools.com/nlt/deuteronomy/32.html.)), বাইবেলগেটওয়ে (biblegateway .com)((https://www.biblegateway.com/passage/?search=Deuteronomy+32)) ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

উল্লেখ্য যে, বাইবেলের বাংলা অনুবাদে এ পার্থক্য দৃশ্যমান। কেরির অনুবাদ নি¤œরূপ: “জাতিগণ, তাঁহার প্রজাদের সহিত হর্ষনাদ কর; কেননা তিনি আপন দাসদের রক্তের প্রতিফল দিবেন, আপন বিপক্ষগণের প্রতিশোধ লইবেন, আপন দেশের জন্য, আপন প্রজাগণের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবেন।”

জুবিলী বাইবেলের অনুবাদ নি¤œরূপ: “আকাশম-ল, তাঁর সঙ্গে আনন্দে চিৎকার কর! ঈশ্বরের সকল সন্তান তাঁর সম্মুখে প্রণিপাত করুক! জাতিসকল, তাঁর জনগণের সঙ্গে আনন্দে চিৎকার কর! ঈশ্বরের সকল দূত তাঁর শক্তির কথা প্রচার করুন। কেননা তিনি তাঁর আপন দাসদের রক্তের প্রতিশোধ নেবেন, তাঁর আপন বিরোধীদের উপরেই প্রতিফল ফিরিয়ে দেবেন, যারা তাঁকে ঘৃণা করে, তিনি তাদের যোগ্য মজুরি দেবেন তাঁর আপন জনগণের দেশভূমি শোধন করবেন।”

সম্মানিত পাঠক, পরবর্তী আলোচনায় আমরা দেখব যে, বাইবেলের প্রায় সকল পুস্তকের সকল শ্লোকেরই একাধিক পাঠ ও ভিন্নতা রয়েছে। মূসা (আ) থেকে প্রাপ্ত মহান আল্লাহর নাযিলকৃত ‘তাওরাত’ নামে প্রচলিত পুস্তকের বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে এরূপ ভিন্নতা অখৃস্টান গবেষক ছাড়াও আধুনিক অনেক খৃস্টান গবেষককে প্রচ-ভাবে বিব্রত করে।

সাধারণভাবে ইহূদী ও খৃস্টান ধর্মগুরুগণ দাবি করেন যে, প্রচলিত এ পঞ্চপুস্তক মূসা (আ) থেকে হুবহু তা বর্ণিত অভ্রান্ত ঐশ্বরিক বাণী। এরূপ ভিন্নতা এ দাবির সাথে সাংঘর্ষিক। পরবর্তী আলোচনায় আমরা দেখব যে, অনেক খৃস্টান গবেষক বাইবেলের বিভিন্ন পা-ুলিপি ও সংস্করণের মধ্যে বিদ্যমান এরূপ ব্যাপক বৈপরীত্য ও ভিন্নতাকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বাইবেলের অগ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। তবে সাধারণ খৃস্টান ধর্মগুরু ও প্রচারকগণ এ সকল ভিন্নতা হালকাভাবেই দেখেন।

১. ২. ৬. ইহূদী বাইবেল, পুরাতন নিয়ম বনাম তাওরাত

তোরাহ বা ‘তাওরাহ’ হিব্র“ শব্দ। এর অর্থ আইন বা শিক্ষা (law or doctrine)। কখনো কখনো ইহূদী বা খৃস্টান প-িতগণ ইহূদী বাইবেল বা পুরাতন নিয়মকে ‘তাওরাত শরীফ’ নামে মুদ্রণ বা প্রচার করেন। বিষয়টি সঠিক নয়। ইহূদী ও খৃস্টান বিশ্বাস ও পরিভাষা অনুসারে পুরাতন নিয়মের প্রথম ৫টি পুস্তককে একত্রে ‘তাওরাহ’ বা পঞ্চপুস্তক (Torah/ Pentateuch) নামে অভিহিত। অবশিষ্ট পুস্তকগুলোকে ইহূদী বা খৃস্টান পরিভাষায় তাওরাত বলা হয় না।

আমরা ইতোপূর্বে বলেছি যে, ইহূদী বাইবেলে মূলত ২৪টি পুস্তক বিদ্যমান। পুস্তকগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে:

(ক) প্রথম ৫টি পুস্তক তোরাহ (Torah/The Law)

(খ) পরবর্তী ৮টি পুস্তক নাবী বা নাবীয়ীম (Navi/Nevi’im: Prophets), অর্থাৎ নবীগণ। তন্মধ্যে প্রথম ৪টি পুস্তক পূর্ববর্তী নবীগণ (Earlier Prophets): যিহশূয়, বিচারকর্তৃগণ, ১ সমূয়েল, ২ সমূয়েল একত্রে এবং ১ রাজাবলি ও ২ রাজাবলি একত্রে। আর পরবর্তী ৪টি পুস্তক পরবর্তী নবীগণ (Latter Prophets): যিশাইয়, যিরমিয়, যিহিষ্কেল তিনটি পুস্তক এবং পরবর্তী ১২ পুস্তক: হোশেয়, যোয়েল, আমোস, ওবাদিয়, যোনা, মিখা, নাহূম, হাবাক্কুক, যেফনিয়, হগয়, সখরিয় ও মালাখি একটি পুস্তক।

(গ) সর্বশেষ ১১টি পুস্তক কিতুবিম (Ketuvim) বা লিখনিসমূহ (The Writings): গীতসংহিতা, হিতোপদেশ, ইয়োব, পরমগীত, রুত, বিলাপ, উপদেশক, ইস্টের, দানিয়েল, ইয্রা ও নেহেমিয় একত্রে এবং ১ বংশাবলি, ২ বংশাবলি একত্রে।

তিন অংশের এ ২৪টি পুস্তকের সমষ্টিকে একত্রে তানাক (Tanak/ Tanakh)। নামটি মূলত তিন অংশের প্রথম বর্ণের সমন্বয়। তাওরাতের ‘তা’, ‘নাবিয়ীম’-এর না এবং ‘কিতুবিম’-এর ‘ক’ একত্রে মিলিয়ে ‘তানাক’ বা ‘তানাখ’ নামকরণ করা হয়েছে। কখনোই ইহূদীগণ এ তিন অংশের সমন্বিত ২৪টি পুস্তকের সংকলনকে তাওরাত শরীফ বলে দাবি, প্রচার বা নামকরণ করেন নি।

পক্ষান্তরে ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মে পুস্তকগুলো চারভাগে ভাগ করা হয়েছে:
(১) তাওরাত বা পঞ্চপুস্তক (The Pentateuch/Torah): প্রথম ৫ পুস্তক।
(২) ঐতিহাসিক পুস্তকসমূহ (The Historical Books): পরবর্তী ১৬টি পুস্তক।
(৩) প্রজ্ঞাপুস্তকসমূহ (The Wisdom Books): পরবর্তী ৭টি পুস্তক।
(৪) নবীগণের পুস্তকসমূহ (The Prophetical Books): সর্বশেষ ১৮টি পুস্তক।

প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের বিভাজন ও বিন্যাস অনেকটা ক্যাথলিক বাইবেলের মতই, তবে প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলে প্রজ্ঞাপুস্তকসমূহকে কাব্যিক পুস্তকসমূহ (The Poetical Books) নামকরণ করা হয়েছে। তাদের বিন্যাস নিম্নরূপ:
(১) তাওরাত বা পঞ্চপুস্তক (The Pentateuch/Torah): প্রথম ৫ পুস্তক।
(২) ঐতিহাসিক পুস্তকসমূহ (The Historical Books): ১২টি পুস্তক।
(৩) কাব্যিক পুস্তকসমূহ (The Poetical Books): ৫ টি পুস্তক।
(৪) নবীগণের পুস্তকসমূহ (The Prophetical Books): ১৭টি পুস্তক।((বিস্তারিত দেখুন: এনকার্টা:Books of the Bible))

চার অংশের সমন্বিত সংকলনকে সকল খ্স্টৃান সম্প্রদায়ের সকল বাইবেলেই ‘পুরাতন নিয়ম’ (Old Testament) বলে নামকরণ করা হয়েছে। কখনোই কোনো খৃস্টান ‘তাওরাত’ বলে দাবি বা নামকরণ করেন নি।

এভাবে আমরা দেখছি যে, ইহূদী ও খৃস্টধর্মীয় পরিভাষায় পুরাতন নিয়মের সকল পুস্তককে একত্রে তাওরাত বলা হয় না। আর ইসলামী পরিভাষায় মূসা (আ)-এর উপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবর্তীর্ণ গ্রন্থটিই শুধু ‘তাওরাত’। কাজেই পুরাতন নিয়মকে ‘তাওরাত’ বলা ধর্মীয় ও নৈতিকভাবে অন্যায়।

১. ৩. বাইবেলের নতুন নিয়ম

১. ৩. ১. বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন নতুন নিয়ম

আমরা বলেছি, খৃস্টান বাইবেলের দ্বিতীয় অংশকে ‘নতুন নিয়ম’ বা ‘নবসন্ধি’ বলা হয়। প্রটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক উভয় বাইবেলেই বর্তমানে এ অংশে ২৭টি পুস্তক বিদ্যমান। পুস্তকগুলোর তালিকা প্রদানের পূর্বে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়:

প্রথমত: খৃস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে মিসরে খৃস্টানদের মধ্যে মিসরীয় গ্রীক ইঞ্জিল (The Greek Gospel of the Egyptians) প্রচলিত ছিল। গসপেলটি পরবর্তী মিশরীয় কপ্টিক গসপেল ও প্রচলিত নতুন নিয়মরে গসপেলগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। খৃস্টান দল-উপদল ভিন্নমত দমনের সময় ভিন্নমতের মানুষদের নির্মূল করার পাশাপাশি তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো নির্মূল করতেন। ফলে প্রাচীন এ গসপেলের পূর্ণাঙ্গ পা-ুলিপি পাওয়া যায় না। তবে প্রাচীন পণ্ডিতদের লেখায় বিভিন্ন উদ্ধ্রৃতি পাওয়া যায়। এছাড়া টমাসের ইঞ্জিল the Gospel of Thomas) নামক ইঞ্জিলের পূর্ণাঙ্গ পা-ুলিপি কিছু দিন আগে মিসরে পাওয়া গেছে এবং মুদ্রিত হয়েছে। গ্রন্থটি প্রচলিত নতুন নিয়মের মধ্যে নেই।((উইকিপিডিয়া: The Greek Gospel of the Egyptians, the Gospel of Thomas))

দ্বিতীয়ত: খৃস্টধর্মের সুতিকাগার ফিলিস্তিন ও বৃহত্তর সিরিয়ার খৃস্টানগণ দ্বিতীয় শতাব্দী থেকেই ভিন্ন এক ‘নতুন নিয়মের’ উপর নির্ভর করতেন। আসিরীয় টিটান (Tatian the Assyrian) দ্বিতীয় খৃস্টীয় শতকের প্রসিদ্ধ খৃস্টান ধর্মগুরু ছিলেন (জন্ম ১২০ খৃস্টাব্দ, মৃত্যু ১৮০ খৃস্টাব্দ)। তাঁর সংকলিত ইঞ্জিলটির নাম ছিল ডায়াটেসারন the Diatessaron), অর্থাৎ সাদৃশ্যময় (harmony)।

তার কর্ম থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দ্বিতীয় খৃস্টীয় শতকে ‘ইঞ্জিল’ নামে অনেক পুস্তক প্রচারিত হতে শুরু করে। তিনি তার গ্রন্থের মধ্যে প্রচলিত ইঞ্চিলগুলোর বিষয় একত্রে সংকলিত করেন। প্রচলিত চার ইঞ্জিলের অনেক বিষয় তার সংকলনে বিদ্যমান। তবে প্রচলিত চার ইঞ্জিলের তথ্যের সাথে তার অনেক তথ্য সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক ও ভিন্ন। প্রচলিত চার ইঞ্জিলের মধ্যে বিদ্যমান অনেক প্রসিদ্ধ গল্প ও ঘটনা তিনি বাদ দিয়েছেন। প্রচলিত চার ইঞ্জিলের প্রথম তিনটি সাদৃশ্যপূর্ণ বা সিনপটিক synoptic) গসপেল ও চতুর্থ যোহনের গসপেল কোনোটির সাথেই তার মিল নেই। তার সংলিত এ বাইবেলটি খৃস্টধর্মের সুতিকাগার ফিলিস্তিন ও বৃহত্তর সিরিয়ার খৃস্টানদের মধ্যে প্রচলিত ছিল খৃস্টধর্মের তৃতীয়-চতুর্থ শতাব্দীতে।

চতুর্থ খৃস্টীয় শতকের প্রসিদ্ধতম খৃস্টান ধর্মগুরু ও ঐতিহাসিক ইউসিবিয়াস (Eusebius) লিখেছেন: “These, indeed, use the Law and Prophets and Gospels,… but… abuse Paul the apostle and set aside his epistles, neither do they receive the Acts of the Apostles..”

“তারা (সিরীয়গণ) তোরাহ, নবীগণের পুস্তক ও ইঞ্জিলগুলো ব্যবহার করে।… তবে… তারা শিষ্য পলকে গালি দেয় এবং তার পত্রগুলো প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি তারা প্রেরিতদের কার্যবিবরণীও গ্রহণ করে না।”((Eusebius, Ecclesiastical History, p 166. আরো দেখুন উইকিপিডিয়া: Syriac Canon.))

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সিরীয় খৃস্টানগণের নতুন নিয়মে বা টিটানের সংকলিত নতুন নিয়মে প্রেরিতদের কার্যবিবরণী ও পলের পত্রাবলির কিছুই ছিল না।
উল্লেখ্য যে, টিটান কঠোর একত্ববাদী খৃস্টান ছিলেন। তিনি যীশুর ঈশ্বরত্বের স্বীকৃতি দেন নি। এমনকি মুক্তিলাভের (redemption) জন্য যীশুর নামও তিনি উল্লেখ করেন নি। খৃস্টান চার্চ তাকে ধর্মদ্রোহী (যবৎবঃরপ) বলে ঘোষণা দেয়। তৎকালীন পদ্ধতিতে বিরুদ্ধবাদীদের নির্মূলের সাথে সাথে তাদের ধর্মগ্রন্থও নির্মূল করা হয়। তার স্থান পূরণ করে সিরীয় পেশিট্টা।((বিস্তারিত দেখুন উইকিপিডিয়া: Tatian, Diatessaron.))

উইকিপিডিয়া (Development of the New Testament canon) প্রবন্ধের (Outside the Empire) অংশে (Syriac Canon) অনুচ্ছেদের বক্তব্য: “Moreover, after the pronouncements of the 4th century on the proper content of the Bible, Tatian was declared a heretic and in the early 4th century Bishop Theodoretus of Cyrrhus and Bishop Rabbula of Edessa (both in Syria) rooted out all copies they could find of the Diatessaron and replaced them with the four canonical Gospels (M 215). As a result, no early copies of the Diatessaron survive… .” “সর্বোপরি ৪র্থ শতাব্দীতে বাইবেলের সঠিক বিষয়বস্তু ঘোষণা করার পরে টিটানকে ধর্মদ্রোহী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ৪র্থ শতাব্দীর শুরু থেকে সিরহাসের বিশপ থিওডোরেটাস এবং এডেসার বিশপ রাব্বুলা (উভয়ই সিরিয়ার) ডায়াটেসারনের সকল কপি নির্মূল করেন, যা তারা সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। তদস্থলে চার্চের বিধিসম্মত গসপেলগুলো প্রবর্তন করেন। ফলে ডায়াটেসারনের প্রাচীন পা-ুলিপির কিছুই বার বাঁচতে পারে না।”

Dr. Abdullah Jahangir:  https://www.facebook.com/Dr.KhandakerAbdullahJahangir

ASSUNNAH TRUST:  https://www.facebook.com/Assunnahtrust

ASSUNNAH PUB: https://www.facebook.com/AssunnahPublications

Dr. Abdullah Jahangir: https://www.youtube.com/user/SunnahTrust

ASSUNNAH TRUST MEDIA: https://www.youtube.com/c/AssunnahTrustMedia/videos

TWEETER: https://twitter.com/assunnahtrust3

ASSUNNAH SHOP: https://beta.assunnahtrust.org/shop/

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print