ধর্মীয় মূল্যবোধ ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা
শিশু কিশোরদেরকে ধর্মীয় মূল্যবোধ, ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মীয় পরিবেশের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট মাদরাসাতুস সুন্নাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছে। এ বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম পাঁচ বছর মেয়াদী। প্লে, নার্সারী, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী মোট পাঁচটি শ্রেণিতে এ বিভাগের পাঠ্যক্রম বিভক্ত। প্লে শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত চট্টগ্রাম নূরানী বোর্ডের পাঠ্যক্রম অনুসরণে পাঠদান করা হয়। এ পর্যায়ে জাতীয় কারিকুলামের মান সংরক্ষণ করে বাংলা, ইংরেজি, অংক, সমাজ, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা বিশুদ্ধ ঈমান, কুরআন তিলাওয়াত-লিখন, প্রয়োজনীয় সূরা মুখস্থ, হাদীস মুখস্থ, ইসলামী আদব, আখলাক, নৈতিক মূল্যবোধ ও মাসাইল শিক্ষা গ্রহণ করে।
প্রাথমিক বিভাগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য
বেতন, ভর্তি ও অন্যান্য জ্ঞাতব্য
পরীক্ষা ও ছুটি
প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় ছুটির দিন কমবেশি হতে পারে।
প্রাথমিক বিভাগের সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রম:
প্লে-নার্সারী শ্রেণি (৬০০ নম্বর)
প্রথম শ্রেণি (৮০০ নম্বর)
দ্বিতীয় শ্রেণি (৯০০ নম্বর)
তৃতীয় শ্রেণি (৯০০ নম্বর)
ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যাঃ
নুরানী বিভাগঃ ৬৭০
বালক ও বালিকা হিফয বিভাগ
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ বোর্ড দ্বারা পরিচালিত, কুরআন কারীম হিফয করা মুসলিম জীবনের অন্যতম নেয়ামত, অনন্ত মর্যাদা ও সাওয়াবের উৎস। এ মর্যাদা ও সাওয়াব যেমন শিক্ষার্থীর তেমনি তার পিতামাতা ও স্বজনদের। অপরদিকে সকল ইসলামী জ্ঞানের উৎস কুরআন কারীম। কুরআন কারীমের পরিপূর্ণ হিফ্য ভিন্ন “ইসলামী শিক্ষা” কখনো পূর্ণতা পেতে পারে না।
আমাদের দেশে হিফযুল কুরআনের ক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যা হলো হাফিয শিক্ষার্থী হিফয শেষ করার পরে বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আর সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরে আসতে পারে না। ফলে আমাদের সমাজে অগণিত “ইলমহীন হাফিয” বিরাজমান। এই অবস্থা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও ইসলামী শিক্ষাচিন্তার পরিপন্থী। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার আগেই হিফয সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেছে।
দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণি উত্তীর্ণ ৭/৮ বছর বয়সের ছাত্র/ছাত্রীদেরকে হিফয বিভাগে ভর্তি করা হয়। ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে তারা হিফয সম্পন্ন করে। এরপরই তাদেরকে প্রাথমিক সমাপনীর জন্য প্রস্তুত করা হয়। হিফযের বছর বা তার পরের বছরেই তারা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। এভাবে কমবেশী ১১/ ১২ বছর বয়সের মধ্যেই তারা প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়।
আস-সুন্নাহ ট্রাস্টে বালক ও বালিকাদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক ব্যবস্থাপনায় ও পৃথক আবাসনে দুটি পৃথক হিফযুল কুরআন বিভাগ রয়েছে।
হিফয বিভাগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য
ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যাদি
হিফয বিভাগ জানুয়ারী-ডিসেম্বর শিক্ষাবর্ষ অনুসরণ করে। তবে ভর্তির শর্ত পূরণ হলে বছরের যে কোনো সময়ে হিফয বিভাগে ভর্তি করা হয়।
ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র/ছাত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।
কায়দা বা নাযেরা পর্যায়ে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীর বয়স সীমা ৬-৮ বছরের মধ্যে হতে হবে। হিফয পর্যায়ে ভর্তি ইচ্ছুকদের বয়স ৯ বছরের মধ্যে হতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আবেদন-পত্রের সাথে ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পূর্ব প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র এবং অভিভাবকের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিয়ে ভর্তি হতে হবে। আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট এর অফিস থেকে অফেরতযোগ্য ১০০ টাকার বিনিময়ে আবেদন পত্র, একাডেমিক ক্যালেন্ডার, পরিচিতি পুস্তিকা সংগ্রহ করতে হবে।
২০২৪-২৫ ঈ. শিক্ষাবর্ষের ভর্তি সংক্রান্ত খরচ |
|||||
---|---|---|---|---|---|
শ্রেণি/বর্ষ | যোগাযোগের বিষয় | পুরাতন | নতুন | ||
তাহফীজ ক ও খ গ্রুপ | ভর্তি ফরম | 50 | 100 | ||
তথ্য বই | 50 | 50 | |||
সেশন ফি | 1000 | ভর্তি | 2000 | ||
বেতন | 1500 | 1500 | |||
খোরাকী | 2500 | 2500 | |||
আবাসন | এককালীন | 500 | এককালীন | 500 | |
বিদ্যুৎ বিল | এককালীন | 500 | এককালীন | 500 | |
মোট | 6600 | 7650 |
পরীক্ষা ও ছুটি
হিফয বিভাগে বছরে তিনটি পরীক্ষা হয়। প্রথম সাময়িক পরীক্ষা এপ্রিল মাসে, ২য় সাময়িক পরীক্ষা আগস্ট মাসে এবং বার্ষিক পরীক্ষা ডিসেম্বর মাসে।
হিফয বিভাগের ছাত্রছাত্রীগণ প্রতি মাসে এক দিন ছুটি পায়। এছাড়া দু’ ঈদে ১০/১১ দিন করে ছুটি এবং প্রতি পরীক্ষার পর ২ দিন ছুটি পায়।
প্রতি মাসিক ছুটির পূর্বে মাসিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক ছুটির পূর্বে ছাত্রদের মাসিক মূল্যায়ন প্রকাশ ও পুরস্কার প্রদান করা হয়।
সকল ছুটির ক্ষেত্রে ছুটির প্রথম দিন দুপুরের খাদ্য গ্রহণের পর ছাত্রছাত্রীরা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্থান করবে। ছুটির শেষ দিন মাগরিবের পূর্বেই তারা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হবে।
হিফয বিভাগ পূর্ণ আবাসিক। উপরের ছুটি ছাড়া অন্য কোনো সময়ে তারা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করতে পারবে না। জাতীয় ছুটির দিনগুলোতে দিবসকালীন ক্লাস বন্ধ থাকে। তবে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করতে হয় এবং সারাদিনের অন্যান্য কার্যতালিকা অনুসরণ করতে হয়।
প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত ছুটি ছাড়া কোন ছাত্রকে ছুটি দেয়া হয় না। জরুরী পরিস্থিতিতে ছুটি মঞ্জুর করা বিভাগীয় প্রধানের বিবেচনার ওপর নির্ভর করে।
মুহতামিম:
শায়খ আবু জাফর
ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যাঃ
হিফয বালক শাখাঃ ১২৮
হিফয বালিকা শাখাঃ ২৭
বালক ও বালিকা শাখা:
ইসলামী মূল্যবোধ ভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তার এবং ইসলামী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষজ্ঞ আলেম তৈরী আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের অন্যতম লক্ষ্য। আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিভাগ “জামিআতুস সুন্নাহ নামে পরিচিত। জামিয়াতুস সুন্নাহর সর্ববৃহৎ ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প দাওরায় হাদীস বিভাগ অর্থাৎ কিতাব বিভাগ। বিশুদ্ধ ইসলামী আকীদা, আমল ও আখলাকের ভিত্তিতে যোগ্য আলেম গড়ে তোলার সুব্যবস্থা করা এই বিভাগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার জন্য কওমী মাদ্রাসার মূল পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রমগুলো ঠিক রেখে, সাধারণ বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বালকদের জন্য ৯ বছর এবং বালিকাদের জন্য ৮ বছর মেয়াদী পাঠক্রম তৈরী করা হয়েছে। বর্তমানে বালক-বালিকা উভয় শাখায় জামাতে জালালাইন পর্যন্ত চালু আছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে (১৪৪০-১৪৪১ হি.) মিশকাত জামাত এবং পরবর্তী বছর দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত চালু হবে ইনশাআল্লাহ।
বালকদের ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য আরবী ভাষা, হাদীস, ফিকহ, তাফসীর ও অন্যান্য ইসলামী জ্ঞানে পারাদর্শী গবেষক আলিম ও যোগ্য শিক্ষক তৈরী করা। বালিকাদের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য আরবী ভাষায় দক্ষতাসহ ইসলামী জ্ঞানে অভিজ্ঞ, তাকওয়া, আখলাক, আদব ও সমাজ সচেতন মুসলিম মহিলা তৈরী করা। এ দিকে লক্ষ্য করেই পাঠ্যক্রম তৈরী করা হয়েছে। মূল নিয়মাবলী উভয় বিভাগের জন্য একই, তবে পাঠ্যক্রম কিছুটা ভিন্ন। পর্দা সংরক্ষণের স্বার্থে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসরুম ও আবাসনের ব্যবস্থা সর্ম্পূণ পৃথক করা হয়েছে।
এই বিভাগের দায়িত্বশীলগণ:
ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী:
উক্ত বিভাগের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। ক্রমান্বয়ে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নবীন ও প্রবীন সমন্বিত, সৃজনশীল মানসকিতা সম্পন্ন, প্রতিভাবান ও সুদক্ষ, শিক্ষির্থীদের প্রতি নিবেদিত প্রাণ একদল শিক্ষক-শিক্ষিকা সার্বক্ষণিক তাদের পাঠদান ও দেখাশোনা করে থাকেন। বালক ও বালিকা উভয় শাখায় দেখভাল করার জন্য একজন করে খাদেমের ব্যবস্থা আছে।
কিতাব বিভাগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য:
ভর্তি প্রক্রিয়া:
বেতন ও প্রাসঙ্গিক তথ্য:
২০২৪-২৫ ঈ. শিক্ষাবর্ষের ভর্তি সংক্রান্ত খরচ
শ্রেণি/বর্ষ যোগাযোগের বিষয় পুরাতন নতুন
৪র্থ শ্রেনি ভর্তি ফরম 50 100
তথ্য বই 50 50
সেশন ফি 1500 ভর্তি 2000
বেতন 1200 1200
খোরাকী 2200 2200
আবাসন এককালীন 500 এককালীন 500
বিদ্যুৎ বিল এককালীন 500 এককালীন 500
মোট 6000 6550
২০২৩-২৪ ঈ. শিক্ষাবর্ষের ভর্তি সংক্রান্ত খরচ
শ্রেণি/বর্ষ যোগাযোগের বিষয় পুরাতন নতুন
৫ম শ্রেনি এ‘দাদিয়া ১ম বর্ষ ভর্তি ফরম 50 100
তথ্য বই 50 50
সেশন ফি 1500 ভর্তি 2000
বেতন 1200 1200
খোরাকী 2500 2500
আবাসন এককালীন 500 এককালীন 500
বিদ্যুৎ বিল এককালীন 500 এককালীন 500
মোট 6300 6850
২০২৪-২৫ ঈ. শিক্ষাবর্ষের ভর্তি সংক্রান্ত খরচ
শ্রেণি/বর্ষ যোগাযোগের বিষয় পুরাতন নতুন
২য় এবং ৩য় বর্ষ ভর্তি ফরম 50 100
তথ্য বই 50 50
সেশন ফি 1500 ভর্তি 2000
বেতন 1000 1000
খোরাকী 2500 2500
আবাসন এককালীন 500 এককালীন 500
বিদ্যুৎ বিল এককালীন 500 এককালীন 500
মোট 6100 6650
২০২৪-২৫ ঈ. শিক্ষাবর্ষের ভর্তি সংক্রান্ত খরচ
শ্রেণি/বর্ষ যোগাযোগের বিষয় পুরাতন নতুন
৪র্থ এবং ৬ষ্ঠ বর্ষ ভর্তি ফরম 50 100
তথ্য বই 50 50
সেশন ফি 1500 ভর্তি 2000
বেতন 700 700
খোরাকী 2500 2500
আবাসন এককালীন 500 এককালীন 500
বিদ্যুৎ বিল এককালীন 500 এককালীন 500
মোট 5800 6350
২০২৪-২৫ ঈ. শিক্ষাবর্ষের ভর্তি সংক্রান্ত খরচ
শ্রেণি/বর্ষ যোগাযোগের বিষয় পুরাতন নতুন
জালালাইন, মেশকাত ও দাওরা ভর্তি ফরম 50 100
তথ্য বই 50 50
সেশন ফি 1500 Admisson 2000
বেতন 500 500
খোরাকী 2500 2500
আবাসন এককালীন 500 এককালীন 500
বিদ্যুৎ বিল এককালীন 500 এককালীন 500
মোট 5600 6150
শিক্ষা বর্ষ, পরীক্ষা ও ছুটি বিষয়ক তথ্য:
আবাসিক নীতিমালা:
কিতাব বিভাগের জন্য সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আবাসিক থাকা বাধ্যতামূলক। প্রয়োজনীয় বিছানা-পত্র এবং পোশাকাদি শিক্ষার্থীরা নিয়ে আসবে।
ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যাঃ
কিতাব বালক শাখাঃ ২১১
কিতাব বালিকা শাখাঃ ২১৪
দাওয়াহ ও আন্তধর্মীয় সংলাপ
মানুষ নিজের বংশ, জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ, দেশ বা শিক্ষা নিয়ে যেমন গৌরব বোধ থেকে অহঙ্কার ও অন্যকে ঘৃণার পর্যায়ে চলে যায়, ঠিক তেমনি নিজের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে অন্য ধর্ম ও তার অনুসারীর প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ বা হানাহানিতে লিপ্ত হয়। ইসলাম তার অনুসারীদের নিজের ধর্মের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও ভালবাসার পাশাপাশি অন্য ধর্মের অনুসারীদের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, ধর্ম পালনের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান, সকল জাগতিক অধিকার প্রদান, অন্যধর্মের অনুসারীদের সাথে আলোচনা বিতর্কে সর্বোচ্চ উত্তম বাক্য ও আচরণ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে এবং অন্য ধর্মের পূজনীয় বা ভক্তির পাত্রদের প্রতি অশোভন মন্তব করতে নিষেধ করেছে।(সূরা-৬ আন‘আম ১০৮; সূরা-১৬ নাহল ১২৫; সূরা-১৭ ইসরা ৫৩; ২৯ আনকাবুত ৪৬; ৪১ ফুসসিলাত ৩৪)
ইসলামের দাওয়াহ ও ধর্মীয়সংলাপ পরস্পর সম্পর্কিত। কুরআন যেমন মুমিনদের দিক নির্দেশনা দিয়েছে, তেমনি অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সাথেও সংলাপ করেছে এবং মুমিনদের সংলাপ শিক্ষা দিয়েছে। সাহাবীগণের যুগ থেকেই মুসলিম গবেষকগণ বিশ্বধর্ম অধ্যয়ন ও তুলনামূলক ধর্মবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছেন। ইসলামের প্রথম কয়েক শত বছরে আলিমগণ জ্ঞানের এ শাখায় অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাদের গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করলে আমরা তথ্য উপস্থাপনায় বস্তুনিষ্ঠা, নিরপেক্ষতা ও কুরআন নির্দেশিত শালীনতা দেখতে পাই।
তাতার আক্রমনে বিক্ষত মুসলিম দেশগুলোর ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায় তুলনামুলক ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন তেমন গুরুত্ব পায় নি। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে বিভিন্ন ধর্মের অধ্যয়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলিম সমাজগুলোতে নাস্তিকতা, ধর্মহীনতা, ধর্মান্তর, বিশেষত খৃস্টান ধর্মপ্রচারকদের কর্মতৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত শালীনতা, প্রজ্ঞা ও যুক্তি নির্ভরতার ভিত্তিতে মুসলিম উম্মাহর প্রথম প্রজন্মগুলোর গবেষকদের ধারায় দীনী দাওয়াতের পাশাপাশি তুলনামূলক ধর্মবিজ্ঞান অধ্যয়ন ও অভিজ্ঞ দীন প্রচারক বা ‘দাঈ ইলাল্লাহ’ তৈরির জন্য আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট ‘দাওয়াহ ও তুলনামূলক ধর্মবিজ্ঞান’ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে।
পাঠ্যক্রম ও শিক্ষা পদ্ধতি
উচ্চতর দাওয়াহ বিভাগে এক বছর মেয়াদী তাখাস্সুস বা উচ্চতর ডিপ্লোমা প্রদান করা হয়।
দাওয়াহ বিভাগের পাঠ্যক্রমের ক্ষেত্রে মাদরাসা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় উভয় ধারার শিক্ষার্থীদের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। দীনী দাওয়াতের জন্য মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতে পারদর্শিতা আবশ্যক। এজন্য এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে মাতৃভাষা, ইংরেজি, জাতীয় ইতিহাস ও বিশ্বের ইতিহাস অধ্যয়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি আরবীতে দুর্বলগণও যাতে এ বিভাগের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে উপকৃত হতে পারেন সেজন্য আরবী বিষয় কম রেখে অধিকাংশ বিষয় বাংলায়, পাঠ, অধ্যয়ন ও গবেষণার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পাঠদান ও অধ্যয়ন ব্যবস্থা ছাড়াও প্রতি পর্বে ন্যুনতম চারটি করে বিশেষজ্ঞ আলোচনা ব্যবস্থা রাখ হয়েছে। ইতিহাস, সভ্যতা, বিশ্বায়ন, মুসলিম বিশ্ব, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও তুলনামূলক ধর্ম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকগণ আলোচনা ও আলোচনা-পত্র প্রদান করেন।
ভর্তি বিষয়ক তথ্যাবলি
শাওয়াল মাসের ১০-১২ তারিখের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ১৩/১৪ তারিখের মধ্যে পাঠদান ও অধ্যয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস বা ফাযিল পরীক্ষায় উত্তীণ ছাত্রদের এ বিভাগে ভর্তি করা হয়। এছাড়া কলেজ, বিশ্ববিদ্যায়ে, বিশেষত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত দাওয়াহ বিভাগের শর্তাবলি পূরণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য খ-কালীন অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে।
আগ্রহী শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করে জমা দিবে এবং ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে। ভর্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তি ফরমের সাথে জন্ম-সনদ, নাগরিক সনদ, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রশংসাপত্র, নিজের বা অভিভাবকের ভোটার আই. ডি. কার্ডের কপি এবং দু’ কপি সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে। এ বিভাগে শিক্ষার জন্য কোনো বেতন নেওয়া হয় না। পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য ও শিক্ষা সবই আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট বহন করে। জামিআর পরীক্ষায় বিশেষ মেধার স্বাক্ষর রাখলে তাকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। খ-কালীন শিক্ষার্থীদের খাওয়া খরচ বহন করতে হয়। ভর্তিচ্ছুক সকলকেই ভর্তির সময় নিম্নের প্রদেয়গুলো প্রদান করতে হয়: ভর্তি ফি ১৫০০ টাকা, ফরম ও প্রস্পেক্টাস ১০০ টাকা, মোট ১৬০০ টাকা।
শিক্ষাবর্ষ ও ছুটি
দাওয়াহ বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রমে ইসলামী চান্দ্র পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়। শিক্ষাবর্ষ শাওয়ালে শুরু ও শাবান মাসে শেষ হয়। শিক্ষাবর্ষ তিনটি পর্বে বিভক্ত:
বিভাগের প্রয়োজনে পরীক্ষার তারিখ কিছু পরিবর্তণ করা হতে পারে।প্রত্যেক পরীক্ষার পরে এক সপ্তাহ ছুটি, ঈদুল আযহার জন্য ১২/১৩ দিনের ছুটি।
বিভাগীয় প্রধান: বিশিষ্ট আলিম, গবেষক তুলনামূলক ধর্মতথ্য: শায়খ মুশাহিদ আলী চমকপুরী
ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যাঃ
উচ্চতর দাওয়া ও তুলনামূলক ধর্মবিজ্ঞান বিভাগঃ ২০
হাদীস গবেষণা ও উলূমুল হাদীস
বিশুদ্ধ সুন্নাহ নির্ভর জীবন ও সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত বিশুদ্ধ হাদীস বিষয়ক সচেতনতা। এবং এ বিষয়ক অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি অপসারণ। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সকল দিকে হাদীসের গুরুত্ব। হাদীসের প্রামাণ্যতা, হাদীসের বিশুদ্ধতা। দুর্বলতা ও জালিয়াতি নির্ধারণে মুহাদ্দিসগণের নীতিমালা। মুসতালাহুল হাদীস, উলূমুল হাদীস, ইলমুর রিজাল। জারহ-তাদীল, ইলমুত তাখরীজ ইত্যাদি বিষয়ে। আন্তর্জাতিক মানের গবেষক আলিম তৈরির উদ্দেশ্যে। ‘জামিআতস সুন্নাহ’ ‘তাখাসসুস ফী উলূমিল হাদীশিশ শারীফ’। নামে দু বছর মেয়াদী। হাদীস বিষয়ক উচ্চতর গবেষণা কোর্স চালু করেছে।
পাঠ্যক্রম, শিক্ষা পদ্ধতি ও ভর্তি বিষয়ক তথ্যাবলি
এ বিভাগে দু বছর মেয়াদী। তাখাস্সুস বা উচ্চতর ডিপ্লোমা প্রদান করা হয়। শিক্ষাবর্ষ শাওয়ালে শুরু ও শাবান মাসে শেষ। শাওয়াল মাসের ১০-১২ তারিখের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ১৩/১৪ শাওয়াল থেকে পাঠদান ও অধ্যয়ন কার্যক্রম শুরু হয়।
উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগের পাঠ্যক্রম মূলত আরবী ভাষা নির্ভর। আরবী ভাষায় রচিত উলূমুল হাদীস বিষয়ক গ্রন্থাবলি অধ্যয়ন ও অনুধাবনে সক্ষমতা এ বিভাগে ভর্তির মূল শর্ত। আর এজন্য আরবী ভাষায় পূর্ণ দখলের পাশাপাশি। ইসলামী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতার প্রয়োজন। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এ দক্ষতা নিশ্চিত করা হয়। পূর্ণকালীন ভর্তির পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়ায় অধ্যয়নরত ছাত্রদের খণ্ডকালীন অধ্যয়নের ব্যবস্থা আছে। মাদরাসা থেকে দাওরাহ হাদীস বা ফাযিল পরীক্ষায় উত্তীণ ছাত্ররা ভর্তির আবেদন করতে পারে। তবে পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীণ উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই আরবী। ও ইসলামী জ্ঞানের দক্ষতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই শুধু ভর্তি করা হয়।আগ্রহী শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করে জমা দিবে। এবং লিখিত ও মৌখিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে। ভর্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তি ফরমের সাথে জন্ম-সনদ। নাগরিক সনদ, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রশংসাপত্র। নিজের বা অভিভাবকের ভোটার আই. ডি. কার্ডের কপি। এবং দু কপি সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে। এ বিভাগে শিক্ষার জন্য কোনো বেতন নেওয়া হয় না। পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীদের আবাসন। খাদ্য ও শিক্ষা সবই আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট বহন করে। জামিআর পরীক্ষায় বিশেষ মেধার স্বাক্ষর রাখলে তাকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। খণ্ডকালীন শিক্ষার্থীদের খাওয়া খরচ বহন করতে হয়। ভর্তিচ্ছুক সকলকেই ভর্তির সময় নিম্নের প্রদেয়গুলো প্রদান করতে হয়। ভর্তি ফি ১৫০০ টাকা, ফরম ও প্রস্পেক্টাস ১০০ টাকা, মোট ১৬০০ টাকা।
শিক্ষাবর্ষ ও ছুটি
হাদীস বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রমে ইসলামী চান্দ্র পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়। শিক্ষাবর্ষ শাওয়ালে শুরু ও শাবান মাসে শেষ হয়। শিক্ষাবর্ষ তিনটি পর্বে বিভক্ত: প্রথম সাময়িক পরীক্ষা: সফর মাসের প্রথম সপ্তাহ দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা: জুমাদাল উলা মাসের প্রথম সপ্তাহ বার্ষিক পরীক্ষা: শা’বান মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ বিভাগের প্রয়োজনে পরীক্ষার তারিখ কিছু পরিবর্তণ করা হতে পারে। প্রত্যেক পরীক্ষার পরে এক সপ্তাহ ছুটি। ঈদুল আযহার জন্য ১২/১৩ দিনের ছুটি। এবং বার্ষিক পরীক্ষার পরে শাওয়ালের। প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিভাগের ছুটি থাকে।
বিভাগীয় প্রধান:
উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব-এর বিশিষ্ট ছাত্র। উসতাদুল হাদীস, মাওলানা যাকারিয়া বিন আব্দুল ওয়াহহাব
ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যাঃ
উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগঃ ১৫
আরবী জানা ছাত্রদের আকিদা, আমল ও গবেষণায় অনন্য করে তৈরি করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের “আল-ফিকহ ও আল-আকিদা” বিভাগ। প্রফেসর ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ জীবিত থাকাকালীন এ বিভাগটি শুরু করার জন্য কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তিনি সেটা করে যেতে পারেননি। তিনি এ বিভাগের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ড. আবুবকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহকে এ বিষয়ে তার আগ্রহ ও পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন; পরবর্তীতে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শাইখ উসামা খোন্দকার এর ঐকান্তিক আগ্রহে এ বিভাগটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে দীনী খিদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছে।
আকিদাহ ও ফিকহ এর গুরুত্ব:
আকিদা শিক্ষা করার গুরুত্ব
আকিদার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে এর গুরুত্ব বহনকারী কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো-
১। আকিদা বিশুদ্ধ হওয়ার অর্থই হচ্ছে তাওহীদ বিশুদ্ধ হওয়া। বস্তুত এটির সত্যায়ন এবং বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মানুষ ও জিন্নকে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإِنسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ
‘আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন্ন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে।’ (৫১:৫৬)
২। সঠিক আকিদাহর দাওয়াতের জন্যেই সকল রাসূলগণকে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلاَّ نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لا إِلَهَ إِلاَّ أَنَا فَاعْبُدُونِ
আর আপনার পূর্বে আমরা যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তার কাছে এ ওহীই পাঠিয়েছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর। (২১:২৫)
৩। আকিদা বিশুদ্ধ হওয়ার ওপর বান্দার আমল কবুল হওয়া উপর নির্ভর করে, আকিদায় মৌলিক কোনো প্রকার ভুল কখনো কখনো আমলকে ধ্বংস করে দিতে পারে, আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর, আর তোমরা তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করো না। (৪৭:৩৩)
৪। আকিদাহ ও তাওহীদ বিশুদ্ধ হওয়ার উপর আখিরাতের স্থায়ী নাজাত এবং সঠিক ফলাফল নির্ভর করে। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إن الله حرّم على النار من قال: لا إله إلا الله يبتغي بذلك وجه الله
নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করেছেন, যে ব্যক্তি বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং এর দ্বারা শুধু আল্লাহর চেহারাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। (বুখারী, অধ্যায় সালাত, অনুচ্ছেদ, গৃহে মসজিদ, ক্রম ৪১৫)
৫। আকিদাহ বিশুদ্ধ হওয়ার ওপর নির্ভর করবে সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যকার সম্পর্ক। আকিদা বিশুদ্ধ না হলে আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যায়। ফলে সে ইবাদাতের স্বাদ পাবে না। আল্লাহ হক্ব আদায় করতে সক্ষম হবে না। আর আল্লাহর হক্ব যারা যথাযথ আদায় করতে পারবে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা শাস্তি না দেয়ার ঘোষণা প্রদান করেছেন।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ -رَضِيَ اَللَّهُ عَنْهُ —قَالَ :كُنْتُ رَدِيفَ اَلنَّبِيِّ صَلَّى اَللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حِمَارٍ فَقَالَ لِي يَا مُعَاذُ؟ أَتَدْرِي مَا حَقُّ اَللَّهِ عَلَى الْعِبَادِ، وَمَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اَللَّهِ؟ قُلْتُ اَللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ حَقُّ اَللَّهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ، وَلا يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَحَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اَللَّهِ أَنْ لا يُعَذِّبَ مَنْ لا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، قُلْتُ يَا رَسُولَ اَللَّهِ أَفَلا أُبَشِّرُ اَلنَّاسَ؟ قَالَ لا تُبَشِّرْهُمْ فَيَتَّكِلُوا
মু‘আয ইবনু জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি নবী ﷺ এর পিছনে একটি গাধার উপর সওয়ার ছিলাম। তখন তিনি বললেন, হে মু‘আয, তুমি কি জানো বান্দার উপর আল্লাহর হক কী? আর আল্লাহর উপর বান্দার হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সবচাইতে ভালো জানেন। তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে এই যে সে শুধু আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কোনো প্রকার শরীক স্থাপন করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হচ্ছে এই যে তিনি আযাব দেবেন না তাকে, যে তাঁর সাথে কোনো প্রকার শরীক স্থাপন করে না। আমি বললাম, আমি কি লোকেদের এই সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বললেন, তাদেরকে এই সুসংবাদ দিও না, কারণ হতে পরে তারা এর উপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।” (বুখারী ৬২৬৭, ২৮৫৬; মুসলিম ৩০)
৬। বিশুদ্ধ আকিদার জ্ঞানের মাধ্যমেই আল্লাহ তা‘আলা এ দুনিয়াতে সত্যিকারের আনন্দ ও সুখ প্রদান করেন। তাই বান্দা কর্তৃক তার রব্ব আল্লাহর ব্যাপারে জানতে চাওয়া সকল চাওয়ার উর্ধ্বে। সুতরাং কোনো প্রকার শান্তি সে পেতে পারে না, যতক্ষণ না সে তার রবকে জানবে তাঁর রুবুবিয়্যাতের মাধ্যমে, উলুহিয়্যাতের মাধ্যমে, তাঁর নাম ও গুণাবলী মাধ্যমে।
৭। মানব মনে যত প্রকার প্রশ্নের উদ্রেক হয়, যা বান্দার অন্তরে ঘুরপাক খায়, যেমন, সৃষ্টিকর্তার গুণ, সৃষ্টি জগতের সূচনা, এর শেষ, এর উদ্দেশ্য, সৃষ্টি সংক্রান্ত বিবিধ বিষয়, সৃষ্টির একের সাথে অন্যের সম্পর্ক এবং তাদের তাকদীর পূর্বনির্ধারণের বিষয়, এসবের প্রকৃত উত্তর কেবল বিশুদ্ধ আকিদা শিক্ষা করার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে।
৮। আকিদার বিষয়াদি ব্যাখ্যা করা, সত্যায়ন করা, বিস্তারিত তুলে ধরা ও এর প্রতি দাওয়াত দেবার মাধ্যমে আল কুরআন এবং আস সুন্নাহকে অন্তরে বপন করা সম্ভব হয়।
৯। সঠিক আকিদাই দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্যের কারণ। সুতরাং যারা একে আঁকড়ে ধরে থাকবে তারাই হবে বিজয়ী গোষ্ঠী, নাজাতপ্রাপ্ত সম্প্রদায় এবং সাহায্যপ্রাপ্ত শ্রেণি; সুতরাং প্রতিটি মানুষের কর্তব্য হবে বিশুদ্ধ আকিদা ধারণ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لا تزال طائفة من أمتي ظاهرين على الحق، لا يضرهم من خذلهم حتى يأتي أمر الله وهم كذلك
আমার উম্মত হতে সবসময় একটি গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত থাকবে হকের উপর। তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না তাদের পরিত্যাগকারীরা যতক্ষণ না আল্লাহর আদেশ আসে। আর তারা সর্বদা এরূপই থাকবে। (মুসলিম অধ্যায় কিতাবুল ইমারাহ, অনুচ্ছেদ: তাঁর বক্তব্য আমার উম্মত হতে সবসময় একটি গোষ্ঠী থাকবে হকের উপর। তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না তাদের বিরোধিতাকারীরা, ক্রম ১৯২০)
১০। মুসলিমদের মাঝে ঐক্য হবে বিশুদ্ধ আকিদার মানদণ্ডে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুরু করে সাহাবী, তাবেয়ী এবং প্রসিদ্ধ চার ইমাম, মুহাদ্দিসগণ, ও যুগে যুগে হকপন্থী আলেমগণ লালন করতেন। আর সেটার ওপরই সকলকে তৈরী করা অপরিহার্য।
ফিকহ শিক্ষা করার গুরুত্ব:
১। ফিকহ যারা শিক্ষা গ্রহণ করে তারা দীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করে। আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَانَ ٱلْمُؤْمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةً ۚ فَلَوْلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍۢ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِى ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ —
আর মুমিনদের সকলের একসাথে অভিযানে বের হওয়া সংগত নয়। অতঃপর তাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে ভীতিপ্রদর্শন করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে, যাতে তারা সতর্ক হয়। (সূরাঃ আত—তাওবা ১২২)
২। ফিকহ যারা শিক্ষা করে তারাই দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে। দীনী কোনো সমস্যা সমাধানে তাদের কাছে যেতেই আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
وَ لَوۡ رَدُّوۡهُ اِلَی الرَّسُوۡلِ وَ اِلٰۤی اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡهُمۡ لَعَلِمَهُ الَّذِیۡنَ یَسۡتَنۡۢبِطُوۡنَهٗ مِنۡهُمۡ
যদি তারা তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাদের মধ্যে যারা নির্দেশ প্রদানের অধিকারী তাদেরকে জানাত, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে তারা সেটার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত।
৩। ফিকহ এর জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হওয়া ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ লাভে ধন্য হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি দীনের ফিকহ প্রদান করেন। (বুখারী: ৭১; মুসলিম: ১০৩৭)
قال شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله ؛ كُلُّ مَنْ أَرَادَ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا لَا بُدَّ أَنْ يُفَقِّهَهُ فِي الدِّينِ ، فَمَنْ لَمْ يُفَقِّهْهُ فِي الدِّين ِ، لَمْ يُرِدْ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا، وَالدِّينُ : مَا بَعَثَ اللَّهُ بِهِ رَسُولَهُ
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন; আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য কল্যাণ ইচ্ছা করেন তাকে অবশ্যই দীনের ফিকহ দান করেন। সুতরাং যাকে দ্বীনের ফিকহ দেওয়া হয় না তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা কল্যাণ ইচ্ছা করেন না। আর দীন হলো; আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু তার রাসূলের নিকট প্রেরণ করেছেন। (মাজমু‘ ফাতাওয়া ২৮/৮০)
৪। ফিকহের জ্ঞান অর্জনকারীরা এমন যোগ্যতা অর্জন করে থাকেন যে তারা সর্বদা সম্মানিত বলে বিবেচিত হবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
تَجِدُوْنَ النَّاسَ مَعَادِنَ خِيَارُهُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الْإِسْلَامِ إِذَا فَقِهُوْا وَتَجِدُوْنَ خَيْرَ النَّاسِ فِيْ هَذَا الشَّأْنِ أَشَدَّهُمْ لَهُ كَرَاهِيَةً
“তোমরা মানুষদেরকে খনির মত পাবে। আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের উত্তম ব্যক্তিগণ ইসলাম গ্রহণের পরও তারা উত্তম। যখন তারা দীনী জ্ঞান অর্জন করে আর তোমরা শাসন ও কর্তৃত্বের ব্যাপারে লোকদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তিকে পাবে যে এই ব্যাপারে তাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক অনাসক্ত। (বুখারী, ৩৪৯৩)
৫। ফিকহ এর জ্ঞান লাভের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় লোকদের দো‘আ করেছিলেন। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার জন্য দো‘আ করেছিলেন;
اللهم فقهه في الدينِ، وعلِّمْهُ التأويلَ
হে আল্লাহ! আপনি তাকে দীনের প্রজ্ঞা দান করুন এবং তাকে তাফসিরের অগাধ জ্ঞান দান করুন। (বুখারী ২৪৭৭ ও মুসলিম ১৪৩)
৬। সাহাবায়ে কিরাম ফিকহের ব্যাপারে সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতেন। যেমন,
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
إذا مررتم برياض الجنة فارتعوا— أما إني لا أقول حلق القصاص ولكن حلق الفقه الفقيه والمتفقه
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযিয়াল্লাহ আনহু বলেন; যখন তোমরা জান্নাতের বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে তখন তা উপভোগ কর, আমি গল্পের মজলিসের কথা বলছি না বরং ফিকহ চর্চার মজলিসের ব্যাপারে বলছি। (কিতাবুল ফাকীহি ওয়াল মুতাফাককিহি পৃ: ১২)
আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
لأن أعلم بابا من العلم في أمر ونهي، أحب إلي من سبعين غزوة في سبيل الله عز وجل الفقيه والمتفقه
আমি অবশ্যই ইলমের মধ্যে আদেশ এবং নিষেধ সম্পর্কে একটি দরজা জানি (এখানে ইলমে ফিকহকে বুঝিয়েছেন), যা আমার কাছে আল্লাহর রাস্তায় সত্তর বার জিহাদ করার থেকে বেশি প্রিয়। (কিতাবুল ফাকীহি ওয়াল মুতাফাককিহি পৃ: ১৩)
মোটকথা: আকীদা ও ফিকহ হচ্ছে দীন। ইসলামের এ দু’টি অংশ যতক্ষণ কেউ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম না হবে ততক্ষণ তিনি আলেম বলে বিবেচিত হবে না। সুতরাং আকীদা ও ফিকহের জ্ঞান অর্জন করার কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ আমাদেরকে বিশুদ্ধ আকীদা ও ফিকহের জ্ঞানে ধন্য করুন। আমীন।
শিক্ষা পদ্ধতি ও ভর্তি বিষয়ক তথ্যাবলি:
উপদেষ্টা:
শিক্ষকমণ্ডলী:
যে সব কিতাব পড়ানো হয়
الكتب المقررة
العقيدة (درسا):
١. الفقه الأكبر
٢. العقيدة الطحاوية
٣. العقيدة الواسطية
٤. تاريخ العقيدة الإسلامية
٥. شرح المنظومة الحائيـــة للإمام ابن أبي داود.
٦. شرح كشف الشبهات
٧. كتاب التوحيد
٨. القواعد المثلى في أسماء الله الحسنى وصفاته العُل
٩. الفتوى الحموية الكبرى
١٠. شرح أصول الثلاثة والقواعد الأربعة
الفقه وأصوله (درسا):
١. متن الهداية
٢. متن كنز الدقائق
٣. عمدة الأحكام
٤. بداية المجتهد و نهاية المقتصد
٥. الإنصاف في بيان أسباب الاختلاف
٦. الفقه الميسر للندوي
٧. تيسير أصول الفقه
٨. الواضح في أصول الفقه
٩. فقه السنن والآثار
١٠. عمدة الرعاية في حل شرح الوقاية
১. উসূলুল ঈমান
২. ইসলামী আকিদা
৩. আল ফিকহুল আকবর বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা
৪. রহমান আরশের উপর উঠেছেন
৫. আল ফাতাওয়া আল হামাউইয়্যাহ আল কুবরা
৬. জিজ্ঞাসা ও জবাব
৭. এহইয়াউস সুনান
৮. ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ
৯. সহীহ হাদীস বিশ্বকোষ (ভূমিকা)
১০. বিভিন্ন ফিকহের তুলনামূলক পর্যালোচনা
১১. হাদীসের নামে জালিয়াতী
১২. উমদাতুল আহকাম
১৩. আকিদার চারটি মৌলিক পরিভাষা
১৪. এটা সালাফগণের মানহাজ নয়
১৫. অবশেষে সত্যের সন্ধান পেলাম
১৬. আশ‘আরীরা কি আহলুস সুন্নাহ?
১৭. বুস্তানুল মুহাদ্দেসীন।
১৮. লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ এর ব্যাখ্যা।
১৯. ইসলামী ফিকহ।
১. শাইখ উসামা খোন্দকার। চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট, ঝিনাইদহ।
২. আব্দুর রহমান সালাফী। সেক্রেটারী, আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট, ঝিনাইদহ।
দেশের অভ্যন্তর থেকে, ০১৭১৮১৩৬৯৬২। বহিঃবিশ্ব থেকে, ০০৮৮০১৭১৮১৩৬৯৬২
তাজবীদ ও অর্থসহ কুরআন শিক্ষা মক্তব
ট্রাস্ট সাধ্যমত শিশু, বয়স্ক ও মহিলাদের জন্য মসজিদ বা গৃহভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠা করে চলেছে। এ সকল মকতবে প্রশিক্ষিত শিক্ষকগণ বিশুদ্ধ তিলাওয়াত, কিছু সূরা ও সালাতে পঠিত যিকর-দুআগুলির অর্থ ও প্রয়োজনীয় মাসাইল শিক্ষা দেন।
কুরআন-শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স
আগ্রহী ইমাম, মুয়াজ্জিন, আলিম বা তালিব-ইলমদেরকে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত, অর্থ ও প্রয়োজনীয় মাসাইল শিক্ষাদান পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের কিছু ভাতা প্রদান করা হয়। সফলভাবে উত্তীর্ণদেরকে কুরআন শিক্ষা মকতব প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা হয়।
উলূমুস সুন্নাহ প্রশিক্ষণ কোর্স
তাওহীদ ও সুন্নতের চেতনায় সমৃদ্ধ আলিম ও দায়ী তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাইকৃত ছাত্রদেরকে ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে ১ বৎসর কুরআন, হাদীস, উলূমুল হাদীস, ফিকহ, আরবী, ইংরেজী, বাংলা ইত্যাদি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। যোগ্য ও আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকে পরবর্তী গবেষণা চালানোর জন্য সুযোগ ও সহায়তা দেওয়া হয়।
কুরআন, সুন্নাহ ও সীরাত বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রকুরআন, সুন্নাহ ও সীরাত গবেষণা কেন্দ্র
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর শরীয়াহ, সুন্নাহ ও সীরাত বিষয়ে গবেষণা এবং এ বিষয়ক বিভ্রান্তি, অপপ্রচার বা কুসংস্কার অপনোদন করে সঠিক সত্য প্রকাশ ও প্রচারের লক্ষ্যে আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলা, ইংরেজী, আরবী ইত্যাদি ভাষায় গবেষণা গ্রন্থ, প্রবন্ধ, প্রচারপত্র, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি প্রকাশ ও প্রচার করা এ কেন্দ্রে কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।
আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট নূরানী কিন্ডারগার্টেন : বালক ও বালিকা
সাধারণ শিক্ষার সকল চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আরবী ও ইসলামী শিক্ষায় দক্ষতা সম্পন্ন ইসলামী আদব ও শিষ্টাচারের মধ্যে পালিত জনশক্তি তৈরি উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সালে একাডেমীর প্রতিষ্ঠা। বিগত বছরগুলিতে মাধ্যমিক, বৃত্তি ও সমাপনী পরীক্ষা, প্রতিযোগিতা ও কুচকাওয়াজে একাডেমীর ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। একই পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচীতে পর্দার সাথে বালিকাদের লেখাপড়ার জন্য বালিকা মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১১ সাল থেকে।
আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স
সুন্নাহ ভিত্তিক ও সুন্নাহ কেন্দ্রিক গবেষণা কর্মাদি প্রকাশের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে “আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স”। এ প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রায় ৪০টি গবেষণা কর্ম প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে।
বিস্তারিত ঠিকানা৪৮ প্যারিদাস রোড বাংলা বাজার ঢাকা।
মসজিদ ভিত্তিক কুরআন শিক্ষা মক্তব
সুন্নাহর অন্যতম নির্দেশনা কুরআন কেন্দ্রিক জীবন ও দাওয়াত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীগণের পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ, প্রদান ও প্রচার আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের অন্যতম কর্মসূচী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয় সেই শ্রেষ্ঠ” (বুখারী)।
কুরআন শিক্ষা করা ও শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীগণের সুন্নাহ ছিল অর্থ অনুধাবন ও আমল-সহ শিক্ষা। সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা করে সেগুলির মধ্যে যা ইলম ও আমল রয়েছে তা শিক্ষা না করা পর্যন্ত পরবর্তী দশটি আয়াত শুরু করতেন না। (মুসনাদ আহমদ, হাদীসটি হাসান)।
মহান আল্লাহ বলেছেন: “যাদেরকে আমি কিতাব প্রদান করেছি তারা তা “হক্ক তিলাওয়াত” করে, তারাই ঈমানদার” (বাকারা: ১২১)। অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে তিলাওয়াত করা ও অর্থানুসারে কর্ম করাকে হাদীসে “হক্ক তিলাওয়াত” বলা হয়েছে (সহীহ বুখারী, মুসতাদরাক হাকিম, তাফসীর ইবন কাসীর)। বিভিন্ন আয়াতে কুরআনের আয়াতগুলির অর্থ চিন্তা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (নিসা: ৮২; সাদ: ২৯; মুহাম্মাদ ২৪)।
কুরআনের অর্থ বুঝতে পারলে মুমিনের হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে, ঈমান, তাকওয়া ও আল্লাহর প্রেম সুদৃঢ় ও সুগভীর হয়। অন্তত সালাতের মধ্যে যে সুরাগুলি পাঠ করা হয় সেগুলির অর্থ অনুধাবনের যোগ্যতাও একটি বড় অর্জন।
আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট সুন্নাত পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষার বিভিন্ন উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছে। কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিক্ষার পাশাপাশি কুরআনের অর্থ সাধ্যমত অনুধাবন করার যোগ্যতা শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃষ্টি করা ট্রাস্টের কুরআন শিক্ষা প্রকল্পগুলির অন্যতম লক্ষ্য। প্রশিক্ষিত ও যোগ্য শিক্ষকগণের দ্বারা মসজিদভিত্তিক কুরআন শিক্ষা মকতব প্রতিষ্ঠা, বিশুদ্ধ তিলাওয়াত, কিছু সূরার অর্থ ও প্রয়োজনীয় মাসাইল শিক্ষার জন্য শিশু, বয়স্ক ও মহিলাদের জন্য মক্তব প্রতিষ্ঠা আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট-এর অন্যতম লক্ষ্য।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক কুরআন শিক্ষা কোর্স
অধিকাংশ মুসলিম অভিভাবকই চান যে, তাদের সন্তানগণ কুরআন শিক্ষা করবে। তবে অনেকের জন্যই শিশুকালে তাদেরকে র্কুআন শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় নি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ায় রত সন্তানদেরকে মক্তবে পাঠানোও কষ্টকর। এজন্য “আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট” শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক কুরআন শিক্ষা কোর্স চালু করেছে।
আগ্রহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে সে প্রতিষ্ঠানে ১ বৎসর মেয়াদী নিয়মিত কোর্স এবং ছুটি কালীন বা পরীক্ষা পরবর্তী অবসরে ২ মাস মেয়াদী নিবিড় কোর্স চালুর ব্যবস্থা রয়েছে। এ সকল কোর্সে শিক্ষার্থীদের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত অনুশীলন, সালাতের প্রয়োজনীয় সূরা ও দুআগুলি অর্থ-সহ মুখস্থ করানো এবং প্রয়োজনীয় মাসাইল ও আহকাম শিক্ষা দেওয়া হবে।
কুরআন শিক্ষা প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়
মকতবে শিক্ষার্থীগণ খুব কম সময় দেয়। যে কারণে শিক্ষার্থীদেরকে “সীমাবদ্ধ” বিষয়াদি শিক্ষা দেওয়া যায়। ৩/৪ বৎসর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি কুরআন, প্রয়োজনীয় সূরাগুলির অর্থ, ও জরুরী মাসাইল শিক্ষা দেওয়া সহজ হয়। এজন্য আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট ৪ বৎসর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক কুরআন শিক্ষা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
এ বিদ্যালয়ে শিশু থেকে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত ৪ বৎসরে কুরআন শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় দীনী আহকাম শিক্ষার পাশাপাশি জাতীয় পাঠ্যক্রমের সকল বিষয় পাঠ দান করা হবে। এ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা যে কোনো সরকারী, বেসরকারী স্কুল বা মাদ্রাসায় ৪র্থ শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারবে।
আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট নূরানী কিন্ডারগার্ডেন
কুরআন শিক্ষা মক্তব এবং প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে আমরা “কুরআন পাঠ ও আংশিক অনুধাবনে সক্ষম” সচেতন ও সৎ মুসলিম তৈরি করতে পারি। পাশাপাশি কুরআনের বিশেষজ্ঞ, কুরআনের অর্থ ও আরবী ভাষায় পারদর্শী আলিম তৈরি সমাজের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরী। এজন্য “আস সুন্নাহ ট্রাস্ট” দুটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে: (১) “আল-ফারুক একাডেমী” যার বর্তমান নাম “আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট নূরানী কিন্ডারগার্টেন” এবং (২) “অর্থ-সহ হিফযুল কুরআন” প্রকল্প।
জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ও সাধারণ শিক্ষার সকল চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা ও আরবী ভাষায় দক্ষতা সম্পন্ন জনশক্তি তৈরি এবং কুরআন, হাদীস ও ইসলামী জ্ঞানে বিশেষজ্ঞ তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ খৃস্টাব্দে আল-ফারুক একাডেমীর প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের জাতীয় পাঠ্যক্রমের সাথে সঙ্গতি রেখে শিক্ষার্থীদেরকে বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত, তরজমা, হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, আকীদা, আরবী, বাংলা ও ইংরেজি ভাষা, অংক, বিজ্ঞান ইত্যাদিতে দক্ষতা ও পারদর্শিতা অর্জনের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়।
পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামী আহকাম, আদব, শিষ্টাচার ইত্যাদি প্রতিপালনে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বিগত বছরগুলিতে মাধ্যমিক, বৃত্তি ও সমাপনী পরীক্ষাগুলিতে, বিভিন্ন জাতীয় প্রতিযোগিতা ও কুচকাওয়াজে আল-ফারুক একাডেমীর ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। একই পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচীতে পর্দার সাথে বালিকাদের লেখাপড়ার জন্য আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট নূরানী কিণ্ডারগার্টেন বালক-বালিকা মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১১ সাল থেকে।
অর্থ-সহ হিফজুল কুরআন বিদ্যালয়
মাদ্রাসা বা স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণী পাস করা ৮/৯ বৎসরের শিশুদেরকে এ মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করা হবে। এরপর মোট ৬ বৎসরে তাকে আরবী ভাষা, ব্যাকরণ ও কুরআনের অর্থ-সহ কুরআন কারীম হিফয করানো হবে। প্রথম ৩ বৎসর পড়ার পরে শিক্ষার্থী মাদ্রাসা বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা দিবে। পরের ৩ বৎসর পড়ার পর সে মাদ্রাসা বোর্ডের অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষা দিবে। প্রথম ৩ বৎসরে কুরআন হিফয সম্পন্ন হবে। পরের দু বৎসর শুনানো চলবে। অষ্টম শ্রেণী পাসের পরে এরা যে কোনো ভাল মাদ্রাসা বা স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য ভাষা শিক্ষা কোর্স
মাদ্রাসা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষারত শিক্ষার্থীদের আরবী ভাষার দুর্বলতা তাদের কষ্ট দেয়। এতে তাদের পরীক্ষার ফল যেমন খারাপ হয়, তেমনি মান-সম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণের পথেও তাদের বড় প্রতিবন্ধক আরবী ভাষার দুর্বলতা। পাশাপাশি অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজি ও বাংলা ভাষায়ও দুর্বল। এদের জন্য আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস সুন্নাহ ট্রাস্ট আরবী, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় পারদর্শিতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন কোর্স চালু করেছে।
মাদ্রাসা শিক্ষিতদের জন্য আরবী ভাষা কোর্স
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মানগত অবক্ষয় সর্বজন বিদিত। ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিও এর ব্যতিক্রম নয়। মাদ্রাসা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বৎসর অনেক ছাত্র-ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়ে বের হলেও এদের মধ্যে আরবী গ্রন্থাদি পাঠে সক্ষম, কুরআন, হাদীস ও ফিকহের জ্ঞানে পারদর্শী খুব কমই পাওয়া যায়। অনেক আলিম কর্মজীবনে আরবী ভাষার দুর্বলতা অনুভব করেন এবং কষ্ট বোধ করেন।
কিন্তু দুর্বলতা দূর করার কোনো পথ পান না। তাদের জন্য আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট একটি বিশেষ “আরবী ভাষা কোর্স” প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ কোর্সের আওতায় আগ্রহী আলিম বা মাদ্রাসা শিক্ষিত ব্যক্তিগণ এক বৎসর ব্যাপী প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ২ ঘন্টা করে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আরবী “ইবারত” পাঠ, অনুধাবন, আরবী কথোপকথন, রচনা ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করবেন। আগ্রহী সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসায় এ কোর্সটি চালু করার বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।
শিক্ষিতদের জন্য অর্থ-সহ কুরআন শিক্ষা কোর্স
সহজে কুরআনের ভাষা আয়ত্ব করতে পারা কুরআনের একটি অলৌকিক দিক। মহান আল্লাহ বারংবার বলেছেন: “আমি অনুধাবনের জন্য কুরআনকে সহজ করেছি।” (কামার: ১৭, ২২, ৩২, ৪০) অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা দেখেছি যে, বাংলা/ইংরেজিতে অভিজ্ঞ একজন শিক্ষিত মানুষ খুব সহজেই আরবী ব্যাকরণের প্রয়োজনীয় বিষয়-সহ কুরআনের শব্দভাণ্ডার শিখে কুরআনের অর্থ বুঝতে পারেন। শিক্ষিত মানুষদেরকে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত-সহ অর্থ বুঝে কুরআন পাঠে সক্ষম করতে বিশেষ কোর্স তৈরি করেছে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস সুন্নাহ ট্রাস্ট।
কর্মজীবীদের জন্য নৈশ মাদ্রাসা
কর্মজীবী অনেক মানুষই ইসলামী জ্ঞানে পারদর্শিতা অর্জন করতে চান। বয়স ও কর্মব্যস্ততার কারণে নিয়মিত মাদ্রাসায় লেখাপড়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। তাদের জন্য “নৈশ মাদ্রাসা” প্রকল্প গ্রহণ করেছে আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট।
গ্রন্থ ভিত্তিক ‘হালাকা’ বা ইলমী মাজলিস
কুরআন-সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন ও প্রসারের জন্য সাহাবী-তাবিয়ীগণের যুগ থেকে প্রচলিত পদ্ধতি গ্রন্থ ভিত্তিক ‘হালাকা’ বা শিক্ষা মাজলিস। উন্মুক্ত আলোচনার চেয়ে গ্রন্থ কেন্দ্রিক মাজলিসের উপকারিতা বেশি। এজন্য আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস সুন্নাহ ট্রাস্ট নিজস্ব উদ্দ্যোগে বা আগ্রহী ইমাম, মুআজ্জিন বা আলিমের মাধ্যমে মসজিদ, বাড়ি, খানকা বা মাজলিসে সর্বজন স্বীকৃত ইসলামী মৌলিক গ্রন্থগুলির দরসের প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
অর্থ-সহ কুরআন মুখস্থ প্রতিযোগিতা
কুরআন শিক্ষায় উৎসাহ প্রদানের জন্য নির্ধারিত কিছু সূরা অর্থ-সহ মুখস্থ করার প্রতিযোগিতা ও সফল প্রতিযোগীদের জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদানের প্রকল্প গ্রহণ করেছে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট। ছাত্র-ছাত্রী ও বয়স্কদের জন্য পৃথক প্রতিযোগিতার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
অর্থ-সহ হাদীস মুখস্থ প্রতিযোগিতা
সুন্নাতে নববীর বিশুদ্ধ আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য “অর্থ-সহ হাদীস মুখস্থ প্রতিযোগিতা”। নির্ধারিত সংখ্যক হাদীস অর্থ-সহ মুখস্থ করে প্রতিযোগিরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিবে। ছাত্র-ছাত্রী ও বয়স্কদের জন্য পৃথক প্রতিযোগিতা এবং আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হবে।
কুরআন-শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
এ কেন্দ্রে আগ্রহী ইমাম, মুয়াজ্জিন, আলিম বা তালিব-ইলমদেরকে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত, অর্থ ও প্রয়োজনীয় মাসাইল শিক্ষাদান পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের কিছু ভাতা প্রদান করা হয়। সফলভাবে উত্তীর্ণদেরকে আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়া তাদেরকে কুরআন শিক্ষা মকতব প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা হয়।
ইমাম প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রকল্প
সমাজ উন্নয়নে ইমামগণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম সমাজ সামগ্রিকভাবে মসজিদ কেন্দ্রিক। আমাদের সমাজে প্রায় ২০-২৫% মুসলিম নাগরিক নিয়মিত/অনিয়মিত মসজিদে যান। যারা মসজিদে যান না তারাও বিভিন্ন উপলক্ষ্যে ইমাম সাহেবের সাথে সম্পর্ক রাখেন ও তাদেরকে শ্রদ্ধা করেন। একজন উচ্চশিক্ষিত ও মুত্তাকী ইমাম তাঁর এলাকার মানুষদের মধ্যে বিশুদ্ধ ধর্মীয় ও মানবীয় মূল্যবোধ প্রচারে এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক দুর্নীতি ও অবক্ষয় রোধে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারেন। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি, যৌতুক, নারী-নির্যাতন, ইভটিজিং ইত্যাদির প্রতিরোধে কোটি-কোটি টাকার প্রচার, সেমিনার, র্যালি ইত্যাদির চেয়ে ইমামগণের উপদেশ ও ওয়ায-নসীহত অনেক বেশি কার্যকর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও ইমামগণ এক্ষেত্রে পূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছেন না। আমাদের দেশে মুসলিমগণ মসজিদ নির্মাণে অকৃপণভাবে দান করেন। তবে মসজিদের জন্য একজন ভাল, উচ্চশিক্ষিত যোগ্য ইমাম নিয়োগে আমরা অত্যন্ত কৃপণ। অথচ যথাসম্ভব উচ্চশিক্ষিত ও মুত্তাকী ইমামের মাধ্যমে মসজিদে সর্বোত্তম খুতবা, ওয়ায, কুরআন শিক্ষা ও মাসলা-মাসাইল শিক্ষার ব্যবস্থা করাই মসজিদ আবাদ রাখার মূল বিষয়। ইমামগণকে তাদের যথাযোগ্য ভূমিকা পালনে সহায়তার জন্য আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
প্রথমত: ইমামগণকে সমকালীন সমাজমুখি ও জীবনঘনিষ্ট বিষয়াদিতে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক খুতবা ও আলোচনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান।
দ্বিতীয়ত: ইমামগণকে গবেষণা-কর্মে সহায়তা।
তৃতীয়ত: আগ্রহী মসজিদ কমিটিকে উচ্চশিক্ষিত যোগ্য ইমাম নিয়োগ ও সম্মানী প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়তা ও অনুদান প্রদান।
দাওরাতুল উলূমিল ইসলামিয়্যা ওয়াল আরাবিয়্যা
প্রতি বৎসর বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের আলিয়া বা কওমী মাদ্রাসা থেকে পাস করে আসা ৩৫০-৪০০ জন তালিব-ইলম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ায় ভর্তি হয়। এদের মধ্যে কমপক্ষে ৫০-৬০ জন ছাত্র খুবই মেধাবী ও ধার্মিক থাকে। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে এ সকল ছাত্র ক্রমান্বয়ে তাদের ইলম ও আমল হারিয়ে ফেলে। শুধু চাকরিমুখি লেখাপড়া ও দুনিয়াকেন্দ্রিক চিন্তা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এ সকল মেধাবী ও ধার্মিক তালিব ইলমদের মধ্য থেকে বাছাই করে ২০/৩০ জন ছাত্র গ্রহণ করে তাদেরকে এক বৎসরের ইলমী, আমলী ও গবেষণা প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট। বাছাইকৃত শিক্ষার্থীরা এক বৎসর ট্রাস্টের আবাসনে অবস্থান করবেন। নিয়মিত রুটিনের আওতায় তারা ইবাদত, বন্দেগী, খাওয়া, ঘুম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও লেখাপড়ার পাশাপাশি কুরআন, হাদীস, ফিকহ, আরবী, ইংরেজি, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ কোর্স ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। সফলভাবে উত্তীর্ণদের বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া যোগ্য ও আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকে ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে পরবর্তী গবেষণা চালানোর জন্য সুযোগ ও সহায়তা দেওয়া হবে।
তাখাসসুসু ফি উলূমুল হাদীস
কাওমী, আলিয়া বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকে উলূমুল হাদীস বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ে ২ বৎসর মেয়াদী পূর্ণকালীন শিক্ষা ও উচ্চতর ডিপ্লোমা প্রকল্প গ্রহণ করেছে আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট।
কুরআন, সুন্নাহ ও সীরাত বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রকুরআন, সুন্নাহ ও সীরাত গবেষণা কেন্দ্র
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর শরীয়াহ, সুন্নাহ ও সীরাত বিষয়ে গবেষণা এবং এ বিষয়ক বিভ্রান্তি, অপপ্রচার বা কুসংস্কার অপনোদন করে সঠিক সত্য প্রকাশ ও প্রচারের লক্ষ্যে আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলা, ইংরেজী, আরবী ইত্যাদি ভাষায় গবেষণা গ্রন্থ, প্রবন্ধ, প্রচারপত্র, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি প্রকাশ ও প্রচার করা এ কেন্দ্রে কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।
সুন্নাহ বিষয়ক গবেষণা চক্র
জীবন ঘনিষ্ঠ সকল বিষয়ের সুন্নাহ নির্ভর সমাধান জানতে এবং দেশের আলিমগণকে সুন্নাহ বিষয়ক গবেষণায় শরীক করার উদ্দেশ্যে আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট জাতীয় পর্যায়ে “আস-সুন্নাহ স্টাডি সার্কল”-এর উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রতিটি গবেষণা চক্রের জন্য উলামায়ে কিরামের পরামর্শের ভিত্তিতে বিষয় নির্ধারণ করে এক বা একাধিক আলিমে দীনকে প্রবন্ধ উপস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করা হবে। লিখিত প্রবন্ধটি অংশগ্রহণকারী সকল আলিমের কাছে প্রেরণ করা হবে। নির্ধারিত দিনে প্রবন্ধ উপস্থাপক প্রথমে তাঁর প্রবন্ধের সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করবেন। এরপর উপস্থিত আলিমগণ সে বিষয়ে তাদের মতামত পেশ করবেন। প্রয়োজনে একই বিষয় একাধিক মাজলিসে আলোচনা করা হবে। আলিমগণের পরামর্শ, সংযোজন, বিয়োজন বা আপত্তি-সহ বিষয়ভিত্তিক এ সকল প্রবন্ধ প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সষ্টির সেবা, মানব-সেবা, ও সমাজের অসহায়, দুর্বল বা বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্যতম সুন্নাত ও শিক্ষা। এ মহান সুন্নাত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
এগুলির মধ্যে রয়েছে:
সাধারণ সেবা প্রকল্প
দুস্থ ও বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্যতম সুন্নাত। তিনি বলেন: “যে মানুষ অন্য মানুষদের জন্য অধিক উপকারী সেই আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। আল্লাহর নিকট প্রিয়তম কর্ম যে, তুমি কোনো মুসলিমের জীবনে আনন্দ প্রবেশ করাবে, তার কোনো বিপদ-কষ্ট দূর করবে, তার কোনো ঋণ দূর করবে অথবা তার ক্ষুধা দূর করবে। আমার কোনো ভাইয়ের প্রয়োজনে তার সাথে পথচলা আমার কাছে মসজিদে নববীতে একমাস ইতিকাফ করা থেকে প্রিয়তর।” (তাবারানী, সহীহুল জামি, হাদীসটি হাসান) এ সুন্নাতকে জীবন্ত করতে “আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট” দরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারকে সাধ্যমত আর্থিক সাহায্য, পোশাক বা শীত বস্ত্র প্রদান, নলকূপ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-বৃত্তি প্রদান, প্রয়োজনীয় সমাজিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সাহায্যপ্রার্থী ও দুযোর্গে আক্রান্তদের সহায়তা ছাড়াও সমাজের যে সকল দুস্থ ব্যক্তি সামাজিক মর্যাদা বা অন্য কারণে সাহায্য চাইতে পারেন না, তাদেরদকে চিহ্নিত করে গোপন ও সম্মানজনক সহায়তায় ট্রাস্ট সচেষ্ট।
দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প
ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচনে রত থাকা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্যতম সুন্নাত। আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস সুন্নাহ ট্রাস্ট সুন্নাতে নববীর আলোকে কায়িক শ্রম ও কর্মের ফযীলত বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি কর্মক্ষম নারী ও পুরুষদেরকে আর্থিক সহায়তা, কর্ম বা ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ, সামাজিক সমর্থন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
আদর্শ দারিদ্র্যমুক্ত “যাকাত-গ্রাম” প্রকল্প
দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের মূল ব্যবস্থা “যাকাত”। কৃষি প্রধান দেশে “উশর” বা ফসলের যাকাত এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারে। আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস সুন্নাহ ট্রাস্ট-এর সেবা ও উন্নয়ন মূলক অধিকাংশ প্রকল্পই যাকাত ও উশর নির্ভর। এগুলির পাশাপাশি যাকাত ও উশর ভিত্তিক “আদর্শ দারিদ্র-মুক্ত গ্রাম” প্রতিষ্ঠা ট্রাস্টের অন্যতম প্রকল্প। বাছাইকৃত গ্রামের দরিদ্র, বেকার, ইয়াতিম, বিধবা ও দুস্থদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে সাময়িক সাহায্য, শিক্ষা বৃত্তি, কর্মসংস্থান, কর্ম-উপকরণ প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে গ্রামটিকে দারিদ্র মুক্ত ও স্বনির্ভর করে তোলা এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
কর্জে হাসানা বা সূদমুক্ত ঋণদান প্রকল্প
দারিদ্র বিমোচন ও সহমর্মী সমাজ গঠনে যাকাতের পাশাপাশি কর্জে হাসানা বা সূদমুক্ত সহজ ঋণের গুরুত্ব অপরিসীম। ঋণের প্রকৃতি ও উপকার হিসেবে হাদীস শরীফে একে দানের অর্ধেক, সমান বা বেশি সাওয়াবের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, দুবার ঋণ প্রদান একবার দান করার মতই। (সহীহুত তারগীব, হাদীসটি সহীহ)। অন্য হাদীসে তিনি বলেন: “প্রত্যেক ঋণই দান” (সহীহুত তারগীব, হাদীসটি হাসান)। অন্য হাদীসে তিনি বলেন: “জান্নাতের দরজায় লেখা রয়েছে যে, দানের সাওয়াব দশগুণ আর ঋণের সাওয়াব আঠারো গুণ।” (তাবারানী, সহীহুত তারগীব, হাদীসটি হাসান)। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে দান করার চেয়ে ঋণ দেওয়াকে উত্তম বলা হয়েছে। (সহীহুত তারগীব) সাময়িক বিপদগ্রস্ত অনেক মুসলিম যাকাত গ্রহণ করতে পারেন না। তাদেরকে সহজ ঋণের মাধ্যমে সহায়তা করার পাশাপাশি যাকাত ও ঋণের সমন্বয় ট্রাস্টের অন্যতম লক্ষ্য। সঠিক তত্ত্বাবধান না থাকলে অধিকাংশ যাকাত-গ্রহীতা যাকাতের রিকশা, গাভী ইত্যাদি কিছুদিনের মধ্যে বিক্রয় করেন। যাকাত ও ঋণের সমন্বয় করলে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব। যেমন একজন দরিদ্রকে ১০ হাজার টাকার রিকশা প্রদান করে বলা হবে যে, এর ৮ হাজার টাকা যাকাত ও ২ হাজার টাকা ঋণ। তুমি প্রতিদিন ২০/৩০ টাকা জমা দিয়ে ঋণ শোধ করার পর তোমাকে রিকশার মালিকানা দেওয়া হবে। তাহলে সে কষ্টে অভ্যস্ত হবে এবং রিকশাটির পিছনের নিজের শ্রম ও অর্থ থাকার কারণে সহজে তা বিক্রয় করবে না। পাশাপাশি ঋণদাতা ব্যক্তি তার একই অর্থ বারবার ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দানের চেয়েও অনেক বেশি সাওয়াব লাভ করবেন।
চিকিৎসা সহায়তা প্রকল্প
অসুস্থ ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান সুন্নাতে নববীর অন্যতম দিক। মুসলিমের উপর মুসলিমের অধিকারের অন্যতম অসুস্থ ব্যক্তি পাশে থাকা। (বুখারী ও মুসলিম)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থের কাছে গমন করে সে জান্নাতের বাগানে বিচরণ করে।” (মুসলিম) কোনো অসুস্থ মানুষের পাশে গমন করলে ৭০ হাজার ফিরিশতা দুআ করতে থাকেন (তিরমিযী, সহীহ)
এ সুন্নাত পালনের জন্য ট্রাস্ট “ইয়াদাতুল মারীদ” প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ, ঔষধ, চিকিৎসাধীনদের আর্থিক সহায়তা, রক্তসংগ্রহ, চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
ইয়াতিম প্রতিপালন ও সহায়তা প্রকল্প
কুরআন-সুন্নাহে ইয়াতিমদের সহায়াতার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস সুন্নাহ ট্রাস্ট নিজস্ব ইয়াতিমখানায় ইয়াতিমদের প্রতিপালন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
বিধবা ও দুস্থ নারী সহায়তা প্রকল্প
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বিধবা ও দরিদ্রদের জন্য সচেষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী অথবা রাতভর তাহাজ্জুদ আদায়কারী ও দিনভর সিয়াম পালনকারীর মতই (সাওয়াবের অধিকারী)।” (সহীহ বুখারী) বিধবা ও দুস্থ নারীদের বাজার করা-সহ তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও সহায়তা সাহাবায়ে কিরামের সুপরিচিত সুন্নাত। বর্তমানে আমাদের সমাজে ইয়াতিম বিষয়ক সচেতনতা বিদ্যমান, তবে বিধবা বিষয়ক সচেতনতা অনুপস্থিত। বিধবা ও দুস্থ মহিলাদের সেবার সুন্নাত জীবন্ত করার লক্ষ্যে “আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট” “বিধবা ও দুস্থ নারী প্রকল্প” গ্রহণ করেছে। বিধবা নারী সাধারণত স্বামীর সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। এ ছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক বঞ্চনার শিকার হন। সর্বোপরি তিনি আর্থিক অসহায়ত্বে নিপতিত হন। আস-সুন্নাট ট্রাস্ট বিধবাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, তাদের অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপার্জন ব্যবস্থা বা কর্ম-সংস্থান ছাড়াও তাদের অধিকার রক্ষার সামাজিক ও আইনগত সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিবাহ ও পরিবার গঠন সহায়তা প্রকল্প
ইসলামে বিবাহ ও পরিবার গঠনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এজন্য যাকাত ব্যবহারের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে বিবাহকে নিরুৎসাহিত বা বিলম্বিত করা হচ্ছে এবং প্রকারান্তে অশ্লীলতাকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট এ গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতটি জীবন্ত করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে। পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে সহায়তা, যৌতুক বিহীন বিবাহ, বিবাহেচ্ছুকদের কর্মসংস্থান, বিশেষ সাহায্য, পারিবারিক সদ্ভাব সংরক্ষণে পরামর্শ ও সহায়তা ইত্যাদি এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
আইনী সহায়তা প্রকল্প
মাযলূমের পাশে দাঁড়ানো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্যতম সুন্নাত। তাঁর পবিত্র জীবনে সর্বদা এ বিষয়কে তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন: “মুমিনের প্রতি মুমিনের অধিকারের মধ্যে রয়েছে মাযলূম বা অসহায়কে সাহায্য করা।” (নাসাঈ, সহীহ) তিনি বলেন: “আল্লাহর নিকট প্রিয়তম কর্ম হলো যে, তুমি কোনো মুসলিমের জীবনে আনন্দ প্রবেশ করাবে, অথবা তার কোনো বিপদ-কষ্ট দূর করবে…। যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে তার সাথে গমন করে তার প্রয়োজন সমাধা করে দেবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার পদযুগলকে পিছলে পড়া থেকে রক্ষা করবেন, যেদিন অন্যদের পা পিছলে যাবে। (তাবারানী, সহীহুল জামি, হাসান) মাযলূমের পাশে দাঁড়ানো ও প্রয়োজন মেটানোর সুন্নাত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট “আইনী সহায়তা প্রকল্প” গ্রহণ করেছে। সমাজিক সালিস, থানা ও কোর্টে দুর্বল ও অসহায়দেরকে সর্ব প্রকারের আইনী সহায়তা, পরামর্শ, পাশে থেকে মনোবল বাড়ানো ও আর্থিক সাহায্য প্রদান এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
মূল্যবোধ ও অধিকার বিষয়ক গণ-সচেতনতা প্রচার
ওয়ায, আলোচনা, লেখনি ও বিভিন্ন দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের দেশে ইসলামী মূল্যবোধ প্রচারের ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে সুন্নাহ নির্দেশিত হুকুকুল ইবাদ বা মানবাধিকার ও বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ক প্রচার খুবই কম। এজন্য আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট বিশেষভাবে এ বিষয়ে প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্ব, সৃষ্টির অধিকার, সৃষ্টির সেবা, মানবাধিকার, শিশু, নারী ও দুর্বলদের অধিকার, পারিবারিক, সামাজিক ও মানবীয় মূল্যবোধ ও দায়িত্ব, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, কর্ম ও কায়িক শ্রমের ফযীলত ইত্যাদি বিষয়ক কুরআন ও সুন্নাহের নির্দেশনা প্রচারের জন্য ওয়াজ মাহফিল, আলোচনা সভা, সেমিনার, কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন, প্রচারপত্র, পুস্তিকা ইত্যাদি প্রণয়ণ ও প্রচার আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের কর্মকাণ্ডের অন্যতম।
আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়ন বিষয়ক মাজলিস
আত্মশুদ্ধি, আত্মোন্নয়ন ও পবিত্র-উদ্ভাসিত জীবন অর্জন ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব ও কর্মসূচী বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন: “তিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন।” (সূরা বাকারা: ১২৯। আরো দেখুন: সূরা বাকারা: ১৫১; সূরা আল-ইমরান: ১৬৪; সূরা জুমুআ: ২)। মহান আল্লাহ আরো বলেন: “যে কোনো পুরুষ অথবা নারী সৎকর্ম করবে এবং সে মুমিন হবে নিশ্চয়ই আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কাজের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।” (সূরা নাহল: ৯৭)। কুরআন ও হিকমাহ বা সুন্নাহ-এর সঠিক জ্ঞান ও অনুশীলনের অভাবে অধিকাংশ মুমিন নরনারী কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত এ পরিশুদ্ধি ও পবিত্র জীবনের অনাবিল আনন্দ থেকে বঞ্চিত। প্রকৃত আত্মশুদ্ধি, আত্মোন্নয়ন অর্জন এবং দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা, ও বিদ্বেষ মুক্ত পবিত্র জীবন অর্জনের কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পথ ও পদ্ধতির প্রচার, প্রসার ও অনুশীলন এবং এজন্য সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক মাজলিস, অনুশীলন, আলোচনা ও প্রচার আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট-এর অন্যতম কর্মসূচী।
আস-সুন্নাহ এওয়ার্ড
সুন্নাতে নববীর প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে সুন্নাহ ভিত্তিক শিক্ষা, গবেষণা, সেবা, উন্নয়ন ও প্রচারে নিয়োজিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিগণকে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর-আস সুন্নাহ ট্রাস্ট ‘সম্মাননা’ ও ‘এওয়ার্ড’ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স
সুন্নাহ ভিত্তিক ও সুন্নাহ কেন্দ্রিক গবেষণা কর্মাদি প্রকাশের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে “আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স”। এ প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রায় দু ডজন গবেষণা কর্ম প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে।
ইন্টরনেট ভিত্তিক গবেষণা ও প্রচার প্রকল্প
বর্তমানে যানজট, ব্যস্ততা, আগ্রহের কমতি ইত্যাদি কারণে অনেকেই ওয়ায মাহফিল, আলোচনা ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন না। ঘরে বসে শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম সহজ পদ্ধতি ইন্টারনেট। সল্প খরচে সহজেই ইন্টারনেটে ই-রেডিও, ই-ম্যাগাজিন, ফেসবুক, ওয়েব-পেজ, ইউটিউব, ইত্যাদির মাধ্যমে এবং কম্পিউার প্রোগ্রাম, সফটওয়ার ইত্যাদির মাধ্যমে কুরআন, বিশুদ্ধ সুন্নাহ ও ইসলামী মূল্যবোধ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। দীনী ও ইলমী প্রচারে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবহার আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য ট্রাস্ট একটি গবেষণা সেল প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এ লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
“আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট” উপর্যুক্ত সকল লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে “মাজলিসুস সুন্নাহ” নামে একটি মজলিস গঠন করেছে। এ মজলিসের সদস্যগণ যথাসাধ্য সাহাবীগণের পদ্ধতিতে কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষাগ্রহণ, প্রতিপালন, পরিবার-পরিজন ও অধিনস্থদের পরিচালন ও আত্মশুদ্ধি অর্জনে সচেষ্ট থাকবেন, সমাজের সকলের হক্ক আদায়, সেবা ও ভালবাসার পাশাপাশি তাদেরকে সুন্নাতের দাওয়াত প্রদান করবেন এবং ট্রাস্টের সাথে মতবিনিময় ও সহযোগিতার মাধ্যমে সুন্নাতে নববীর চর্চা, গবেষণা, সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী বিশ্বাস, মূল্যবোধ, শিক্ষা, নৈতিকতা, আত্মশুদ্ধি, সম্প্রীতি, ভালবাসা, সহনশীলতা, মানব-সেবা ও সৃষ্টির সেবার চর্চা সম্প্রসারিত করবেন। আগ্রহী মুমিনগণ দেশে ও বিদেশে যে কোনো স্থানে “মাজলিসুস সুন্নাহ”-এর শাখা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুন্নাতে নববীর প্রচার ও প্রতিষ্ঠার এ মুবারক কর্মে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
নূরানী
বিভাগ
হিফজ
বিভাগ
কিতাব
বিভাগ
উচ্চতর দওয়াহ
বিভাগ
উচ্চতর হাদীস গবেষণা
বিভাগ
আল-ফিকহ ও আল-আকিদা
বিভাগ