প্রশ্ন-৬১: আমি ইউনিভার্সিটিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্টে পড়ি। আমি হিজাব পরিধান করতে পছন্দ করি। কিন্তু ইউনিভার্সিটির পরিবেশ এবং আমার আনুষঙ্গিক অবস্থা এরকম যে, হিজাব পরিধান করে গেলে অনেকে আমাকে টিজ করে, অনেকে আমাকে নিরুৎসাহিত করে, মন্দ কথা বলে। এক্ষেত্রে আমি কী করতে পারি?

উত্তর: বর্তমানে একদিকে অনেক অমুসলিম মহিলা ইসলামের হিজাব দেখেই মুসলিম হচ্ছেন। ইউরোপে, আমেরিকায় সব জায়গাতেই হচ্ছে। আরেকদিকে অনেক মানুষই হিজাব দেখে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এমনকি অনেক মুসলিমও হিজাবকে ঘৃণা করেন। অমুসলিমরা অনেকেই না বুঝে করেন। এক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় করণীয় রয়েছে। তার প্রথম হল, হিজাব বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া। আমি অনেক আগে একজন আমেরিকান মহিলা, নাওমি উলফ, তার একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম।

ভদ্রমহিলার আর্টিকেলের নাম হল দ্যা ভেইল্ড মডেস্টি (পর্দায় ঢাকা সতিত্ব)। তো উনি এ প্রবন্ধে লেখেছেন, ‘আমরা পাশ্চাত্যের মানুষেরা হিজাবকে ঘৃণা করি এবং এটাকে স্যাগ্রিগেশনের একটা সিম্বল মনে করি। জুলুমের একটা প্রতীক মনে করি। আর আমরা বিশ্বাস করি, কোনো সচেতন নারী হিজাব করেন না। যারা করেন তারা সেকেলে। স্মার্ট না বলেই তারা এগুলো ঢেকে ঢুকে চলেন। তবে এই ব্যাপারে একটু ফিল্ড ওয়ার্ক করার জন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তর আফ্রিকার মরক্কো, তিউনেশিয়া,আলজেরিয়া, মিসরসহ বিভিন্ন দেশে সফর করলাম।

সে সকল দেশের বাজারে হিজাব পরিহিত মেয়েদেরকে আমি টার্গেট করে তাদের সাথে পরিচয় করে সুযোগমত তাদের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। আমার উদ্দেশ্য হল, পর্দার বাইরে তারা কেমন, সেটা দেখা এবং তাদের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে জানা।’ তিনি বললেন, ‘আমি যখন এসকল মেয়েদের বাড়িতে গেলাম তখন দেখলাম, মেয়েগুলোর মোটেও স্মার্টনেসের ঘাটতি নেই। পোশাক-আশাকগুলো, পর্দার নিচে যেটা, এটা স্মার্ট, ম্যাচিং আছে। তাদের কসমেটিক এর সবই আধুনিক।

আধুনিকতার মানে তারা পরিপূর্ণ। তবে এতে প্রমাণ হল যে, আধুনিকতার অভাবে তারা বোরকা পরছেন না। স্বভাবতই তারা বোরকা পরছেন।’ তাদের ভেতরে, নাওমি উলফ লেখেছেন, ‘আমি দুইটা জিনিস ব্যতিক্রম পেলাম। একটা হল আমরা পাশ্চাত্যের মেয়েরা যারা খোলা থাকতে ভালোবাসি, আর খোলা থাকার কারণে খোলা দেহটা আমাদের মেকআপ করতে হয়। ব্যাপকভাবে। এতে কী হয়? মেকআপ না করলে আমাদেরকে ভালো দেখায় না। খুব অড লুকিং লাগে।

আর পর্দানশীল মেয়েদেরকে দেখলাম, তাদের স্কিনটা অত্যন্ত কমনীয়।তারা এঞ্জেলিক। অর্থাৎ মেকআপ ছাড়াই তারা যখন বোরখা খোলেন, আমার সামনে স্বাভাবিকভাবে আসেন, তাদের স্ক্রিনটা অত্যন্ত সুন্দর এবং কমনীয়। তারা ফর্সা না কালো এটা বড় নয়। তাদের স্ক্রিনে যে কমনীয়তা, দেহের যে কমনীয়তা এটা অ্যাঞ্জেলিক। এটা পর্দার কারণেই হয়েছে। আরেকটা হল দাম্পত্য জীবনে।

আমরা পাশ্চাত্যে যেহেতু খোলামেলা সমাজে বাস করি, সারা দিনেই আমাদেরকে বিভিন্ন নারী পুরুষ একসাথে মিশতে হয়। বিবাহিত জীবন থাকলেও স্বামী-স্ত্রীর মাঝে আকর্ষণ খুবই কম থাকে। একটা নরমাল প্রাতিষ্ঠানিক মনে হয়। অফিশিয়াল মনে হয়। কিন্তু পর্দাশীল পরিবারগুলোতে স্বামী-স্ত্রীর ভেতরে সম্পর্কটা আরো অনেক গভীর বলে তার কাছে মনে হয়েছে। পর্দা সম্পর্কে এই যে একজন পাশ্চাত্যের নারীর মূল্যায়ন, এটা আমাদের বুঝতে হবে।

পর্দার উপকারিতা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। পর্দা যে আল্লাহর ফরয বিধান, এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি এবং দুনিয়ার নিরাপত্তা লাভ করছি, এটা অনুভব করতে হবে এবং মানুষদেরকে সুন্দরভাবে বোঝাতে হবে, চেষ্টা করতে হবে। আর দীন পালনের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা তো আসতেই পারে। মানুষ বুঝে না বুঝে করতেই পারে। এগুলোকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া নিআমত হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।