প্রশ্ন-১৮১: আমার প্রশ্ন হল, আমার আম্মু খুব অসুস্থ। আমাদের এখানে মেডিটেশন করান অনেকেই। ইসলামের দিক থেকে এটা কতটুকু জায়িয?

উত্তর: বর্তমানে সারাবিশ্বে মেডিটেশনের প্রসার ঘটেছে, মেডিটেশন, ইয়োগা, কোয়ান্টাম মেথড ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ধ্যান করা হচ্ছে। ধ্যান বিষয়ে জানার আগে আমরা মূল একটা বিষয় জানি। যে ব্যক্তি কখনো বিরিয়ানি খায়নি, তাকে তেহারি খাওয়ালে হয়তো মজা পাবে। কিন্তু যে নিয়মিত ভালো বিরিয়ানি খায় তার কাছে…? কেন তেহারি খাবে? এটা হল মূল প্রশ্ন। ধ্যান বা মেডিটেশন একটা নেগেটিভ এপ্রোচ। অর্থাৎ আপনি কল্পনা করছেন, আপনার এইরকম হচ্ছে, আপনার চারিপাশে এরকম হচ্ছে…।

একটা কল্পনার মাধ্যমে

নিজের মনকে শান্ত করা, মনকে উজ্জীবিত করা। এটাতে মূলত মিথ্যা কল্পনার মাধ্যমে, অনেক সময় চিন্তা করে করে নিজের ভেতরে একটা শক্তি আনার চেষ্টা করা হয়। আর নিজের মনকে মিথ্যা প্রবোধ দিতে দিতে একসময় মন মনে করে যে আমি সত্যিই বোধহয় এটা। এর বিপরীতে ইসলামে যেটা রয়েছে, সেটা হচ্ছে যিকির এবং দু‘আ। যিকির এবং দু‘আ হচ্ছে একটা পজিটিভ এপ্রোচ। আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করছেন, কোনো মিথ্যা কল্পনা নয়।

শুধু অর্থের দিকে একটু খেয়াল রেখে আল্লাহর নামটা মুখে নেওয়া, আল্লাহর প্রশংসাবাচক কোনো বাক্য মুখে নেওয়া এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা- এই প্রার্থনায় আপনি মনোযোগ যতো গভীরে দেবেন, আপনি দশ মিনিটের যিকির ও প্রার্থনায় যে ফল পাবেন, জাগতিক ফল, এটা এক ঘণ্টার মেডিটেশনের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। যে ধর্ম যে সমাজ নামায জানে না, দু‘আ জানে না, যে ধর্মে সরাসরি যিকির বা দু‘আর ব্যবস্থা নেই, পুরোহিতের কাছে যেতে হয়, পাদরির কাছে যেতে হয়, তারা মেডিটেশন খুঁজবে, ইয়োগা খুঁজবে, এটা স্বাভাবিক।

ইসলামে আমাদের মুসলিমদের রয়েছে দু‘আ-যিকির-সালাত। আপনি দু‘আয় অভ্যস্ত হন, ধ্যানের চেয়ে, মেডিটেশনের চেয়ে- আপনি নিজে একটু আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে শিখুন, এতে, মেডিটেশনে আমরা যেটা পাই, অর্থাৎ আত্মিক শক্তি, অসুস্থতাকে কাটিয়ে তোলার জন্য মনের জোর- এটা তো আপনি পাবেনই; উপরন্তু, বান্দা যখন আল্লাহ কাছে দু‘আ করে, কথা বলে তার আত্মা শুদ্ধ হয়, আত্মায় শক্তি আসে এবং সে অগণিত সাওয়াব পেতে থাকে। আমরা যেখানে দু‘আ ও যিকিরের মাধ্যমে- মেডিটেশনের যে লাভ, এক ঘণ্টার মেডিটেশনে যে লাভ, দশ পনের মিনিটে দু‘আ-যিকিরে অনেক বেশি লাভ।

এবং এখানে কোনো উস্তাদ লাগে না। আপনি আল্লাহর দিকে মনোযোগ দেবেন, ক্রমান্বয়ে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। সবচে’ বড় কথা, এতে আপনি দুনিয়ার এই লাভের পাশাপাশি আত্মার লাভ, আত্মার শক্তি, আল্লাহর সাওয়াব ও যিকির, আল্লাহর জান্নাত পাচ্ছেন। আমি অনুরোধ করব, আমরা এই মেডিটেশন নামক নেগেটিভ এপ্রোচের চেয়ে দু‘আ এবং যিকিরের মাধ্যমে আমাদেরকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করি। আমাদের মানসিকতা সুন্দর করি, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সুন্দর করি। মানুষের প্রতি ধারণাকে সুন্দর করি। আল্লাহ তাওফীক দিন। এখানে আরো অনেক বিষয় আছে, যা ঈমান নষ্ট করার পর্যায়ে নিতে পারে।