আধুনিক উপকরণগুলি

অবশ্যই ইসলামী বিধিবিধানের আওতায় ব্যবহার করতে হবে। দা‘ওয়াত, আদেশ, নিষেধ বা প্রতিবাদের নামে ইসলাম নিষিদ্ধ কোনো কাজ করা যায় না। হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ এ জাতীয় একটি আধুনিক উপকরণ, যা পাশ্চাত্য জগত থেকে আমাদের মধ্যে প্রবেশ করেছে এবং অনেক সময় পাশ্চাত্যের অনুকরণে ইসলাম বিরোধীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

যদি কোনো সমাজে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নাগরিকদের মতামত প্রকাশের জন্য মিছিল, হরতাল ইত্যাদির প্রচলন ও স্বীকৃতি থাকে তাহলে সে সমাজের ‘দা‘য়ী’গণ দা‘ওয়াতের বা আদেশ নিষেধের জন্য হয়ত তা ব্যবহার করতে পারেন, তবে তা অবশ্যই স্বতস্ফুর্ত ও ঐচ্ছিক হলে।

হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ, প্রতিবাদসভা ইত্যাদির নামে রাস্তাঘাট বন্ধ করা, কাউকে কষ্ট দেওয়া, জোরপূর্বক অংশগ্রহণ করানো, জানমালের ক্ষতি করা, কর্মস্থলের অধিকার নষ্ট করা ইত্যাদি সবই কঠিন হারাম কর্ম। অনুরূপভাবে মুর্তি, কুশপুত্তলিকা বা কার্টুনমুর্তি তৈরি করা, ফাঁসি দেওয়া, পোড়ানো ইত্যাদিও ইসলাম—নিষিদ্ধ কর্ম। এগুলি পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ ছাড়া কিছুই নয়।

পাশ্চাত্য রীতি অনুসারে

হরতালের সময় কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ কাজ বন্ধ করে দেন। ইসলামের নির্দেশে কর্মচারী বা কর্মকর্তা কর্মদাতার সাথে চুক্তি মোতাবেক পরিপূর্ণ সময় কর্ম করতে বাধ্য। তিনি তাঁর চুক্তি বাতিল করতে পারেন, কিন্তু চুক্তিবদ্ধ থাকা অবস্থায় চুক্তি ভঙ্গ করতে পারেন না। তাহলে জুলুম ও মানুষের হক্ক নষ্ট করার পাপে পতিত হবেন। তিনি তাঁর কর্মদাতার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেন।

কিন্তু পাপের মাধ্যমে নয়। কর্মদাতার অন্যায়ের ক্ষেত্রেও তিনি কর্ম না করে টাকা নিতে পারেন না। আইনানুগ পদ্ধতিতে অন্যায়ের প্রতিকার করতে পারেন। তাহলে যেক্ষেত্রে কর্মদাতার কোনো অন্যায় নেই, রাষ্ট্রের বা অন্য কারো অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি চুক্তির খেলাফ করে কাজ না করে বসে থাকবেন কী—ভাবে!

এছাড়া এ জাতীয় কর্ম অনেক সময় উম্মাতের জন্য ক্ষতিকর। আমেরিকা বা ইসরাইলের কোনো একটি অন্যায়ের প্রতিবাদে বাংলাদেশের মানুষ একদিন হরতাল—ধর্মঘট পালন করলে ইহূদীদের কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে বাংলাদেশের জনগন ও রাষ্ট্রের। এরূপ কর্ম কখনোই শরীয়তে বৈধ হতে পারে না এবং কোনো অবস্থাতেই ন্যায় প্রতিষ্ঠার বা অন্যায়ের প্রতিবাদের ইসলামী মাধ্যম হতে পারে না।

বিশ্বের যে কোনো স্থানে

মাজলুম মানুষ ও প্রাণীর প্রতি সমবেদনা ও জুলুমেরর নিন্দা করা মুমিনের দায়িত্ব। তবে তা ইসলামী আখলাক ও পদ্ধতির আওতায় করতে হবে। গণমাধ্যমের ব্যবহার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, জালিমের কাছে প্রতিবাদ পাঠানো, মাজলুমের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি অনেক পদ্ধতি রয়েছে যা ইসলাম সম্মত।

পাশ্চাত্য স্টাইলে জাগতিক ক্ষমতার দ্বন্ধে লিপ্ত মানুষেরা স্বভাবতই হালাল হারামের তোয়াক্কা করবেন না। কিন্তু দা‘ওয়াত ও দীন প্রতিষ্ঠার কর্মে লিপ্ত মুমিনকে অবশ্যই আল্লস্নাহর নির্দেশ, বান্দার হক্ক ইত্যাদির বিষয় গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের প্রতিটি কাজের জন্য একদিন আল্লস্নাহর দরবারে চুলচেরা হিসাব দিতে হবে।

এ দুনিয়ার সামাজিক জীবনে এ সকল হক্ক নষ্ট করা হয়ত আমরা খুবই হালকাভাবে দেখি, কারণ, কোনো অন্যায় সর্বত্র ঘটতে দেখলে তা গা—সওয়া হয়ে যায়। কিন্তু আল্লস্নাহর হিসাবে আমরা পার হতে পারব কি?

বই: আল্লাহর পথে দাওয়াত, পৃ. ৭৭, পরিমার্জিত নতুন সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ২০০৯
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমহুল্লাহ