আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

সাম্প্রতিক সংবাদ

মি‘রাজ পর্ব-৬

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রভাতের দিকে মক্কায় ফিরে আসেন। আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি সারারাত কোথায় ছিলেন, আমি রাত্রিবেলায় আপনাকে খুঁজেছিলাম, কিন্তু পাইনি। তিনি তাঁকে মিরাজের কথা জানান। আবূ বাক্র সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করেন। দিবসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসরার বিষয় আবূ জাহল ও অন্যান্য কাফিরকে জানালে তারা তাদের অভ্যাসমত তা অস্বীকার করে।

উপরন্তু এ

বিষয়কে তারা তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বলতে থাকে, বাইতুল মাকদিস বা যিরুশালেম শহরে যেতে আসতে আমাদের মাসাধিক কাল সময় লাগে, আর মুহাম্মাদ নাকি রাতারতি সেখান থেকে ঘুরে এসেছে। কতিপয় দুর্বল ঈমান মানুষ তাদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে ইসলাম ত্যাগ করে। এক পর্যায়ে কাফিররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—কে অপদস্ত করার সমবেত হয়ে তাঁকে বাইতুল মাকদিস বা যিরুশালেম নগরীর বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়ে প্রশ্ন করে।

রাত্রিকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহরকে অত ভালভাবে লক্ষ্য করেননি। তিনি ভীত হয়ে পড়েন। তখন মহান আল্লাহ বাইতুল মাকদিস শহরকে তাঁর সামনে তুলে ধরেন। তিনি কাফিরদের প্রশ্নের উত্তরে শহরের বর্ণনা প্রদান করেন। মক্কাবাসীদের অনেকেই ব্যবসা উপলক্ষ্যে তথায় যাতায়াত করত। তারা অবাক হয়ে বলতে থাকে, বর্ণনা তো হুবহু মিলে যায়। তখন আবূ জাহল ও তার অনুসারীরা বিষয়টিকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর যাদু বলে মানুষদেরকে বুঝাতে থাকে।

শুধু আবূ জাহলের সহচরগণই নয়, পরবর্তী হাজার বছর যাবৎ অনেকেই বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে বিভিন্নভাবে মিরাজকে অস্বীকার করার বা অপব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। অনেকে দাবি করেছে মিরাজ ছিল একটি স্বপ্ন মাত্র। বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে তারা দাবি করেছে যে, পৃথিবীর উপরে বা বিভিন্ন আসমানে বরফ, আগুন, বিষাক্ত গ্যাস ইত্যাদির স্তর রয়েছে, যেগুলি ভেদ করে কোনো মানুষ যেতে পারে না। কেউ দাবি করেছে মধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করে যাওয়া সম্ভব নয়।

আমরা দেখেছি যে, কুরআন কারীমে আল্লাহ বলেছেন, তিনি তাঁর “বান্দা”—কে মিরাজে নিয়েছিলেন। আর ‘বান্দা’ বলতে আত্মা ও দেহের সমন্বিত মানুষকেই বুঝানো হয়। কুরআন কারীমে বিভিন্ন স্থানে “বান্দা” বলতে দেহ ও আত্মার সমন্বিত জাগ্রত মানুষকেই বুঝানো হয়েছে, ঘুমন্ত মানুষের আত্মাকে কখনো “বান্দা” বলা হয়নি। অগণিত হাদীস থেকে স্পষ্ট যে, মি‘রাজ জাগ্রত অবস্থাতেই হয়েছিল।

এছাড়া আমরা জানি যে,

 কাফিরগণ ইসরা ও মি‘রাজ অস্বীকার করে এবং একে অসম্ভব বলে দাবি করে। এমনকি কতিপয় দুর্বল ঈমান মুসলিম ইসলাম পরিত্যাগ করে। এ থেকে নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত অবস্থায় দৈহিকভাবে মিরাজ সংঘটিত হওয়ার কথাই বলেছিলেন। নইলে কাফিরদের অস্বীকার করার ও দুর্বল ঈমান মুসলিমদের ঈমান হারানোর কোনো কারণই থাকে না।

স্বপ্নে এরূপ নৈশভ্রমন বা স্বর্গারোহণ কোনো অসম্ভব বা অবাস্তব বিষয় নয় এবং এরূপ স্বপ্ন দেখার দাবি করলে তাতে অবাক হওয়ার মত কিছু থাকে না। যদি কেউ দাবি করে যে, ঘুমের মধ্যে সে একবার পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে এবং একবার পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তে চলে গিয়েছে, তবে তার দেহ স্বস্থানেই রয়েছে এবং দৈহিক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি, তবে কেউ তার এরূপ স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা অস্বীকার করবে না বা এতে অবাকও হবে না।

হাযেরীন, আধুনিক বিজ্ঞান সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেছে যে, জাগ্রত অবস্থায় সশরীরের এরূপ অলৌকিক নৈশভ্রমন ও ঊর্ধ্বারোহণ অসম্ভব নয়। মি‘রাজের ঘটনাবালির মধ্যে আরো অনেক বৈজ্ঞানিক মুজিযার সন্ধান পেয়েছেন আধুনিক বিজ্ঞানীরা।

চলবে…

বই : খুতবাতুল ইসলাম 

প্রফেসর ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ.।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
আপনার ইমেইল
Print

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.