ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রশ্নেল্লিখিত বিষয় দুটি রাসূলুল্লাহ সা. এর যুগ থেকে এভাবেই হয়ে আসছে। বিষয়দুটিতে সব ইমাম ও ফকীহদের ঐক্যমত আছে যে, এগুলো এভাবেই সুন্নত। নিচে বিষয়দুটি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। আশা করি আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন। মানুষ মারা গেলে কবরে রাখার ইসলামী পদ্ধতি হলো, মৃতের শরীরকে তার ডান পাশ্বের উপর শোয়াতে হবে। চেহারা থাকবে ক্বিবলমুখী। তার মাথা ও পা থাকবে ক্বিবলার ডানে এবং বামে। অর্থাৎ ক্বিবলার দিকে আড়াআড়ি ভাবে ক্বিবলামুখী করে ডান পার্শ্বের উপর শোয়াতে হবে। রাসূরুল্লাহ সা. এর যুগ থেকে এখনো পর্যন্ত এমন ভাবেই আমল হয়ে আসছে। নিম্নের হাদীসটি দেখুন:
عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ حَدَّثَهُ – وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ – أَنَّ رَجُلاً سَأَلَهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْكَبَائِرُ فَقَالَ ্র هُنَّ تِسْعٌ গ্ধ. فَذَكَرَ مَعْنَاهُ زَادَ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ الْمُسْلِمَيْنِ وَاسْتِحْلاَلُ الْبَيْتِ الْحَرَامِ قِبْلَتِكُمْ أَحْيَاءً وَأَمْوَاتًا উবাইদ ইবনে ইমাইয় তার পিতা (একজন সাহাবী) থেকে বর্ণনা করেন যে, একজন লোক রাসূল সা. কে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি বললেন তা নয়টি। এরপর তিনি সেগুলো উল্লেখ করলেন। তিনি আরো বৃদ্ধি করলেন, পিতা মাতার অবাদ্ধ হওয়া এবং বায়তুল হারাম কে হালাল মনে করা যেটা মৃত ও জীবিত অবস্থায় তোমাদের ক্বিবলা। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং২৮৭৭। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এই হাদীস থেকে মৃত ব্যক্তির ক্বিবলামুখী করে রাখা সুন্নত এটা বুঝে আসে। আরো একটি হাদীস দেখুন:
আবু কাতাদাহ রা. বলেন,
أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- حِينَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ سَأَلَ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ مَعْرُورٍ فَقَالُوا : تُوُفِّى وَأَوْصَى بِثُلُثِهِ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَأَوْصَى أَنْ يُوَجَّهَ إِلَى الْقِبْلَةِ لَمَّا احْتُضِرَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :্র أَصَابَ الْفِطْرَةَ وَقَدْ رَدَدْتُ ثُلُثَهُ عَلَى وَلَدِهِ গ্ধ. ثُمَّ ذَهَبَ فَصَلَّى عَلَيْهِ وَقَالَ :্র اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَأَدْخِلْهُ جَنَّتَكَ وَقَدْ فَعَلْتَ নবী সা. মদীনায় এসে বারা ইবনে মারুফের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বলল, তিনি মারা গেছেন। আর তিনি অসিয়ত করে গেছেন যে, আপনাকে তাঁর সম্পদের অর্ধেক দিয়ে দিবে এবং কবরে ক্বিবলার দিকে রাখাবে। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, সে খুবই ভাল কাজ করেছে আর আমি তার সন্তানকে তার একতৃতীয়াংশ (যা তিনি রাসূল সা. কে দিয়েছিলেন) ফিরিয়ে দিলাম। এরপর তিনি গেলেন এবং তার কবরের উপর নামায পড়লেন । এরপর দোয়া করলেন, হে আল্লাহ তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর দয়া কর, তাকে জান্নাত দাও। আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৬৮৪৩। আবু হাফস উমার ইবনে আলী আশ-শাফেয়ী (৮০৪ হি.) রহ.হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আলবাদরুল মুনীর ফি তাখরীজিরল আহাদীস ওয়াল আছার, ৭/২৫১। এই হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে কবরে ক্বিবলার দিকে রাখার অসিয়তকে রাসূল সা. উত্তম কাজ হিসেবে প্রসংসা করেছেন। আল্লামা ইবনে হাজম জাহেরী রহ. (মৃত্যু ৪৫৬ হি.) বলেন,
مَسْأَلَةٌ: وَيُجْعَلُ الْمَيِّتُ فِي قَبْرِهِ عَلَى جَنْبِهِ الْيَمِينِ,
وَوَجْهُهُ قُبَالَةَ الْقِبْلَةِ, وَرَأْسُهُ وَرِجْلاَهُ إلَى يَمِينِ الْقِبْلَةِ, وَيَسَارِهَا, عَلَى هَذَا جَرَى عَمَلُ أَهْلِ الإِسْلاَمِ مِنْ عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إلَى يَوْمِنَا هَذَا, وَهَكَذَا كُلُّ مَقْبَرَةٍ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ
অর্থ: মাসয়ালা: মৃত ব্যাক্তিবে কবরের ভিতর তার ডান পার্শ্বের উপর রাখতে হবে, তার চেহারা থাকবে ক্বিবলার দিকে এবং মাথা আর পা থাকবে ডান ও বাম দিকে। এভাবেই রাসূলুল্লাহ সা. এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত মুসলমানদের আমল অব্যাহত রযেছে। আর মাটির উপর প্রতিটি কবর এমনই। আলমুহাল্লা লি ইবনে হাজম: ৫/১৭৩ (মাসয়ালা-৬১৫)। শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহ. আহকামুল জানায়েজ কিতাবে উক্ত মত পোষন করেছেন। এবং তিনি ইবনে হাজম রহ. এর এই বক্তব্য সেখানে নিয়ে এসেছেন। আহকামুল জানায়েজ: ১০৩নং হাদীসের আলোচনায়। আর আমাদের দেশে এভাবে মৃত ব্যক্তিকে শোয়লে মাথা উত্তর দিকেই যায়। অবশ্য ক্বিবলা থেকে যেসব এলাকা পূর্বদিকে নেই সেখানে এভাবে শোয়ালে মৃতের মাথা উত্তর দিকে থাকবে না। পশু জবেহ করার ক্ষেত্রে ইসলামী পদ্ধতি হলো, পশুকে ক্বিবলামুখী করে শোয়াতে হবে। রাসূুল্লাহ সা. জবাইয়ের সময় শোয়াতেন বলে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। ক্বিবলমুখী করার ব্যাপারে সাহাবীদের কর্ম সহীহ সূত্রে পাওয়া যায়। এরপর ডান হাত দ্বারা ছুরি ধরে আর বাম হাত দ্বারা পশুর মাথা ধরে জবেহ করতে হবে। সকল আলেম ও ফকীহ এই ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করেছেন। দলীল: হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে,
أن رسول الله صلى الله عليه و سلم أمر بكبش وأخذ الكبش فأضجعه ثم ذبحه
রাসূলুল্লাহ সা. একটি দুম্বা নিয়ে আসার জন্য আদেশ করলেন। দুম্বা নিয়ে আসা হলো। তিনি পশুটিকে শোয়ালেন তারপর জবেহ করলেন। সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১৯৬৭। ইবনে উমার থেকে সহীহ সনদে জবেহ করার সময় পশু ক্বিবলামুখী করার কথা উল্লেখ আছে। নিচে তাঁর থেকে বর্ণিত মাওকুফ হাদীসগগুলো উল্লেখ করা হলো:
عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُمَا : أَنَّهُ كَانَ يَسْتَحِبُّ أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ إِذَا ذَبَحَ
অর্থ: নাফে ইবনে উমার থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি পশু জবেহ করার সময় ক্বিবলামুখী হওয়াকে ভালবাসতেন। আসসুনানুল কুবরা : হাদীস নং১৯৬৪৭
عن نافع أن بن عمر كان يكره أن يأكل ذبيحة ذبحه لغير القبلة
অর্থ: নাফে বর্ণনা করেন যে, যে পশুকে ক্বিবলামুখী করে জবেহ করা হয়নি ইবনে উমার তার গোশত খাওয়াকে অপছন্দ করতেন। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: হাদীস নং ৮৫৮৫। শায়খ আলবানী বলেছেন,সনদ সহীহ। মানাসিকুল হাজ্ব ওয়াল উমরাহ:১/৩৪
একটি মারফু হাদীসেও ক্বিবলমুখী করার কথা উল্লেখ আছে, তবে হাদীসটি সহীহ নয়। হাদীসটি নিম্নরুপ:
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন,
ذَبَحَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَبْشَيْنِ يَوْمَ الْعِيدِ فَلَمَّا وَجَّهَهُمَا قَالَ فَذَكَرَ الدُّعَاءَ ثُمَّ قَالَ :্র اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَأُمَّتِهِ গ্ধ. وَسَمَّى وَذَبَحَ. وَفي رواية أخري وَجَّهَهُمَا إِلَى الْقِبْلَةِ حِينَ ذَبَحَ
রাসূলুল্লাহ সা. একবার ঈদের দিন দুইটি দুম্বা জবেহ করলেন। যখন পশুদুটিকে অভিমুখী করলেন অন্য বর্ণনায় ক্বিবলমুখী করলেন তখন উক্ত দুয়া পড়লেন এবং বিসমিল্লাহ বলে জবেহ করলেন। আসসুনানুল কুবরা লিল-বায়হাক্কী: হাদীস নং ১৯৬৫৭। হাদীসটি সহীহ নয়। সহীহ মুসলিমের উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন,
وَاتَّفَقَ الْعُلَمَاء وَعَمَل الْمُسْلِمِينَ عَلَى أَنَّ إِضْجَاعهَا يَكُون عَلَى جَانِبهَا الْأَيْسَر ؛ لِأَنَّهُ أَسْهَل عَلَى الذَّابِح فِي أَخْذ السِّكِّين بِالْيَمِينِ ، وَإِمْسَاك رَأْسهَا بِالْيَسَارِ
আলেমগন ঐক্যমত পোষণ করেছেন এবং মুসলমানদের আমল এর উপরে যে, পশুকে জবেহ করার সময় তার বাম পাশ্বের উপর শোয়াতে হবে কেননা ডানহাত দ্বারা ছুরি ধরে আর বাম হাত দ্বারা মাথা ধরে জবেহ করার জন্য এটা সবচেয়ে সহজ পদদ্ধতি। শরহে নববী আলা মুসলিম :৬/৪৬০। কাজী ইয়াজ রহ. বলেন,
سُنة فى صفة الذبح ، من إضجاعه برفق ، ولا تذبح قائمة ولا باركة ، ومضى العمل باضجاعها على الشق الاْيسر ؛ لأنه أهنأ لمناولة ذبحها باليمين وإمساك رأسها باليسار অর্থ: জবেহ করার ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো, কোমল ভাবে শোয়াতে হবে। দাঁড় করিয়ে কিংবা বসিয়ে জবেহ করা যাবে না। আমল অব্যাহত আছে এভাবে যে, পশুকে বাম পার্শ্বের উপর শোয়াতে হবে, কেননা ডান হাত দ্বারা ছুরি ধরা এবং বাম হাত দ্বারা মাথা ধরে জবেহ করার জন্য এটাই সবচেয়ে উপযোগী সহজ পদ্ধতি। শরহে সহীহ মুসলিম লিল কাজী ইয়াজ: ৬/২১০। এই বিষয়ে ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, وأحب في الذبيحة أن توجه إلى القبلة অর্থ: ক্বিবলামুখী করে জবেহ করা আমার নিকট অধিক প্রিয়। মারিফাতুস সুনান লিল- বায়হাক্কী:১৪/৪৫। আর আমাদের দেশে ক্বিবলমুখী করে বাম পাশ্বের উপর শোয়ালে মাথা দক্ষিন দিকে আর পা উত্তর দিকে থাকে। আর যেসব এলাকা ক্বিবলা থেকে পূবর্ দিকে নয় তাদের ক্ষেত্রে মাথা দক্ষিনে থাকবে না। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, হাদীস ও উম্মতের কর্মধারা প্রমাণ করে যে, এই দুটি বিষয় এভাবেই সুন্নাত। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুষ দান করুন।