আমার বয়স-২৮ বছর। আমার স্বামীর বয়স- ৩২ বছর। আমাদের পারিবারিকভাবে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়।
আমার বিয়ের চার মাস পর আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে তুলে নিয়েছে। এই চার মাসে আমার স্বামী তিন দিন আমাদের বাসায় এসেছে কিন্তু আমাকে স্পর্শ করেনি কখনো, এমনকি ভালো মতো কথাও বলেনি। তুলে নেয়ার প্র একমাস সংসার করার পর বুঝতে পারলাম আমার স্বামীর শারিরীক এবং মানসিক উভয় সমস্যাই আছে, থাইরয়েডের কারণে তার শারিরীক ক্ষমতা কম, এবং চাহিদা নাই বললেই চলে। একারণে সে কখনো বাবা হতে পারবে না। আমাদের কাছে এসব সমস্যা গোপন করে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। রোগ যেহেতু আল্লাহর দান, তাই আমি তার অসুস্থতা মেনে নিয়ে সংসার করছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী পর্নগ্রাফীতে আসক্ত। পর্নগ্রাফীর নোংরামি (You know what) গুলো সে আমার সাথে জোরপূর্বক করার চেষ্টা করে, এবং করেও, মানা করলেও শুনে না। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বেডরুমে কি হয় না হয় সেসব আমার স্বামী তার বড় চাচাতো বোন, ফুফু, মা-বাবা, ছোটো ভাই, সবাইকে বলে বেড়ায়।এমনকি আমার সাথে কীভাবে শুবে, বাচ্চা নিবে কিনা, আমাদের এসব একান্ত গোপনীয় বিষয়গুলো সে তার ফ্যামেলির সবার সাথে আলোচনা করে। আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি, সে শুনেনি। আমার শ্বশুর শাশুড়ি তাদের ছেলের এসব সকল কর্মকান্ড সাপোর্ট করে। আমার স্বামীর এক মেয়ে বেস্টফ্রেন্ড আছে, যাকে আমার স্বামী একসময় ভালোবাসতো, ওই মেয়ের বিয়ে হয়ে একটা বাচ্চাও হয়েছে, তবুও আমার স্বামীর সাথে ওই মেয়ের সম্পর্ক ছিলো। আমাদের বিয়ের পর ওই মেয়ের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে বলায় আমার স্বামী আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে, তুই তুকারি করে। একসময় সম্পর্ক নষ্ট করলেও তার ফ্যামেলির সবার কাছে বসে সে তার ওই বেস্টফ্রেন্ডের জন্য কান্নাকাটি করেছে। আমার স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কেউ নামাজ পড়ে না। আমার স্বামীকে নামাজ পড়তে বললেও গিয়ে তার বাবার কাছে মানে আমার শ্বশুরের কাছে বিচার দেয়। আমার শ্বশুর আমার বাবাকে কল করে বলে,”আমার ছেলেকে নামাজ পড়তে হবে সেটা কি কাবিন নামায় লেখা ছিলো?” এমনকি আমার বাবা-মা আমার স্বামীকে নামাজ পড়তে বলায় আমার স্বামী তাদের সাথে মারমুখী আচরণ করেছে।
আমার স্বামী অবাধে মেয়েদের সাথে মেলামেশা করতো। আমি মিশতে মানা করলে তার মা-বাবা আর ফুফুকে বিচার দিতো। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন সেই বিচার আমার বাবার বাড়িতেও দিতো। আমার সাথে বাদী দাসীর মতো ব্যবহার করতো। কাবিনের এক লক্ষ টাকা নগদ দিয়েছিলো, সেই টাকা তাদেরকে ফেরত দিয়ে দিতে টর্চার করতো, বলতো কাবিনের টাকায় তাদের হক। পরে আমি কাবিনের ওই টাকাটা তাদের দিয়ে দিয়েছি। যৌতুকের জন্য টর্চার করতো, অথচ বিয়ের আগে যৌতুকে কোনো কথাই হয়নি তাদের সাথে।
এতোসব কিছু সহ্য করেও আমি সংসার করতেছিলাম। বিয়ের থেকেই আমার স্বামী আমাকে চাকরি করার জন্য টর্চার করতো। আমাকে খরচ দিতো না, উল্টো আমার কাছে আমার বাবা-মায়ের দেয়া কিছু টাকা ছিলো, সেগুলোও পরে দিবে বলে নিয়ে নিছে, আর দেয়নি। অথচ বিয়ের আগে আমার স্বামী আমার বাবা মাকে বলেছিলো, “আমার যা ইনকাম আছে তা দিয়ে আপনার মেয়ের খরচ আমি চালাতে পারবো। আমার শ্বশুরবাড়ির কেউই চায় না আমরা বাচ্চা নিই। বলে, বাচ্চার খরচ দেয়ার মতো টাকা তাদের নেই। আমার স্বামী তাদের কথা শুনে বাচ্চা নিবে না। আসলে আমার স্বামী কখনো বাবা হতে পারবে না সেটা যাতে ফাঁস না হয় তাই বাচ্চা নিতে চায় না। এক পর্যায়ে আমার স্বামী তার ফ্যামেলির সাথে ষড়যন্ত্র করে আমাকে তার মতো বন্ধা বানানোর জন্য কিংবা মেরে ফেলার জন্য জোর করে উল্টাপাল্টা কিছু ওষুধ খাওয়ায়। যেটা খাওয়ার পর আমার অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে যায়। হ্যাভি ব্লিডিং এবং বমি করে আমি ছয়দিন হসপিটালে ভর্তি থাকি।
আমার মা আর ভাই হসপিটালে গিয়ে আমাকে আমার বাবার বাড়িতে নিয়ে আসে। বাবার বাড়িতে আসার পর আমি আমার মা কে আমার সাথে শ্বশুরবাড়িতে যা যা হইছে সব জানাই। সব শুনে আমার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে আর শ্বশুরবাড়ি পাঠাবে না। আমি বাবার বাড়িতে যাওয়ার পর আমার স্বামী বা শ্বশুর শাশুড়ি, কেউই আমার খোঁজ নেয় না। একমাস পর আমার স্বামী আমার বাবার বাড়িতে আমার আছে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়। সে এখনো আমার কাবিনের টাকা পরিশোধ করেনি।
আমার প্রশ্ন হলো, এই ডিভোর্সে কি আমার কোনো দোষ বা পাপ হয়েছে? আমি যে আমার শ্বশুরবাড়িতে আমার সাথে কি কি অন্যায় হইছে বাবার বাড়ি গিয়ে সব আমার মাকে জানিয়ে দিয়েছি, এতে কি আমার পাপ হইছে?