ওয়া আলাইকুমুস সালাম। অধিকাংশ আলেমের মতে হারাম। তবে উপমহাদেশের আলেমরা জায়েজ বলেছেন। ওলী তথা অভিভাবক ছাড়া মেয়েদের বিবাহের বিধান: বিবাহের ক্ষেত্রে ওলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী শরীয়তে এব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূল সা. এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। পারিবারিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহগণের নিকট ওলী ছাড়া বিবাহ জায়েজ নেই। তবে ইমাম আবু হানীফা রহ. সহ কতিপয় ফকীহ বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ বলেছেন। প্রখ্যাত মালেকী ফকীহ আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে রুশদ আন্দালুসী র. বলেন, اختلف العلماء هل الولاية شرط من شروط صحة النكاح أم ليست بشرط؟ فذهب مالك إلى أنه لا يكون النكاح إلا بولي وأنها شرط في الصحة في رواية أشهب عنه وبه قال الشافعي وقال أبو حنيفة وزفر والشعبي والزهري: إذا عقدت المرأة نكاحها بغير ولي وكان كفؤا جاز وفرق داود بين البكر والثيب فقال باشتراط الولي في البكر وعدم اشتراطه في الثيب. অর্থ: বিবাহের ক্ষেত্রে ওলী শর্ত কি শর্ত নয় এই বিষয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালেক র. মত পোষন করেছেন যে, ওলী ছাড়া বিবাহ হবে না। বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য (ওলী) শর্ত। এমন মতই পোষন করেছেন ইমাম শাফেয়ী রা.। ইমাম আবু হানীফা, জুফার, শাবী ও জুহরী র. বলেছেন, যদি মহিলা ওলী ছাড়া বিবাহ করবে আর স্বামী যদি তার কুফু(সর্বদিক দিয়ে যোগ্য)হয় তাহলে জায়েজ হবে। বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২/৮(শামেলা)। এই সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন, আলমাবসুত লিস-সারখসী, ৬/৫৩; আলমাউসায়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৭/৯৪ও ৩১/৩২১; আলফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবা ৪/৪৫। কিতাবুল উম্ম লিশ-শাফেয়ী,৭/১৫৬। যে ইমামগন ওলী ছাড়া বিবাহ বাতিল বলেছেন তাদের দলীল: আবু মুসা আশয়ারী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, অর্থাৎ ওলী ছাড়া বিবাহ নয়। لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِىٍّ আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৮৭; তিরমিযী, হাদীস নং ১১০১;মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৯৭৬১। হাদীসটি সহীহ। শায়খ আরনাউত এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত অন্য হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ অর্থাৎযে মহিলা ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল। তিনি ৩ বার তা বলেছেন। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১১০২; মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং ২৫৩৬৫। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন আর শায়খ শুয়াইব আরনাউত সহীহ বলেছেন। উপরক্ত হাদীস সমূহের ভিত্তিতে ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ র. সহ অধিকাংশ আলেম ওলী ছাড়া বিবাহকে বাতিল বলেছেন। যে সব ইমাম ও ফকীহ ওলী ছাড়া বিবাহ জায়েজ বলেছেন তাদের দলীল: তাবেঈদের মধ্যে ইমার জুহরী ও শাবী এরপরে ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ, জুফার সহ কিছু সংখক মুজতাহিদ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ওলী ছাড়া বিবাহ কে জায়েজ বলেছেন। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১.কুফু হতে হবে। ২.মেয়েটি বালেগা, বুঝমান হতে হবে। আলফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবায়া,৪/৪৫; আলমাবসুত লিস-সারাখসী,৬/৬১ ও ৫/১৬। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, فلا جناح عليكم فيما فعلن في أنفسهن بالمعروف অর্থাৎ মহিলারা নিজেদের ব্যাপারে সৎ ভাবে যা করবে (বিয়ের ক্ষেত্রে) সে বিষয়ে তোমাদের কোন দোষ নেই। সূরা বাকারাহ-২৩৪ অন্য এক আয়াতে তালাক সম্পর্কে আলোচনার এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, تنكح زوجا غيره. حتى অথাৎ যতক্ষন না তারা অন্য স্বামীকে বিবাহ না করে। সূরা বাকারাহ-২৩০। অন্য প্রসংগে আল্লাহর বাণী, فَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে তাদের স্বামীদের কে বিবাহ করা থেকে বাধা দিবে না। সূরা বাকারাহ-২৩২ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, الأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا অর্থাৎ মেয়েরা ওলীদের চেয়ে নিজের ব্যাপারে অধিক হকদার। সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ১৪২১। الأيم অর্থ স্বামীহীন মহিলা, পূর্বে স্বামী থাকুক বা না থাকুক। আলমজামুল ওয়াসীত। বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৌদী আলেম শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনজিদ ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে বলেছেন, المسألة اجتهادية ، واختلف فيها الأئمة ، فإنه إذا كان أهل بلد يعتمدون المذهب الحنفي كبلادكم وبلاد الهند وباكستان وغيرها ، فيصححون النكاح بلا ولي ، ويتناكحون على هذا ، فإنهم يقرّون على أنكحتهم ، ولا يطالبون بفسخها অর্থাৎ এটি একটি ইজতিহাদি মাসআলা, ইমামগণ এক্ষেত্রে ইখতিলাফ করেছেন। সুতরাং যে সব দেশের মানুষেরা হানাফী মাজহাবের উপর নির্ভর করে, ওলী ছাড়া বিবাহবে বৈধ মনে করে এবং এভাবে তাদের বিয়ে হয় যেমন, ভারত, পাকিস্থান ইত্যদি, তাহলে তাদের বিবাহের স্মীকৃতি দেয়া হবে । বাতিল করতে বলা হবে না। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, শরীয়তে বিবাহে মেয়েদের জন্য ওলী থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণভাবে যৌবনের শুরুতে যুবক-যুবতী সহজেই বয়সের উন্মাদনায় বিভ্রান্ত হয় এবং নিজের চোখের ভাল লাগার উপর নির্ভর করেই সঙ্গী পছন্দ করে। বিবাহের ক্ষেত্রে চোখের পছন্দের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবন ও আগত প্রজন্মের কল্যাণের কথাও চিন্তা করতে হবে। এজন্য ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতমতের সাথে অভিভাবকের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং মেয়েদের জন্য আবশ্যক হলো ওলীর অনুমতি নিয়ে বিবাহ করা। আর আমাদের উচিৎ বিবাহের সময় মানুষদের কে ওলীর অনুমতির বিষয়ে উৎসাহিত করা,ওলী ছাড়া বিয়ে করতে নিষেধ করা এবং ওলী থাকার কল্যান বর্ণনা করা। যারা ইতিমধ্যে ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করেছে তাদের বিষয়ে কথা হলো যেহেতু তারা একটি ফিকহী মত গ্রহন করেছেন আর বিষয়টি ইজতিহাদী এবং ইখতিলাফী তাই তাদেরকে নতুন করে বিবাহ করতে হবে না। তবে এই ঘৃনিত কাজের জন্য তাদের লজ্জিত হওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে ভাল জানেন।