As-Sunnah Trust

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 5634

বিবিধ

প্রকাশকাল: 3 Jul 2021

প্রশ্ন

আমাদের বিয়ে হয়েছে 13 বছর । দুজনেই পেশায় চিকিৎসক। তিনটি ছেলে মেয়ে রয়েছে। বিয়ের শুরু থেকেই দুজনের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে। তার মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞান জ্ঞান নেই বললেই চলে। সে বলে সে নাকি আমাকে বিয়ে করেছে টাকা কামাই করার জন্য। তারা আরও অনেক সমস্যা আছে। সে আমার সাথে এতই খারাপ ব্যবহার করে যে স্বামী হিসেবে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ কখনোই আমার অন্তর থেকে আসে না। বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে তার সাথে থাকি। সামান্য বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হলেই সে বলে তুমি চলে যাও আমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাও। সাত-আট বছর আগে ঝগড়া করার সময় সে বলে একেবারে তালাক, তালাক তালাক তালাক। তখন আমি এ বিষয়ে কোন আলেমের সিদ্ধান্ত নিতে যেতে চাইলে সে বলে আমিতো তালাক দিলাম বলিনি। এরপর আমি একজন আলেমের শরণাপন্ন হলে সেই আলেম ফয়সালা দেন যে যেহেতু তালাক দিলাম কথাটা বলা হয়নি কাজেই তার মতে তালাক হয়নি। উনি বলে দেন যে এরকম কথা যেন আর না বলা হয়। কিন্তু এর পরও রাগ হলেই সে বলতে থাকে চলে যাও, বিচ্ছেদ হয়ে যাও, তালাকের কাগজ দিয়ে চলে যাও,তোমাকে ছেড়ে দিবো। সে আরো বলে তুমি স্বাধীন, তোমাকে আমি জোর করে ধরে রাখিনি,কাবিনের কাগজে তো তোমাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা দেওয়াই আছে,তুমি চলে যাও না কেন? তার এসব কথার বিপরীতে আমি কোনসময় চুপ থাকি, কোনসময় ঝগড়া করি গত 15 দিন আগে খাবারের বিষয় নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে সে আবার বলে তুমি থাকো কেন আমার সাথে চলে যাও। তখন আমি তাকে বলি চলে যেতে বল কেন? বউ রাখলে ভালো ভাবে রাখ, না রাখলে ব্যবস্থা গ্রহণ করো। সে তখন বলতে শুরু করে তুমি স্বাধীন, তোমাকে তো স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছি, কাগজে তোমাকে স্বাধীনতা দেয়াই আছে, তুমি চলে যাও। তখন আমিও ক্ষিপ্ত হয়ে বলি আমি তো একা তোমাকে বিয়ে করিনি। আমার বাবাকে ফোন করে বলি তুমি আসো, এসে ফয়সালা করে দিয়ে যাও। ফয়সালা বলতে আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেই বুঝিয়েছি। সে আরও বলে আমার কথা পরিষকার;থাকলে থাকবা না থাকলে চলে যাবা। কিন্তু আমার আব্বা আসেনি। আমি তার বাসা থেকে বের হয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসি। এখন আমার প্রশ্ন হল এক্ষেত্রে তালাক কার্যকর হয়ে গেছে কিনা?আমি প্রচণ্ড মানসিক অশান্তিতে থাকি যে আসলে তার সাথে থাকা জায়েজ হচ্ছে কিনা কারণ সে এসব কথা ২-১ মাস পরপর বলতেই থাকে। আর আমিও সবসময় চুপ থাকতে পারিনা।

উত্তর

আপনার স্বামী আপনাকে টাকার জন্য বিয়ে করেছে এটা অনেকটা সত্য। যদি সে মানষিক ও শারীরিক প্রশান্তির জন্য বিয়ে করতো তাহলে আপনার মতো একজন ব্যস্ত চিকিৎসককে বিবাহ করতো না। সর্বদা বাড়িতে থাকে এমন মহিলাকে বিবাহ করতো। কিন্তু মানুষের প্রকৃতিগত অভ্যাস পুরুষরা স্ত্রীর থেকে বিভিন্ন সেবা পেতে চাওয়া। আপনার পেশাগত ব্যস্ততার কারণে আপনার থেকে সেই কাঙিক্ষত সেবা হয়ত সে পাচ্ছে না যার কারণে এই পারিবারিক অশান্তি হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই চাকুরি করলে অনেক ক্ষেত্রেই এই সমস্যা হয়। আর বেশি টাকা উপার্জনের জন্য এই অশান্তি তারা সহ্য করে যাচ্ছে। দুজনেই চাকুরী করলে সন্তানরাও অনেক ক্ষেত্রে দিক হারা হয়ে যায়। এটাও অশান্তির অন্যতম কারণ। দ্বিতীয়ত আপনি বলেছেন তার ধর্মীয় কোন জ্ঞান নেই। তাহলে আপনি এবং আপনার বাবা বিবাহের আগে এটা দেখলেন না কেন যে, তার ধর্মীয় জ্ঞান আছে কিনা, ধর্ম মানে কিনা, তার পরিবার ধার্মিক কিনা? এগুলো বিবাহের আগেই দেখা উচিত ছিল। আপনারাও তো শুধু টাকাই দেখেছেন। আর সেও টাকা দেখেছে। পারিবারিক শান্তির কথা চিন্তা করে তো আপনারা কেওই বিয়ে করেন নি। এখন তার ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। যাইহোক, আপনাদের মধ্যে যেসব কথাবার্তা হয়েছে তার কারণে তালাক হয় নি। এখন পারিবারিক শান্তি কিভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব স্বামীর সাথে বসে আলোচনা করুন। টাকার চিন্তা একটু বাদ দিয়ে পারিবারিক শান্তির কথা ভাবুন। সম্মানের সাথে জীবন চলে যায় এতটুকু টাকা-পয়সাতে সন্তুষ্ট থাকুন। প্রয়োজনে আপনি চাকুরি ছেড়ে দিন এবং সর্বদা বাড়িতে থাকুন। স্বামী ও সন্তানদের দেখাশুনা করুন।