As-Sunnah Trust

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 5359

ঈমান

প্রকাশকাল: 1 Oct 2020

প্রশ্ন

একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাক্তি বলেছেনঃ ধর্ম ইন্দ্রিয় সাধনার পরিপন্থি। ধার্মিকেরা মতোবাদীর মতই নিষ্টুর এবং আত্মকেন্দ্রিক। ভয় এবং পুরুস্কারের লোভ ধার্মিককে পরিচালিত করে। একজন সংস্কৃতিবান ব্যাক্তি মুক্তচিন্তার হয় এবং মহৎ ভাবে সুন্দর ভাবে বেচে থাকাই তার ধর্ম। আমি জানতে চায় – আমি কোন বিষয় গোলো ফ্লো করব এবং এই কথা গুলোর উত্তর কি হবে?

উত্তর

প্রথম কথা হলো ইসলাম ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্মকে কোন দিকে দিয়েই এক করা যাবে না। অন্যান্য ধর্মগুলোকে একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাক্তি এভবে ব্যাখ্যা হয়তো করতে পারেন। কিন্তু ইসলামকে কখনোই এভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম অনুসারীরা কখনোই কারো উপর জুলুম করে না, আত্মকেন্দ্রিক হয় না। ইসলাম ধর্ম এমনটা শেখায় না। যে ধর্মে যাকাত দেওয়া আবশ্যক, ফিতরা দেওয়া আবশ্যক, বিভিন্ন পাপের ক্ষমার জন্য দান করার নির্দেশনা থাকে, দান-সদকার জন্য বিভিন্নভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়, প্রতিবেশীর হক, আত্মীয়দের হক দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ গ্রাস কারীদের কঠোরভাবে শাসিয়ে দেয়া হয়, মানুষকে ধোকা দিলে সে ধর্মের বাইর চলে যাবে বলে সতর্ক করা হয় সেই ধর্মকে যে আত্মকেন্দ্রিক বলে সে জ্ঞানপাপী ছাড়া আর কিছু নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে যত বড় ধরণের জুলুম হয়েছে এবং হচ্ছে, এই জুলুমবাজদের একটি অংশ কোন কোন ধর্মের নামমাত্র অনুসারী। যেমন, আমেরিকা, বৃটেন খৃষ্ট ধর্মের কথিত অনুসারী। প্রকৃতপক্ষে এরাও ধর্মনিরপেক্ষ এবং সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকারকারী। আর জালেমদের আরেকটি অংশ সরাসরি নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ। যেমন, রাশিয়া, চিন। এরা অতীতে এবং বর্তমানে মানুষদের উপর জুলুম চালাচ্ছে।নামমাত্র মুসলিম কোন শাসকও অমুসলিম, ধর্মনিরপেক্ষ শাসকরা যে নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে তার শতভাগের এক ভাগও চালায় নি। আর প্রকৃত মুসলিম শাসকরা তো পৃথিবীর ইতিহাসে শান্তি ও সম্পৃতির মিনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। রাসূলুল্লাহ সা. থেকে শুরু করে ভারতে মুঘল শাসকদের ইতিহাস তার জলন্ত প্রমাণ সুতরাং ইসলাম ধর্মকে নিষ্টুর বলা শতভাগ মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا ﴾ [المائدة: 32] যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করলো সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করলো আর যে কাউকে হত্যার হাত থেকে রক্ষা করলো সে যেন সকল মানুষকে রক্ষা করলো। সূরা মায়েদা, আয়াত ৩২ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা বলেছেন, لَا يَرْحَمُ اللَّهُ مَنْ لَا يَرْحَمُ النَّاسَ যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করে না। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৪১।এরপরও যদি কেউ ইসলাম ধর্মকে নিষ্ঠুর বলে তাহলে তাকে মূর্খ ছাড়া আর কী বলা যায়? ধর্ম ইন্দ্রীয় সাধনার পরিপন্থি বিষয়টি এমন নয়। বরং ইন্দ্রীয় সাধনা যে জায়গাতে গিয়ে অক্ষম সেখান থেকে ইসলাম ধর্মের যাত্রা শুরু এমন বল যায়। যেমন, এই পৃথিবীর বিচিত্র নেয়ামত দেখা আমার বুঝতে পারি যে, একজন সৃষ্ঠিকর্তা আছেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সম্পকে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা ইন্দ্রিয় দ্বারা অসম্ভব। কুরআন খুললে সূরা ইখলাসসহ বিভিন্ন সূরাতে আমার সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে বিষদভাবে জানতে পারি। আমরা আল্লাহ তায়ালার যে শত-সহস্র নিয়ামত ভোগ করছি, এর বিনিময়ে আল্লাকে আমরা কীভাবে খুশি করতে পারি বা তিনি আমাদের থেকে কী চান সেটা ইন্দ্রিয় দ্বার জানা সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে আমাদের ধর্ম তথা ওহী ছাড়া উপায় নেই। কোনটা ভাল কাজ কোনটা মন্দ কাজ সেটা নির্ধারণেও অনেক সময় মানুষের মাঝে মতবিরোধ হয়, ইদ্রিয় সঠিক সমাধান দিতে পারে না। তখন আমাদের ওহী তথা ধর্ম ছাড়া উপায় থাকে না। যেমন মদ খাওয়া, ব্যভিচার করা, সুদ খাওয়া, বোরকা পরা, নারীদের বাড়ির ভিতরে থকা ইত্যাদি। অনেকে তাদের বিচার বুদ্ধি দিয়ে এগুলোকে ভালো মনে করেন, আবার বিরাট সংখ্যক মানুষ তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে এগুলোকে খারাপ মনে করেন। এক্ষেত্রেও চুড়ান্ত ফয়সালা শুধুমাত্র ধর্ম তথা ওহীই করতে পারে। সুতরাং ধর্ম ছাড়া শুধু ইদ্রিয় দ্বারা চললে প্রকৃত শান্তি সম্ভব নয়। ইন্দ্রিয়কে ইসলাম ধর্ম দ্বারা বেস্টন করতে হবে। এবার আসুন ভয় আর পুরস্কার নিয়ে আলোচনা করা যাক। মানুষ সকল কাজই করে ফলাফলের আশায়। যে ব্যক্তি এই অভিযোগ করেছে সেও তার ইন্দ্রিয় দ্বার চলে পৃথিবীতে ভালো থাকার জন্য অর্থাৎ ভালো থাকাটা তার কাজের পুরস্কার। সে শুধু দুনিয়াতে ভালো থাকার চেষ্ট করে তাই ইন্দ্রিয় দ্বারা বিচার করে চলে। একজন মূ্মিন মুসলিম শুধু দুনিয়াতে ভালো থাকার চেষ্ট করে না বরং দুুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতে ভালো থাকার চেষ্টা করে। সে জন্য সে শুধু ইন্দ্রিয় দ্বারা নয় বরং ইন্দ্রিয়কে ওহী দ্বারা মোড়ক দিয়ে চলাফেরা করে। আমরা দুনিয়াতে দেখি যে সংস্থার বা প্রতিষ্ঠানের কতৃপক্ষ কর্মীদের কাজের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন না, কাজ ঠিকঠাক করছে কিনা খেয়াল করেন না, সেই সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়। বিপরীতে যে সংস্থার বা প্রতিষ্ঠানের কতৃপক্ষ কর্মীদের কাজের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন, কর্মীরা সঠিকমত কাজ না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন সেই সব প্রতিষ্ঠান দিন দিন উন্নতি লাভ করে। কারণ কর্মীরা এতকিটি ভয়ে ভয়ে থাকে যে, সঠিকভাবে কাজ না করলে বিপদ হতে পারে। কিছু কর্মী হয়তো হৃদয় থেকেই কাজ করবে, আর কিছু কর্মী ভয়ে কাজ করবেন। তেমনি পৃথিবীর সকল মানুষ যেহেতু সমান নয়, তাই আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের পুরস্কারের পাশাপাশি ভয়ের কথাও বলেছেন, যেন মানুষ কোনভাবেই পথ হারা না হয়। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম, ইসলাম ধর্ম ছাড়া প্রকৃতপক্ষে উভয় জাহানে শান্তি পাওয়ার কোন পথ নেই। ইন্দ্রিয় দ্বারা কখনোই সঠিক পথ পাওয়া সম্ভব নয়।