ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সমাজ, রাষ্ট্র বা উম্মাতের কোনো কঠিন বিপদ, রোগব্যাধি বা বিপর্যয়ের সময় ফজরের সালাতে এবং প্রয়োজনে সকল সালাতের শেষ রাকআতের রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর সমবেত মুসল্লীদের নিয়ে দুআ করাকে কুনুতে নাযেলা বলা হয়। এটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। আমাদের সমাজে অনেকেই মনে করেন যে, হানাফী মাযহাবে এরূপ কুনুত বৈধ নয়। চিন্তাটি অজ্ঞতাপ্রসূত। হানাফী ফকীহগণ বলেন, বিপদ-বিপর্যয় ছাড়া কুনুতে নাযেলা পাঠ করবে না। তবে বিপদ-বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ফজরের সালাতে ও অন্যান্য সালাতে কুনুতে নাযেলা পাঠ করবে। আল্লামা আলাউদ্দীন হাসকাফী হানাফী (১০৮৮ হি) বলেন:
ولا يقنت لغيره إلا لنازلة فيقنت الإمام في الجهرية وقيل في الكل
বিতর ছাড়া অন্য কোনো সালাতে কুনুত পাঠ করবে না; তবে বিপদ-বিপর্যয়ের সময় সশব্দে কুরআন পাঠের সালাতে (ফযর, মাগরিব, ইশা) ইমাম কুনুত পাঠ করবেন। দ্বিতীয় মতে সকল সালাতেই কুনুত পাঠ করবেন। হাসকাফী, আদ-দুররুল মুখতার (বৈরুত, দারুল ফিক, ১৩৮৬) ২/১১। এ কথার ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবন আবিদীন শামী উল্লেখ করেছেন যে, অধিকাংশ হানাফী ফকীহ বিপদ-বিপর্যয়ের সময় শুধু ফজর সালাতে কুনুত পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ কেউ সশব্দ সালাতগুলোতে কুনুত পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন। যারা বলেছেন যে, সালাতুল ফজরের কুনুত মানসূখ বা রহিত হয়েছে তাদের কথার অর্থ সাধারণ অবস্থায় বিতর ছাড়া অন্য সালাতে কুনুত পাঠ রহিত হয়েছে। তবে বিপদাপদ বা বিপর্যয়ের সময় ফজরের বা সশব্দের সালাতে কুনুত পাঠ সুন্নাত। ইমাম যদি মনে মনে কুনুত পড়েন তবে মুক্তাদীও মনে মনে পড়বেন। আর ইমাম যদি সশব্দে কুনুত পড়েন তবে মুক্তাদী আমীন বলবেন। আর নাযিলা বা বিপদাপদের কুনুত শেষ রাকাতের রুকুর পড়ে পড়তে হবে। ইবন আবিদীন শামি, রাদ্দুল মুহতার (হাশিয়াতু ইবন আবিদীন) ২/১১। একাধিক দুআ কুনুত হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে। চারটি দুআ কুনুতসহ বিস্তারিত জানতে দেখুন, রাহে বেলায়াত পৃষ্ঠা-৪২০-৪৩১।