আসসালামু আলাইকুম, আমার প্রশ্নটা করার আগে ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এতে আমার সমস্যা স্পষ্ট করতে এবং আপনাদের উত্তর দিতে সুবিধা হবে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে আমরা মা-বাবার ৫ ছেলে। আমি ৪র্থ। সবাই বিবাহিত। যৌথ পরিবার। বাবা HSC পাস, মা কোনমতে বই পড়তে পারেন। কিন্তু পরিবারের অধিকাংশ সিদ্ধান্ত নির্ভর করতো মায়ের উপর। আমি বিবাহ করেছি গত ৫মে তারিখে ২বছর পূর্ণ হলো। বেকার অবস্থায় বিবাহ করলেও গত অক্টোবর ১৮ থেকে শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম। উপার্জন ছিলো মোটামুটি। .বেকার অবস্থায় বিবাহ করার শর্ত ছিলো যে আমার চাকুরি হবার আগে আমার স্ত্রীর পড়াশোনা, ভরণপোষ, চিকিৎসা সবকিছু আমার পরিবার বহন করবে। কিন্তু দিন যতই যেত থাকলো পরিস্থিতি ততই ঘোলাটে হতে থাকলো। বিয়ের ২মাস পরেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসা করা হলো। কিন্তু এরপর একটার পর আরেকটা অসুস্থতা তার পিছে লেগেই থাকলো। সেই সাথে তার অসুস্থতা পরিবারের মহিলাদের বিশেষ করে আমার মায়ের বিরক্তির কারণ হতে লাগলো। আমার স্ত্রী অসুস্থতার কথা বললে তিনি বিরক্ত হতেন, মনোযোগ দিয়ে শুনতেন না, বেশি বেশি পানি খাওয়া ও হাঁটাহাঁটির উপদেশ দেয়েই কর্তব্য শেষ করার চেষ্টা করতেন। সেইসাথে শুরু হয় নববধূর বিরুদ্ধে মহিলাদের নানান কুৎসা রটানো, সুযোগ পেলেই অপমান করা, ভুল পেলেই কটু কথা বলা। এগুলো আমার মা বিশ্বাস করতেন। সব মিলিয়ে সে শারিরীক ও মানসিকভাবে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য যে আমি চাকুরির পরীক্ষার জন্য বেশিরভাগ সময় ঢাকাতে থাকতাম। ফোনে সব কথা আমাকে বলতে পারতো না। যা বলতো তারও কোন প্রতিকার করতে পারতাম না। কারণ, মা আবার আমাকে সবকথা শোনানোর দায়ে তাকে অভিযুক্ত করবে। ফলে দূর থেকে সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলো না। যদিও এসব কোন কথা তার বাবার বাড়িতে নিজের মুখে কিছু বলেনি। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাপড় থাকার পড়ও কাপড় কেনা হয়, আসবাবপত্র কেনা হয়, ঘরের রং করার টাকা যোগাড় হয় কিন্তু আমার স্ত্রীর চিকিৎসার টাকা যোগাড় হয়না। গত জুন ১৮ তার শরীরের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। সে খুব শুকিয়ে যায়, প্রচন্ড দূর্বলতার কারণে ২/৩ মিনিটের বেশি হাঁটতে পারতো না। সিন্ধান্ত নিলাম ঋণ করে হলেও ঢাকায় এনে তার চিকিৎসা করার। তাতেও তাদের আপত্তি ছিলো। তাদের ধারণা ছিলো ঢাকায় নেওয়ার মত পরিস্থিতি হয়নি। কিন্তু আমি তা মানি নি। অবশেষে আমার মা টাকা দিয়েছিলেন। জুলাই ১৮ মাসে আল্লাহর ইচ্ছায় তার পেটে বাচ্চা আসে। আমার মা তার প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল হলেও তার সঠিক পরিচর্চা হচ্ছিল না। তাই তাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। যদিও মা আপত্তি করেছিলো। ডিসেম্বরে ১৮ তাকে আমার নিকট গাজিপুরে নিয়ে আসি। তাতে মা খুশি হতে পারেননি। গাজীপুরে নিয়ে আসার পর প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়। ডাক্তার দেখাই ময়মনসিংহে। তাতেও মা খুশি হননি। নিয়ম রক্ষার মত করে খোঁজ নিতেন। যদিও চিকিৎসার জন্য অর্ধেক টাকা তিনি দিয়েছিলেন। গর্ভবতী স্ত্রীকে দুধ, ডিম খাওয়াতে পারি কিনা খোঁজ নিতেন না। ফেব্রুয়ারি ১৯ মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার গর্ভ যখন ৮মাস তাকে বাড়িতে নেয়া হলো। সে ছোটখাটো সমস্যা আম্মাকে বলতো না। একদিন তার পেটে বাচ্চা নড়াচড়া কম করলো। সে ভাবলো গ্যাসের সমস্যার কারণে এমন হচ্ছে যা পূর্বেও হয়েছিল পরে ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে গিয়েছি। কিন্তু এবার আর ঠিক হলো না। ঔষধ খাওয়ার পরও বাচ্চা নড়লো না। সে আম্মাকেও কিছু বললো না এই ভেবে যে আম্মা তার অসুস্থতার কথা শুনে বিরক্ত হবেন। আমি বাড়ি এসে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। বাচ্চা মৃত ধরা পরলো। মৃতবাচ্চা প্রসব রানো হলো। এই ঘটনার জন্য আমার মায়ের আমার স্ত্রীর অসুস্থতার প্রতি বিরক্তিই দায়ী। আমার ও আমার স্ত্রীর প্রতি এতগুলো অবিচারের মূলে আমার মাকেই দায়ী মনে হয়। মায়ের কথা মনে হলেই একজন জুলুমকারীর চেহারা বার বার মনের ভিতর উকি দেয়। এমতাবস্থায় সন্তান হিসেবে মায়ের প্রতি কর্তব্যগুলো পালনে মন থেকে সাড়া পাই না। যতোটুকু পালন করি জোর করে, জাহান্নামের ভয়ে। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে পারি না তার জন্য আমার মা-বাবর স্বৈরাচারী মনোভাবই দায়ী। আমার করণীয়গুলো বললে উপকৃত হবো। আল্লাহ-হাফেজ। ।