ওয়া আলাইকুমুস সালাম। পবিত্রতা অর্জনের জন্য শুধু ঢিলা কিংবা শুধু পানি কিংবা উভয়টি ব্যবহার করা যেতে পারে। শুধু পানি ব্যবহার করা শুধু ঢিলা ব্যবহার করা থেকে উত্তম। হাদীসে এমনটিই পাওয়া যায়। ঢিলা ও পানি উভয়টি একসাথে ব্যবহার করা ব্যাপারে হাদীসে তেমন পাওয়া যায় না। তবে উভয়টি এক সাথে ব্যবহার করাকে আলেমগণ সবচেয়ে উত্তম বলেছেন। আর ঢিলা ব্যবহার না করলে তার হাতের খাবার খাওয়া যাবে না এ কখা ঠিক না। নিচে দলীলসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
শুধু ঢিলা ব্যবহারের দলীল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ اتَّبَعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَخَرَجَ لِحَاجَتِهِ فَكَانَ لاَ يَلْتَفِتُ فَدَنَوْتُ مِنْهُ فَقَالَ ابْغِنِي أَحْجَارًا أَسْتَنْفِضْ بِهَا ، أَوْ نَحْوَهُ ، وَلاَ تَأْتِنِي بِعَظْمٍ ، وَلاَ رَوْثٍ فَأَتَيْتُهُ بِأَحْجَارٍ بِطَرَفِ ثِيَابِي فَوَضَعْتُهَا إِلَى جَنْبِهِ وَأَعْرَضْتُ عَنْهُ فَلَمَّا قَضَى أَتْبَعَهُ بِهِنَّ
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী সা. সাথে ছিলাম আর তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলেন। তখন তিনি এদিক ওদিক তাকালেন না। আমি তার নিকটবর্তী হলাম। তিনি বললেন, কিছু পাথর কিংবা এ জাতীয় কোন বস্তু নিয়ে আস, তা দ্বারা আমি ইস্তেনজা করব। হাড় কিংব গোবর নিয়ে আসবে না। আমি আমার কাপড়ের আঁচলে কিছু পাথর নিয়ে আসলাম এবং তার পাশে রাখলাম। এরপর সেখান থেকে চলে আসলাম। তিনি যখন তার প্রয়োজন পূর্ণ করলেন সেগুলো ব্যবহার করলেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৫
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ قِيلَ لَهُ قَدْ عَلَّمَكُمْ نَبِيُّكُمْ -صلى الله عليه وسلم- كُلَّ شَىْءٍ حَتَّى الْخِرَاءَةَ. قَالَ فَقَالَ أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِالْيَمِينِ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِرَجِيعٍ أَوْ بِعَظْمٍ
হযরত সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তাকে বলা হল, তোমাদের নবী তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দেয় এমনকি পেশাব পায়খানার বিষয়েও? তিনি বলেন, তখন তিনি বললেন, হ্যা, তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন কিবলার দিকে মুখ করে পেশাব পায়খানা করতে, ডান হাত দ্বারা ইস্তেনজা করতে, তিনটার কমে পাথর ব্যবহার করতে এবং হাড় ও গোবর দ্বারা ইস্তেনজা করতে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২
শুধু পানি ব্যবহারের দলীল:
عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي مَيْمُونَةَ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ الْخَلاَءَ فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلاَمٌ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَزَةً يَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ
আতা ইবনে আবী মায়মুনাহ থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস ইবনে মালিক রা. কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সা.পায়খানায় যেতেন আর আমি এবং একজন বালক পানির পাত্র ও লাঠী বহন করতাম। তিন তা দ্বারা ইস্তেনজা করতেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫২। عن أبي هريرة : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال نزلت هذه الآية في أهل قباء { فيه رجال يحبون أن يتطهروا والله يحب المطهرين } قال كانوا يستنجون بالماء فنزلت هذه الآية فيهم
হযরত আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, এই আয়াত সেখানে কিছু লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে আর আল্লাহও তাদের ভালবাসেন কুবা বাসীদের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন তারা পানি দ্বারা ইস্তেনজা করত তাই তাদের ক্ষেত্রে এই আয়াত তাদের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৩১০০। হাদীসটি সহীহ। উভয়টি একসাথে ব্যবহারের দলীল:
عن ابن عباس قال: لما نزلت هذه الآية في أهل قباء {فيه رجال يحبون أن يتطهروا والله يحب المتطهرين} فسألهم رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالوا: إنا نتبع الحجارة الماء
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন কুবা বাসীদের ক্ষেত্রে এই আয়াত নাযিল হল সেখানে কিছু লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে আর আল্লাহও তাদের ভালবাসেন তখন রাসূলুল্লাহ সা. তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তারা বলল,আমার ঢিলার পরে পানি ব্যবহার করি
মুসানাদে বাযযার। হাদীসটি মুহাদ্দিসদের সর্বাক্যমতে দূর্বল। আল্লামা নুরুদ্দীন হাইছামী বলেন,
رواه البزار وفيه محمد بن عبد العزيز بن عمر الزهري ضعفه البخاري والنسائي وغيرهما
হাদীসটি বাযযার বর্ণনা করেন, সনদে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল আযীয ইবনে উমার আযযুহরী নামে একজন বর্ণনাকারী আছে যাকে ইমাম বুখারী ও নাসায়ী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ দূর্বল বলেছেন। মাজমাউজ ঝাও-ইদ, হাদীস নং১০৫৩। এছাড়াও এই সনদে আব্দুল্লাহ ইবনে শাবীব নামে একজন রাবী আছেন যাকে মুহাদ্দিসগণ অত্যন্ত দূর্বল বলেছে। লিসানুল মিযান, নং ৪২৭৩। তার পূর্ণ নাম আব্দুল্লাহ ইবনে শাবীব আর রবঈ আবু সাইদ আল মাদানী আলইখবারী। তবে তৃতীয় হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক আবূ যাইদ আমর ইবন শুব্বা বাসরী (২৬২ হি) সম্পূর্ণ পৃথক সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হাদীসটির ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আমর ইবন শুব্বাহ, তারীখুল মাদীনাতিল মুনাওয়ারা (বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬ খৃ) ১/৩৩: শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ দুওয়াইশ, তাম্বীহুল কারী আলা তাকবিয়াতি মা যাআফাহুল আলবানী (শামিলা), পৃষ্ঠা ৬২। হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেন,
فَأَتْبِعُوا الْحِجَارَةَ الْمَاءَ
অর্থ: তোমার পাথরের সাথে পানি ব্যবহার কর। আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্কী, হাদীস নং ৫২৯। আল্লামা জাইলায়ী রহ. বলেছেন, এটা একটি ভাল আছার। নাসবুর র-ইয়হা, ১/২১৯। আর সনদে বিচ্ছন্নতার কারণে শাইখ আলবানী বলেছেন, ভাল নয়। সিলসিলাতুন দ-ইফাহ, হাদীস নং ১০৩১। আলেমগণ দুটাকে একা সাথে ব্যবহার করাকে উত্তম বলেছেন, ফিকহের কিতাবগুলোতে তা উল্লেখ আছে। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহি. (১২৫২হি.)বলেন,
اعْلَمْ أَنَّ الْجَمْعَ بَيْنَ الْمَاءِ وَالْحَجَرِ أَفْضَلُ ، وَيَلِيهِ فِي الْفَضْلِ الِاقْتِصَارُ عَلَى الْمَاءِ ، وَيَلِيهِ الِاقْتِصَارُ عَلَى الْحَجَرِ وَتَحْصُلُ السُّنَّةُ بِالْكُلِّ
অর্থ: জানা আবশ্যক যে, পাথর ও পানি একসাথে ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম। উত্তমের দিক দিয়ে তার নিকটবর্তী হল শুধু পানি আর তার নিকটবর্তী হল শুধু ঢিলা। তবে প্রত্যেক পদ্ধতির মাধ্যমেই সুন্নাত আদায় হবে। রদ্দুল মুহতার, ৩/৪১। আরো দেখুন, আলওয়াসিত লিল ইমাম গাযালী (৫০৫ হি.), ১/৩১০; আল ফিকহ ফি আহমাদ ইবনে হাম্বাল লি ইবনে কুদামা আলমাকদিসী, ১/৯৫; হিলয়াতুল উলামা, ১/৭১; আল ফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবা, ১/৮২। উপরের আলোচনা থেকে আমরা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ঢিলা ও পানি একসাথে ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম এরপর শুধু পানি এরপর শুধু ঢিলা। ৪০ কদম হাটা কোন সহীহ কথা নয়। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।