ভাই, এই বিষয়ে স্যার রহ. এর তত্বাবধানে একটি প্রশ্নের উত্তর দেয় হয়েছিল। আমি সেই উত্তরটি এখানে দিয়ে দিচ্ছি। প্রশ্নটি ছিল 0053 নং প্রশ্ন। তারাবীহ বা রামাদানের কিয়ামুল লাইল:
রামাদানে কিয়ামুল্লাইল আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য সময়ের থেকে অধিক তাকিদ প্রদান করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه অর্থ: যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে নামায পড়বে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
এজন্য রামাদানের কিয়ামুল্লাইলকে উম্মাতের আলিমগণ অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সুন্নাত মুআক্কাদা বলে গণ্য করেছেন। সাহাবীগণ রামাদানে তাঁর পিছনে জামাআতে কিয়ামুল্লাইল পালন করতে অতীব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু ফরয হওয়ার আশঙ্কায় তিনি একাকী তা আদায় করতেন এবং সাহাবীদেরকে এভাবে আদায় করতে পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি জামাআতে রামাদানের কিয়াম আদায়ের ফযীলতে বলেন:
مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ
যে ব্যক্তি ইমামের কিয়ামুল্লাইল শেষ করা পর্যন্ত ইমামের সাথে কিয়ামুল্লাইল আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত কিয়াম পালনের সাওয়াব লেখা হবে। ইমাম তিরমিযী ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেনে। সাহাবীগণ ও পরবর্তী প্রজন্মের মুসলিমগণ রামাদানের কিয়ামুল্লাইল আদায়ের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। যেহেতু শেষ রাতে উঠে তা আদায় করা অনেকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়, এজন্য অনেকেই সালাতুল ইশার পরেই মসজিদে বা বাড়িতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করে ঘুমাতেন। যারা কুরআনের ভাল কারী বা হাফিয ছিলেন না তারা অনেক সময় কোনো ভাল কারী বা হাফিযের পিছনে মসজিদে বা বাড়িতে ছোট জামাত করে তা আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে ও তাঁর ওফাতের পরে প্রায় কয়েক বৎসর এভাবেই চলে। খলীফা উমার (রা) লক্ষ্য করেন যে, এভাবে মদীনার মসজিদে নববীতে ছোট ছোট জামাতে বা পৃথকভাবে একাকী অনেকেই সালাতুল ইশার পরে কিয়ামুল্লাইল আদায় করছেন। তখন তিনি সাহাবী উবাই ইবন কাবকে বলেন, মানুষেরা দিবসে সিয়াম পালন করেন, কিন্তু অনেকেই ভাল হাফিয বা কারী নন; কাজেই আপনি তাদেরকে নিয়ে জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করেন। পাশাপাশি তিনি সুলাইমান ইবন আবী হাসমাহ (রা) নামক অন্য সাহাবীকে মহিলাদের নিয়ে মসজিদের শেষ প্রান্তে পৃথক জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করার নির্দেশ দেন। মহিলাদের জামাতের ইমামতি তামীম দারী (রা) নামক অন্য সাহাবীও করতেন। খলীফা উসমান ইবন আফ্ফনের (রা) সময়ে তিনি সুলাইমান ইবন আবী হাসমাহ (রা)-এর ইমামতিতে পুরুষ ও মহিলাদের এক জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায়ের ব্যবস্থা করেন। অধিকাংশ মানুষ জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করতে থাকেন। তবে অনেক সাহাবী, তাবিয়ী ও যারা ভাল হাফিয ও আবিদ ছিলেন তারা সালাতুল ইশার পরে অথবা মধ্য রাতে ও শেষ রাতে একাকী রামাদানের কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন। সহীহ হাদীসে হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. স্বয়ং সাহাবীদের কে নিয়ে কয়েক দিন রমজানের এই বিশেষ নামায তথা তারাবীহ নামায পড়েছেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১২। রাসূল সা. থেকে সহীহ সনদে ঐরাতগুলোর তারাবীহর রাকআত সংখা নিয়ে কোন হাদীস বর্ণিত নেই। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে ইবনে আব্বাস থেকে রাসূল সা. ২০ রাকআত পড়েছেন মর্মে যে হাদীসটি বর্ণিত আছে তা সর্বাক্যমতে দূর্বলু। কারন ঐ হাদিসের সনদে আবু শায়বা ইবরাহীম ইবনে উসমান নামে একজন রাবী আছেন যাকে ইমাম আহমাদ, বুখারী, আবু দাউদ সহ সকল মুহাদ্দিস দূর্বল কিংব মাতরুক (পরিত্যক্ত) বলেছেন। সহীহ হাদীস প্রমাণিত যে, রাতের নামাযে রাসূলুল্লাহ সা. এর রাকআত সংখা বিভিন্ন রকম ছিল। নিচে সংক্ষেপে বর্নণা করা হল:
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ ، وَلاَ فِي غَيْرِهَا عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ، وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي
অর্থ: আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান হযরত আয়েশা রা.কে জিজ্ঞাসা করেন, রমাদান মাসে রাসূলুল্লাহ সা.এর নামায কেমন ছিল? তিনি বললেন, তিনি রামাদান এবং অন্য সময়ে ১১রাকআতের বেশী বাড়াতেন না। তিনি প্রথমে ৪ রাকআত পড়তেন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতায় বিস্মিত হবে। এরপর আবার ৪ রাকআত পড়তেন। তুমি তার সোন্দর্য ও দীর্ঘতায় বিস্মিত হবে। এরপর ৩ রাকআত পড়তেন। ………..
হযরত আয়েশা রা. থেকে অন্য বর্নণায় আছে:
عن عائشة قالت : كان النبي صلى الله عليه و سلم يصلي من الليل تسع ركعات
[ قال ] وفي الباب عن أبي هريرة وزيد بنخالد والفضل بن عباس
অর্থ: হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. রাত্রে ৯ রাকআত পড়তেন । ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাসান সহীহ আর শাইখ আলবানী বলেছেন, সহীহ। আয়েশা রা. থেকে আরেক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. কোন কারণে রাতের বেলায় নামায না পড়তে পারলে দিনের বেলায় ১২ রাকআত পড়তেন। জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪৫। হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযী ও শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। عن ابن عباس قال : كان النبي صلى الله عليه و سلم يصلي من الليل ثلاث عشر [ ركعة
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা, রাতে ১৩ রাকআত নামায পড়তেন। ইমাম তিরমিযী ও শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। বর্ণনা বিভিন্ন প্রকার হওয়ার কারণে ইমাম তিরমিযী বলেছেন,
وأكثر ما روي عن النبي صلى الله عليه و سلم في صلاة الليل ثلاث عشرة ركعة مع الوتر وأقل ما وصف من صلاته بالليل تسع ركعات
রাতের নামাযের ব্যাপারে নবী সা. থেকে যা বর্ণনা করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী হল বিতরসহ ১৩ রাকআত আর সবচেয়ে কম হল ৯ রাকআত। উপরের আলোচনা থেকে আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি যে, রাতের নামায, রামাদান মাসে হোক কিংব অন্য সময় হোক রাসূলুল্লাহ সা. রাকআত সংখা নির্দিষ্ট করেননি। সাহবীদের থেকেও তারাবীর রাকআত সংখা নিয়ে বর্ণনা গুলোর মধ্যে ভিন্নতা আছে। নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:
হযরত উমর রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, তার সময়ে লোকেরা মসজিদে জামায়াতের সাথে বিশ রাকআত নামায আদায় করেছেন। হাদীসটি নিম্নরুপ:
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ : كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فِى شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً – قَالَ – وَكَانُوا يَقْرَءُونَ بِالْمِئِينِ ، وَكَانُوا يَتَوَكَّئُونَ عَلَى عُصِيِّهِمْ فِى عَهْدِ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ مِنْ شِدَّةِ الْقِيَامِ
অর্থ: সাইব ইবনে ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, লোকেরা উমার রা. আমলে রমজান মাসে বিশ রাকআত নামায পড়ত। তিনি বলেন, তারা একশ আয়াত পড়ত। দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হত তাই তারা উসমান রা. এর যুগে লাঠিতে ভর দিত। ইমাম নববী, বদরুদ্দীন আইনি, আল্লামা যাইলায়ী, ইবনে হুমাম সব প্রমূখ মুহাদ্দীস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তবে শায়খ আলবানী ও আব্দুর রহমান মুবারকপুরী এই দুই আহলে হাদীস আলেম বলেছেন হাদীসটি সহীহ নয়। তাদের কথা ইলমের দৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য নয়। এই হাদীসটির বক্তব্যকে সমর্থন করে অনেক গুলো দূর্বল ও সনদ বিচ্ছিনন হাদীস (যে হাদীসের সনদ থেকে কোন রাবীর নাম বাদ পড়ে যায় তাকে সনদ বিচ্ছিন্ন বা মুনকাতি হাদীস বলে)। তার কিছু নিচে দেয় হল:
১। উক্ত সাহবী (সাইব ইবনে ইয়াযীদ থেকে) দূর্বল সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كنا نقوم في زمان عمر بن الخطاب بعشرين ركعة والوتر
অর্থ: আমরা উমার রা. যুগে বিশ রাকআত নামাযপড়তাম ও বিতর পড়তাম। মারিফাতুস সুনান লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং১৩৬৫। ২। ইয়জিদ ইবনে রুমান থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ بِثَلاَثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً
অর্থ: মানুষেরা উমার ইবনে খাত্তারব রা. এর সময় তেইশ রাকআত (বেতার সহ) নামায পড়ত। ইয়াজিদ ইবনে রুমান উমার রা. কে পাননি তাই হাদীসটির সনদ মুনকাতি। ৩। আব্দুর রহমান আস সুলামী হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে,
دَعَا الْقُرَّاءَ فِى رَمَضَانَ ، فَأَمَرَ مِنْهُمْ رَجُلاً يُصَلِّى بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً. قَالَ : وَكَانَ عَلِىٌّ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ يُوتِرُ بِهِمْ
অর্থ: তিনি (আলী রা.) যারা কোরআন পড়তে পারে তাদেরকে ডাকলেন। তারপর তাদের একজনকে লোকদেরকে নিয়ে বিশ রাকআত নামায পড়াতে আদেশ দিলেন। আব্দুর রহমান আসসুলামী বলেন, আলী রাযি. তাদেরকে নিয়ে বিতর পড়লেন। এই হাদীসটির সহীহ বা যয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে কোন বায়হাক্কী রহ. কোন মন্তব্য করেন নি। এই কিতাবের ৪৮০৫ নং হাদীসে পৃথক সনদে আলী রা. থেকে বিশ রাকআত তারাবীহ পড়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে তিনি দূর্বল বলেছেন। এছাড়াও আরো অনেকগুলো সনদ দূর্বল হাদীস বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ আছে। এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, হযরত উমার রা. এর যুগ থেকে বিশ রাকআত তারাবীহ সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত এবং অনেকগুলো দূর্বল হাদীস একে সমর্থন করছে, সুতরাং আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, বিশ রাকআত তারাবীহ সুন্নাহ সম্মত। সাইব ইবনে ইয়াযীদ থেকে অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে যে, উমার রা. উবাই ইবনে কাব এবং তামীম দারেমীকে আট রাকআত তারাবীহ পড়ানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন। যার আরবী জানেন তাদের জন্য হাদীসটির মূল পাঠ নিম্নরুপ:
عَنْ مَالِكٍ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ ، أَنَّهُ قَالَ : أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً قَالَ : وَقَدْ كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ ، حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعِصِيِّ مِنْ طُولِ الْقِيَامِ ، وَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلاَّ فِي فُرُوعِ الْفَجْرِ
মুয়ত্তা মালেক, হাদীস নং ৩০২। হাদীসটির সনদ সহীহ। সহীহ সনদে সাহাবী সাইব ইবরে ইয়াযীদ থেকে আরো একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদীসটি নিম্নরুপ:
عبد الرزاق عن داود بن قيس وغيره عن محمد بن يوسف عن السائب بن يزيد أن عمر جمع الناس في رمضان على أبي بن كعب وعلى تميم الداري على إحدى وعشرين ركعة يقرؤون بالمئين وينصرفون عند فروع الفجر
অর্থ: উমার রা. মানুষদেরকে একত্র করে উবাই ইবনে কাব এবং তামীম দারেমীকে ২১ রাকআত পড়ানোর জন্য ইমাম বানিয়ে দিলেন। তারা শত শত আয়াত পাঠ করতেন এবং ফজরের সময় ফিরে আসতেন। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৭৭৩০। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, সাহাবীগণও মনে করতেন না যে, তারবীহর নামায নির্দিষ্ট । তবে অধিকাংশ আলেম তারাবীহ নামায ২০ রাকআত আদায় করারা পক্ষে মত দিয়েছেন। নিচে চার মাজাহাব ও অনুসৃত আলেমগণের মতামত সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল:
১। ইমাম বায়হাক্কী রহ বলেছেন, দুই বর্ণনার (আট ও বিশ) মাঝে এভাবে সমন্বয় কারা যায় যে, প্রথমে তারা আট রাকআত পড়ত পরে বিশ রাকআত পড়ত। আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৪৮০২। রাকআত সংখা নিয়ে চার মাযহাব ও অন্যান্য ইমামগণের বক্তব্য:
২। হানাফী মাজহাব:
يُسْتَحَبُّ أَنْ يَجْتَمِعَ النَّاسُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بَعْدَ الْعِشَاءِ فَيُصَلِّيَ بِهِمْ إمَامُهُمْ خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ ، كُلُّ تَرْوِيحَةٍ بِتَسْلِيمَتَيْنِ ، وَيَجْلِسَ بَيْنَ كُلِّ تَرْوِيحَتَيْنِ مِقْدَارَ تَرْوِيحَةٍ ، ثُمَّ يُوتِرَ بِهِمْ
অর্থ: মুস্তাহাব হলো লোকেরা রমজান মাসে ইশার পরে একত্রিত হবে এং ইমাম তাদেরকে নিয়ে পাঁচটি বিরতি দিয়ে নামায পড়বেন আর প্রত্যেকটি বিরতি হবে দুই সালাম বিশিষ্ট (অর্থাৎ বিশ রাকআত)। প্রত্যেক দুই বিরতির মাঝে সমপরিমান সময় বসে থাকবেন । এরপর তিনি তাদেরকে নিয়ে বিতর পড়বেন। হেদায়া ১/৭০ ৩। মালেকী মাজহাব:
মালেকী মাজহাবের প্রবীণ আলেম আল্লামা বাজী রহ. তার রচিত মুয়ত্তার ব্যাখ্যা গ্রন্থে (১/২০৮) তারবীহ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
وروى نافع مولى ابن عمر : أنه أدرك الناس يصلون بتسع وثلاثين ركعة. يوترون بثلاث. وهو الذى اختاره مالك
অর্থ: মাওলা ইবনে উমার নাফে রহ. বর্ণনা করেন যে, তিনি মানুষদেরকে ৩৯ রাকআত নামায পড়তে দেখেছেন। তারা তিন রাকআত বিতর পড়ত । আর ইমাম মালেক রহ. এটাই পছন্দ করেছেন। ৪। শাফেয়ী মাজহাব:
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন,
فَأَمَّا قِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ فَصَلاَةُ الْمُنْفَرِدِ أَحَبُّ إلى منه وَرَأَيْتهمْ بِالْمَدِينَةِ يَقُومُونَ بِتِسْعٍ وَثَلاَثِينَ وَأَحَبُّ إلى عِشْرُونَ لأَنَّهُ روى عن عُمَرَ وَكَذَلِكَ يَقُومُونَ بِمَكَّةَ وَيُوتِرُونَ بِثَلاَثٍ
অর্থ: রমজানের নামায একাকী পড়াই আমার নিকট উত্তম। আমি মদীনাবাসীদেরকে দেখেছি তারা ৩৯ রাকআত পড়ে । তবে বিশ রাকআত আমার নিকট অধিক প্রিয়। কেননা উমার রাযি. থেকে তা প্রামানিত। আর এমনই (২০ রাকআত) পড়ে মক্কাবাসীগন। আর তারা তিন রাকআত বিতর পড়ে। ৫। হাম্বলী মাজহাব:
প্রখ্যত হাম্বলী আলোম ইবনে কুদামা আল মুকাদ্দেসী (৬২০হি.) বলেন,
قَالَ ( وَقِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ عِشْرُونَ رَكْعَةً يَعْنِي صَلَاةَ التَّرَاوِيحِ وَهِيَ سُنَّةٌ مُؤَكَّدَةٌ
অর্থ: রমজানের মাসের নাময অর্থাৎ তারবীহ বিশ রাকআত। এবং তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার রহ. বলেন,
فَإِنَّهُ قَدْ ثَبَتَ أَنَّ أبي بْنَ كَعْبٍ كَانَ يَقُومُ بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً فِي قِيَامِ رَمَضَانَ وَيُوتِرُ بِثَلَاثِ . فَرَأَى كَثِيرٌ مِنْ
الْعُلَمَاءِ أَنَّ ذَلِكَ هُوَ السُّنَّةُ ؛ لِأَنَّهُ أَقَامَهُ بَيْن الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَلَمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ
অর্থ: এটা সাব্যস্ত যে, উবাই ইবন কাব রাযি. মানুদেরকে নিয়ে রমজানে বিশ রাকআত তারাবী ও তিন রাকআত বিতর পড়িয়েছিলেন। অধিকাংশ আলেম এটাকেই সুন্নত মনে করেন। কেননা তিনি তার করেছিলেন মুহাজির ও আনসারদের উপস্থিতিতে আর তার কোন রকম আপত্তি করেন নি। মাজমউল ফাতাওয়া ২৩/ ১১২। উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, তারাবীহ নামায রাসূলুল্লাহ সা. থেকে সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। যারা বেশী কোরআন পড়তে পারেন তারা বাড়িতে একা একা উক্ত নামায পড়বে। আর তারাবীহর রাকআত সংখা বিশ হযরত উমার রা. থেকে সহীহ সনদে সাব্যস্ত। আর অধিকাংশ আলেমও বিশ রাকআতকে সুন্নাত মনে করেন। তবে শাইখ আলবানী সহ কোন কোন আলেম আট রাকআতের মত গ্রহন করেছেন। সুতরাং আমাদের মত সাধারণ মানুষদের কর্তব্য হল অধিকাংশ আলোম যে বিষয়টিকে সুন্নাত বলেছেন সেটা মেনে নেয়া এবং সেই অনুযায়ী আমল করা। তবে কেউ যদি এর কম বা বেশী পড়তে চান তাতে কোন অসুবিধা নেই। এমনটিই বলেছেন বিশেষজ্ঞ আলেমগণ। কেননা এটা সুন্নত নামায, রাকআত সংখা উদ্দেশ্য নয়। আরো জানতে ড.খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. রচিত
আল-ফিকহুল আকবার দেখুন।