( ওয়া আলাইকুমুসস সালাম। ভাই, বিষয়টি নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে। ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্থানে হানাফী মাজহাবের অনুসারী বেশী। আর হানাফী মাজহাবে বছরের মাঝে বৃদ্ধি পাওয়া সম্পদের যাকাতের জন্য বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়, যাকাতের নেসাব পূর্ণ হওয়ার এক বছর পর যত টাকা থাকবে সব কিছুর উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। তবে অন্যান্য মাজাহবে (শাফেয়ী, হাম্বলী) বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত। এই বিষয়ে হাদীসে স্পষ্ট আলোচনা না থাকায় মতভেদ হয়েছে। বিখ্যাত ফিকহী বিশ্বকোষ আলমাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ তে বিষয়টি এভাবে আলোচনা করা হয়েছে:
الْقِسْمُ الثَّالِثُ : أَنْ يَسْتَفِيدَ مَالاً مِنْ جِنْسِ نِصَابٍ عِنْدَهُ قَدِ انْعَقَدَ حَوْلُهُ وَلَيْسَ الْمُسْتَفَادُ مِنْ نَمَاءِ الْمَال الأَْوَّل . كَأَنْ يَكُونَ عِنْدَهُ عِشْرُونَ مِثْقَالاً ذَهَبًا مَلَكَهَا فِي أَوَّل الْمُحَرَّمِ ، ثُمَّ يَسْتَفِيدُ أَلْفَ مِثْقَالٍ فِي أَوَّل ذِي الْحِجَّةِ ، فَقَدِ اخْتَلَفَ الْعُلَمَاءُ فِي ذَلِكَ :
فَذَهَبَ الشَّافِعِيَّةُ وَالْحَنَابِلَةُ ، إِلَى أَنَّهُ يُضَمُّ إِلَى الأَْوَّل فِي النِّصَابِ دُونَ الْحَوْل ، فَيُزَكِّي الأَْوَّل عِنْدَ حَوْلِهِ أَيْ فِي أَوَّل الْمُحَرَّمِ فِي الْمِثَال الْمُتَقَدِّمِ ، وَيُزَكِّي الثَّانِيَ لِحَوْلِهِ أَيْ فِي أَوَّل ذِي الْحِجَّةِ وَلَوْ كَانَ أَقَل مِنْ نِصَابٍ ، لأَِنَّهُ بَلَغَ بِضَمِّهِ إِلَى الأَْوَّل نِصَابًا . وَاسْتَدَلُّوا بِعُمُومِ قَوْل النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لاَ زَكَاةَ فِي مَالٍ حَتَّى يَحُول عَلَيْهِ الْحَوْل . وَبِقَوْلِهِ : مَنِ اسْتَفَادَ مَالاً فَلاَ زَكَاةَ عَلَيْهِ حَتَّى يَحُول عَلَيْهِ الْحَوْل عِنْدَ رَبِّهِ )
.وَذَهَبَ الْحَنَفِيَّةُ إِلَى أَنَّهُ يَضُمُّ كُل مَا يَأْتِي فِي الْحَوْل إِلَى النِّصَابِ الَّذِي عِنْدَهُ فَيُزَكِّيهِمَا جَمِيعًا عِنْدَ تَمَامِ حَوْل الأَْوَّل قَالُوا : لأَِنَّهُ يُضَمُّ إِلَى جِنْسِهِ فِي النِّصَابِ فَوَجَبَ ضَمُّهُ إِلَيْهِ فِي الْحَوْل كَالنِّصَابِ ، وَلأَِنَّ النِّصَابَ سَبَبٌ ، وَالْحَوْل شَرْطٌ ، فَإِذَا ضُمَّ فِي النِّصَابِ الَّذِي هُوَ سَبَبٌ ، فَضَمُّهُ إِلَيْهِ فِي الْحَوْل الَّذِي هُوَ شَرْطٌ أَوْلَى ؛ وَلأَِنَّ إِفْرَادَ كُل مَالٍ يُسْتَفَادُ بِحَوْلٍ يُفْضِي إِلَى تَشْقِيصِ الْوَاجِبِ فِي السَّائِمَةِ ، وَاخْتِلاَفِ أَوْقَاتِ الْوَاجِبِ ، وَالْحَاجَةِ إِلَى ضَبْطِ مَوَاقِيتِ التَّمَلُّكِ ، وَوُجُوبِ الْقَدْرِ الْيَسِيرِ الَّذِي لاَ يُتَمَكَّنُ مِنْ إِخْرَاجِهِ ، وَفِي ذَلِكَ حَرَجٌ ، وَإِنَّمَا شُرِعَ الْحَوْل لِلتَّيْسِيرِ ، وَقَدْ قَال اللَّهُ تَعَالَى { وَمَا جَعَل عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ } وَقِيَاسًا عَلَى نِتَاجِ السَّائِمَةِ وَرِبْحِ التِّجَارَةِ . (উপরে যা বাংলাতে বললাম আরবীতে সেটাই লেখা হয়েছে। ) আলমাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ ২৩/২৪৩
হানাফী মাজহাবের মত অনুসরণ করাটাই অধিকতর সতর্কতা এবং সহজ। মনে করুন মহররম মাসে আপনি ৫ লাখ টাকার মালিক হলেন এবং রবিউল আউয়াল মাসে আপনি ২০ হাজার টাকার মালিক হলেন। হানাফী মাজহাব অনুযায়ী মহররম মাসে আপনাকে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকার যাকাত দিতে হবে। আর অন্যান্য মাজহাব অনুযায়ী আপনাকে মহররমে ৫ লাখ টাকার আর রবিউল আওয়াল মাসে ২০ হাজার টাকার যাকাত দিতে হবে। এভাবে যদি বছরের মাঝে ১০ বার নতুন টাকার মালিক হন তাহলে ১০ বার যাকাত দিতে হবে, এটা কঠিন। আর আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, وَمَا جَعَل عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ তিনি তোমাদের জন্য ধর্মকে কঠিন করেন নি। সূরা হাজ্জ, আয়াত ৭৮
সুতরাং হানাফী মাজাহাবের মত অনুসরণ করাই সহজ এবং অধিকতর সতর্কতা। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আর ব্যবসার মালের ক্ষেত্রে সর্বাক্যমতে যাকাত দেয়ার সময় যত মাল থাকবে তার পুরোটার যাকাত দিতে হবে। আলমাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ তে ব্যবসার মালের বিষয়টি এভাবে বলা হয়েছে:
أَنْ تَكُونَ الزِّيَادَةُ مِنْ نَمَاءِ الْمَال الأَْوَّل . كَرِبْحِ التِّجَارَةِ ، وَنِتَاجِ السَّائِمَةِ ، فَهَذَا يُزَكَّى مَعَ الأَْصْل عِنْدَ تَمَامِ الْحَوْل . قَال ابْنُ قُدَامَةَ : لاَ نَعْلَمُ فِي ذَلِكَ خِلاَفًا ، لأَِنَّهُ تَبَعٌ لِلنِّصَابِ مِنْ جِنْسِهِ ، فَأَشْبَهَ النَّمَاءَ الْمُتَّصِل .
আলমাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ ২৩/২৪৩।