As-Sunnah Trust

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 1569

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক

প্রকাশকাল: 17 May 2010

প্রশ্ন

আসসালামুলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। পারিবারিক সমস্যা অনেক বড় লেখা কষ্ট হলেও পড়বেন দয়া করেঃ আগেই বলে রাখি আমার বোনের পরিবার বা ভাইয়ের পরিবার এমন যে, ইসলামের যে অংশ তাদের সাথে মিলে তা মানবে আর যা মিলবে না তা এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। আমার ভাই ঢাকার বাহিরে থাকে কিছুদিন আগে ঢাকায় বদলি হয়েছে। আমার বোন ঢাকায় থাকে, সে নিঃসন্তান ছিলো । তাই সে চাইতো সে আমাকে মানুষ করবে যেন সন্তানের মত তাকে পরবর্তিতে দেখি । সবার সম্মতিতে গ্রাম থেকে এস এস সি পাসেরর পর তারা ঢাকায় এনে ভর্তি করে দেয় । এর কয়েক মাস পড়েই আমার বাবা মারা যায়। এর পর সবাইকে বলি আমি মার সাথে গিয়ে গ্রামে থাকব আমি এখানে থাকব না। আমার মা আর আন্য সবাই আমাকে বুঝিয়ে রাখে। এর পর আমার বোন একটা বাচ্চা পালতে আনে। বাচ্চা আনার ১ বা দেড় বছর পর আমার বোনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয় । ততদিনে আমি ইনভার্সিটিতে পড়ি । সে ১০-১৫ দিনের মধ্যেই আবার সুস্থ হয়ে যায় । তার বাসায় যখন আমি ছিলাম তার বাচ্চার কেয়ার তারা অসুস্থ হলে তাদের কেয়ার সংসারে তাকে কাযে হেল্প করা সবই করতাম। তবে আমি ইসলামিক নিয়মগুলো মেনে চলতে চাইলে তারা আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করত। ইনভার্সিটিতে পড়াকালীন অবস্থায় নিয়মিত বোরকা পড়া এবং ইসলামের নিয়ম গুলো মানার আরো বেশি চেষ্টা করি। যার কারনে আমার আত্মীয়রা আমাকে নিয়ে অনেক বিষয়ে মিথ্যা কথাও বলত। এক সময় আমার বিয়ে হয়ে যায়। আমার স্বামী সেও কোরয়ান সুন্নাহ মেনে চলার চেষ্টা করে আলহামদুলিল্লাহ। বিয়ের পর আমার পরিবারের সব লোক চায় আমি তাদের কথা মত চলি । চকরি করি। অনেক বিলাসী হই । কিন্তু আমার স্বামী বা আমার কারোই পছন্দ না । সাধারণ জীবনযাপনই আমাদের ভাল লাগে। আমি আমার স্বামির কথা মত চলি বলে তারা আমাকে অবাধ্য থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বলে । আমার ভাই তার মধ্যে আছে ভয়ংকর অহংকার । সে চায় বাহিরের লোক আমার বাসায় এনে তাদের দেখাতে যা আমার বোন কেমন রাজকীয় ভাবে থাকে । তারা চায় আমি তাদের কথা মত সংসার চালাই। সামর্থ্য থাকা সত্যেও কিছুই করিনি । শুধু মাত্র দুনিয়ার মোহ থেকে বেচে থাকতে। আমার বোনের মানসিক সমস্যা ১ বা দেড় বছর পর পরই দেখা দেয়। তাদের কাছে থাকাকালীন অবস্থায় ৩ বার এই সমস্যা হইছিলো। তখন আমি আমার মা কেয়ার নিছি । এখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে এখনো তারা চায় আমি তাদের ওখানে থেকে তার যন্ত করি। কিন্তু আমার স্বামী সে চায় না আমি ওখানে থাকি কারন তাদের ওখানে ইসলামিক পরিবেশের বড়ই অভাব । বিয়ের পর কোন দিন সে বাসা ছাড়া অন্য কারো বাসায় আমাকে রাখেনি । আবারো আমার বোন অসুস্থ হইছে আমার স্বামী সে আমাকে দেখতে যেতে বলছে আমি গিয়ে দেখে আসছি । কিন্তু তারা চায় আমি ওখানে থেকে তার যত্ন করি । আমার ভায়ের বাসা আমার বোনের বাসার কাছাকাছি । আমার ভগ্নি সে এক কম্পানিতে চাকরি করে । তাকে সহজে ছুটি দেয় না। আমার ভগ্নি পতি যদি ডাঃ কাছে নিতে টাইম না পায় আমার ভাই কে নিতে বলে । আগে আমি আমার মা নিতাম। কিন্তু আমার ভায়ের যথেষ্ট সময় থাকা সত্যেও সে তার বোন কে ডাঃ কাছে নিতে চায় না । কারন তার মান সম্মান নষ্ট হবে ভেবে। তার বোন মানসিক রোগী এটা তার লজ্জার বিষয়। আমি সবসমই আমার বোন কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি । আমার স্বামিও জানে । তারা আমাকে ফোন করে বলে তোমার এখানে থেকে তোমার বোনের যত্ন নেয়া উচিত কারণ তুমি এখানে থেকে পড়ালেখা করছ । বিয়ের পর থেকে আমার বাবার বাড়ি অন্য আত্মীয় দের বাড়ী খুবই কম গেছি । তারা অসুস্থ হলে দেখতে যাই তাছাড়া তেমন যাওয়াই হয়না। তাদের ঐ পরিবেশ কখনো আমার ভাল লাগে না । আমার বোন এখন আবার অসুস্থ হইছে। আমাকে থাকতে যেতে বলে । কিন্তু আমার স্বামী যেতে দেবে না । আমিও স্বামীর অবাধ্য হয়ে যেতে চাই না। আমার কি করা উচিত?

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। দেখুন, এখানে দুটো দিক। ১. আইনগত। আর ২। মানবিক। আইনগতভাবে আপনার স্বামীর অধিকার আছে আপনাকে অন্য কোথাও যেতে না দেয়ার।সুতরাং তিনি যদি নিষেধ করেন তাহলে আপনি যেতে পারবেন না। আর মানবিক দিক হলো যে কোন ভাবেই হোক আপনি বোনের দেখাশোনা করবেন। প্রয়োজনে স্বামীকে মানবসেবার ইসলামী দিকটি বুঝাবেন। আর সেখানে পর্দার সমস্যা হলে আপনার বাসায় যদি সম্ভব হয় তাকে কিছুদিন রাখতে পারেন। অথবা আপনার আম্মা যেখানে থাকে সেখানে বোনকে নিয়ে গিয়ে সেখানে আপনি সেবা-যত্ন করতে পারেন। আপনার ভাই যা করছে তা সামাজিক এবং ধর্মীয় উভয় দিক থেকেই চরম ভুল।তারা বর্তমান কথিত আধুনিক সমাজের সাথে গা মিলিয়েছে বলেই আপন বোনের অসুস্থাতই তার পাশে দাঁড়াতে পারছে না। আপনিও যেন পর্দার নাম করে আপনজনের সেবা-যত্ন থেকে দূরে না থাকেন। তাহলে কিন্তু ফলাফল একই হবে। আপনার পরিবার যে কথাটি আপনাকে বলছে যে, আপনি অবাধ্য। কথাটি ঠিক নয়। বরং স্বামীর কথা না মেনে তাদের অযৌক্তিক কথা মানলে সেটাই হতো অবাধ্যতা। আর তারা আপনার কাছে ইসলাম বিরোধী যেসব আনুষ্ঠাকিতা রক্ষার দাবী করে তা থেকে বিরত থাকবেন। তাদের এসব কথায় কোন কান দিবেন না। সর্বোপরি আপনি আপনার স্বামীকে বুঝিয়ে যতটুকু সম্ভব বোনের পাশে থাকার চেষ্টা করুন।