As-Sunnah Trust

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 441

ঈমান

প্রকাশকাল: 15 Apr 2007

প্রশ্ন

আমার প্রশ্ন নিচের অংশ নিয়ে। ………যে সময়ের ঘটনা এটা তখন কি ক্রিতদাসীর সাথে সহবাসে বাভিচার হত না? আমি অনেক মন কষ্টে আসি দয়া করে আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন আসলে কি?
আমরা জানি বাভিচার এর শাস্তি অনেক কঠিন সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসবেন এটা কিভাবে হয়?
এরপর সাহাবী আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এ ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ভাবে হাসলেন যে, তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দৃস্টিগোচর হয়েছিল। link: http://www.quraneralo.com/how-we-can-protect-ourselves-from-lies/
প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার তাঁর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার ক্রিতদাসীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়। তাঁর স্ত্রী হঠাৎ তাদেরকে ঐ অবস্থায় দেখে ফেলেন এবং রাগের মাথায় দা নিয়ে কোপাতে আসে। কিন্তু ইত্যবসরে তিনি তাঁর কর্ম সম্পাদন করে ফেলেছেন। তাঁর স্ত্রী এসে বললেন যে, যদি আমি তোমাদেরকে ঐ অবস্থায় পেতাম তাহলে তোমার মাথা কেটে ফেলতাম। তিনি বললেন: আমি কি করেছি? তাঁর স্ত্রী বললেন: যদি সত্যিই তুমি কিছু না করে থাক, তাহলে এখন এ অবস্থায় কুরআন পাঠ করতে পারবে কি? আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা সাথে সাথে পড়া শুরু করলেন:
شهدت بأن وعد الله حق = وأن النار مثوى الكافرينا
وأن العرش فوق الماء طاف = وفوق العرش رب العالمينا
وتحمله ملائكة كرام = ملائكة الإله مقربينا[1]
মূলতঃ এটা ছিল একটি কবিতার কিছু অংশ। কিন্তু তাঁর স্ত্রী এর মাঝে আর কুরআনের মাঝে পার্থক্য বুঝতেন না। বরং যখন তিনি পড়ছিলেন তখন তাঁর স্ত্রী মনে করেছিলেন যে, কুরআন পড়ছে। আর যদি সে এ অবস্থায় কুরআন পড়তে পারে তাহলে নিশ্চয় সে কাউকে স্পর্শ করে নি। অবশেষে তাঁর স্ত্রী বললেন যে, আমি আল্লাহর কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং আমার দেখাটাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করলাম। এরপর সাহাবী আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এ ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ভাবে হাসলেন যে, তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দৃস্টিগোচর হয়েছিল।

উত্তর

উক্ত ঘটনাটি যে হাদীসে বর্ণিত আছে সেই হাদীসটি যয়ীফ (দুর্বল), সহীহ নয়। সুতরাং এই ঘটনাটি সত্য এটা বলা যাবে না।এই ধরনের হাদীস দ্বারা কোন ধরনের দলীল দেয়া যায় না। তবে তৎকালীন সময়ে সকল সমাজে এবং সকল দেশে দাস-দাসীর প্রচলন ছিল। ইসলাম চেয়েছে এই ব্যবস্থা না থাকুক। কারণ বিভিন্ন গোনাহের কাফ্ফারা হিসাবে দাস-দাসী স্বাধীন করার হুকুম ইসলাম দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. বিভিন্ন হাদীসে দাস-দাসীকে স্বাধীন করার কথা বলেছেন, স্বাধীন করার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। সাহাবীগণ হাজার হাজার দাস-দাসীকে স্বাধীন করে দিয়েছেন, এমনকি অনেক সময় অন্যের কাছ থেকে কিনেছেনই এই উদ্দেশ্যে যে,তাকে স্বাধীন করে দিবেন। কিন্তু তৎকালীন বিশ্বপরিস্থিতির কারণে পুরোপুরি রুপে এই ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা হয় নি। মালিক কর্তৃক দাসীর সাথে সহবাস করা বৈধ ছিল। তবে অন্যের দাসীর সাথে বৈধ নয়। আর এটা ছিল ঐ দাসীর স্বাধীন হওয়ার পথে একধাপ উন্নতি। কারণ যখন মালিক তার দাসীর সাথে সহবাস করতো আর তার থেকে কোন সন্তান হতো তখন ঐ মালিকের জন্য জায়েজ ছিল না ঐ দাসীকে বিক্রি করা। তার সামনে দুটি পথ ছিল। হয়তো তাকে স্ত্রী হিসাবে রেখে দেওয়া অথবা স্বাধীন করে দেয়া। আর ঐ সন্তানও মালিকের সন্তান হিসাবে গন্য হতো এবং স্বাধীন হতো। অর্থাৎ দাসীর সাথে সহবাসের অনুমতি ছিল মূলত স্বাধীন হওয়ার একটি প্রক্রিয়া। সুতরাং এটা আদৌ ব্যাভিচার নয়। (এছাড়া ব্যভিচারের সন্তান কখনো ব্যাভিচারকারীর সন্তান হিসাবে গণ্য হয় না। ) বরং মানুষে যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে তারই একটি ব্যবস্থা। আশা করি আপনি মূল বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।