প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে যে, যাকাত ও উশর কোনো ভিন্ন বিষয় নয়। ফসলের যাকাতের নামই উশর। উৎপাদিত ফসলের যাকাতের নাম হল উশর। পার্থক্য হলো সাধারণত টাকা-পয়সা বা সোনারূপার যাকাত আড়াই পার্সেন্ট হারে আদায় করতে হয় আর ফসলের যাকাতের ক্ষেত্রে পানি দিয়ে ফলালে ৫% আর বৃষ্টির পানি দিয়ে ফলালে ১০% হারে আদায় করতে হয়। সুতরাং বাংলাদেশের যে সমস্ত জমিতে পুরো সময়ই পানি দিয়ে ফসল ফলাতে হয় সেখানে ফসলের ৫% যাকাত দিতে হবে। যেমন, ১০০ মন ধান হলে ৫ মন ধান অথবা ৫ মন ধানের মূল্য যাকাত বা উশর দিতে হবে। যখন ফসল হবে তখনই ফসলের যাকাত দিতে হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে ইবনে উমার রা. বলেন রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, فِيمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُونُ ، أَوْ كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ وَمَا سُقِيَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ বৃষ্টির পানি, প্রবাহিত ঝর্ণার পানি বা মাটির স্বাভাবিক আদ্রতা থেকে (কোন সেচ ব্যবস্থা ছাড়া ) যে ফসল উৎপাদিত হয়, সে ফল ও ফসলের এক দশমাংস (১০%) যাকাত আদায় করতে হবে। আর সেচের মাধ্যমে যে ফল ফসল উৎপন্ন করা হয় তা থেকে এক দশমাংসের অর্ধেক (২০ ভাগের একভাগ বা ৫%) যাকাত প্রদান করতে হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৮৩। উশর বা ফসলের যাকাতের নিসাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনটি মত রয়েছে: ১। হানাফী মতানুসারে উশরের কোন নিসাব নেই। অল্প বা বেশী সকল পরিমাণ ফলমুল, শাকসবজী ও ফসলের জাকাত আদায় করতে হবে। ২। অন্য তিন ইমাম: মালিক, শাফেয়ী, আহমাদ ও হানাফী মাজহাবের ইমাম আবূ ইউসুফ ও অন্যান্য অনেক ফকীহের রা. মতে ভূমির উৎপাদন ৬৫৩ কিলোগ্রাম (প্রায় ১৭ মন) বা তার বেশী হলে যাকাত প্রদান করতে হবে। এর কম হলে যাকাত ফরজ হবে না। ৩। হানাফী মাজহাবের অন্য ইমাম, ইমাম মুহাম্মাদের র. এর মতে ভূমির উৎপাদন কমপক্ষে ৯৯০ কিলোগ্রাম (প্রায় ২৫ মন) হলে তাতে যাকাত ফরজ হবে। বিভিন্ন দলীল প্রমাণের দিক থেকে দ্বিতীয় মতটিই শক্তিশালী মনে হয়, তবে যেহেতু আমাদের দেশের সংখাগরিষ্ঠ মুসলিম হানাফী মত অনুস্বরণ করেন, সেহেতু আমরা প্রথম মতকেই উশরের ক্ষেত্রে মানদন্ড হিসাবে গ্রহণ করার পক্ষে। এই মতটি সাবধানতা মূলক এবং দরিদ্রদের জন্য উপকারী। মহান আল্লাহই ভাল জানেন। দলীল সহ বিস্তারিত জানতে পড়ন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার রচিত বাংলাদেশে ফসল বা উসরের যাকাত গুরুত্ব ও প্রয়োগ বইটি।